কাশ্মিরী রাঙ্গা বউ - মাহবুব সুয়েদ

লিখেছেন লিখেছেন সমশেরনামা ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৭:১০:৩২ সকাল

- [ ] মুফতি মেহরাব।সুদর্শন লম্বা বাবড়ি চুলের সাথে মুখে ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি।২৪ বছরের যুবক।মা আয়েশা মুফতির কাছে সেই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছে তাদের পারিবারিক ঐতিহ্যের কথা।স্বাধীন কাশ্মির তৈরির জন্যে যুগ যুগ ধরে চলে আসা সংগ্রামে তাদের পরিবারের আত্ম ত্যাগ ও বলিদানের কাহিনী শুনে শুনে বড় হয়েছে সে।কাশ্মির!পৃথিবির ভু-স্বর্গ।তাদের গ্রাম 'আড়িয়ালপুর' মোজাফফারাবাদ থেকে প্রায় সত্তর মাইল দুরে।সবকিছু স্বাভাবিক চললেও মেহরাবদের গ্রামে হটাত হটাত ভারতীয় সেনারা আসে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের খোজে।বিচিত্র পোশাকের এই লোকগুলোকে দেখলে ই মেহরাবের মাথায় ভন ভন শুরু করে।তার পিতা মুফতি মিনহাজকে এই জলপাই রঙ্গের উর্দিওয়ালারা বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে হলে শুনেছে সে তার মায়ের কাছে।মাত্র ৩৪ বছর বয়সে বিধবা হওয়া আয়েশা মুফতি আজও স্বামীর জন্যে চোখের পানি ছাড়েন অবিরত।তার স্বামী মিনহাজ মুফতির সাথে বিয়ের প্রায় ১১ বছর পর তাদের কুল জুড়ে মুফতি মেহরাবের আগমন।প্রিয়তম স্বামী তখন স্বাধীনতা সংগ্রামি বীর।নিজ ভুম কাশ্মিরকে স্বাধীন করতে মিনহাজ সেই কিশোর বয়স থেকে ই তার পুর্বসুরিদের মত সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন।আয়েশা প্রায় তার কলিজার টুকরো মেহরাবকে বলেন,তোর জন্যে যে বউমা আনব সে যেনো আমার মত অল্প বয়সে বিধবা না হয়।আমার বউ মাকে কোন কষ্ট দিতে পারবিনা তুই।মেহরাব মায়ের মুখে বউয়ের কথা শুনে লজ্বায় কথা বলেনা।শুধু মায়ের দ্বীর্ঘশ্বাস থেকে বুঝার চেষ্টা করে তার মা বাবা বিহীন দুনিয়ায় কিভাবে তাকে মানুষ করছে আর যন্ত্রনায় ছটফট করে।২১ বছর বয়সে মেহরাব যোগ দেয় কাশ্মির লিবারেশান ফ্রন্ট কেএলএফ এর একজন শিক্ষানবিশ সংগ্রামি হিসেবে।কে এল এফের এরিয়া প্রধান ফাত্তাহ আব্দুল্লাহ মেহরাবকে খুব যত্ন করেন।তাকে বেটা! বলে সম্বোধন করেন আর তার পিতার বীরত্ব গাথা সাহসিকতার গল্প শোনান।ফাত্তাহ আব্দুল্লাহর মায়ার জাল ক্রমে বৃদ্বি পেতে লাগল।একেতো নিষিদ্ব জীবন যাপন করছে তারা।প্রকাশ্যে তারা বিভিন্ন কাজ কারবার করলেও অপ্রকাশ্যে তারা কে এল এফের কাজ ই করে মুলত।ডিসেম্বর মাসের মাজামাজি সময়।একদিন ফাত্তাহ তার পিএস কে দিয়ে খবর পাঠালেন মেহরাবকে।মেহরাব ফাত্তাহর রুমে ডুকে সেলাম দিয়ে সসম্মানে এক কোনে দাড়িয়ে বলল চাচা কি ডাকলেন আমাকে?ফাত্তাহ সালামের জবাব দিয়ে বললেন হ্যা বাবা ডেকেছি তোকে কিছু কথা আছে বলে।শোন,তোমার পরিবারের সেক্রিফাইসের কথা কাশ্মিরের জনগন কোনদিন ভুলবেনা।তোমাদের পরিবারের পুরুষরা যেভাবে নিজেদের জীবন বাজি রেখে এই ভুখন্ডের স্বাধীনতার জন্যে লড়াই করে যাচ্ছে তার তুলনা নেই।তোমার মাঝে আমি তোমার সম্মানিত শহিদ পিতার সেই সাহসিকতার আবা দেখেতে পাচ্ছি।তোমাকে অনেকদুর এগিয়ে যেতে হবে।মেহরাব বলল চাচাজি,আপনার দোয়া আমার পাথেয়।শুধু দোয়া করবেন আমার জন্যে।এই বলে সালাম দিয়ে সে বেরিয়ে পড়ল বাড়ির পথে।ধারাবাহিক আর অবিরতভাবে চলছে মেহরাবের প্রশিক্ষন পর্ব।এরি মধ্যে মেহরাব মোঠামোঠি ভালো পারফরমেন্সের কারনে তরুন গ্রুপের সেকন্ড ইন চীফের পদে পদায়িত হয়েছে।পাশাপাশি সে তাদের গ্রামের বাজারে এক বই দোকানে সেলস ম্যানের চাকুরি নিয়েছে।সেদিন সন্ধ্যা রাত।মেহরাব সবে বাড়িতে পা দিয়েছে।এক আগন্তুক এসে হাজির।বাবা তুমি কি মেহরাব মুফতি?মেহরাব সালাম দিয়ে বলল জী হ্যা বলুন।বাবা তোমাকে ফাত্তাহ আব্দুল্লাহ ডেকে পাঠিয়েছেন তার বাড়িতে।উনি মারাত্ম অসুস্থ।তোমাকে যেতে ই হবে এখন।মেহরাবের মা আয়েশা বাড়ির ভেতর থেকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন কিরে মেহরাব কি হয়েছে?মেহরাব বলল না মা ফাত্তাহ চাচা নাকি খুব অসুস্থ এখনি যেতে খবর পাঠিয়েছেন।আয়েশা বললেন যা বাবা চাচার খোজ নিয়ে আয়।তোর বাবার খুব করিব দোস্ত ছিলেন তিনি।মেহরাব আর কথা না বাড়ির আগন্তুকের সাথে পথ চলল।একটি অটো ধরে তারা ছুটে চলল প্রায় নয় মাইল দুরে ফাত্তাহদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।ঘন্টা খানেকের ভেতর সে পৌছে গেল চাচাজি ফাত্তাহের বাড়িতে।সালাম বিনিময়ের পর ফাত্তাহ তাকে নিয়ে বসলেন রাতের খাবার খেতে।বললেন বেটা আজ রাতে এখানে তুমি থেকে যাও।অনেক জরুরি কথা আছে।মেহরাব প্রথমে ইতস্তত করলেও পরে ফাত্তাহের অনুরুধে সর্বোপরি চাচি আম্মার বলাতে রাত এখানে কেটে দেয়ার সিদ্বান্ত নিল।সেরাতে ঘুমানোর আগে ফাত্তাহ মেহরাবকে তাদের কে এল এফের অনেক টপ সিক্রেট জানালেন একে একে।মেহরাব একবার জানতে চাইল,চাচাজি এগুলো কেন বলছেন আমাকে।ফাত্তাহ বললেন বাবা মেহরাব দেখ,আমার বয়স হয়েছে।অসুস্থতা লেগে আছে বারো মাস।আমি চাই এই সুবিশাল স্বাধীনতা সংগ্রামিদের নেতৃত্ব এমন একজনের হাতে তুলে দিতে যার রক্তে এ অঞ্চলের জন্যে ঠান বিদ্যমান।অন্য সকল সদস্যদের মত তুমিও আমার কাছে সমান।হয়ত এখনি কে এল এফের নেতৃত্ব তোমার হাতে আসবেনা বয়সের স্বল্পতায় কিন্তু আমার মন বলছে সেদিন বেশি দুরে নয় যেদিন মোজাফফারাবাদ হবে আমাদের কেন্দ্রীয় মারকাজ।যেদিন মোজাফফারাবাদে লাল পতাকা উড়বে।আর সেই পতাকা ঠানাবে তুমি তা আমার বিশ্বাস।