সব নির্যাতনের পর সাধিত হয় বিপ্লব-মাহবুব সুয়েদ

লিখেছেন লিখেছেন সমশেরনামা ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৩:৪৭:৪০ রাত



১-১৯৭০র নির্বাচনে পুর্ব পাকিস্তানের জনগন তাদের নেতৃত্ব দানের জন্যে শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলিগকে বেছে নিল।পশ্চিম পাকিস্তানি লাল চোখওয়ালারা তা ভালো চোখে দেখলনা।বাঙ্গালি বিদ্রোহ শুরু করল।নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে উঠে এলো স্বাধীন সার্বভৌম বাংলা।বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পেল ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ।৭২ থেকে ৭৫র আগষ্ট।বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ চলল।নানা উথ্বান পথন আর ঘটনা দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে শেখ সাহেব ক্ষমতা চালাতে লাগলেন।নিজে কয়েক দফা প্রেসিডেন্ট বা প্রধান মন্ত্রী পদে উঠানামা করলেন।বলতে দীধ্বা নেই নেতা হিসেবে তিনি সফল হলে ও শাসক হিসেবে তিনি ছিলেন পুরুপুরি ব্যার্থ।সিরাজুল আলম খানের নেতৃত্বে সাবেক ছাত্রলীগারদের একাংশের নেতৃত্বে বিরুধী দল হিসেবে ফ্রন্ট লাইনে চলে আসল ‘জাসদ’।রাঝপথ আবার ইন্টারনাল নানামুখী চাপে বিপর্যস্থ মুজিব সরকার সমঝোথায় না গিয়ে বেছে নিল দমন পীড়নের পথ।কয়েক হাজার জাসদ কর্মীকে হত্যা করা হল নির্মম ভাবে।নির্যাতনের আর দমন পীড়নের মাত্রা এতই বেড়ে গেল যে বলা হয়ে থাকে ১৫ আগষ্টের বিয়োগান্তক ঘটনার দিন শেখ সাহেবের সাথে তার পরিজন ছাড়া আর কেউ ছিলনা।ভেতরে ভেতরে সবাই পরিবর্তন চাচ্ছিল।

২-বাকশাল কায়েম হল।সব দল নিষিদ্ব হল।বাকশালের হোতারা ভাবতে লাগলেন ডান বা বাম আর কেউ ঊঠে আসতে পারবেনা অন্তত এ জনমে।আরামসে রাজ করা যাবে বাঙ্গাল মুলুকের আম আদমির উপর।শুরু হল চরম পর্যায়ের নিপীড়ন আর নির্যাতন।

বিরুধী মতকে দমন করা হল কঠোরভাবে।কয়েক হাজারকে হত্যা করা হল।পার্লামেন্টে হুমকি আসলো ‘আজ কোথায় সিরাজ সিকদার’?মানুষের ঠুটি চেপে ধরে রাখা হল।চাপা ক্ষোভ বিরাজ করতে শুরু করল জনসাধারনের তনু মনে।এক পর্যায়ে বিপথগামী সেনা সদস্যরা জাতীর অন্যতম শ্রেষ্ট সন্তানকে স্ব-পরিবারে (দুই কন্যা ছাড়া) হত্যা করল।কঠিন দমন পীড়নের পর আওয়ামীলিগের ভেতর থেকে শেখ সাহেব পরবর্তি সরকার আসল এবং অবিশ্যাস্য ভাবে খোন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বাধীন আওয়ামীলিগের বৃহদাংশ ই ক্ষমতায় বসল।তবে এ অংশটুকু ছিল ডানপন্থি বলয় হিসেবে পরিচিত।সেই থেকে শুরু।ডানপন্থি মোশতাক দিয়ে আরম্ভ হয়ে একে একে শহিদ জিয়া,বিচারপতি সাত্তার,জেনারেল এরশাদ এবং বেগম জিয়ার নেতৃত্বে ঠানা ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ডান ধারার হাতে দেশের ক্ষমতা ছিল।মাত্র চার বছরের নিপীড়নের প্রতিবাদ স্বরুপ বাংলা মুলুকেদ জনসাধারন ঠানা দুই দশক ডান ধারাকে বেছে নিয়েছিল।কারন দেশের বৃহত্তর জনগোষ্টি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ আর ধর্মীয় মুল্যবোধে বিশ্বাসী ছিল।

