স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি যেন সোনার হরিণ
লিখেছেন লিখেছেন হরিণ খাইন গোয়েন্দা সংস্থা ০৪ আগস্ট, ২০১৫, ১১:৩১:৩৩ রাত
মৃত্যুর কথা শুনলেই অন্তরাত্মা দুমড়ে-মুচড়ে ওঠে
। অজানা ভয়মিশ্রিত শিহরণ শরীরের প্রতিটি
লোমকূপ কাঁপিয়ে দেয় । সেই মৃত্যু যদি দুর্ঘটনায়
কিংবা অস্বাভাবিকভাবে হয় তখন সে সংবাদ
শ্রবনে কি অবস্থার সৃষ্টি হয় তা শুধু অনুভবে
উপলব্ধির; প্রকাশ করে বোঝাবার নয় । অথচ
এদেশের প্রতিটি মানুষকে এমন অস্বাভাবিক
মুত্যুর কবলে পতিত কিংবা স্বাক্ষী হতে হচ্ছে
প্রতিনিয়ত । হররোজ এমন জীবনহানী ঘটিত
দূর্ঘটনার দুঃসংবাদ শুনতে শুনতে দেশের মানুষ
এখন স্বাভাবিক-অস্বাভাবিক কোন প্রকারের
মৃত্যু সংবাদ শুনলে আগের মত বিচলিত হয়না ।
মানুষ যখন বুঝতে পেরেছে, অহর্নিশি মৃত্যু তাদের
তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তখন আর পালানোর পথ খুঁজছে
না । অবশ্য মৃত্যু থেকে পালানোর চিন্তা
বোকামী তবে কয়েক ধরণের মৃত্যু আছে যা
এড়ানো সম্ভব । প্রত্যহ অসংখ্য প্রকারের মৃত্যু
সংবাদ শ্রবনে মানুষ গুলিয়ে ফেলছে মৃত্যুর
স্বাভাবিকতা-অস্বাভাবিকতা । বিশ্বের অন্যান্য
দেশেও প্রতিনিয়ত নানা কারণে মানুষ মৃত্যুর স্বাদ
গ্রহন করে তবে বাংলাদেশের মত এত অধিক
সংখ্যক অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংবাদ তাদেরকে
ভুলেও শ্রবন করতে হয়না । এদেশে মানুষের উষায়
ঘুম ভাঙ্গে মৃত্যুর সংবাদ শ্রবনে এবং গভীর রাতে
বিছানায় যাওয়ার পূর্বে না চাইতেও অস্বাভাবিক
মৃত্যুর সংবাদ শুনতে হয় । মানবিকগুনাবলীর ধারক
হওয়ায় প্রতিটি মৃত্যুর সংবাদেই মানুষের মনে
ব্যথার উদ্রেক হওয়ার কথা কিন্তু যে ইন্দ্রিয়ের
মাধ্যমে ব্যথা-কষ্টের অনুভব সৃষ্টি হয় সেটারও
তো ধারণ ক্ষমতার সীমা আছে । প্রতি মূহুর্তের
সবগুলো দুঃসংবাদে কষ্ট অনূভব হতে হতে এখন এ
ইন্দ্রিয়ে কিছুটা স্থূল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ।
পূর্বের মত দুঃসংবাদ শুনলেই মানুষের চোখ দিয়ে
জল বের হয়না । কিভাবে হবে ? এদেশে এমন
কোন সকাল নাই যে সকালের সংবাদপত্র
অসংখ্য অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংবাদ বহন করে না ।
এদেশের এমন কোন টেলিভিশন নাই যেটিতে
প্রতিদিন দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে মানুষের
অস্বাভাবিক মৃত্যুর একাধিক বিভৎস ছবি ও খবর
প্রকাশ হয়না । কতদিন মানুষের মনরূপ ষষ্ঠ
ইন্দ্রিয় এমন অস্বাভাবিককতার খবরে দুঃখ-
ব্যথার সৃষ্টি করতে সক্ষম ? এতকিছুর পরেও তবু
কিছু মৃত্যু মানুষকে কাঁদায়-ভাবায় । মুত্যু চিরসত্য
কিন্তু এভাবে বেঘোরে জীবন দিতে হবে কেন ?
কেন রাষ্ট্রের প্রতি ইঞ্চি ভূমি মানুষের নিরাপদ
আশ্রয়ের পরিবর্তে জীবনহানীর স্বাক্ষী হবে ? এ
সকল প্রশ্নের উত্তরগুলো খুব কঠিন নয় কিন্তু
জবাব দেওয়ার জন্য কেউ দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে
আসবে না; অতীতেও আসেনি । যখনই রাষ্ট্রের
কোন অঙ্গে এমন অস্বাভাবিক মৃত্যুর সৃষ্টি
হয়েছে তখন দায়িত্বশীলদের কিছু সংখ্যকের
চিরায়ত গতানুগতিক সাধারণ বুলিতেই সব কিছু
ঢেকে দেওয়া হয়েছে । কথার চালা-চালি, বাদানুবাদ
কম হয়নি কিন্তু ফলাফল শুণ্য । পাঁচ-দশজন
মানুষের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিত্যকার রুটিন হওয়ায়
এ নিয়ে কারো কোন মাথা ঘামানোর মত খুব
বেশি উদ্যোগ কখনো আলোর মূখ না দেখলেও
অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংখ্যা যখন ডজনে হিসাব
করা যায় তখন তা নিয়ে কিছুক্ষন হাউকাউ করা
হয়, স্বজনকে নিহতের জীবনের দাম নির্ধারক
স্বরূপ পাঁচ-দশ হাজার টাকা দেওয়া হয় কিন্তু
কয়েকদিন পরেই অন্য আরেকটি অস্বাভাবিকতা
পূর্বের অস্বাভাবিকতাকে চাপা দিয়ে দেয় ।
দায়িত্বশীলদের মত সাধারণের স্মরণশক্তি
সীমাবদ্ধ না হওয়ায় তাদের পক্ষ থেকে স্বাভাবিক
মৃত্যু নিশ্চিতের গ্যারান্টি পেতে কিছুটা
আন্দোলনও হয় তবে দায়িত্বশীলরা যেন
অতীতের অস্বাভাবিক ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে
ভবিষ্যতের অস্বাভাবিকতা বন্ধ করতে একেবারেই
নারাজ !
বিষয়: বিবিধ
১১০৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন