'ত' তে তুই রাজাকার এবং 'ও' তে ওড়না সমাচার-মাহবুব সুয়েদ
লিখেছেন লিখেছেন সমশেরনামা ১১ জানুয়ারি, ২০১৭, ০৬:২৫:১১ সকাল
১-কয়দিন আগে ফেসবুকে দেখলাম হটাত করে বাংলা ট্রি-উবন নামের পোর্টালে 'ও' তে ওড়না এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন।শিরোনাম দেখে আর ভেতরে ঢুকে বিস্তারিত পড়ার মত রুচি হয়নি আমার।এ নিয়ে এখন পর্যন্ত আর কোন সংবাদ পড়িনি।তবে ফেসবুকে এই নিয়ে মানুষের পোষ্ট দেখে যা বুঝলাম তা হচ্ছে প্রাথমিক স্থরের শিশুদের জন্যে বর্নমালা পরিচয় দিতে গিয়ে হয়ত পাঠ্যবইয়ে 'ও' তে ওড়না লেখা হয়েছে।তা নিয়ে দু-একটা নিউজ পোর্টালের হৈ চৈয়ের সুত্রধরে খবরটি ভার্চুয়াল জগতে ভাইরাল হয়ে গেছে।অর্থ্যাত বাংলাদেশ যেহেতু সাংবিধানিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র কাজে এখানে 'ওড়না' প্রসঙ্গ আনা যাবেনা।নারীর বক্ষ এটাকে উন্মুক্ত রাখাটা হয়তবা সেক্যুলারিজমের অন্যতম শর্ত যা আমার জানা নেই।
২-নারী।আমাদের মা-বোনের জাতী।আবার এই নারী ই আমাদের জীবন সঙ্গিনি হয়ে পরিবার গড়ে উটতে সহযোগিতা করে।অস্বীকারের উপায় নেই এই নারী ই আবার একজন পুরুষের বিছানার সঙ্গি হিসেবে চরম সুখের সারথী হয়।যদিও পাশ্চাত্যে আজকাল আর তার দরকার পড়েনা।স্রষ্টা যখন মানুষ সৃষ্টি করেন তখন নারী-পুরুষ এই দুই শ্রেনীতে বিন্যাস করে দেন।পুরুষের জীবনে পুর্নতা বা মানবতার ভারসাম্য রক্ষায় নারীর ভুমিকা ব্যখ্যার কোন দাবী রাখেনা।নারীর শরীর স্রষ্টা নিজ হাতে আপন মহিমায় সুন্দর করে সাজিয়েছেন।নারী দেহের পায়ের পাতা থেকে মাথার চুল পর্যন্ত বলা যায় একজন পুরুষের জন্যে মোহাবিষ্ট হওয়ার মত করে তৈরী।যদিও নারীবাদীরা তা বললে রেই রেই করে উঠবে।তবুও একজন পুরুষ হিসেবে বলতে পারি,নারী দেহের প্রায় সর্বাঙ্গ একজন পুরুষের জন্যে আকর্ষনিয়।
৩-পবিত্র ইসলাম বাংলাদেশের নব্বুই ভাগ জনগনের ধর্ম।ইসলামে হাত-মুখমন্ডল ছাড়া নারী দেহের বাকি অংশ সমুহ ঢেকে রাখা আবশ্যক বলে নির্দেশ আছে।এখানে উল্লেখ্য যে,এই পর্দা প্রথা ইসলাম শুধু নারীদের জন্যে বাধ্যতামুলক করেনি পুরুষদের জন্যেও বাধ্য করা হয়েছে।নব্বুই ভাগ মুসলমানের দেশ হিসেবে বাংলাদেশে প্রাথমিক পাঠ্যসুচিতে আমরা 'অ তে অযু' আ-আযান,ঈ-ঈমান এই জাতীয় বর্নমালা পদ্বতিতে অভ্যস্ত ছিলাম।সেই ছোট বেলায় আমাদের পাঠ্যসুচিতে আমরা প্রার্থনা নামক কবিতার মাধ্যমে স্রষ্টার গুনগান গাওয়ার চর্চা দেখে আসছি।কথা হল হটাত করে কি এমন হল যে, 'ও' তে ওড়না লেখলে এটা নিয়ে হৈ চৈ করতে হবে?ওড়না বলতে সাধারনত বুঝায় মেয়েরা নিজ বক্ষকে ঢেকে রাখার নিমিত্তে যে একখন্ড কাপড় ঝুলায় তাকে।যুগ যুগ ধরে শুধু বাংলাদেশ নয় ভারতীয় উপমহাদেশের যে কোন ধর্মের লোকেরা ই তার অনুশীলন করে আসছে।হাল জামানার হিন্দি সিনামে ও দেখা যায় নায়িকা তার বুকে কাপড় না দিয়ে আসলে অভিনয়ে থাকা দাদী,নানি বা মারা তাদের চোখ রাঙ্গানি দেয়।এটা শুধু ধর্মীয় বিষয়ের কারনে নয় এটা শালীনতা আর হাজারো বছর ধরে চলে আসা আমাদের ঐতিহ্যের সংস্কৃতি।এ নিয়ে তথাকথিত সেক্যুলারিজমের ধোয়া তুলে লস্ফঝস্ফ করাটা নিছক খাটি আতেল ও জারজদের লক্ষন বৈ কিছু নয়।
৪-ভার্চুয়াল জগতের সুবাদে আমরা ইদানীং কত নিত্য নতুন থিওরীর আগমন দেখতে পাচ্ছি।আমাদের তথাকথিত নারীবাদী উর্বষি যুবতীরা ফেসবুকে নিজেদের ওয়ালে পবিত্র ইসলামের নানা নিয়ম-কানুনের সমালোচনা করে পোষ্ট দেন আর নিজেদের খুব উতকৃষ্ট নারীবাদী ভাবতে পছন্দ করেন।নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের পদাংক অনুসরনে অনেকে ফেসবুক ওয়ালে নিজেদের নানা চাহিদার খোলামেলা বিবরন দিয়ে অতি প্রগতিশীল ভাবেন।তাদের অনেকের মতে,বক্ষ যেহেতু তাদের শরীরের ই একটি অংশ তাই এটার উপর কেন ই বা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।কেন ই বা একজন পুরুষ তাদের বুকের দিকে নজর দেবে আর লুলুপ দৃষ্টিতে তাকাবে?বাংলাদেশের এইসব নব্য নারীবাদীদের দেখলে হাসি ছাড়া আর কিছু আসেনা।যৌন বিদ্যা সম্বন্ধে এদের নুন্যতম জ্ঞ্যান থাকলে এই ধরনের উদ্ভট দাবী এরা করতে পারতনা।পাশ্চাত্যে আপনি যদি একজন লেসবিয়ান (নারী সমকামি)র পাশে বসেন অথবা একজন সুঠাম দেহের যুবক যদি উলঙ্গ শরীর নিয়ে এক বেডে রাত কাটায় সেই যুবতী কোনধরনের ফিলিংস পায়না।অনুরুপ একজন গে'র ক্ষেত্রে ও।একজন সুন্দরী যুবতীর পাশে শুইলেও গে যুবকটি কোন ফিলিংস পায়না।কারন তার মানসিক বৈকল্য।কিন্তু যে পুরুষ সমকামি নয় সে একজন নারীর বক্ষের সামান্য অংশ দেখলে কেমন অনুভব করে তা পুরুষকুল ছাড়া আর কে জানে?এই যুবতীরা তা কেমনে জানবে? এরা তো প্রকৃত যৌন বিদ্যা ছাড়া ই অতি প্রগতিশীল সাজতে গিয়ে নিজেদের বুক খোলার পক্ষে লাফায়।একজন পুরুষ একাধিক রমনীর সাথে একরাতে মিলনের ফলে সবাইকে সন্তান দেয়ার যেই ক্ষমতা রাখে একজন নারী একাধিক পুরুষের সাথে মিলনে সেই সম্ভাবনা থাকেনা।কিছুদিন আগে দেখলাম,মুঠামোঠি স্বনামধন্য এক কিশোরী লেখিকা 'অর্গাজম ডে' নিয়ে লেখতে গিয়ে তার প্রথম অর্গাজমস্বাদ গ্রহনের বিস্তারিত রগরগে বিবরন দিল ফেসবুকে।আরেকজন দেখলাম আফসোস করে লিখল,সেদিন কনে আসবে দেশে যেদিন সে তার বড় ভাইকে বা বাবাকে বলে দেবে 'কাল থেকে আমার পিরিয়ড শুরু' তুমি পেড নিয়ে এসো!এরা ভাবতে ও পারেনা এ উপমহাদেশে বিশেষ করে বাংলাদেশে আমরা ধর্মীয় কৃষ্টি ও কালচার অনুসরনে বড় হয়েছি।ওড়না বিহীন বক্ষে দেখে জিভে জল না খসিয়ে আমরা নারীকে ওড়নাসহ দেখে মানসিক সম্মান প্রদান প্রথায় বিশ্বাসী।
৫-জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাহর রায়কে কেন্দ্র করে শাহবাগে গড়ে তোলা আন্দোলনের স্লোগান ছিল 'ত' তে তুই রাজাকার, 'স' তে সাঈদী' এই টাইপের।সম্প্রতি কয়টা অনলাইন পোর্টালের নিউজের 'ও' তে ওড়না শিরোনাম দেখে কিছুক্ষন ভাবলাম।এ নিয়ে লাফালাফি করা লোকগুলোর অধিকাংশের ফেসবুক ঘেটে দেখলাম সেই সময়ের স্লোগানধারীদের বেশিরভাগ ই এই ওড়না বিতর্কে উচ্ছসিত।'শাহবাগ' আমাদের আর কিছু না পারুক একশ্রেনীর বিকৃত মনের আর বিকৃত রুচির নগ্ন সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী যুবাসম্প্রদায় দিয়েছে।এরা কলকাতা স্টাইলে 'ইনসিস্ট সেক্সে' 'সমকামিতা' 'লিভ টুগেদার'নামক ধর্ম ও সমাজ অথবা বলা যায় আমাদের উপমহাদেশের সংস্কৃতি বিরুধী বিষয়গুলোর প্রচারে উঠে পড়ে লেগেছে।ফলাফল আর যাইহোক পরিবার নির্ভর ধর্মীয় মুল্যবোধে বিশ্বাসী সমাজ বিনির্মানের পথে এগুলো অন্তরায় হয়ে দাড়াবে বলে মনে করি।
বিষয়: বিবিধ
১৫৮৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন