টিম সিক্সের 'মাদেইরা' ভ্রমনঃএ যেন স্রষ্টার নিজ হাতে গড়া এক রুপের নগর-১-মাহবুব সুয়েদ

লিখেছেন লিখেছেন সমশেরনামা ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:১১:৪০ সকাল

লিসবনে থাকি প্রায় বছর ছয়েকের কাছাকাছি।বলা যায় আটলান্টিক বিধৌত পর্তুগালের বড় বড় বা বিখ্যাত সব দর্শনীয় জায়গাগুলো দেখা শেষ।সেই আমেরিকার কাছের দ্বীপ ঐতিহাসিক 'আজোরস' থেকে ছোট শহর 'এলভাস' পর্যন্ত ঘুরা শেষ।বাকী ছিল ঐতিহাসিক দ্বীপ 'মাদেইরা' ভ্রমন।গত মাসের শুরুর দিকে হটাত করে একজন বলল চলেন মাদেইরা ঘুরে আসি।মনের মাঝে অনেক দিনের আগ্রহ আছে তাই সাথে সাথে সম্মতি জানালাম।রাতের বেলা আরেকজন ফোন করে 'রেসিডেন্ট কার্ডের' ফটো চাইলে দিলাম।কিছুক্ষনের মধ্যে দেখি 'হোয়াটস আপে' টি কেটের কপি।সেই থেকে আগ্রহ নিয়ে বসে ছিলাম।অবশেষে গতকাল সেই শুভ দিনের আগমন।প্রচন্ড বৃষ্টির মাঝে রাতে ই চলে গেলাম লিসবনে।পরদিন সকাল আট টায় ফ্লাইট।ইজিজেটের ফ্লাইটে করেপ্রায় পৌনে দু ঘন্টার যাত্রা শেষে পৌছালাম মাদেইরা নামক আইসল্যান্ডে।বিমান যখন ল্যান্ড করছিল জানালার পাশে বসে আকাশে মেঘের খেলা আর নিচে আটলান্টিক মহাসাগর দেখে ভাবনার অতল সাগরে তলিয়ে যাচ্ছিলাম।হৃদয় লহরিতে কোন এক অজানা গায়ক গান গেয়ে উঠেছিল গুন গুনিয়ে।বিশ্বের অন্যতম বিপদজনক বিমান বন্দর মাদেইরা এয়ারপোর্টে নেমে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে বেরিয়ে এলাম টেক্সি খোজার উদ্দেশ্যে।এয়ারপোর্ট থেকে টেক্সি করে মাদেইরার রাজধানি শহর 'ফোংশাল'র উদ্দেশ্যে এবার যাত্রা।ভোর পাচটায় বের হওয়াতে ব্রেকফাষ্টের দরকার ছিল।ফোংশালে টেক্সি ড্রাইভারকে বিদেয় দিয়ে রাজধানি শহরের প্রানকেন্দ্রে ঐতিহ্যবাহি এক পর্তুগীজ ক্যাফেটেরিয়ায় ব্রেকফাস্ট সেরে নিলাম এবং সেই সাথে কফির মগে চুমুক দিতে ভুলিনি।পুর্বে বুক করা হোটেল খুজতে বের হলাম এমন সময় এক বাঙ্গালীর দেখা পেলাম সেখানে।ভদ্রলোক ছয় মাস ধরে সেখানে বসবাস করছেন।তার সাথে আলাপে প্রাথমিক কিছু আইডিয়া পেলাম শহরটি সম্পর্কে।খুব বেশী চড়া নয় আবার সুলভ ও নয় মোটামুঠি মান সম্পন্ন হোটেল ই পেলাম।ফ্রেশ হয়ে শুরু হল ঘুরাঘুরির পালা।শিরোনামে দেওয়া টি-ম সিক্সের সদস্য হিসেবে এ আনন্দ ভ্রমনে আমরা যারা ছিলাম তাদের প্রাথমিক পরিচয় দিচ্ছি।অবশ্য দুই পর্বের এ ভ্রমন কাহীনিতে প্রায় প্রত্যেকের ই আলাদা আলাদা পরিচয় ফুটে উঠবে।যেহেতু এটি ছিল নিছক আনন্দ ভ্রমন আমরা ও চেষ্টা করেছি এই সময়ের ভেতরে সব কিছু ভুলে গিয়ে প্রকৃতির সাথে মিতালি গড়ে তুলতে এবং পারস্পরিক খুনটুসি ও লেগেছিল সারাক্ষন।