বিপরীত মত - জামায়াত নিষিদ্বের তোড়জোড়ঃ মৌলবাদি্দের আসন্ন সুদিন প্রসংগে-মাহবুব সুয়েদ
লিখেছেন লিখেছেন সমশেরনামা ০৮ নভেম্বর, ২০১৭, ০৪:৫৫:১০ বিকাল
(২০১৩ সালের লেখাটি।এই ব্লগে লিখেছিলাম কিন্তু আইডিটি এখন আর হাতে নেই।কাজে হারিয়ে যাওয়ার আশংকায় রি-পোস্ট করলাম)
প্রাক কথন -
বৃটিশ ভারতে আধুনিক ইসলামী জীবনাদর্শের দর্শনে আকৃষ্ট তরুন চিন্তাবিদ মরহুম মাওলানা মওদুদী কতৃক প্রতিষ্টিত সংগঠন 'জামায়াতে ইসলামী'।'মাওলানা ভারতীয় মুসলমানদের কাছে প্রচলিত ধারার বিপরীতে ইসলামী রাজনীতি,ইসলামী অর্থনীতি,সমরনীতি,পররাষ্ট্রনীতি,শাসন ব্যবস্থা,বিচার বিভাগ,ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা ইত্যাদির উপর ব্যপক লেখালেখির এবং বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তৃতার মাধ্যমে গোটা উপমহাদেশে বিশেষকরে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত যুবসমাজের কাছে ব্যপক জনপ্রিয়তা লাভ করে ফেলেন এবং যার ফলশ্রুতিতে ১৯৪১ সালে তিনি জামায়াত নামক দলটি গঠন করেন'।'তৎকালিন সময়ে জামায়াতের কর্মসুচি হিসেবে যেসমস্ত বিষয়াদি গ্রহন করা হয় তার মাঝে অন্যতম ছিল রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহন'।'প্রতিষ্টার পর থেকেই জামায়াতকে রাজনৈতিক ময়দানে অনেক প্রতিকুল অবস্থার মুকাবেলা করতে হয়েছে এবং আজ অবধি হচ্ছে'।'দলটির নিজস্ব কার্যপদ্বতি থাকার কারনে একদিকে যেমন সরকারি রোষনালের মুখে পড়ত অপরদিকে ধর্মীয় মহল অর্থ্যাৎ বড়বড় আলেমদের ও প্রচুর সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে বিশেষ করে উপমহাদেশের বৃহৎ ও প্রাচীন ইসলামী বিদ্যাপিট দারুল উলুম দেওবন্দের উলামাদের প্রচুর বিরোধীতার সম্মুখিন হয়েছে এবং আজ অবধি ও হচ্ছে'।'নানা প্রতিকুলতার মোকাবেলা করে জামায়াত বা এর ভাবাদর্শে বিশ্বাসীরা এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে সুপ্রতিষ্টিত অবস্থায় বিদ্যমান'।'পাকিস্থানে স্বনামে পাকিস্থানের রাজনীতির অন্যতম ফেক্টর হয়ে উঠেছে এখন জামায়াত এমনকি একটি প্রদেশে তাদের সরকার ও প্রতিষ্টিত'।'ভারতে জামায়াত'ওয়েল ফেয়ার পার্টি'নামে রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালাচ্ছে'।'শ্রীলংকা এবং নেপালে ও তাদের কার্যক্রম আছে যতদুর জানি'।'মিশরের ক্ষমতাসীন ব্রাদারহুড এবং তুরস্কের একে পার্টি ও জামায়াত এগুলো একিভাবাদর্শের অনুসারী'।'
বাংলাদেশে র স্বাধিনতা আন্দোলন এবং জামায়াত -
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমানে সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী'।'মরহুম মাওলানা আব্দুর রহিম সাহেবের হাত ধরে পঞ্চাশের দশকের শুরুতে তৎকালীন পুর্ব পাকিস্থানে জামায়াতের কার্যক্রম শুরু হয়'।'মাওলানা মওদুদীর মত আব্দুর রহিম সাহেব ও ছিলেন ইসলামী জ্ঞানের পাশাপাশি আধুনিক ও যুগোপযোগি শিক্ষায় শিক্ষিত'।'তার দক্ষ সাংগঠনিক পরিচালনায় বাংলায় জামায়াতের রাজনীতিতে বেশ কিছু কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুনের আগমন ঘঠে এবং একিসাথে ছাত্রসংঘ নামে তাদের ছাত্র সংগঠন ও চালু হয়'।'মুসলিম লীগ,আওয়ামী মুসলিম লীগ(পরে আওয়ামীলিগ),নেজামে ইসলাম পার্টির সাথে জামায়াত ও পাল্লা ধরে বাংলা তথা পুর্ব পাকিস্থানে তাদের কার্যক্রম চালাতে থাকে এবং ৭০ এর সাধারন নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে'।'শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধিন পুর্ব পাকিস্থানে আওয়ামীলিগ একক সংখ্যা গরিষ্টতা পেলেও পশ্চিম পাকিস্থানিরা তার হাতে ক্ষমতা দিতে অস্বীকার করে বসে'।' বাঙ্গালিরা চিরবিদ্রোহী তাই পশ্চিম পাকিস্থানিদের এই একগোয়েমি এবং তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পুর্ব পাকিস্থানকে আলাদা করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্টার আন্দোলন শুরু করে দেয়'।'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তা তখন আকাশচুম্বি তিনি রেসকোর্সের ময়দানে সকল বাঙ্গালিকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দিলে ছাত্র জনতা তাতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলে কিন্তু দুঃখের বিষয় হল মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানির নেতৃত্বাধিন ন্যাপ এবং কমিউনিষ্টপন্থিদের বাইরে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো অনাকাংখিত ভুমিকা গ্রহন করে'।'