রক্তাক্ত বাসর - মাহবুব সুয়েদ

লিখেছেন লিখেছেন সমশেরনামা ৩০ জুলাই, ২০১৭, ০৭:২৯:৫৫ সকাল



(একটি ছোট গল্প লেখার প্রয়াস মাত্র)

>>নিমাই।সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বড়শাল্লা গ্রামের তাগড়া যুবক।ভালো নাম মোবারাক উল্লাহ।আশ পাশের দশ গ্রামের লোকজন তাকে নিমাই নামে চিনে।ছোট বড় সবাই ট্যরা নিমাইকে চিনে সেই যখন সে কুড়ি বছরের ছিল।চোখ বাকা বলে ট্যরা নিমাই ডাকে সবাই।তবে পুরো এলাকাজুড়ে পরিচিতি পাওয়ার পেছনে ছিল এক ইতিহাস।

>>তখন সে কুড়ি বছরের কিশোর।এলাকায় প্রতি বছরের ন্যায় সেবারও ঘোড়া দৌড়ের আয়োজন করা হয়েছে।দুর দুরান্ত থেকে ঘোড়া মালিকেরা ঘোড়া নিয়ে এসেছে।৩ দিন ব্যাপি ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতার পাশাপাশি মেলা ও বসে।পুরো এলাকায় সাজ সাজ রব পড়ে গেছে।গ্রামের মেয়েরা স্বামী বাড়ির সবাইকে নিয়ে বাপের বাড়িতে এসেছে মেলা দেখতে।দুরের স্বজনেরা ও এসেছে।গ্রামের মধ্যে বছরে দুইবার এরকম উতসব পালন হয়।গ্রামের পূর্বে দিশাখালী বাজার সংলগ্ন "মাদ্রাসা আনোয়ারুল উলুমের" বার্ষিক জলছার সময় আর এই ঘোড়া দৌড়ের সময়।যুবক, বৃদ্ব, শিশু-কিশোর সবাই মেয়ে উঠে আনন্দে।বাচ্ছারা মেলায় যায় খেলনা কিনে।যুবকেরা মেলায় যায় উতসবের মূল আয়োজন করে থাকে।নিমাই তার yবৃদ্ব দাদাজানের কাছ্র শুনেছে, মেলা আর ওয়াজ নাকি দাদাজান ও দেখে আসছেন ছোটবেলা থেকে।এই দুই সময় আসলে নাকি দাদাজানের ছোটবেলায় এমন আনন্দ উতসব পালন করা হত।দাদাজী বলেন, বুঝলি নিমাই।আমরা যখন তোদের মত ছিলাম তখন মাদ্রাসার জলছায় শিরনী বিতরনের দায়িত্ব ছিল আমাদের যুবকদের।শিরনী প্যাকেট ও করতাম আমরা।তবে আমি সবার আগে শিরনী খেয়ে দেখতাম সব ঠি'ক আছে কিনা।বলে দাদা হাসেন।দাদা আরো বলেন, আবার ঘোড়া দৌড়ের সময় আইলে আমরাই সব শৃংখলার ব্যাবস্থা নিতাম।নিমাই শুনে আর ভাবে আহা!কত মিল ছিল সেসময়ের ঘোড়ার দৌড় আর মাদ্রাসার জলছায়।তবে কেন এখন এমনটি হয়?

>>ভাবতে ভাবতে নিমাই সিদ্বান্ত নেয়।যে করে হোক গ্রামের যুবকদের নিয়ে সে কাল মাদ্রাসার বড় হুজুরের কাছে যাবে।তার দাদাজানের কথা বলে বুঝাবে যে, আপনার আব্বা কাবিল হুজুর থাকার সময়তো ঘোড়ার দৌড় আর মাদ্রাসার জলছা হত।কেউ বাধা দিতনা এরকমের মারামারি কাটাকাটিও হতনা।তবে কেন এবার আপনি ঘোড়ার দৌড়ের বিরুদ্বে কথা বলেন।নিমাই ভাবতে ভাবতে ঘুমানোর জন্যে চলে যায়

>>পরদিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে গায়ের যুবকদের সাথে করে নিমাই মাদ্রাসায় যায় বড় হুজুরের সাথে দেখা করতে।ফজরের নামাজ পড়ে হুজুর মাদ্রাসার সামনে পায়চারি করছিলেন।হাতে তসবিহ।দুর থেকেই বুঝা যাচ্ছে হুজুর খুব পেরেশানিতে আছেন মনে হয়।পেরেশানিতে আছেনই তো তিনি।আজ বাদ জোহর মাদ্রাসার সভা ঘরে এলাকার সব গন্যমান্য লোক জড়ো হওয়ার কথা।এখান থেকেই সিদ্বান্ত হবে এবার গ্রামে ঘোড়া দৌড় হবে কি না।প্রায় এক মাস ধরে শুধু তাদের বড়শাল্লা গ্রামে নয় ঘোড়া দৌড় নিয়ে সৃষ্ট এ উত্তেজনা গোটা এলাকায় বিরাজ করছে।দিশাখলী বাজারে বিকেল বেলা মানুষের মাঝে শুধু এ চর্চাই চলে।

>>হুজুরের সামনা সামনি হয়ে নিমাই সালাম দিল হুজুরকে।হুজুর ইশারায় সালামের জবাব দিলেন।হাতে তসবিহ টানছেন আর আর বিড় বিড় করে সুরা-কেরাত পড়ছেন।তাদেরকে ইশারা করলেন যাতে অপেক্ষা করে।হুজুরের চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে হুজুর খুশি নন তাদের উপর।কারন গ্রামের মুরব্বিদের তিনি ইতিমধ্যে ঘোড়া দৌড়ের ক্ষতিকর দিক বুঝাতে পারলেও এই যুবক সাওয়ালদের কারনে বিপত্তি দেখা গেছে।আদব লেহাজের লেশ ও নেই এদের মাঝে।গভীর রাতে গ্রামের পূর্বের জঙ্গল বাড়িতে এরা ঘেটু নাচ নাচায়।সারা রাত বাজনার বাদ্য শুনা যায়।আস্তাগফিরুল্লাহ।হুজুর সব সময় এদের হেদায়াতের দোয়া করেন আর ভাবেন এবার গ্রামে খোদার গজব আসন্ন।বেশ কিছুক্ষন পর হুজুর তসবিহ জপা বন্ধ করে জিজ্ঞেস করলেন তোমার সবাই কেমন আছো বাবারা।

সবাই সমস্বরে বলল জ্বি আমরা ভালো আছি।বড় হুজুর মুচকি হেসে বললেন, বাবারা দেখো তোমরা সবাই মুসলমান।কেমন আছো এর উত্তরে 'আলহামদুলিল্লাহ' বলা উচিত।নিমাইরা কিছুটা লজ্বা পেল।তারা শুনেছে বড় হুজুর খুব গরম মানুষ।তার কথার উপরে কথা বললে তিনি বেয়াদবি হিসেবে নেন।এবার নিমাই মাথা চুলকিয়ে চুলকিয়ে বলল, হুজুর গ্রামের ঘোড়ার দৌড় আয়োজনে বাধা কেন দিচ্ছেন।দাদাজি বলেছেন আপনার আব্বা হুজুর থাকতেও ঘোড়া দৌড় হয়েছে গ্রামে।তাহলে আপনি কেন বাধা দিচ্ছেন?বড় হুজুরের চেহারায় কিছু বিরক্তিভাব ফুটে উঠল।তিনি তাদেরকে নিয়ে মাঠে ঘাসের ওপর বসে পড়লেন।এবার বলতে লাগলেন, দেখো বাবারা।এটা ঠি'ক বড়শাল্লা গ্রামে ঘোড়া দৌড়ের এ আয়োজন অনেক আগে থেকেই হচ্ছে।আমি ছোটবেলা মেলায় গিয়েছি।কিন্তু আজকাল ঘোড়া দৌড়ের নামে কিসব ছাইপাস হচ্ছে তোমরা দেখনা?রাতভর গান হয়,জুয়ার আসর বসে, মেলায় তীর-ধনুক খেলা হয়।এসবই ইসলামে নিষিদ্ব।কাজে এবারের ঘোড়া দৌড় আমি করতে দেবনা।প্রয়োজনে আমার ছাত্ররা জীবন দিয়ে

>>বড় হুজুর এক নাগাড়ে এবং কিছুটা উচ্চস্বরে কথাগুলো বলে থামলেন।নিমাইর সাথে থাকা যুবকদের সবাই মাথা নিচু করে ফিসফিস করছে।সবার মনে একি চিন্তা,তাহলে কী আর এবার প্রানের ঘোড়ার দৌড় হবেনা।বড় হুজুর ইতিমধ্যে গায়ের সব মুরব্বিদেরও নিজ দলে ঠেনে নিয়েছেন।এবার আস্তে আস্তে মুখ খুলল নিমাই।