আমি হয়ত সেদিন বেচে থাকব না কিন্তু আমি জানি স্বাধীন কাশ্মিরের যেই স্বপ্ন আমার বা তোমার পুর্বপুরুষেরা দেখে গেছেন আর জীবন দিয়েছেন তার বাস্তবায়ন তোমার হাতে হবে আমি তা আমার চোখ দিয়ে দেখছি।ফাত্তাহ আব্দুল্লাহর গলা ধরে এসেছে কথা বলে বলে।দু চোখ বেয়ে অশ্রুধারা নেমে এসেছে।মেহরাব শুধু চাচাজি দোয়া করুন আল্লাহ যাতে আপনার মনের বাসনা আমার হাত দিতে পুরন করায় এই কথা বলে ঘুমুতে গেল।ফজরের নামায পড়ে মেহরাব মুফতি সকালের নাস্তার টেবিলে বসল।পুত্রসম বলে ফাত্তাহর সাথে তার স্ত্রী ও বসেছেন নাস্তার টেবিলে।স্নিগ্ধ বাতাসে বাড়ির আঙ্গিনায় থাকা হাসনা হেনা ফুলের ঘ্রান এসে গোটা পরিবেশকে মৌ মৌ করে তুলেছিল।সকাল বেলা চায়ের পেয়ালার সাথে এ সুগন্ধি মেহরাবের মনকে আচ্ছন্ন করে দিল।চা পান শেষে মেহরাব আবারো আসল গেষ্টরুমে তার জন্যে নির্ধারিত বিছানায় কিছুটা গা এলিয়ে দিতে।রাজ্যের ভাবনা এসে জুড়ে গেল তার মাথায়।যেই ফাত্তাহ চাচাকে সে দেখে এসেছে কঠিন হৃদয়ের একজন মানুষ হিসেবে আজ তার মাঝে সে অন্য এক ফাত্তাহকে আবিস্কার করেছে।রাতে তিনি যখন তাকে নানা বিষয়ে কথা বলছিলেন সে দেখেছে ফাত্তাহর চোখে এক ধরনের স্নেহ আর মমতার স্পর্শ চিকচিক করছিল।এ যেন সে তার হারানো পিতার স্নেহের পরশে রাত পার করেছে।একটু তন্দ্রাভাব এসে গেলে হটাত তার রুমের জানালার পর্দা একটু দুলে উঠল।মেহরাব জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে জানালার অদুরে আলতা রঙ্গের পরী দাড়িয়ে শিম গাছ থেকে থেকে শিম পাড়ছে।অপলক নেত্রে তাকিয়ে থেকে মেহরাব দেখছিল সাক্ষাত এ দেবীকে।দুধে আলতা উজ্জল হলদে বর্নের মাথায় হিজাব দেয়া তরুনিটিকে তার কাছে সাক্ষাত পরী মনে হচ্ছিল।হটাত সম্বিত ফিরে পেলে সে নিজ চোখ ফিরিয়ে নিল।মাত্র কয়েক সেকেন্ডের এ দেখা।মেহরাব এখনো বুঝে উঠতে পারছেনা সে কি কোন মানবি দেখেছে নাকি কোন হুর পরীর দেখা পেল।ভাবতে ভাবতে মেহরাব গভির ঘুমে তলিয়ে গেল।সকাল প্রায় ১১ টার দিকে তার ঘুম ভাংলে ধড়ফড়িয়ে সে উঠে বসল।হায় এত লম্বা ঘুম তো সে গত কয়েক মাসের মাঝে দেয়নি।মেহরাব তাড়াহুড়া করে রেডি হয়ে চাচাজি চাচাজি ডেকে ডেকে বেরিয়ে এল কামরা থেকে।সারা বাড়ি শুনশান নিরব।কোন শাড়া শব্দ নেই।মেহরাব এবার একটু গলা উচিয়ে হাক দিল চাচাজি ও চাচিজি।এবার অপর প্রান্ত থেকে কেউ একজন সাড়া দিল।বলল,আব্বজান ও আম্মাজান পাশের গ্রামে এক চাচার জানাযায় গিয়েছেন।আপনি ঘুমুচ্ছিলেন দেখে আব্বাজানা আর ডাকেননি।বলেছেন উনাদের আসতে দেরি হলে আপনি অপেক্ষা করতে পারেন বা কালকে আব্বার সাথে ক্যাম্পে দেখা হবে।একনাগাড়ে পর্দার ওপার থেকে ভেসে আসা কথাগুলোর সুর মুগ্ধতায় হারিয়ে গিয়েছিল মেহরাব।মেয়েলি কন্ঠে ভেসে আসা কথার রেষ শেষ হতে ই সে কাপা কাপা কন্ঠে সালাম দিয়ে বলল জি আমি চলে যাব।একটু কাজ আছে আমার।তাছাড়া চাচাজির সাথে আমার কাল ই দেখা হবে ইনশাল্লাহ।এতটুকু বলে আর যেন কোন কথা ই বেরুচ্ছিলনা তার কন্ঠ থেকে।সে আল্লহ হাফেয বলে বেরিয়ে পড়ল।সকালে দেখা সে পরী বা মানবি আর এখন চাচার মেয়ের কথা শুনে সে চিন্তা করল তাইলে মেয়ে ফাত্তাহ চাচার মেয়ে ই হবে।কি এক মুর্ছনা সে অনুভব করল তার হৃদয় পিন্ডে।মাথার মাঝে শুধু সকালের দেখা পরী আর সু কন্ঠের সেই কথামালা তার হৃদয় মাঝিতে এক ধরনের লহরি বাজিয়ে চলছিল।সে বাড়িতে এলে আয়েশা ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন বাবা কেমন লাগল ও বাড়িতে থেকে।তোর ফাত্তাহ চাচার আর কে কে আছে বাড়িতে।উত্তরে মেহরাব বলল, আম্মা ওদের বাড়িতে চাচা চাচি ছাড়া আর কাউকে দেখিনি তবে একজনের কথা শুনেছি।আয়েশা টিপ্পনি কেটে বললেন তা বাপজান কার কথা শুনেছ? ফাত্তাহ ভাইয়ের তো এক মেয়ে আছে যতদুর জানি।ফাবিয়া নাম।সেই ছোটবেলা দেখেছিলাম একবার।তা তুই কি তাকে তার কথা বলছিস?মেয়েটি দেখতে কেমনরে বাপজান?মেহরাব হেসে দিয়ে বলে কি যে বলনা আম্মা।সে তো আমার সামনে আসেনি তবে একবার দেখেছিলাম সে ই হবে।আয়েশা সোতসাহে জিজ্ঞেস করলেন বাপজান মেয়ে কি বড় হয়েছেরে?মেহরাব হেসে দিয়ে বলে আম্মা কি না তুমি বল।আমি কি আর তা খেয়াল করেছি।তোমার দরকার পড়লে তুমি ফাত্তাহ চাচাকে জিজ্ঞেস কর তার মেয়ে বড় কি না?

মায়ের মন বলে কথা।আয়েশা বুঝলেন ছেলে কি বুজাতে চাচ্ছে।তিনি পরদিন ই চলে গেলেন ফাত্তাহদের বাড়িতে।ফাত্তাহ সাহেবের স্ত্রী তাকে একবার দেখেছিলেন।সযতনে আয়েশাকে বাড়ির ভেতরে নিলেন।মেয়েকে ডাকলেন।বললেন দেখে যাও কে এসেছে।তোমার চাচি এসেছেন।ঐ যে কাল যে ছেলেটি এসেছিল তার মা।আসছি মা এই বলে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করল ফাবিয়া।আয়েশাকে সালাম চাচি আম্মা কেমন আছেন আপনি বলে কাছে আসতে ই আয়েশা তাকে ঠেনে নিলেন।অতি আদরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন মা রে সেই ছোটবেলা দেখেছি তোমাকে।আজ কত বড় আর মাশাল্লাহ কত সুন্দর হয়ে উঠেছে আমাদের মেয়ে।ফাবিয়া নিজ তারিফ শুনে লজ্বা পেয়ে বসেন চাচি আম্মা কিছু নিয়ে আসি বলে দৌড়ে পালাল।ঘন্টা দুয়েক পর ফাত্তাহ বাড়িতে এলেন।আয়েশা মুফতিকে দেখে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলেন।তার সহযোদ্বা মেহরাবের শহিদ পিতার অনেক স্মৃতি চারন করলেন।নিজ ভুমের স্বাধীনতার জন্যে তার বলিদানের কথা স্মরনে তিনি আপ্লুত হয়ে উঠলেন।স্ব-সম্মানে তিনি আয়েশাকে জিজ্ঞেস করলেন তা বোন হটাত এলেন এত বছর পর কি মনে করে।আপনার পুত্র কাল এসেছিল।জানেন ভাবি,মেহরাব কাল আসার পর আমার স্ত্রী বলছিলেন আল্লাহ পাক আমাদের ছেলে সন্তান দান করেননি কিন্তু আপনাদের মেহরাবকে কেন যেনো নিজের ছেলে ই মনে হয়।আয়েশা মুফতি মনের মধ্যে যেই গুপ্তাশা নিয়ে এসেছেন এই মোক্ষম সুযোগে তা বলতে আর পেছালেননা।বললেন, ভাই এবং ভাবি।শুনুন মেহরাব শুধু আমার ছেলে নয় আপনার শহিদ বন্ধুর এই ছেলেটিকে আমি স্থায়ীভাবে আপনাদের দিতে এসেছি আর খোদার সেরা দান আপনার কলিজার টুকরো ফাবিয়াকে আমি মেয়ে বানিয়ে নিয়ে নেব।ফাত্তাহ আর তার স্ত্রীর মুখ উজ্জল হয়ে উঠল।উভয়ে একসাথে আলহামদুল্লিলাহ বলে উঠলেন।দুপুরের খাওয়া-দাওয়ার পর আয়েশা চলে আসলেন তার বাড়িতে।আগামি মাসের প্রথম সপ্তাহে শুক্রবার মুফতি মেহরাব ও ফাবিয়া ফাত্তাহর বিয়ের দিন ধার্য্য করা হল।

বিয়ের দিন।মেহরাবের বন্ধু আজমল,রাকিব,মনোয়ার আর এবাদরা এসেছে।সারা বাড়ি শুধু হইচই করছে মেহমানরা।বর যাত্রী সাথে করে মেহরাব কনের পিত্রালয়ে গিয়ে অনুষ্টানাদি সমাপনে নতুন বউ তার সেই এক পলকে দেখা স্বপ্নের রাজকুমারিকে সাথে নিয়ে বাড়িতে এল।আয়েশা মুফতি আনন্দের অতিশাহ্যে কান্না চলে আসল।আহ!আজ যদি মেহরাবের বাবা বেচে থাকতেন।কত আনন্দ ই না করতেন।সময়ের ব্যাবধানে সেই ছোট্র মেহরাব আজ বড় হয়ে গেছে।বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে এসেছে।আলতা রাঙ্গা পুত্রবধুর লাজুক মুখ দেখে মাথায় হাত বুলিয়ে আয়েশা মন খোলে দোয়া করলেন।মেহরাবের চাচাতো আর মামাতো বোনেরা বাসর ঘরে বউ তুলে নতুন ভাবির সাথে নানা খুনটুসিতে ব্যাস্ত।মেয়েলি ভাষায় নানা ইঙ্গিতে কথা বলে যাচ্ছে তারা।ফাবিয়া নতুন বাড়িতে প্রিয়তম স্বামীর অপেক্ষায় বসে আছে।ননন্দের নানা খোনটুসিগুলো সে উপভোগ করছে আর লজ্বায় লাল হয়ে যাচ্ছে।রাত এগারোটা।বন্ধুরা মেহরাবের কাছ থেকে বিদেয় নিল।নানা জনে নানা কথা বলে মজা করছিল।মনোয়ার বলে উঠল আরে চলো বেটা এবার যাক ভাবির সাথে গল্প করুক।আমরা তো আর সারা জীবন ই গল্প করলাম।সবাই হেসে দিয়ে একে একে বিদেয় নিল।রাজ্যের লজ্বা চোখে নিয়ে মেহরাব বাসর ঘরে ঢুকল।ঘোমটা দিয়ে খাটে বসে থাকা ফাবিয়াকে সালাম দিয়ে ঘোমটা সরাতে সে চমকে উঠল।আরে এতো তার সেই দেখা পরী।স্বামীকে দেখে ফাবিয়া লজ্বায় রাঙ্গা হয়ে খাটের এক কোনে গিয়ে বসে থাকল।মেহরাব নানা কথা শুরু করল একা একা।ফাবিয়াকে তাদের বাড়িতে প্রথম দেখার কথা আর ফাবিয়ার জন্যে এই কয়দিনে তার অধীর অপেক্ষার কথা এক নাগাড়ে বলে গেল সে।এবার আস্তে আস্তে ফাবিয়া ও একটু আধটু কথা বলছে।সময় যত গড়াচ্ছে তাদের গল্প আর নিজ নিজ জীবনের সব অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা বলা চলছে।এ যেনো এক পবিত্র রজনী।ভেতরে লুকিয়ে রাখা কত গল্প,কত আহ্লাদ,কত আনন্দ,কত উল্লাসে মেতে উঠল তারা।কখন যে দু'জনের চোখ লেগেছে কেউ বলতে পারবেনা।ভোর পাচটার সময়।বাইরে ঝি ঝি পোকার শব্দ আর ভেতরে মেহরাবের ক্লান্ত নাক ডাকার শব্দের সাথে এক ধরনের খট খট শব্দে ফাবিয়ার ঘুম ভাঙ্গল।কান পেতে শুনে বাইরে মিলিটারি বোটের আওয়াজ।ধক করে উঠল তার বুক।এই শব্দের সাথে সেই ছোটবেলায় তার মিতালি।কে এল এফ নেতা ফাত্তাহ আব্দুল্লাহর মেয়ে হিসেবে সে কাশ্মিরের রাজনীতি ,সমাজনীতি আর সমরনীতি সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল।এবার সে বাইরে মেহরাবের মায়ের গলার আওয়াজ শুনতে পেল।তিনি হিন্দিতে কাউকে নিবেদন করছেন তার সদ্য বিবাহিত ছেলেকে ঘুম থেকে না ডাকতে।কে শোনে কার কথা।ফাবিয়াদের দরজায় এবার বুটের লাথি পড়ল।মেহরাব ধড়মড়িয়ে উঠে যা বুজার বুজে নিল।আজকে যাকে সে ঘরে নিয়ে এসেছে সখ আর আহ্লাদে সেই প্রিয়তমার মুখের দিকে তাকিয়ে শুধু বলল,ফাবিয়া আমি যাচ্ছি।গত সপ্তাহের মোজাফফারাবাদ অপারেশান আমার কমান্ডে হয়েছিল।সালিক নামের এক সংগ্রামিকে সেনারা গ্রেফতার করেছিল।হয়ত সে নির্যাতনের মুখে আমার নাম বলে দিয়েছে।তুমি ভাল থেকো।প্রিয়তমা যদি এ জনমে আর দেখা না হয় ক্ষমা করে দিও।ফাবিয়া বাকরুদ্ব হয়ে গেছে।তার মাথা ঝিম ধরে আছে।মেহরাব তাকে চুমু দিতে আল্লাহ হাফেজ বলার সাথে সাথে স্টিলে দরজায় আরো কষাঘাত আসতে লাগল। মেহরাব মুফতি দরজা খুলে দিল।একজন সেনা অফিসার এসে মেহরাবকে বলল যুবক তোমাকে আমাদের সাথে যেতে হবে।কোন কথা না বলে মেহরাব তাদের সাথে বেরিয়ে গেল।একবার ও পেছনে থাকালনা।বাড়ির আঙ্গিনায় অন্ধকারে মাঠিতে অজ্ঞ্যান হয়ে পড়ে আছেন মেহরাবের আম্মাজান আয়েশা মুফতি।আর নববধু ফাবিয়া।সে বাকরুদ্ব হয়ে একি জায়গায় বসে আছে।কোন কথা চেতনা আসছেনা।শুধু তার কানে হালকা একটা আওয়াজ ভেসে এলো 'আযাদ কাশ্মির-জিন্দাবাদ' 'হিন্দুস্তানী সিপাহী-মুর্দাবাদ'!কন্ঠটা তার সদ্য শুনা মেহরাবের কন্ঠের মত মনে হল।কিন্তু সেই কন্ঠটি হারিয়ে গেল একটি চলন্ত গাড়ির আওয়াজের সাথে সাথে দুরে বহুদুরে!!!!

বিষয়: বিবিধ

১৫৪৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

377779
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:১৯
দ্য স্লেভ লিখেছেন : অনেক দারুন লিখেছেন।াসম্ভব দারুন। অনেক ভালো লিখেন আপনি। তবে লেখায় যথাযথ বিরতি দিয়ে লিখলে পড়তে সুবিধা হত। ধন্যবাদ
377788
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দুপুর ১২:১৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগলো
377805
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৪:১৫
আবু নাইম লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগলো ভাষা নেই প্রশংসা জানাবার।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File