৩-দুনিয়ার ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যাবে যত জায়গায় ইসলামপন্থী বা জাতীয়তাবাদি শক্তিকে দমন পীড়ন যত বেশী করা হয়েছে সেসব জায়গায় সংশ্লিষ্টদের উথ্বান হয়েছে অনিবার্য্য ভাবে।ডানপন্থীদের উথ্বান সব জায়গায় ই হয় বামেদের নির্যাতন আর নীপিড়নের পর।ডানেদের এ আসীন সাময়িক হয়না এগুলা হয় অনেক লম্বা আর স্থায়ী।সাম্প্রতিক তুরস্ক বা ইজিপ্টের দিকে দেখলে দেখা যাবে বাম বা অতি সেক্যুলারদের দানবীয় শাসনের পর ডানদের অবিশ্যাস্য উথ্বান ঘটেছে।তাবত দুনিয়ায় বলা যায় বর্তমানে ডানপন্থীদের শাসন চলছে।চরম জাতীয়তাবাদিরা শাসন করছে অথবা মুসলিম মডার্ন দল সমুহ নেতৃত্ব দিচ্ছে।ইসলাম পন্থী

রাজনীতির মুলনীতি ই হল,নীপিড়ন আসবে অতঃপর তারা তাদের কাংখিত কল্যান রাষ্ট্র গঠনে সক্ষমতা অর্জন করবে।যদিও ঐতিহাসিকভাবে বাম বা সেক্যুলারপন্থীরা শাসন কার্য পরিচালনায় দমনের পথ বেছে নেয় কিন্তু দেশের উন্নয়নে এরা অগ্রনি ভুমিকা রাখে।আবার ডানপম্থীরা শাসনে দুর্বল এবং উন্নয়নে ও বটে।আধুনিক বিশ্ব রাজনীতিতে ডানদের একচেটিয়া বাজার চললেও দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোতে বাম বা সেক্যুলারদের আধিপত্য বিদ্যমান।

৪-২০০১ টু ২০০৬ সাল।বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী মধ্যপন্থীদল বিএনপি নেতৃত্বাধীন চরম ডানপন্থী দলগুলোর সাথে কোয়ালিশান সরকার পরিচালিত হয়।সেভেন সিস্টারকে নিয়ন্ত্রনে রাখার নিমিত্তে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের অব্যাহত কৌশলি ভুমিকা,বৈশ্বিক রাজনীতির মোকাবেলা,আভ্যন্তরিন সংকট কাঠিয়ে চলাসহ হাজারো সমস্যাকে সাথে নিয়ে পরিচালিত সরকার সু-শাসন দিতে সম্মত হয় জনগনকে।যদিও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা কোথাও কোথাও সরকারি গুন্ডা বাহিনীর বাড়াবাড়িতে বিতর্কিত হতে হয়েছিল।সরকারের প্রধান শরিক ছিল দলগত ভাবে মহান মুক্তিযোদ্বের বিরুধীতা কারি ও আল্লাহর আইন চালুর স্লোগান নিয়ে পরিচালিত উপমহাদেশের প্রাচীন ও মজবুত সাংগঠনিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্টিত দল জামায়াতে ইসলামী।বিএনপি ছাড়া বাংলাদেশে ডান বা বাম অথবা ইসলামী দল বা ব্যাক্তি কেন্দ্রিক দল সমুহ গোড়া থেকে ই জামায়াত বিরুধী।প্রধান বিরুধী দল নেত্রী শেখ হাসিনার চৌকস নেতৃত্বে চারদলের বাইরে প্রায় সব মত এবং পথের দল এমনকি খেলাফত মজলিসের মত ইসলামী দলের সাথে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে সরকারের বিরুধীতায় লিপ্ত হয়।দেশের ভেতরে জঙ্গিবাদের শুরু হয়।সরকার চরম সংকটে মেয়াদ শেষ করলে মধ্যখানে মঈন-ফখরু সরকার ক্ষমতায় দুই বছর থাকে।

৫-২০০৯ সালে বিপুল সংখ্যা গরিষ্টতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে সেক্যুলার আওমী নেতৃত্বাধীন প্রবল বামদের মহাজোট সরকার।সরকার ক্ষমতায় এসে দমন-পীড়নের পথ বেছে নেয়।প্রধান বিরুধী জোটকে নির্মুলের দিকে ধাবিত সরকার একে একে সব কঠিন পদক্ষেপ গ্রহন করে নীপিড়নের হাতিয়ার হিসেবে।বিরুধী নেত্রী ও তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করাসহ মামলা হামলায় জর্জরিত করে দেয়।সিলেটের কোটি মানুষের নেতা ইলিয়াস দিয়ে শুরু করে একে একে বাঘা বাঘা অনেক নেতাকে গুম করে ফেলে।যদিও সরকার তা স্বীকার করেনা।বিএনপির প্রধান শরিক ও দেশের সর্ব বৃহত ইসলামী দল জামায়াতের সব নেতাকে গ্রেফতার করে।হাজারো হাজারো নেতা কর্মীদের পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দেয়।দেশের কারাগারগুলোর ধারন ক্ষমতার চেয়ে বহুগুন বেশী রাজনৈতিক বন্দি দিয়ে ভরে রাখা হয়।একে একে প্রভাবশালি ও নির্বাচিত সাংসদ বা সাবেক মন্ত্রীকে ফাসিতে ঝুলানো হয়।সংবিধান সংশোধন করে ‘তত্বাবধায়ক’ পদ্বতি বাতিল করে ২০১৪ সালে ১৫৪ আসন আগে থেকে নিয়ে বিনা ভোটে আবারো ক্ষমতায় আসা হয়।নির্যাতনের স্টিম রোলারে পিষ্ট বিরুধী মতের লোকজন এখন এগুলোকে তাদের জীবনের অংশ হিসেবে ভাবা শুরু করেছে।সময় যাচ্ছে কিন্তু সরকারের নীপিড়ন শুধু বেড়ে ই চলছে।অনির্বাচিত সরকার পরিচালনা যদিও আমাদের মহান মুক্তি যোদ্বের মুল চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক তবুও তার যাতাকলে পিষ্ট আজ গোটা জাতী।জন সাধারনের নুন্যতম মৌলিক অধিকার ও নেই বললে চলে।এমতাবস্থায় মানুষ না পারছে খোলা মনে নিঃশাস নিতে আর না মন খুলে কথা বলতে।এ যেনো ৭৫র বাকশাল কালীন সেই দঃসহ সময় অতিবাহিত করছে দেশের সাধারন মানুষ।

৬-দমন পীড়নের এই হাতিয়ার গুলো এক সময় মহান মুক্তিযোদ্বে চেতনাকে আবারো যদি জাগিয়ে তুলে এবং সরকারের পতন ঘটে তাহলে ডান এবং ইসলামপন্থীদের আবারো দেশের জনগন বেছে নেবে।৭৫র পট পরিবর্তনের পর যেমন সু-দ্বীর্ঘ দিন সেক্যুলার শক্তিকে ক্ষমতার স্বাদ থেকে দুরে থাকতে হয়েছিল তেমনি এবারো কতকাল বাইরে থাকতে হয় কে জানে।তবে ইতিহাসের পর্যালোচনায় এ কথা গলা উচিয়ে বলা যায়,অব্যাহত এ নির্যাতনের প্রতিবাদে জনতা জেগে গেলে তা রুখবার সাধ্য কারো থাকবেনা।যদি সঠিক নেতৃত্ব পাওয়া যায় তাইলে ৭১ এর বিজয়ী এ জাতী আবারো মহান মুক্তি সংগ্রামের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে এক বিংশ শতাব্দিপযোগি বিপ্লব সাধন করে ফেলবে।ডান এবং ইসলামপন্থীদের সেই উথ্বান রুখার সাধ্য কারো হবেনা।এখন সময় শুধু অপেক্ষার আর দেকবার।কবে আসবে সেই কাংখিত সময় ও কাংখির নেতৃত্ব।

বিষয়: বিবিধ

৯৬৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

377367
০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সকাল ০৯:১৮
হতভাগা লিখেছেন : বিপ্লব নির্ভর করে সে দেশের মানুষ আসলে পরিবর্তন চায় কি না ।

লিড দেবার জন্য কোন নেতা + দল আছে কি না ।

যাদের বিরুদ্ধে বিপ্লব করবে তারা কতটা শক্ত হোল্ড রাখে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File