ফারিয়ারা তিন বোন এবং কুরবানীর ঈদ-মাহবুব সুয়েদ
লিখেছেন লিখেছেন সমশেরনামা ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৫:৩৫:৩৬ বিকাল
(প্রবল প্রতাপের সাথে শাসন করে যাওয়া মুসলিম উত্তরাধীকারিদের বর্তমান ভারতের কিছু কিছু জায়গায় যাপিত জীবন নিয়ে ছোট গল্পটি।প্রথম গল্প লেখা জানিনা কেমন হবে তবু একটু চেষ্টা মাত্র)
এক-আখলাকুর রহমান।ষাটোর্ধ্ব বয়স।মাঝারি গড়নের লালচে দাড়ি আর মেহেদী লাগানো বাবড়ি চুল।সাদা চোস্ত পাজামার সাথে হাটুকাটা পাঞ্জাবি আর নেটের টুপি পরেন প্রায় শুভ দিনে।মিষ্ট ভাষি ও মিশুক স্বভাবে মানুষ।পাড়ায় তাকে ডাক্তার আখলাক নামে সবাই চেনে।নিরব জীবন যাপন তার পছন্দ।রাজনীতি থেকে যতদুর পারা যায় দুরে থাকেন এমনকি পাড়ার কোন শালিসে ও যাননা।একজন আখলাকের পেছনে আবার অনেকে 'সাইলেন্ট ডাক্তার' নামে ও ডাকে।নিজ বাড়ির গেটে তার ফার্মেসি আছে।সেই ১৭ বছর ধরে চলছে এটি।সকাল এগারোটার দিকে ফার্মেসি খুলেন।দিনে দুই ঘন্টার বেড রেষ্ট নেন।আর সবশেষে রাত দশটায় হিসেব মিলিয়ে বাসায় এসে ই বারান্দায় দাড়িয়ে হাক ডাকেন, মা ফারিয়া তুই কইরে মা।আখলাক সাহেব বড় মেয়ের নামে ফার্মেসির নাম দিয়েছেন 'ফারিয়া মেডিকেয়ার'।অতি আদরের দুলালি তার।স্ত্রী শামসুন বানুকে প্রায় তিনি বলেন,শুন বউ।আমার ফারিয়ার মত মেয়ে আর কারোনা।কত অভাব ছিল আগে রুগি আসতনা।আর এখন দেখ,দুর দুরান থেকেও রুগি আসে।আল্লাহ বোধ হয় আমার এই মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দিচ্ছে।শামসুন বানু তাকে ইশারায় থামান।বলেন এক গল্প আর কতকাল চলবে শুনি।ফারিয়া ছাড়াও যে তোমার আরো দু'টো মেয়ে আছে তা কি ভুলে যাও?আখলাক সাহেব আর কথা বাড়াননা।দশটায় ঘরে ঢুকে প্রথমে এশার নামাজ পড়ে নেন তিনি।তারপর খাওয়া-দাওয়া তারপর ঘুম।ফজরের নামাজ পড়ে কলে যান তিনি।আশপাশের কয়েক মাইল গিয়ে রুগি দেখেন।দু'হাত দিয়ে টাকা না কামালেও এক সময়ের চরম অভাবের সংসারে তিনি এখন অন্তত সুখে আছেন এটুকু বলতে পারেন।অভাব নেই আবার কোন বিশাল সহায় সম্পত্তি ও নেই।আখলাক আর শামসুন বানু সব সময় ভাবেন , তাদের তিন মেয়ে ফারিয়া,জুহা আর লামিয়ারা তাদের সম্পদ।শামসুন বানুর অনেক শখ ছিল একটা ছেলে হবে।কিন্তু আল্লাহ পাক বোধহয় তার পুত্র কপাল দেননি।ফারিয়ার বাবাকে লুকিয়ে কত মাজারে মাজারে আর বাবার কাছে গিয়েছেন তার হিসেব নেই।রাতে ঘুমানোর আগে ডাক্তার সাহেবকে কতবার যে পড়া পানি খাইয়েছেন কৌশলে একটা ছেলে প্রাপ্তির আশায় তা ভাবলে এখন ও শামসুনের লজ্বা হয়।এই তো কয়বছর আগেও তার ৫২ বছর বয়সের সময় তার মামিজী তাকে এক পীরের কাছে নিয়ে গেলেন।পীর তো নয় যেন বদমায়েশের হাড্ডি ছিল।৭০ বয়স সে তার গালে হাত দিয়ে বলে দাও তোমার পেঠে হাত রেখে ফু' দেই ছেলে পাবে।শামসুনের এই ঘটনা মনে হলে ই বমি আসে শুধু।ওয়াক থু।বুইড়া শয়তান একটা ছিল।
দুই-ফারিয়াদের বাসা যে পাড়ায় তার নাম গুলবাগ।এই পাড়ার অনেক ঐতিহ্য আছে বলে প্রায় ডাক্তার আখলাক তার সন্তানদের কাছে গল্প করেন গর্বভরে।তিনি সব সময় বুক ফুলিয়ে বলে থাকেন ১৯৪৭ এ দেশ বিভাগের সময় যখন গোটা উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা চলছিল তখন তখন রি গুলবাগ পাড়ার হিন্দু-মুসলিম কোন দাঙ্গা হয়নি।রামলাল কাকা তো নিজে পঞ্চায়েতে আখলাকের বাবাকে নিয়ে ঘোষনা দিয়েছিলেন যে,আমি তার ঘরে আজ খাবার খাব এবং সে ও আমার ঘরে খাবে।আমরা একি গ্রামের এক পরিবারের ভাই ভাই।পঞ্চায়েতের সবচেয়ে বায়োজৈষ্ট এই লোকের এমন ঘোষনায় তাদের পাড়ার হিন্দু বা মুসলিম কেউ আর দাঙ্গা বা বিদ্বেষ ছড়ানোর সাহস পায়নি।অনেক ঐতিহ্য আছে যে তাদের এই পাড়ার।৪৭এ পাকিস্তান তৈরি হলে কত পরিবার এই গুলবাগ ছেড়ে চলে গেল কিন্তু আখলাকদের পরিবার কোথাও যায়নি।নিজ দেশ আর নিজ ভুমি ছেড়ে নতুন দেশে যাওয়াটা কি সহজ।তাছাড়া আখলাকের পিতা একজন বৃটিশরাজ বিরুধী খাটি কংগ্রেসি মুসলিম।তারা যাবে কেন দেশ ছেড়ে?সেই থেকে ঐতিহ্য নিয়ে তারা এই পাড়ায় বসবাস করে আসছেন।স্বাধীন ভারতে মহারাষ্ট্রের এ পাড়ায় ঢুকলে আখলাকরা শ্বাসে যেনো জান্নাতি হাওয়া পান।প্রতি বছর রোজার মাসে তারা তাদের প্রতিবেশিদের ঘরে ঘরে ইফতারি দেন।হিন্দু প্রতিবেশিরা ও তা স্বাদরে গ্রহন করে। পুজোর সময় আসলে আখলাকের বাল্য বন্ধু মৃনাল,নিতাই রায় আর সাবিত্রীদের তিনি কাপড় চোপড় উপহার দেন আর ঈদ আসলে তারা ও আখলাক তার আদরের মেয়েদের নানা উপহার দেন।নিতাই রায় তো আখলাকের ফারিয়াকে মা বলে ডাকেন আর সব সময় এই বলে কাটেন, ভগবান পাঠানোর সময় ফারিয়ারে ভুল করে তোর ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে।সুখ শান্তি আর সম্প্রিতীর এ পাড়ার গল্প সারা মহারাষ্ট্রে মশহুর........
বিষয়: বিবিধ
৯৯৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ কুরবানির সময় আখলাক সাহেবের বাসায় এসে নিতাই সাহেব কি কুরবানির গোস্ত খেয়ে যেতেন ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন