বহতা নদী - মাহবুব সুয়েদ

লিখেছেন লিখেছেন সমশেরনামা ০৭ নভেম্বর, ২০১৭, ০৯:২৩:১৩ রাত

=ফুটফুটে দুই মেয়ে আর স্ত্রী রুমালিকে নিয়ে জব্বারের সংসার।তিন চাকার বেবী টেক্সি চালিয়েই আনা মিয়ার কলোনীতে তার তার সংসার চালাচ্ছে সে।প্রায় পনের বছর হয় তারা সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা সদরের এই আনা মিয়ার কলোনীতে বসবাস করে আসছে।প্রিয়তমা রুমালিকে বিয়ের পর থেকেই তারা এখানে আছে।কলোনীতে থাকলেও জব্বার অন্যসব বাসিন্দাদের থেকে কিছুটা আলাদা।স্ত্রী রুমালি আর সে অন্যসবার চেয়ে সামান্য আলাদাই।কলোনীর মালিক আনা মিয়া লন্ডনীও তাকে মুখ ভরে ভাতিজা বলে ডাকেন।সে আর রুমালি দুজনে নাম-দস্তখত করতে জানে।কলোনীর বাকি সব রিকশাওয়ালারা তাকে সমিহ করে চলে কিছুটা।প্রায় পঞ্চাশের উপর পরিবারের বাস এ কলোনীতে।তাদের যেকোন সমস্যায় তারা জব্বারের কাছেই আসে প্রথমে।জব্বারও চেষ্টা করে সবাইকে নিয়ে সুন্দর করে চলতে।লেখা পড়া কম হলেও ছোটবেলা থেকে সে দেখে এসেছে সামাজিক রীতি ও আচারানুষ্টান সমুহ।তাছাড়া স্ত্রী রুমালি ক্লাশ এইট পর্যন্ত পড়েছে।জব্বার তার ফুটফুটে দুই মেয়েকেই স্কুলে ভর্তি করিয়েছে।সাবিনা ও রুবিনা নাম রেখেছে মেয়েদের।স্কুলের মাষ্টাররা বলে তার মেয়েরা নাকি অনেক মেধাবী।জব্বার স্বপ্ন দেখে।নিজেরা কিছু না করলেও যে করে হোক সে তার মেয়েদের লেখাপড়া করাবে।স্কুলের শিক্ষিকা বানাবে তার স্বপ্ন।রাতে ঘুমানোর আগে বউয়ের সাথে প্রতিদিন এ নিয়ে কথা বলে জব্বার।বলে বউ,তুমি কত ভালো ছিলা পড়ালেখায়।চাচাজান কত স্বপ্ন দেখত তোমাকে পড়িয়ে অনেক বড় করবে বলে।কিন্তু দেখো তোমার-আমার ভালোবাসার কারনে তুমি পড়তে পারলানা আর বেশী। আমার স্বপ্ন আমাদের দুই মেয়েকেই পড়াব। স্কুলের ম্যডাম বানাবো।

==জব্বারের মূল বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়।অভবা অনটনের সংসারে বাপ মারা যাওয়ার পর সে জেলা শহরে চলে আসে এক মামার কাছে।সেই মামা শহরের নামকরা ডাক্তার শিবেন্দু বাবুর গাড়ি চালাতেন।তিনিই জব্বারকে শিবেন্দুর চেম্বারে সিরিয়াল ডাকার বয় হিসেবে চাকুরি ম্যানেজ করে দেন।জব্বার সেই ছোটবেলা থেকেই দেখতে নাকি রাজপুতের মত বলে শুনে আসছে।গায়ের চাচী-খালারাও তার মাকে বলত “শোন,জব্বারের মা তোমার ছেলে কিন্তু দেখতে রাজপুত্তুর”।জব্বারের মা তার কপালের পাশে কালো কালি মাখিয়ে রাখতেন পাছে কেউ নজর না দেয়।মা তাকে প্রায়ই বলত “গরীবের ঘরেরে বাবা তুই আমার রাজপুত্তুর জন্মেছিস”।টেকা পয়সা থাকলে তোরে আমি পড়াইতাম।জব্বারেরও অনেক শখ ছিল পড়ালেখা করবে।কিন্তু নিয়তি তাকে সে সুযোগ দেয়নি।শিবেন্দু বাবুর চেম্বারে প্রতিদিন বিকেল বেলা রুগী নাম্বার এ...ক, দু......ই করা আর রাত বারোটার দিকে শিবেন্দুর বাড়িতে গিয়ে তার মামার পাশে শুয়ে থাকাই প্রতিদিনের রুটিন।

==নামকরা ডাক্তার শিবেন্দু বাবুর তিন মেয়ের একজনই হচ্ছে আজকে জব্বারের স্ত্রী ও তার সুখ-দুঃখের সঙ্গি রুমালি।শিবেন্দুকে সে মুখ ভরে কাকা ডাকত আর তিনিও তাকে ভাতিজা বলে ডাকতেন।অনেক মায়াই করতেন শিবেন্দু ও উনার স্ত্রী উর্মিলা রানী।জব্বারের মনেই হতনা সে এ বাড়িতে চাকুরী করে অথবা সে ধর্মে মুসলিম।ডাক্তার সাহেবের পরিবারে তার অবাধ যাতায়াতই ছিল।কবে যে সে রুমালির প্রেমে পড়ে তা নিজেই জানেনা।তবে যেদিন রুমালি তাকে ডেকে নিয়ে বলেছিল “জব্বার ভাই তুমি অনেক সুন্দর।লেখা পড়া করলে তুমি অনেক বড় অফিসার হইতা” সেদিন সে কিছুটা বুঝতে পারছিল।সে ভাবছিল, আহা!যদি পড়ালেখা করতাম তাইলে তো এই রুমালিকে বিয়ে করতে পারতাম!...(চলবে)

বিষয়: সাহিত্য

৯১৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

384413
১০ নভেম্বর ২০১৭ সকাল ১১:৩০
হতভাগা লিখেছেন : চলবে....!! আজ ৩ দিন পার হয়ে গেল আরেকটা পর্ব কই ?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File