আনন্দ আর উল্লাসে কখনোবা প্রকৃতির এ অপরুপ রুপ দেখে স্রষ্টাকে নিবেদিত গানে বা ভাওয়ালী গেয়ে পার করেছি সময় গুলো।তাছাড়া বর্তমান ভার্চুয়াল যুগে সবার চোখ যেমন প্রকৃতি দেখাতে ছিল ব্যাস্ত সাথে সাথে সবার হাত ছিল সারাক্ষন ছবি তোলা আবার কেউ কেউ তো ফেসবুকে লাইভের বহর শুরু করেছিল।ছবি তোলা বা ভিডিও রেকর্ড অথবা লাইভে দেয়ার মাধ্যমে সবাই সচেষ্ট ছিল যাতে সফরটি স্মরনিয় হয়ে থাকে সারাজীবন।আমরা বুড়ো হব আটলান্টিক দিয়ে হাজারো বছর আরো পানি গড়াবে স্মৃতি থেকে যাবে আমাদের।সেই স্মৃতি ধরে রাখার আপ্রান চেষ্টায় কারো কমতি ছিলনা।টিমের মধ্যে আমি ছাড়াও যারা ছিলেন আর মাতিয়ে রেখেছেন এ আনন্দ ভ্রমনকে নানাভাবে তাদের মাঝে ছিলেন লিসবনের প্রতিষ্টিত ব্যাবসায়ি ও সুপরিচিত মুখ বন্ধুবর মোহাম্মদ জোবায়ের মিয়া যার নিজের ভাষায় জীবনের প্রথম ফেসবুকে লাইভে গমন তার এই মাদেইরা যাত্রায়।ফেসবুক লাইভ নামক এই ভিডিও প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমরা এতদুরে গিয়ে চর্মচক্ষু দিয়ে যা দেখছিলাম তিনি তা তার ফেসবুক বন্ধুদের পেশাদার সাংবাদিকদের মত ধারাবাহিকভাবে বর্ননা দিয়ে যাচ্ছিলেন অবিরত।মিনিমাম চারটা লাইভ সম্ভবত তার আইডি থেকে সকলে পেয়েছে।তার লাইভের সাথে আরেকজন যিনি ধারা বিবরনী দিয়ে সহযোগীতায় ছিলেন এবং বলা যায় আমাদের সবার ক্যামেরা যার নানা ভঙ্গিমার ছবি তুলতে বাধ্য ছিল সেই তরুন সমাজের প্রিয়মুখ মোশাররাফ হোসেন না থাকলে এ ভ্রমন হয়ত এত আনন্দময় হয়ে উঠতনা।এক গল্পে পড়া 'অদ্ভুদ চা-খোর' র কথা পড়েছি ছোট বেলায়।এ যাত্রায় আমরা সৌভাগ্যবশত এমন এক খাটি মাছে-ভাতে বাঙ্গালী পেয়ে গেলাম।মাছ আর ভাতের প্রতি যার নেশা আর টান সবাইকে হাসালেও আর আশ্চর্য করলেও আমি তার এই টানের মাঝে খুজে পেয়েছি যেন এক খাটি বাঙ্গালীর।কাবাব শপে প্রথম দিনের লাঞ্চে বেচারা তার পাতের প্রায় সবটুকু খাবার সযতনে অপরকে দিয়ে দিলেন।পরে রহস্য জানলাম।বেচারা ভাত ছাড়া আর যে কোন খাবারে ই ক্ষুধা নিবারন করতে পারেনা।এ যাত্রায় তার ভাতের প্রতি টান নিয়ে একটি গল্প লেখার ইচ্ছে আছে বিধায় আর বিস্তারিত যাচ্ছিনা।হাস্যোজ্জল এবং এই ট্যুরের মুল উদ্যোক্তা ব্যাক্তিটি হাফেজ মোস্তাফিজ ভাই।আর হ্যা সে ই আমাদের ভাতপ্রেমি খাটি বাঙ্গালী।বিশ্বসেরা প্লেয়ার রোনালদো প্রতিষ্টিত মিউজিয়াম এস আর 7 এ তার সাথে কৃত্রিম ছবি তোলায় সফল একমাত্র সৌভাগ্যবান আমাদের আসাদুল্লাহ ভাই ও ছিলেন সফরে।সবার শেষে যার নাম বলছি সে আমার কাছে 'বিশেষজন'।সকলের অতি আদরের রুবেলের কথা বলছি।এই নিয়ে গত কয়মাসে তার সাথে আমার তিন তিনটি লংজার্নি হয়ে গেছে।আমি লক্ষ্য করেছি এই ভ্রমনগুলোর সময় আমার প্রতি তার কিছু বাড়তি মায়া আছে(জানিনা তা সিলেটি ভাইসাব বলে কিনা) যার কারনে বলা যায় তার সাথে ট্যুরে যাওয়া মানে বাড়তি আগ্রহ থাকা।যাইহোক,এবার শুরু হল আমাদের ভ্রমনের পালা।আমরা পুর্বে বুকিং দেয়া ট্যুরিস্ট বাসে শুরু করলাম ঘুরা।সমুদ্র পৃষ্ট থেকে অনেক উচু অর্থ্যাত প্রায় পনেরশ মাইল উপরের উদ্দেশ্যে বাস যাত্রা শুরু করল।প্রথম প্রথম আমার কাছে আমাদের দেশের রাঙ্গামাঠির মত মনে হলেও বাস যখন শুধু উপরের দিকে উঠছিল তখন কিছুটা ভয় পাওয়া শুরু হল।পাহাড়ের আকাবাক বাক পেরিয়ে সরু রাস্তা দিয়ে বাস যখন উপরের পানে ছুটে যাচ্ছে তখন নিকট দুরে বিশাল আটলান্টিকের পানির চিক চিক দেখা যাচ্ছে।তারমাঝে আবার আমাদের সফরসঙ্গি জুবায়ের ভাই ফেসবুকে লাইভে গিয়ে চমতকারভাবে ধারা বর্ননা দিতে শুরু করেছে মনোরম শহর আর ভিডিওতে চারিদিক দেখাচ্ছে।আমরা নানা প্রাকৃতিক জিনিষ দেখলাম যার মাঝে 'মন্তেল' নামক জায়গার কথা বলা যাহ।ঐতিহাসিক নিদর্শন সমুহ ছাড়াও এ জায়গাটা যে কোন পর্যটকের মন কেড়ে নেবে।নিজেকে হারিয়ে ফেলবে প্রকৃতির গভিরে।বলা যায় মাদেইরার প্রায় সবচেয়ে চুড়ার দিকে ১৮৮৯ সালে অস্ট্রিয়া থেকে বহিস্কৃত রাজা যাকে এই মাদেইরাতে নির্বাসন দেয়া হয়েছিল আমৃত্যু তার প্রতিষ্টিত ঐতিহাসিক গীর্জা দেখতে গেলাম।বিশালাকৃতির গীর্জার ভেতর থেকে ছাদ পর্যন্ত উন্মুক্ত আছে পর্যটকদের জন্যে।আমরা ও ভেতরে গেলাম।আমাদের মসজিদের মত সেখানে ও একজায়গায় দানবাক্স আছে আবার নানা বাহারি রঙ্গের মোমবাতি ও জালানো আছে।ছাদের উপর দেখলাম দুই পাশে মাইকের চুঙ্গা বাধা আছে যাতে গীর্জার ঘন্টার আওয়াজ শুনা যায়।নির্বাসিত রাজা অতি ধর্মপ্রান ছিল এবং সেই সাথে প্রকৃতি প্রেমি বলা যায়...(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

১২৭১ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

380008
২৩ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১০:৪৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার ভ্রমন কাহিনিটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। মাত্র মাস খানিক আগে জুলভার্ন এর একটি বইতে ম্যাডেইরা সম্পর্কে পড়লাম কিছু।
380015
২৩ নভেম্বর ২০১৬ রাত ১১:১২
আফরা লিখেছেন : লিখাটা খুব ভাল হয়েছে কিন্ত ছবির কথা বল্লেন কিন্তু একটা ছবি ও আমাদের জন্য দিলেন না !!

ধন্যবাদ ভাইয়া ।
380108
২৫ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:৪৭
দ্য স্লেভ লিখেছেন : চমৎকার লেখা। কিন্তু বিরতি দেননি। আরও পড়তে চাই

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File