>নিমাই-মাথা নিচু করে কিছুটা উচু স্বরে বলল,আচ্ছা হুজুর যদি গান,বাদ্য,জুয়া আর বেটিবাজী ছাড়া শুধু ঘোড়ার দৌড় হয় আপনার আপত্তি আছে।

>বড় হুজুর-অযথা প্যাচাল পাড়োনা।রাতে জুয়ার আসর বসবে আর গান বাজনাও হবে।ঘোড় দৌড় তো দিনেই শেষ।আমার আপত্তিতো ঐ রাতের নাফরমানী কাজ নিয়ে।

>নিমাই-হুজুর ঘোড়ার দৌড় বন্ধ করা যাবেনা।গ্রামের চলে আসা এ সংস্কৃতি আমি যেকোন উপায়ে করিয়ে ছাড়ব।কেউ বাধা দিলে গ্রামে কেয়ামত হয়ে যাবে।নিমাইর গলা ততক্ষনে অনেক চড়ায় চলে গেছে।বড় হুজুর আর তার সাথে থাকা সবাই আচমকা এমন কঠিন কথা শুনে থ বনে গেছে।সবাই আকাশে কালো মেঘ দেখছে।নাহ!এবার বোধহয় বাপ-দাদাদের সাথেই যুবকদের লড়তে হবে।কী সাংঘাতিক কথা!

এই কথাগুলো বলে এবার গলা কিছুটা নামিয়ে নম্রস্বরে নিমাই শুধায়, তবে আমার কাছে একটা ফর্মুলা আছে হুজুর।যদি আপনি চান আমি বলতে পারি।এতে করে ঘোড় দৌড়ও বন্ধ হবেনা, অনৈসলামিক কাজ ও হবেনা।তবে আপনাকেও কষ্ট করতে হবে।

বড় হুজুর প্রমোদ গুনছেন মনে মনে।তিনি ভাবছিলেন হালকা ধমক আর মুরব্বিদের শাসনে নিমাইরা ভয় পেয়ে যাবে।কিন্তু নিমাইর কথা শুনে তিনি নিজে মনে মনে ভাবছেন, দৌড় হলে কী আর না হলে কী?তিনি কেন ফেতনার অংশ হতে যাবেন।আল্লাহ পাক ফেতনা করতে নিষেধ করেছেন নাউজুবিল্লাহ।কিছুটা নরম স্বরে তিনি বললেন হ্যা বাবাজি নিমাই বলতো কী তোমার ফর্মুলা শুনি।আমার পুরো ভরসা আছে তোমার উপর।তুমি নিশ্চয় ভালো কিছু বলবে।নিমাই বলে,হুজুর ঘোড়ার দৌড় চলবে তিন দিন।এর জন্যে দিশাখালী বাজার থেকে ভালো মাইক ও নিয়ে আসা হবে।আমার কথা হলো, গ্রামে দিনের বেলা ঘোড়ার দৌড় হবে আর রাতে সেই মাঠে ওয়াহ মাহফিল হবে।যেহেতু আপনি বলেছেন, ঘোড়ার দৌড় হারাম নয় কাজে এটা করব আমরা আর রাতে ওয়াজ ও হবে।এটাই ফাইন্যাল বলে নিমাই উঠে পড়ল...

>সেই বছর গ্রামের ঘোড়া দৌড় নিয়ে চালু হওয়া উত্তেজনা থেমে গেল।কোন রকমের ঝামেলা ছাড়াই গ্রামবাসি আনন্দ উদযাপন করতে পেরেছিল।সেই থেকেই নিমাইকে আশে পাশের দশ গ্রামের মানুষ একনামে চেনে ট্যারা নিমাই হিসেবে।পাশের ইন্দুরখান গ্রামের আরেক নিমাই থাকাতেই মানুষ তাকে ট্যরা নিমাই ডাকে।তবে তার যৌবনের শুরুকালিন সেবারকার ঘটনার পর থেকে এলাকায় যেকোন ছোট বড় সমস্যা হলে মুরব্বিদের নির্দেশে তাকেও ভূমিকা রাখতে হয়।চিন্তা আছে তার দিশাখালী বাজারে বর্ষার শেষে একটা চায়ের দোকান দেবে সে।যেভাবে এলাকার মানুষজন তাকে ঠানে সবকিছুতে তাতে করে সে যদি বাজারে চায়ের দোকান দেয় তাহলে ভালো ব্যবসা করবে।তবে আশংকার বিষয় হল দেশের অবস্থা ভালো নয় বলে শুনছে।এইতো মাত্র গতপরশু রমিজ চাচা সুনামগঞ্জে গিয়েছিলেন কি কাজে।এসে বললেন,শহরে মানুষজন বলাবলি করছে যে,দেশে যুদ্ব লেগে যেতে পারে।ভাসানী,শেখ মুজিবসহ সব নেতা নাকি এক হয়ে গিয়েছে।আর এহিয়া খান নাকি বাঙ্গালি মুজিবুরকে ক্ষমতা দিতে চায়না।এটা নিয়ে নাকি গন্ডগুল হওয়ার কথা।

>রমিজ চাচার কাছে দেশের অবস্থা শুনে কিছুটা চিন্তাগ্রস্থ হয়ে সে বাড়িতে আসল।ভাত খেতে খেতে মাকে শুনে আসা ঘটনা বলতে লাগল।মা সব শুনে হঠাত করে বললেন,নিমাই বাপজান আমার।আমি তোরে জুলেখার সাথে বিয়ে দিবার নিয়ত করেছি।তোর বড় মামার সাথে কথাও বলেছি।তুই যদি রাজি থাকিস তাইলে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেবার ব্যবস্থাব করব।দেশের যদি এই অবস্থা হয় তাইলে আমি কী করব।আমি নাতির মুখ দেখেই মরব।মায়ের কথা শুনে নিমাই না করতে পারেনি।হেসে হেসে বলল, তুমি যা ভালো মনে করো মা।

>সত্যি সত্যি নিমাইর বিয়ের আলাপ শুরু হয়ে গেল।আশ্বিন মাসের ২০ তারিখ বিয়ের তারিখ ধার্য্য করা হয়েছে।নিমাই মনে মনে খুশিই আছে।জুলেখাকে তার ও ভালো লাগে যে।যতবার মামার বাড়িতে যায় সে আড় চোখে জুলেখাকে দেখত।কেন যেন একধরনের ঠান লাগে জুলের জন্যে...

>নিমাইর পরিবারে বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।বিয়ের এখনো মাস দুয়েক বাকি থাকলেও তার মায়ের প্রস্তুতি দেখলে যে কেউ ভাববে বিয়ে বুঝি এই সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে।নিমাইও মনে মনে জুলেখাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে।লাল টুকটুমে শাড়ি পরে জুলেখা আসবে বধু সেজে।এইতো মাত্র কয়দিন আগেও জুলেখা বাচ্ছা ছিল।তাকে সে লাল ভাই ডাকে।আর এখন কিনা সেই জুলেখাই তার বউ হতে যাচ্ছে।তবে মনের মাঝে নানা ভয় ও কাজ করছে।ভাসা ভাসা খবর আসে পাকিস্তানি বাহিনী নাকি ঢাকায় হামলা করেছে।অনেক যুবক নাকি দেশ স্বাধীনের জন্যে মুক্তিতে নাম লেখাচ্ছে।সেও লেখাবে নাকি নিমাই ভাবে মাঝে মাঝে।

>বিকেল বেলা দিশাখালী বাজারে বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে ঘুরতে গিয়েছে নিমাই।বাজারে মন্তু দাসের টংয়ে বসে চা খাচ্ছিল তারা।মন্তু শোধায়, বুঝলেন নিমাই দা পাকিস্তানিরা নাকি ধরে ধরে হিন্দুদের মারছে।ভগবান জানে কি থেকে কি হয়।নাগপুরের আমার জ্যাঠারা সব ভারতে চলে যাচ্ছে।আমি যাব কই বলেন দাদা।নিমাই ধমক দিয়ে ওঠে।মন্তু তুই তো এ গায়ের ছেলে তুই আবার যাবি কোথায়।আর কে বলেছে এসব খবর তোকে?মন্তু বলে নারে দাদা খবর পাক্কা।মাদ্রাসার বড় হুজুর সুনামগঞ্জ গিয়েছিলেন।তিন দিন থেকে এসেছেন।তিনিই বলেছেন এসব কথা।তিনি বলেছেন, পাকিস্তানিরা জুলুম করছে আর যুবক সাওয়ালেরা নাকি মুক্তিতে নাম লেখাচ্ছে।কথা বলতে বলতে হঠাত মন্তু বলে ঐতো বড় হুজুর আসছে।