মুসলিম লীগ,জামায়াতে ইসলামী,পিডিপি,নেজামে ইসলামী প্রমুখ দলগুলো স্বাধিনতা আন্দোলনের বিরুধীতা করে এবং ইসলাম এবং ভারতীয় আগ্রাসনের ভয় দেখিয়ে জন সাধারনকেও স্বাধিনতা আন্দোলনে অংশ না নিতে প্রচারনা চালায়'।'সরকারের নির্দেশে রাজাকার বাহীনিতে ও এই দলগুলো অংশ নেয়'।'পুর্ব পাকিস্থান জামায়াতের আমির তখন ছিলেন ঢাকসুর সাবেক জিএস অধ্যাপক গোলাম আজম এবং ইউনাইটেড পাকিস্থানের পক্ষে তার ভুমিকা ছিল উল্লেখ করার মত'।'স্বাধিন বাংলাদেশ প্রতিষ্টার যারা বিরোধী ছিলেন তাদের মধ্যে জনাব নুরুল আমিনের ভুমিকা ছিল সবচেয়ে জগন্য এবং তিনি ৭১ সালের পরে পাকিস্থানে চলে যান পরে সেখানকার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হন'।'সিলেটের বাম নেতা মাহমুদ আলি,পার্বত্য চট্রগ্রামের রাজা ত্রিদিব রায়,ফজলুল কাদের চৌঃ,খান সবুর খান,শিল্পপতি সালমান এফ রহমানের বাবা মৌলভি ফজলুর রাহমা্ন,বর্তমান মন্ত্রী মোশাররাফ হুসেন ও তার বাবা,সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মান্নান,মাওলানা নুরুল ইসলাম,মাওলানা নিজামী,মাওলানা ইসহাক এবং মাওলানা একে এম ইউসুফ সহ এদের ভুমিকা ও ছিল দুঃখজনক'।'নিজ জাতির এত বড় একটি বিপদের সময় এবং এত বড় অর্জনের অংশিদার তারা হতে পারলেননা বরং কেউ কেউ নিরব থাকলেন আবার কেউ কেউ এর ঘোর বিরুধী ভুমিকায় থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন'।'দলীয়ভাবে জামায়াতে ইসলামী জনগনের ভোটে নির্বাচিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে থাকলেও আলাদা স্বাধিন বাংলাদেশ প্রতিষ্টার বিরুধী ভুমিকায় ছিল'।'
বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং জামায়াত -
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ৫৬ হাজার বর্গমাইলের আমাদের এই প্রিয় মাতৃভুমি বিশ্বমানচিত্রে একটি স্বাধিন দেশ হিসেবে নিজের নাম লেখায়'।'৭১র পরে লাখো শহিদের রক্তে অর্জিত এই প্রিয় স্বাধিনতা আমাদের প্রিয় দেশ বাংলাদেশে স্বাধিনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধিন আওয়ামীলিগ সরকার গঠন করে এবং মুক্তিযুদ্বের বিরোধীতা করায় জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ব করে'।'স্বাধিনতার বিরোধীতাকারি অনেক বাঘা বাঘা নেতারা কেউ কেউ পাকিস্থানে চলে যান আবার অনেকে জেল খাটছিলেন অনেকে আবার রাজনীতি থেকে নিস্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন'।'জামায়াত তখন আন্ডার গ্রাউন্ডে দলীয় কার্যক্রম চালাতো'।' ৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর মাওলানা আব্দুর রহিম সাহেবের নেতৃত্বে আইডিএল নামে জামায়াত তার কার্যক্রম শুরু করে'।'শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময় অধ্যাপক গোলাম আজম পাকিস্থানি পাসপোর্ট নিয়ে দেশে আসলেন এবং জামায়াতের স্বনামে প্রকাশ্যে রাজনীতি শুরু করার উদ্যোগ নেন এবং তাতে মতবিরোধের ফলে মাওলানা আব্দুর রহিম সাহেব জামায়াত থেকে বেরিয়ে যান ও আইডিএলের নামে ই রাজনীতি শুরু করেন'।'তুখুড় বাগ্মি ও সুদুর প্রসারি চিন্তার অধিকারি মাওলানার যুক্তি ছিল যে,যেহেতু জামায়াত স্বাধিনতার বিরোধীতা করেছিল এবং বাংলার জনসাধারন ও তা জানে কাজেই এই নামে আর রাজনীতি করা উচিৎ হবেনা'।'সংস্কার ও মধ্যপন্থি একটি অংশ এই যুক্তি মেনে নিয়ে আইডিএল নামে ই কাজ করতে থাকেন এবং নির্বাচনে অংশ নিয়ে তৎকালিন সময়ে ৬টি আসনে আইডিএল বিজয়ী ও হয়'।'অপরদিকে অধ্যাপক গোলাম আজমকে আমির ও মরহুম আব্বাস আলি খানকে ভারপ্রাপ্ত আমির করে জামায়াত তার প্রকাশ্য কার্যক্রম শুরু করে'।' ১৯৮১ থেকে ৯০ সাল পর্যন্ত জামায়াত অন্যসব বিরোধী দলের মত রাজনীতি করে এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আওয়ামীলিগ জোটের সাথে লিয়াজো করে আন্দোলন চালিয়ে যায়'।'এই দ্বীর্ঘ সময়ে মুক্তিযুদ্বের সময়কার বিতর্কিত ভুমিকার কারনে জামায়াতকে কোন সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়নি'।'জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম আজম তিনি নিজে প্রকাশ্য রাজনীতিতে না এসে সংগঠনকে গোছানোর কাজে তৎপর থাকেন এবং রাজনৈতিক কার্যক্রমে মরহুম আব্বাস আলি খানকে ভারপ্রাপ্ত আমির এবং মাওলানা নিজামীকে সেক্রেটারী জেনারেল করে দলের কর্মসুচি চালাতে থাকেন'।' আব্বাস আলি খান সাহেব পাকিস্থানের শেষ মালেক মন্ত্রীসভার সদস্য থাকা স্বত্তেও কোনদিন ৯০সাল প্রযন্ত কেউ এদের বিরুদ্বে কোন কথা বলেনি'।'৯০এ স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর জামায়াতের মৌন সমর্থন নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া সরকার গঠন করার পর জামায়াত হঠাৎ করেই (এতদিন গোপন থাকা যদিও সবাই জানত) অধ্যাপক গোলাম আজমকে জামায়াতের আমির হিসেবে ঘোষনা করে'।'মহান স্বাধিনতা অর্জনের প্রায় বিশ বছর পর জামায়াতের এই সিদ্বান্ত জামায়াতকে বেকায়দায় ফেলে দেয়'।'মুক্তিযুদ্বে নিজের স্বামি ও দু পুত্র হারানো ও শহিদ জননি হিসেবে পরিচিত জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে 'ঘাতক দালাল নির্মুল কমিঠি'র ব্যনারে গোলাম আজমকে পাকিস্থানের নাগরিক ঘোষনা করে তাকে দেশ থেকে বহিস্কারের আন্দোলন শুরু হয় এবং গন আদালত নাম দিয়ে তার প্রতিকী ফাসিও দেওয়া হয়'।'এতে করে বেগম জিয়ার সরকার বিপাকে পড়ে তাকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়'।'বলা বাহুল্য একমাত্র মরহুম আব্দুর রাজ্জাক(আওয়ামীলিগ ছেড়ে ছিলেন পরে ফিরে আসেন) তার বাকশাল নিয়ে জাহানারা ইমামের সাথে আন্দোলনে কাজ করছিলেন কিন্তু আওয়ামীলিগের পক্ষথেকে সেই আন্দোলনে কোন প্রকার সক্রিয় অংশগ্রহন ছিলনা বরং আদালতের রায়ে অধ্যাপক আজম তার জন্মগত নাগরিকত্ব ফিরে পেলে আওয়ামীলিগ,জামায়াত ও জাতীয় পার্টি যৌথভাবে জামায়াতের আমির গোলাম আজমের প্রস্তাবিত রুপরেখার আলোকে তত্বাবধায়ক সরকারে জন্য যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে'।'আওয়ামীলিগ নেত্রীর কার্যালয়ে পাশাপাশি বসে মাওলানা নিজামী ও জাপা নেতা ব্যরিষ্টার মওদুদ একিসাথে আন্দোলন কর্মসুচী ঘোষনা করেন'।'বৃহৎ এই তিনদলের আন্দোলনের মুখে বেগম জিয়ার সরকারের পতনের পর ৯৬ সালে আওয়ামীলিগ নেত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেন'।'৯৬ টু ২০০১সাল পর্যন্ত ৫ বছর আওয়ামীলিগ সরকারে থাকলেও জামায়াতকে মুক্তিযুদ্বের বিরোধী ভুমিকার কারনে বিচারের কোন উদ্দ্যোগতো নেয়ইনি বরং জামালপুরের বিখ্যাত রাজাকার নুরু মাওলানাকে ধর্ম মন্ত্রী করে যার প্রতিবাদে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আওয়ামীলিগ ত্যাগ করেন'।'২০০১ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির সাথে এরশাদের জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ঐক্যগড়ে তোলে এবং নির্বাচনী এলায়েন্স চার দলীয় জোট গঠন করে'।'এরশাদ পরে জোট থেকে বেরিয়ে গেলেও দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদল সরকার গঠন করে'।'জোটের প্রধান শরিক জামায়াতকে বিএনপি দুইটি মন্ত্রৃত্ব ও দেয়'।'বিএনপি ও জামায়াতের এই জোটের কাছে নির্বাচনে হারার পর আওয়ামীলিগ আস্তে আস্তে জামায়াতকে মুক্তিযুদ্বের ভুমিকার কারনে দায়ী করা শুরু করে এবং ক্ষমতায় গেলে যুধ্বাপরাধীদের বিচারের ঘোষনা দেয়'।'যদিও রাজাকার নুরু মাওলানাকে আওয়ামীলিগ ৯৬এ মন্ত্রী করেছিল তবুও বিএনপিকে জামায়াতকে মন্ত্রীত্ব দেওয়ার দোষে দোষতে থাকে'।'সরকারে থাকার পাচ বছ্রে জামায়াত যে ব্যাপক সাংগঠনিক মজবুতি লাভ করে তাতে কারো দ্বিধা থাকার কথা নয়'।'মাঝখানে মঈন-ফখরুদ্দিনের দুই বছর অসাংবিধানিক সরকারের শাসনের পর ২০০৮ এর নির্বাচনে শেখ হাসিনা তার কমিউনিষ্ট নির্ভর সরকার গঠন করার পর যুদ্বাপরাধের বিচারের ঘোষনা দেন এবং জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করেন'।'বর্তমানে এই বিতর্কিত বিচারের কাজ চলছে এবং ইতিমধ্যে দুই মামলার রায় ও দেওয়া হয়েছে'।'শোনা যাচ্ছে এদের শুধু বিচার ই করা হবেনা সরকার জামায়াতকে ও নিষিদ্বের চেষ্টা করছেন এবং আইনি বিষাদি নিয়ে কাজও চলছে'।'
জামায়াতের আসন্ন সুদিন এবং - - -
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধিন কমিউনিষ্ট নির্ভর সরকার যদি মৌলবাদ এবং রাজনৈতিকভাবে দমনের উদ্দেশ্যে জামায়াতকে নিষিদ্ব করে তাহলে যেই মৌলবাদের দোহাই দিয়ে অথবা ভয়ে নিষিদ্ব করবে তাদের সুদিন যে অত্যাসন্ন তা সহজেই অনুমেয়'।'প্রায় দেড় কোটি লোকের সমর্থন নিয়ে চালিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ব করলে পরে এরা যে দ্রুত সামনে এগিয়ে যাবে সে ব্যাপারে আমার মনে বিন্দু মাত্র ও সন্দেহ নেই'।'প্রায় চল্লিশ বছর আগে জামায়াতের যেই কাজটি করা উচিৎ ছিল অর্থ্যাৎ নতুন নাম এবং নতুন নেতৃত্ব দিয়ে শুরু করা উচিত ছিল তা যদি সরকারের দ্বারাই করা হয় তাহলে জামায়াতেরই লাভ'।'জামায়াতের আভ্যন্তরে তরুনদের একটি অংশ দীর্ঘ দিন ধরে এই চেষ্টা চালিয়ে আসছে এবং মনে হয় তাদের সেই প্রচেষ্টা এবার সফল হতে শুরু করবে'।'প্রশ্ন আসবে জামায়াত যদি নতুন নামে দল গঠন করে তাহলে তাদের জনশক্তির সকলে কি তাতে যোগ দিবে অথবা এর নেতৃত্বই বা কারা দিবে কারন শীর্ষ সকল নেতারই তো বিচার চলছে'।'আমাদের সবারি প্রায় জানা যে,জামায়াত বা শিবির যারা করে তারা নির্দিষ্ট একটি আদর্শকে ধারন করে রাজনীতি করে'।'তাদের ভাষায় তারা ইকামতে দ্বীনের আন্দোলন তারা করছেন এবং এই আন্দোলনে তারা মরলে শহীদ আর বাচলে গাজী এই থিওরীতে বিশ্বাস করে'।'তাদের মুল আন্দোলন হচ্ছে মূলত 'ইসলামী আন্দোলন' কাজেই নাম যে যেকোন কিছু হোক তা তাদের কাছে কোন ফেক্টর নয়'।'নয়া নামে নয়া দল হলে যারা জামায়াত বা শিবির করে তারা যে তাতে অটোমেটিকভাবে যোগ দিয়ে দেবে তাতে কোন স্বন্দেহ না থাকার কথা'।' মিশরে ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ব করলে তারা জাষ্টিস পার্টি নামে রাজনীতি করতে শুরু করে এবং এখন সেদেশে তারা ক্ষমতায় একিভাবে তুরস্কেও ইসলামপন্থী নেতা নাজিমুদ্দিন আরবাকানের দল সেদেশের সেক্যুলার সরকার নিষিদ্ব করলে তারা একে পার্টি নামে রাজনীতি শুরু করে এবং বর্তমানে তারা সেদেশের সরকার চালাচ্ছে'।' জামায়াত নিষিদ্বের সম্ভাব্য ইতিবাচক দিকগুলো নিম্নে তুলে ধরছি।
এক-অনেকটা সেকেলে হয়ে যাওয়া নাম'জামায়াতে ইসলামী'কে পরিবর্তন করে করে তুরস্ক/ইজিপ্ট স্টাইলে মডার্ন কোন নাম দিয়ে জামায়াত তাদের কার্যক্রম শুরু করবে এতে করে অতীতের কোন অপবাদ তাদের বইতে হবেনা'।'
দুই- সারাদেশে নতুন এবং তরুনদেরকে নেতৃত্বে বসানো হবে এক্ষেত্রে ৮০র দশকের ছাত্রনেতাদের থেকে শুরু করে ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদেরকে নেতৃত্বে আনা হবে'।'লক্ষ্যনীয় যে,জামায়াত তার প্রতিষ্টার পর থেকে বাংলাদেশে এতবড় রাজনৈতিক সংকঠে কখনো পড়েনি এবং এমনভাবে দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষনেতাদের কারাগারেও থাকতে হয়নি'।'সারাদেশে কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃনমুল পর্যায়ে প্রায় সব নেতাই কারাগারে বন্দি থাকা স্বত্বেও জামায়াত-শিবির এককভাবে একদিকে সরকারের পুলিশ বাহিনি অপরদিকে ছাত্রলীগ,যুবলীগ,আওয়ামীলিগ সহ চৌদ্দদলের বামদেরকে মাত্র কিছুদিন আগেও যারা ছাত্ররাজনীতি করত এবং জামায়াতের মহানগরী পর্যায়ে নেতৃত্বে ছিল তাদের নেতৃত্বে যেই শক্ত প্রতিরুধ/প্রতিবাদী আন্দোলন করছে তাতে এটি প্রমান হয় যেকোন লেভেলের কাউকে নেতৃত্বে বসানো হলে দলের তৃনমুলে এর কোন প্রভাব পড়বেনা'।'কাওরন জামায়াত-শিবিরের কর্মিরা নেতার আনুগত্যকে ইসলামের ফরজগুলোর অন্যতম মনে করে'।'
তিন- ইসলামী জীবনাদর্শে বিশ্বাসী আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত যুবসমাজ এতদিন যারা রাজাকারদের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল ছিলনা তারা মোঠামোঠি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এই নতুন দলকে তৃত্বিয় শক্তি হিসেবে ধরে নিলে আশ্চর্য্য হওয়া্র কিছু নেই'।'পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির বাইরে যদি শক্তিশালি কোন দল বেরিয়ে আসে তাহলে অনেকেই আস্থা স্থাপন করতে পারে'।'
চার- নতুন নাম,নতুন নেতৃত্বের কারনে খুব দ্রুত এই দল দেশের অন্যতম মেইন ফেক্টর হয়ে উঠতে পারে তার সম্ভাবনা অনেক বেশী'।'
শেষকথা -
