খাদিজা তুই মাফ দে বোন আমার - মাহবুব সুয়েদ
লিখেছেন লিখেছেন সমশেরনামা ০৪ অক্টোবর, ২০১৬, ০৬:৪২:১৫ সকাল
১-প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলে আমি যে কাজটি করি তা হচ্ছে ফেসবুকে একবার ঢু' মারা।সপ্তাহের প্রথম কর্ম দিবস হিসেব আজ ব্যাস্ততা একটু বাড়তি ছিল বলে সেই কাজটি করা হয়নি।দুপুরের দিকে এক অফিসে ওয়েটিংয়ে বসে আছি এমন সময় একজনের ফোন পেলাম।বলল ভাই ফেসবুকে ঢুকে দেখুন কিভাবে একজন মানুষ আরেকজনকে কুপিয়ে মারছে।দ্রুত ফেসবুক অন করে দেখি গোটা ফেসবুক ভাইরাল হয়ে গেছে একটি ভিডিও।কয়েক সেকেন্ড দেখে আমার হাত পা কাপা শুরু করল।নিজের চোয়ালে হালকা শীতের এ মৌসুমেও ঘামের অস্তিত্ব ঠের পেলাম।ভিডিওতে দেখলাম সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাদ কলেজের ক্যাম্পাসে খোলা ময়দানে প্রকাশ্যে একজন দা দিয়ে কুপাচ্ছে আরেকজনকে।একজন আবার তা ভিডিও করেছে।সবাই দৌড়াদৌড়ি ও চেচামেচি করছে।মেয়েটি নিথর হয়ে পড়ে আছে আর পাষন্ড ছেলেটি তাকে কুপিয়ে যাচ্ছে একের পর এক।
২-খোজ নিয়ে জানলাম এই মেয়েটি আমার পার্শ্ববর্তি ইউনিয়নের বাসিন্দা এবং ডিগ্রী ২য় বর্ষের ছাত্রী।নাম খাদিজা বেগম।আর হামলাকারি পাষন্ড ছেলেটির নাম বদরুল ইসলাম।শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র সে। খোজ খবরে যা জানলাম তা হচ্ছে, এখানে মন দেওয়া নেওয়ার বিষয়।বদরুল তাকে ভালবাসত আর ইদানিং নাকি দুরত্ব চলছে।সত্য মিথ্যে পুরুটা না জানলেও এটুকু অনুমান করা যায়, এখানে এই জাতীয় কিছু একটা থাকাটা স্বাভাবিক।ভালবাসা তো বলা হয় পবিত্র জিনিষ।কিন্তু কথা হচ্ছে প্রানের প্রিয় দেশ বাংলাদেশে আমরা কি দেখতে পাচ্ছি?দিনে দিনে কি হচ্ছে বা ঘটছে?প্রেম মানে পরস্পর মন দেয়া নেয়া করা।আমার মন আমার নিজের।যেকোন সময় তা ফিরিয়ে নেয়া বা একজনের কাছ থেকে কেড়ে নেয়াটা ও আমার বিষয়।কিত্নু যে মন ফিরিয়ে নেয় তার সাথে হয়তবা অভিমান করা যায় অথবা আগের যুগের মত দেবদাস হওয়া যায়।কিন্তু ভালবাসার মানুষটিকে কষ্ট দেয়া যায়না।এটা ই দুনিয়ায় প্রচলিত প্রেমের নিয়ম।কিন্তু ভালবাসায় ফাটল ধরলে বা মন সরিয়ে নিলে এভাবে প্রকাশ্যে দিবালোকে দা দিয়ে কুপানোর ইতিহাস আছে কি না আমার জানা নেই।
৩-হেংলা পাতলা গড়নের এই পাপিষ্ট বদরুল এর আগে ২০১২ সালে একবার শাবির পার্শ্ববর্তী এলাকায় কি এক ঘটনার প্রেক্ষিতে আজকের মত নিজে আহত হয়েছিল।তার আজকের এই কুকর্ম দেখে আমি নির্দ্বীধ্বায় বলে দিতে পারি সেদিন যারা তাকে কুপিয়েছিল (যদিও তা সমর্থনযোগ্য নয়) তারা ও নিশ্চয় মারাত্মক ধরনের কোন সমস্যা পেয়েছিল তার কাছে।আমার আজ মনে পড়ছে,এলাকার আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের মুখে শুনা সেদিন বৃহত্তর সদর উপজেলায় তাকে ইস্যু করে অনেকে রাজনৈতিক রঙ্গ মাখিয়ে আন্দোলনে নামেন।একাধিক সমাবেশ করে তারা বদরুলের হামলাকারিদের বিচার দাবী করেছিলেন।সেই থেকে আর এই কুলাঙ্গারকে পেছনে তাকাতে হয়নি।সে হয়ে উঠে শাবি ছাত্রলীগের এক অপ্রতিরুধ্য নেতায়।শাবির মত একটি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদকের পদ দিয়ে মুল্যায়িত করা হয়।তার আহত হওয়ার ঘটনাকে সে ফায়দা হাসিলের হাতিয়ার বানায় আর সাময়িক সফল ও হয়ে যায়।আজ তারা কোথায় যারা সেদিন তার জন্যে কান্নাকাটি করেছিলেন?তাকে যারা নেতা বানিয়েছিলেন নিজেরা তাকে ব্যাবহার করে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছিলেন তাদের কি আছে বলার?
৪-একটু কল্পনা করুন।চোখ বন্ধ করে চিন্তা করুন।বিশ্বাস কি হয় দেশের নামকরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত একজন ছাত্র এভাবে প্রেমিকাকে প্রকাশ্যে কুপাতে পারে? গ্রামের সহজ সরল কোন প্রেমিক হয়ত সর্বোচ্চ গায়ে বদনাম উঠায় প্রেমিকার বিপক্ষে কিন্তু এমন নিষ্টুর কি হয় বা হতে পারে গায়ের সরল যে কেউ?একজন বদরুলের জন্যে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় বা ছাত্রসমাজের ব্যাপারে কেমন ধারনা জন্ম নেবে সকলের কাছে?পাপী তো পাপী।এমন নির্লজ্ব পাপীদের ফাসিতে ঝুলানো হলেও কম হবে বলে মনে করি।প্রকাশ্যে ফায়ারিং স্কোয়াডে দেয়া দরকার এদের।
৫-চিন্তা করুন কি এমন যুগ এসেছে।প্রেমিকার সাথে প্রেমে ব্যার্থ হলে ই দেখা যায় তার সাথে কাটানো একান্ত মুহুর্তগুলো বিক্রি করে দেয় বা ছেড়ে দেয় ভার্চুয়াল জগতে।যা মিনিঠের মধ্যে কয়েক কোটি মানুষ দেখে।রাগ করল প্রেমিকার সাথে বা বিচ্ছিন্ন হল সে কিন্তু ঐ মেয়ের বদনাম করতে গিয়ে দেখা যায় নিজের প্রেম শীশ্ন আর মেয়েটির উলঙ্গ ভিডিও দিয়ে দেয়।একটু ও লজ্বা করেনা এদের।এরা নির্লজ্ব বেহায়া।আজকে যেই মেয়েটিকে কুপিয়ে আহত করল সেই খাদিজার সাথে এ দেশে আরো লাখো খাদিজারা আছে যারা কপালে দুঃখ নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছে।একজন খাদিজারা আজ একজন পুরুষকে স্বামী বা প্রেমিক হিসেবে চাইতে ই পারে।তার সাথে আপনার মনোমালিন্য ঘটতে ই পারে।তাই বলে এমন নির্লজ্বভাবে প্রকাশ্য কুপাবে?খাদিজা,বোন আমার।তুই ক্ষমা দে এই জাতীকী দেশকে।এ দেশ তোদের ইজ্জতের দাম দিতে পারেনি আর কবে পারবে তাও জানিনা।দোয়া করি,তুই ফিরে আয় সুস্থ হয়ে।নরপশুটার ফাসি হোক এই কামনা।
বিষয়: বিবিধ
১২১৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভাষারুদ্ধ। কার কাছে বিচার …।
মন্তব্য করতে লগইন করুন