অভাব এবং স্বভাব

লিখেছেন লিখেছেন হরিণ খাইন গোয়েন্দা সংস্থা ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১১:৩৫:০৭ রাত

অভাবে নাকি স্বভাব নষ্ট হয়। প্রচলিত কথা। এধরনের প্রচলিত কথার ওপর অগাধ বিশ্বাস থাকার পরও বলতে হচ্ছে, অন্তত এই কথার সাথে একমত নই। বিপরীত যুক্তিতে যদি বিচার করেন, অভাবে স্বভাব নষ্ট হলে ধনসম্পদ লাভের সাথে স্বভাব ভাল হওয়া উচিত ছিল। সেটা হয়না তার সবচেয়ে বড় প্রমান বাংলাদেশ। শতকোটি-হাজারকোটি টাকার মালিক হওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে স্বভাব খারাপ হতে থাকে। চুরি-বাটপারির যোগ্যতা লাভ হয়েছিল অভাবের সময়, অর্থপ্রাপ্তির সাথে প্রাত্তি ঘটেছে দিনেডাকাতি-খুন করার অধিকারের। খুন শব্দটা আপত্তিকর মনে হতে পারে, কিন্তু সত্য এটাই। শতকোটির টাকার মালিক হবেন অথচ দুচারটা খুনের সাথে জড়াবেন না তা হয়না। অন্তত বাংলাদেশে। তারপরও এর প্রচারের পেছনে কারন অনেক।

প্রধান কারন, ওরা অভাবী। ওদের জন্য কিছু করা প্রয়োজন। আমি সেটাই করছি। ছাত্রজীবনে এক কম্যুনিষ্ট ভাবাদর্শী বলেছিল নিজে ভাল না থাকলে অন্যের ভাল করব কিভাবে ? ভাল থাকার জন্য দুটাকার (তখনকার দিনে) সিগারেট খেতে হয়। অন্যভাবে বললে, পরের ভাল করার জন্য সবচেয়ে দামী সিগারেট থেকে হয়। কোটিপতি হওয়ার বিষয়টিও তেমনই। কোটিপতি যদি না হবেন তাহলে অভাবীকে সাহায্য করবেন কি দিয়ে ? আগে আমাকে কোটিপতি বানান, তারপর দেখুন আমি গরীবের জন্য কতকিছু করি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যারা শতশত কোটি টাকা দিয়ে হাসপাতাল বানিয়েছেন তাদেরও দায়িত্ব গরীবদের সেবা দেয়া। শুধু টাকা কামালেই চলবে না, সপ্তাহে অন্তত একদিন বিনামুল্যে সেবা দিন। দরীদ্র দেশের জনস্বাস্থ্যের দায়িত্ব সরকারী হাসপাতালের না বেসরকারী হাসপাতালের সেপ্রশ্ন তুলবেন না, দেশের প্রসাসনিক প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কর্তব্য কি সেকথা বলবেন না। দায়িত্বপালনের চেয়ে উপদেশে এদেশে বেশি বিক্রি হয়। প্রতিদিনই বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ন বিষয়ের আদেশ, নির্দেশ, গুরুত্বআরোপ, প্রয়োজনীয়তা সকলের সামনে তুলে ধরা এসব করা হচ্ছে। আপনারা কাজ করে যান।

গ্রামের একজন শিক্ষক হবেন গ্রামের তথ্যভান্ডার, সকলে পরামর্শের জন্য তারকাছে যাবে। অথচ দেখুন, মুদি দোকানী তার কাছে টাকা পাবে। সে মাথা নিচু করে চলে। একথা বলেছিলেন চেখভ, বিপ্লবের আগের রাশিয়া সম্পর্কে। একশ বছরে রাশিয়ায় কি হয়েছে সবারই জানা। বাংলাদেশ শুধু যে সেই পথে গেছে একথা বলাও যথেষ্ট না। প্রতিদিনই দ্রুতগতিতে যাচ্ছে। প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকের বেতন কয়েকবছর ধরে বকেয়া এটা পুরনো খবর। ঘুষ না দিয়ে সেটা পাওয়ার আশা নেই। আর যে শিক্ষক ঘুষ নিয়ে নিজের বেতন উঠান তিনি মাথা সোজা করবেন কিসের জোরে ? নৈতিকতা শেখাবেন কাকে ?

কাজেই অভাবে স্বভাব নষ্ট হয়। শিক্ষা দেয়ার মানসিকতা নিয়ে যার জন্ম তাকে নিরাপদ পেশা খুজতে হয়। যার সেটা জোটেনা সে নেতা ধরে স্কুলে-কলেজে চাকরী জুটিয়ে নেয়। তারপরও অন্য আয়ের পথ খুজতে হয়। জীবন ধারনের জন্য স্বভাব নষ্ট করতে হয়। কারো কারো জন্য সেটা ছাত্রধরা দালালী ব্যবসার মত।

জীবনধারনের মত কারন ছাড়াও স্বভাব নষ্ট হয়। একেবারে টাটকা উদাহরন দেয়াই উত্তম। হকার খবরের কাগজ দিয়ে গেছে দরজার তলা দিয়ে। ৯০ ভাগ ভেতরে, ১০ ভাগ বাইরে। সেটা ধরে টান দিয়ে কেউ নিয়ে গেছে। কে নিয়েছে সেটাও জানা। নিশ্চিতভাবেই ওপরতলার বাসিন্দা।

এখানে জীবনধারনের বিষয় নেই। অভাবের বিষয়ও নেই। পুরোটাই স্বভাব। একজন দুঃখ করে বলেছিলেন, কোন বাঙালী সুযোগ পেলে চুরি করবে একথা বিশ্বাস করি না। কথাটা বাতিল না করে ভেবে দেখা প্রয়োজন কতদুর দেখার পর কেউ এমন মন্তব্য করতে পারেন, নিজে সেই দলে থেকে।

আসলে অভাবের ব্যাখ্যাটাই করা হয় ভুলভাবে। যার অর্থ নেই সে অভাবী এটা ভুল ব্যাখ্যা। ভাবের অভাব হলে তাকেই অভাব বলা উচিত। অর্থপ্রাপ্তির সাথে ভাবের উন্নতি হয় না, বরং অবনতি হয়। সেকারনে বিত্তশালী হওয়ার পর নষ্ট স্বভাব আরো নষ্ট হয়। আর অর্থের অপ্রাপ্যতা থাকলে ভাবের অনুশীলণ করা সহজ। কবি বলেছেন, হে দারীদ্র তুমি মোরে করেছ মহান।

কাজেই আগের কথা ফিরিয়ে নিতে হচ্ছে। অভাবে স্বভাব নষ্ট কথাটাই ঠিক। ব্যাখ্যাটা ভুল।

বিষয়: বিবিধ

১০৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File