পরিবারতান্ত্রিক ও ফ্যসিবাদি রাজনৈতিক সংস্কৃতির বাইরে কোন অপবাদমুক্ত নতুন কোন রাজনৈতিকদল বা শক্তির আগমনকে আর কেউ যেভাবে ই নেক না কেন য়ামি অধম মন থেকে তাকে সমর্থন করব এবং এটি আমার কামনা এবং বিশ্বাসও বঠে'।'
প্রাক কথন -
বৃটিশ ভারতে আধুনিক ইসলামী জীবনাদর্শের দর্শনে আকৃষ্ট তরুন চিন্তাবিদ মরহুম মাওলানা মওদুদী কতৃক প্রতিষ্টিত সংগঠন 'জামায়াতে ইসলামী'।'মাওলানা ভারতীয় মুসলমানদের কাছে প্রচলিত ধারার বিপরীতে ইসলামী রাজনীতি,ইসলামী অর্থনীতি,সমরনীতি,পররাষ্ট্রনীতি,শাসন ব্যবস্থা,বিচার বিভাগ,ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা ইত্যাদির উপর ব্যপক লেখালেখির এবং বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তৃতার মাধ্যমে গোটা উপমহাদেশে বিশেষকরে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত যুবসমাজের কাছে ব্যপক জনপ্রিয়তা লাভ করে ফেলেন এবং যার ফলশ্রুতিতে ১৯৪১ সালে তিনি জামায়াত নামক দলটি গঠন করেন'।'তৎকালিন সময়ে জামায়াতের কর্মসুচি হিসেবে যেসমস্ত বিষয়াদি গ্রহন করা হয় তার মাঝে অন্যতম ছিল রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহন'।'প্রতিষ্টার পর থেকেই জামায়াতকে রাজনৈতিক ময়দানে অনেক প্রতিকুল অবস্থার মুকাবেলা করতে হয়েছে এবং আজ অবধি হচ্ছে'।'দলটির নিজস্ব কার্যপদ্বতি থাকার কারনে একদিকে যেমন সরকারি রোষনালের মুখে পড়ত অপরদিকে ধর্মীয় মহল অর্থ্যাৎ বড়বড় আলেমদের ও প্রচুর সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে বিশেষ করে উপমহাদেশের বৃহৎ ও প্রাচীন ইসলামী বিদ্যাপিট দারুল উলুম দেওবন্দের উলামাদের প্রচুর বিরোধীতার সম্মুখিন হয়েছে এবং আজ অবধি ও হচ্ছে'।'নানা প্রতিকুলতার মোকাবেলা করে জামায়াত বা এর ভাবাদর্শে বিশ্বাসীরা এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে সুপ্রতিষ্টিত অবস্থায় বিদ্যমান'।'পাকিস্থানে স্বনামে পাকিস্থানের রাজনীতির অন্যতম ফেক্টর হয়ে উঠেছে এখন জামায়াত এমনকি একটি প্রদেশে তাদের সরকার ও প্রতিষ্টিত'।'ভারতে জামায়াত'ওয়েল ফেয়ার পার্টি'নামে রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালাচ্ছে'।'শ্রীলংকা এবং নেপালে ও তাদের কার্যক্রম আছে যতদুর জানি'।'মিশরের ক্ষমতাসীন ব্রাদারহুড এবং তুরস্কের একে পার্টি ও জামায়াত এগুলো একিভাবাদর্শের অনুসারী'।'
বাংলাদেশে র স্বাধিনতা আন্দোলন এবং জামায়াত -
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমানে সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী'।'মরহুম মাওলানা আব্দুর রহিম সাহেবের হাত ধরে পঞ্চাশের দশকের শুরুতে তৎকালীন পুর্ব পাকিস্থানে জামায়াতের কার্যক্রম শুরু হয়'।'মাওলানা মওদুদীর মত আব্দুর রহিম সাহেব ও ছিলেন ইসলামী জ্ঞানের পাশাপাশি আধুনিক ও যুগোপযোগি শিক্ষায় শিক্ষিত'।'তার দক্ষ সাংগঠনিক পরিচালনায় বাংলায় জামায়াতের রাজনীতিতে বেশ কিছু কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুনের আগমন ঘঠে এবং একিসাথে ছাত্রসংঘ নামে তাদের ছাত্র সংগঠন ও চালু হয়'।'মুসলিম লীগ,আওয়ামী মুসলিম লীগ(পরে আওয়ামীলিগ),নেজামে ইসলাম পার্টির সাথে জামায়াত ও পাল্লা ধরে বাংলা তথা পুর্ব পাকিস্থানে তাদের কার্যক্রম চালাতে থাকে এবং ৭০ এর সাধারন নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে'।'শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধিন পুর্ব পাকিস্থানে আওয়ামীলিগ একক সংখ্যা গরিষ্টতা পেলেও পশ্চিম পাকিস্থানিরা তার হাতে ক্ষমতা দিতে অস্বীকার করে বসে'।' বাঙ্গালিরা চিরবিদ্রোহী তাই পশ্চিম পাকিস্থানিদের এই একগোয়েমি এবং তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে পুর্ব পাকিস্থানকে আলাদা করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্টার আন্দোলন শুরু করে দেয়'।'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তা তখন আকাশচুম্বি তিনি রেসকোর্সের ময়দানে সকল বাঙ্গালিকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দিলে ছাত্র জনতা তাতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলে কিন্তু দুঃখের বিষয় হল মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানির নেতৃত্বাধিন ন্যাপ এবং কমিউনিষ্টপন্থিদের বাইরে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো অনাকাংখিত ভুমিকা গ্রহন করে'।'