>নিমাইরা সবাই হুজুরকে সালাম দিয়ে দাড়ালো।নিমাই হুজুরকে জিজ্ঞেস করল দেশের কি অবস্থা উনি শুনে এসেছে।হুজুর জোরে শ্বাস ছেড়ে বলেন, বুঝলে বাবারা।যেই ইসলামের স্বার্থে আমাদের বাবা দাদারা পাকিস্তান বানিয়েছিল সেই ইসলাম তো মিলেনি বরং আজ এরা জুলুম শুরু করেছে।সুনামগঞ্জে শুনে এসেছি, এরা ঢাকায় নিরীহ বাঙ্গালিদের মারছে।সিলেটেও নাকি এরা এসে গেছে।যুবকেরা মুক্তিতে নাম লেখাচ্ছে তোমরাও লেখাও পারলে।নিমাই তুমি প্রতিবাদি যুবক।তুমি পারো কিছু করতে এ এলাকার মানুষদের জন্যে।মাওলানার দুই চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল।

>পরদিন ভোরে তাহিরপুরে গিয়ে মুক্তিবাহিনীতে নাম লেখিয়ে আসে নিমাই।গ্রামের সব যুবকদের বুঝিয়ে রাজি করাল যাতে সবাই মুক্তিবাহিনীতে যায়।তাহিরপুরে সে শুনেছে খুব শীঘ্র তাদের যুদ্বের জন্যে ভারতে যেতে হবে।বাড়িতে এসে নিমাই মাকে সব খুলে বলে।সব শুনে তার মা বলেন, আমি কাল গিয়ে তোর বড়মামাকে বলব পরশুদিন তোর বিয়ে।দুরের তো নয় আমার আপন ভাতিজি কাজে তোকে বিয়ে দিয়েই আমি মুক্তিতে যেতে দেব।নিমাই মাকে মুক্তি মানে যে যুদ্বে যাওয়া তা বলেনি।

>ঠিকি তিন দিনের মধ্যে তাড়াহুড়া করে ঘরোয়া পরিবেশে জুলেখার সাথে নিমাইর বিয়ে হয়ে গেল।কনে নিয়ে বাড়িতে আসতে আসতে রাত নেমে এসেছে।কলাপাতা আর গেন্ডা ফুল দিয়ে গ্রামের মেয়েরা বাসর সাজিয়েছে নিমাইদের জন্যে।রাতে একরাশ লজ্বা নিয়ে বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসর ঘরে ডুকল নিমাই।চৌকিতে জুলেখা বসে আছে লাল শাড়ি পরে ঘোমটা মাথায়।নিমাই নিজেও লজ্বা পাচ্ছে।জুলেখার পাশে বসে তার হাত ধরতেই জুলেখা বলে কি করছ লালভাই শরম করে।নিমাই হেসে দেয়।বলে, পাগলি আমি কী আর তোর ভাই এখনো।শরমের কী আছে।যা তাইলে হারিকেনের আলো কমিয়ে দিচ্ছি।আয় গল্প বলি তোকে।নিমাই হারিকেনের আলো কমিয়ে খাটে এসে জুলেখার হাত নিয়েছে তার হাতে।এমন সময় বাইরে খট খট করে দরজায় কে যেন আঘাত করছে।এতরাতে কে ডাকে আবার।নিমাই জিজ্ঞেস করে কে?পাশের বাড়ির সামিউল মৌলভীর আওয়াজ শুনল সে।নিমাই ভাই একটু বাইরে এসো।দুইজন মেহমান এসেছেন তোমার সাথে কথা বলতে চান।নিমাই একরাশ বিরক্তি নিয়ে বউয়ের হাত ছেড়ে উঠ্র দাড়ায়।হারিকেনের আলো বাড়িয়ে দরজা খুলতে গেল।দরজা খুলে দেখে সামনে দাড়ানো ৫/৭ জনের দল।হাতে বন্ধুক।আর সামিউল মৌলভির মুখে বাকা হাসি।উর্দুতে সামিউল কী যেন বলল সাথের লোকগুলোরে।ততক্ষনে নিমাই বুঝে গেছে এরাই তাইলে পাকিস্তানি বাহিনী।সামিউলকে সে দিল শক্ত এক ধমক।সাথে সাথে সামিউল উচু গলায় বলল,"হুজুর ইয়ে শালা কো খতক কি জিয়ে।ইহা মে ইয়ে একিলি মুক্তিবাহিনী কি লিয়ে কাম কররাহে।ও বহুত বড়া গাদ্দার হ্যায়"।সামিউলের কথা শেষ হতেই পাশে দাড়িয়ে থাকা লোকটি উর্দুতে গালি দিয়ে ঠ্যাশ ঠ্যাশ শব্দে গুলি চালিয়ে দিল।জুলেখা চৌকির এককোনে বেহুশ হয়ে পড়ে আছে।নিমাইর নিথর দেহ একদিকে পড়ে আছে ঝাঝরা হয়ে......।।

বিষয়: বিবিধ

১৪০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File