মুসলিম লীগ,জামায়াতে ইসলামী,পিডিপি,নেজামে ইসলামী প্রমুখ দলগুলো স্বাধিনতা আন্দোলনের বিরুধীতা করে এবং ইসলাম এবং ভারতীয় আগ্রাসনের ভয় দেখিয়ে জন সাধারনকেও স্বাধিনতা আন্দোলনে অংশ না নিতে প্রচারনা চালায়'।'সরকারের নির্দেশে রাজাকার বাহীনিতে ও এই দলগুলো অংশ নেয়'।'পুর্ব পাকিস্থান জামায়াতের আমির তখন ছিলেন ঢাকসুর সাবেক জিএস অধ্যাপক গোলাম আজম এবং ইউনাইটেড পাকিস্থানের পক্ষে তার ভুমিকা ছিল উল্লেখ করার মত'।'স্বাধিন বাংলাদেশ প্রতিষ্টার যারা বিরোধী ছিলেন তাদের মধ্যে জনাব নুরুল আমিনের ভুমিকা ছিল সবচেয়ে জগন্য এবং তিনি ৭১ সালের পরে পাকিস্থানে চলে যান পরে সেখানকার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হন'।'সিলেটের বাম নেতা মাহমুদ আলি,পার্বত্য চট্রগ্রামের রাজা ত্রিদিব রায়,ফজলুল কাদের চৌঃ,খান সবুর খান,শিল্পপতি সালমান এফ রহমানের বাবা মৌলভি ফজলুর রাহমা্ন,বর্তমান মন্ত্রী মোশাররাফ হুসেন ও তার বাবা,সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মান্নান,মাওলানা নুরুল ইসলাম,মাওলানা নিজামী,মাওলানা ইসহাক এবং মাওলানা একে এম ইউসুফ সহ এদের ভুমিকা ও ছিল দুঃখজনক'।'নিজ জাতির এত বড় একটি বিপদের সময় এবং এত বড় অর্জনের অংশিদার তারা হতে পারলেননা বরং কেউ কেউ নিরব থাকলেন আবার কেউ কেউ এর ঘোর বিরুধী ভুমিকায় থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন'।'দলীয়ভাবে জামায়াতে ইসলামী জনগনের ভোটে নির্বাচিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে থাকলেও আলাদা স্বাধিন বাংলাদেশ প্রতিষ্টার বিরুধী ভুমিকায় ছিল'।'
বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং জামায়াত -
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ৫৬ হাজার বর্গমাইলের আমাদের এই প্রিয় মাতৃভুমি বিশ্বমানচিত্রে একটি স্বাধিন দেশ হিসেবে নিজের নাম লেখায়'।'৭১র পরে লাখো শহিদের রক্তে অর্জিত এই প্রিয় স্বাধিনতা আমাদের প্রিয় দেশ বাংলাদেশে স্বাধিনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধিন আওয়ামীলিগ সরকার গঠন করে এবং মুক্তিযুদ্বের বিরোধীতা করায় জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ব করে'।'স্বাধিনতার বিরোধীতাকারি অনেক বাঘা বাঘা নেতারা কেউ কেউ পাকিস্থানে চলে যান আবার অনেকে জেল খাটছিলেন অনেকে আবার রাজনীতি থেকে নিস্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন'।'জামায়াত তখন আন্ডার গ্রাউন্ডে দলীয় কার্যক্রম চালাতো'।' ৭৫ সালের পটপরিবর্তনের পর মাওলানা আব্দুর রহিম সাহেবের নেতৃত্বে আইডিএল নামে জামায়াত তার কার্যক্রম শুরু করে'।'শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময় অধ্যাপক গোলাম আজম পাকিস্থানি পাসপোর্ট নিয়ে দেশে আসলেন এবং জামায়াতের স্বনামে প্রকাশ্যে রাজনীতি শুরু করার উদ্যোগ নেন এবং তাতে মতবিরোধের ফলে মাওলানা আব্দুর রহিম সাহেব জামায়াত থেকে বেরিয়ে যান ও আইডিএলের নামে ই রাজনীতি শুরু করেন'।'তুখুড় বাগ্মি ও সুদুর প্রসারি চিন্তার অধিকারি মাওলানার যুক্তি ছিল যে,যেহেতু জামায়াত স্বাধিনতার বিরোধীতা করেছিল এবং বাংলার জনসাধারন ও তা জানে কাজেই এই নামে আর রাজনীতি করা উচিৎ হবেনা'।'সংস্কার ও মধ্যপন্থি একটি অংশ এই যুক্তি মেনে নিয়ে আইডিএল নামে ই কাজ করতে থাকেন এবং নির্বাচনে অংশ নিয়ে তৎকালিন সময়ে ৬টি আসনে আইডিএল বিজয়ী ও হয়'।'অপরদিকে অধ্যাপক গোলাম আজমকে আমির ও মরহুম আব্বাস আলি খানকে ভারপ্রাপ্ত আমির করে জামায়াত তার প্রকাশ্য কার্যক্রম শুরু করে'।' ১৯৮১ থেকে ৯০ সাল পর্যন্ত জামায়াত অন্যসব বিরোধী দলের মত রাজনীতি করে এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আওয়ামীলিগ জোটের সাথে লিয়াজো করে আন্দোলন চালিয়ে যায়'।'এই দ্বীর্ঘ সময়ে মুক্তিযুদ্বের সময়কার বিতর্কিত ভুমিকার কারনে জামায়াতকে কোন সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়নি'।'জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম আজম তিনি নিজে প্রকাশ্য রাজনীতিতে না এসে সংগঠনকে গোছানোর কাজে তৎপর থাকেন এবং রাজনৈতিক কার্যক্রমে মরহুম আব্বাস আলি খানকে ভারপ্রাপ্ত আমির এবং মাওলানা নিজামীকে সেক্রেটারী জেনারেল করে দলের কর্মসুচি চালাতে থাকেন'।' আব্বাস আলি খান সাহেব পাকিস্থানের শেষ মালেক মন্ত্রীসভার সদস্য থাকা স্বত্তেও কোনদিন ৯০সাল প্রযন্ত কেউ এদের বিরুদ্বে কোন কথা বলেনি'।'৯০এ স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর জামায়াতের মৌন সমর্থন নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া সরকার গঠন করার পর জামায়াত হঠাৎ করেই (এতদিন গোপন থাকা যদিও সবাই জানত) অধ্যাপক গোলাম আজমকে জামায়াতের আমির হিসেবে ঘোষনা করে'।'মহান স্বাধিনতা অর্জনের প্রায় বিশ বছর পর জামায়াতের এই সিদ্বান্ত জামায়াতকে বেকায়দায় ফেলে দেয়'।'মুক্তিযুদ্বে নিজের স্বামি ও দু পুত্র হারানো ও শহিদ জননি হিসেবে পরিচিত জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে 'ঘাতক দালাল নির্মুল কমিঠি'র ব্যনারে গোলাম আজমকে পাকিস্থানের নাগরিক ঘোষনা করে তাকে দেশ থেকে বহিস্কারের আন্দোলন শুরু হয় এবং গন আদালত নাম দিয়ে তার প্রতিকী ফাসিও দেওয়া হয়'।'এতে করে বেগম জিয়ার সরকার বিপাকে পড়ে তাকে গ্রেফতার করতে বাধ্য হয়'।'বলা বাহুল্য একমাত্র মরহুম আব্দুর রাজ্জাক(আওয়ামীলিগ ছেড়ে ছিলেন পরে ফিরে আসেন) তার বাকশাল নিয়ে জাহানারা ইমামের সাথে আন্দোলনে কাজ করছিলেন কিন্তু আওয়ামীলিগের পক্ষথেকে সেই আন্দোলনে কোন প্রকার সক্রিয় অংশগ্রহন ছিলনা বরং আদালতের রায়ে অধ্যাপক আজম তার জন্মগত নাগরিকত্ব ফিরে পেলে আওয়ামীলিগ,জামায়াত ও জাতীয় পার্টি যৌথভাবে জামায়াতের আমির গোলাম আজমের প্রস্তাবিত রুপরেখার আলোকে তত্বাবধায়ক সরকারে জন্য যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে'।'আওয়ামীলিগ নেত্রীর কার্যালয়ে পাশাপাশি বসে মাওলানা নিজামী ও জাপা নেতা ব্যরিষ্টার মওদুদ একিসাথে আন্দোলন কর্মসুচী ঘোষনা করেন'।'বৃহৎ এই তিনদলের আন্দোলনের মুখে বেগম জিয়ার সরকারের পতনের পর ৯৬ সালে আওয়ামীলিগ নেত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেন'।'৯৬ টু ২০০১সাল পর্যন্ত ৫ বছর আওয়ামীলিগ সরকারে থাকলেও জামায়াতকে মুক্তিযুদ্বের বিরোধী ভুমিকার কারনে বিচারের কোন উদ্দ্যোগতো নেয়ইনি বরং জামালপুরের বিখ্যাত রাজাকার নুরু মাওলানাকে ধর্ম মন্ত্রী করে যার প্রতিবাদে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী আওয়ামীলিগ ত্যাগ করেন'।'২০০১ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির সাথে এরশাদের জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ঐক্যগড়ে তোলে এবং নির্বাচনী এলায়েন্স চার দলীয় জোট গঠন করে'।'এরশাদ পরে জোট থেকে বেরিয়ে গেলেও দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদল সরকার গঠন করে'।'জোটের প্রধান শরিক জামায়াতকে বিএনপি দুইটি মন্ত্রৃত্ব ও দেয়'।'বিএনপি ও জামায়াতের এই জোটের কাছে নির্বাচনে হারার পর আওয়ামীলিগ আস্তে আস্তে জামায়াতকে মুক্তিযুদ্বের ভুমিকার কারনে দায়ী করা শুরু করে এবং ক্ষমতায় গেলে যুধ্বাপরাধীদের বিচারের ঘোষনা দেয়'।'যদিও রাজাকার নুরু মাওলানাকে আওয়ামীলিগ ৯৬এ মন্ত্রী করেছিল তবুও বিএনপিকে জামায়াতকে মন্ত্রীত্ব দেওয়ার দোষে দোষতে থাকে'।'সরকারে থাকার পাচ বছ্রে জামায়াত যে ব্যাপক সাংগঠনিক মজবুতি লাভ করে তাতে কারো দ্বিধা থাকার কথা নয়'।'মাঝখানে মঈন-ফখরুদ্দিনের দুই বছর অসাংবিধানিক সরকারের শাসনের পর ২০০৮ এর নির্বাচনে শেখ হাসিনা তার কমিউনিষ্ট নির্ভর সরকার গঠন করার পর যুদ্বাপরাধের বিচারের ঘোষনা দেন এবং জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করেন'।'বর্তমানে এই বিতর্কিত বিচারের কাজ চলছে এবং ইতিমধ্যে দুই মামলার রায় ও দেওয়া হয়েছে'।'শোনা যাচ্ছে এদের শুধু বিচার ই করা হবেনা সরকার জামায়াতকে ও নিষিদ্বের চেষ্টা করছেন এবং আইনি বিষাদি নিয়ে কাজও চলছে'।'
জামায়াতের আসন্ন সুদিন এবং - - -
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধিন কমিউনিষ্ট নির্ভর সরকার যদি মৌলবাদ এবং রাজনৈতিকভাবে দমনের উদ্দেশ্যে জামায়াতকে নিষিদ্ব করে তাহলে যেই মৌলবাদের দোহাই দিয়ে অথবা ভয়ে নিষিদ্ব করবে তাদের সুদিন যে অত্যাসন্ন তা সহজেই অনুমেয়'।'প্রায় দেড় কোটি লোকের সমর্থন নিয়ে চালিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ব করলে পরে এরা যে দ্রুত সামনে এগিয়ে যাবে সে ব্যাপারে আমার মনে বিন্দু মাত্র ও সন্দেহ নেই'।'প্রায় চল্লিশ বছর আগে জামায়াতের যেই কাজটি করা উচিৎ ছিল অর্থ্যাৎ নতুন নাম এবং নতুন নেতৃত্ব দিয়ে শুরু করা উচিত ছিল তা যদি সরকারের দ্বারাই করা হয় তাহলে জামায়াতেরই লাভ'।'জামায়াতের আভ্যন্তরে তরুনদের একটি অংশ দীর্ঘ দিন ধরে এই চেষ্টা চালিয়ে আসছে এবং মনে হয় তাদের সেই প্রচেষ্টা এবার সফল হতে শুরু করবে'।'প্রশ্ন আসবে জামায়াত যদি নতুন নামে দল গঠন করে তাহলে তাদের জনশক্তির সকলে কি তাতে যোগ দিবে অথবা এর নেতৃত্বই বা কারা দিবে কারন শীর্ষ সকল নেতারই তো বিচার চলছে'।'আমাদের সবারি প্রায় জানা যে,জামায়াত বা শিবির যারা করে তারা নির্দিষ্ট একটি আদর্শকে ধারন করে রাজনীতি করে'।'তাদের ভাষায় তারা ইকামতে দ্বীনের আন্দোলন তারা করছেন এবং এই আন্দোলনে তারা মরলে শহীদ আর বাচলে গাজী এই থিওরীতে বিশ্বাস করে'।'তাদের মুল আন্দোলন হচ্ছে মূলত 'ইসলামী আন্দোলন' কাজেই নাম যে যেকোন কিছু হোক তা তাদের কাছে কোন ফেক্টর নয়'।'নয়া নামে নয়া দল হলে যারা জামায়াত বা শিবির করে তারা যে তাতে অটোমেটিকভাবে যোগ দিয়ে দেবে তাতে কোন স্বন্দেহ না থাকার কথা'।' মিশরে ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ব করলে তারা জাষ্টিস পার্টি নামে রাজনীতি করতে শুরু করে এবং এখন সেদেশে তারা ক্ষমতায় একিভাবে তুরস্কেও ইসলামপন্থী নেতা নাজিমুদ্দিন আরবাকানের দল সেদেশের সেক্যুলার সরকার নিষিদ্ব করলে তারা একে পার্টি নামে রাজনীতি শুরু করে এবং বর্তমানে তারা সেদেশের সরকার চালাচ্ছে'।' জামায়াত নিষিদ্বের সম্ভাব্য ইতিবাচক দিকগুলো নিম্নে তুলে ধরছি।
এক-অনেকটা সেকেলে হয়ে যাওয়া নাম'জামায়াতে ইসলামী'কে পরিবর্তন করে করে তুরস্ক/ইজিপ্ট স্টাইলে মডার্ন কোন নাম দিয়ে জামায়াত তাদের কার্যক্রম শুরু করবে এতে করে অতীতের কোন অপবাদ তাদের বইতে হবেনা'।'
দুই- সারাদেশে নতুন এবং তরুনদেরকে নেতৃত্বে বসানো হবে এক্ষেত্রে ৮০র দশকের ছাত্রনেতাদের থেকে শুরু করে ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদেরকে নেতৃত্বে আনা হবে'।'লক্ষ্যনীয় যে,জামায়াত তার প্রতিষ্টার পর থেকে বাংলাদেশে এতবড় রাজনৈতিক সংকঠে কখনো পড়েনি এবং এমনভাবে দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষনেতাদের কারাগারেও থাকতে হয়নি'।'সারাদেশে কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃনমুল পর্যায়ে প্রায় সব নেতাই কারাগারে বন্দি থাকা স্বত্বেও জামায়াত-শিবির এককভাবে একদিকে সরকারের পুলিশ বাহিনি অপরদিকে ছাত্রলীগ,যুবলীগ,আওয়ামীলিগ সহ চৌদ্দদলের বামদেরকে মাত্র কিছুদিন আগেও যারা ছাত্ররাজনীতি করত এবং জামায়াতের মহানগরী পর্যায়ে নেতৃত্বে ছিল তাদের নেতৃত্বে যেই শক্ত প্রতিরুধ/প্রতিবাদী আন্দোলন করছে তাতে এটি প্রমান হয় যেকোন লেভেলের কাউকে নেতৃত্বে বসানো হলে দলের তৃনমুলে এর কোন প্রভাব পড়বেনা'।'কাওরন জামায়াত-শিবিরের কর্মিরা নেতার আনুগত্যকে ইসলামের ফরজগুলোর অন্যতম মনে করে'।'
তিন- ইসলামী জীবনাদর্শে বিশ্বাসী আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত যুবসমাজ এতদিন যারা রাজাকারদের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল ছিলনা তারা মোঠামোঠি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এই নতুন দলকে তৃত্বিয় শক্তি হিসেবে ধরে নিলে আশ্চর্য্য হওয়া্র কিছু নেই'।'পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির বাইরে যদি শক্তিশালি কোন দল বেরিয়ে আসে তাহলে অনেকেই আস্থা স্থাপন করতে পারে'।'
চার- নতুন নাম,নতুন নেতৃত্বের কারনে খুব দ্রুত এই দল দেশের অন্যতম মেইন ফেক্টর হয়ে উঠতে পারে তার সম্ভাবনা অনেক বেশী'।'
শেষকথা -
পরিবারতান্ত্রিক ও ফ্যসিবাদি রাজনৈতিক সংস্কৃতির বাইরে কোন অপবাদমুক্ত নতুন কোন রাজনৈতিকদল বা শক্তির আগমনকে আর কেউ যেভাবে ই নেক না কেন য়ামি অধম মন থেকে তাকে সমর্থন করব এবং এটি আমার কামনা এবং বিশ্বাসও বঠে'।'
বিষয়: রাজনীতি
বিষয়: রাজনীতি
১০৬১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন