নহরে তৈল এবং মোজাম্মেল বাবুরা-মাহবুব সুয়েদ
লিখেছেন লিখেছেন সমশেরনামা ৩০ আগস্ট, ২০১৬, ০১:০৮:২৩ রাত
এক-হরপ্রসাদ শাস্ত্রি।উনিশ শতকের সু-লেখক।সেই সময় আরো অনেক সু-লেখক ছিলেন বাংলা সাহিত্যে কিন্তু শাস্ত্রি তার চিরসত্য লেখা ‘তৈল’ এর কারনে যুগে যুগে কালে কালে বেচে থাকবেন।তৈল নামক এ লেখায় হর প্রসাদ শাস্ত্রি দৈনন্দিন জীবনে তেলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব বা ভুমিকা তুলে ধরেছেন সাবলিলভাবে নিপুন কারিগরের মত সৃজনশীল ভাষা শৈলির মাধ্যমে।মানব জীবন বা জগতের ভারসাম্য রক্ষ্যায় তৈলের গুরুত্ব বর্ননার সাথে সাথে শাস্ত্রি মানুষের পারস্পরিক তেল মর্দনের বিষদ বর্ননাও দিয়েছেন।শাস্ত্রির ভাষ্যমতে জগতে মনুষ্য সমাজ পারস্পরিক তৈল মর্দনের মহান কর্ম করে থাকে অতি উতসাহের সাথে প্রয়োজনে এবং স্বার্থে।
দুই-সাংবাদিক বা সংবাদ কর্মী।যুগে যুগে কালে কালে তেলের যেমন প্রয়োজনীয়তা ছিল মানব সভ্যতায় ঠি ক তেমনি সাংবাদিক বা সংবাদ দাতাদের প্রয়োজনীয়তা আছে সমাজে বা সমাজ ব্যাবস্থায়।সাংবাদিকদের সমাজের দর্পন ও বলা হয়।সাংবাদিকেরা সমাজের যেকোন অন্যায় অত্যাচার বা শোষনের বিরুদ্বে জনমত গড়ে তুলতে নিয়ামক ভুমিকা পালন করেন।একটি ডাস্টবিনে খাবার খাওয়া কুকুর বা একটি কাক ছানাকে নিয়ে কলমের আচড়ে তাদের লেখা প্রতিবেদন মানুষকে কাদাতে পারে বা সামান্য কাক বা কুকুরের প্রতি মানুষের সমবেদনা প্রকাশে বাধ্য করে।মিডিয়া কর্মীরা ই অনেক বড় বড় রথি-মহারথিদের চালা উল্টিয়ে দেয় আবার অনেক ক্ষমতাবান শাসকের শাসন ক্ষমতা কেড়ে নিতে ভুমিকা রাখে।বিশালাকার জনসাধারন তার দৈনন্দিন জীবনে মিডিয়াকে অন্যতম নিয়ামক শক্তি হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত।
তিন-আমাদের বাংলাদেশ।৫৬ হাজার বর্গমাইলের এ স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা অর্জনে ততকালীন সময়ে মিডিয়া কর্মীদের অবদান ছিল আকাশসম।মহান স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাত্র সমাজের মাঝে আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে ততকালিন সময়ের দৈনিকগুলো মুখ্য ভুমিকা পালন করে।আইয়ুব শাহির মসনদ কাপাতে মিডিয়ার ভুমিকা ছিল অতুলনীয়।দেশ স্বাধীনের পরে ৯০ এর স্বৈরাচার বিরুধী আন্দোলনে ও সাংবাদিকেরা জতীর বিবেক হিসেবে কাজ করেছিল।বাংলাদেশ বিরুধী যেকোন ভুমিকাকে শক্তভাবে মোকাবেলা বা গনতান্ত্রিক ভিত্তিতে যে কোন আঘাত মোকাবেলায় মিডিয়ার ভুমিকা ছিল সর্বাগ্রে।
চার-সম্প্রতি বাংলাদেশে হট ইস্যু হচ্ছে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে।বর্তমান বাংলাদেশে ৫ ই জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকারকে ঐতিহাসিক কারনে বাংলাদেশের ইসলাম ও জাতীয়তাবাদপন্থি জনতা পার্শ্ববর্তি দেশের ঘনিষ্ট বলে মনে করে।বিগত ২০০৯ থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত বেশ কয়েক উদ্যোগকে নিস্বন্দেহে ভারতপন্থি উদ্যোগ আর ভারতের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ই বলা যায়।স্বভাবত ইসলাম ও জাতীয়তাবাদপন্থিরা ছাড়াও বামপন্থিরা (একাংশ ছাড়া)বর্তমান সরকারের উন্নয়ন মুলক কর্মকান্ড(বিতর্কিত) যে গুলো বিতর্ক ছড়ায় ও দেশের ক্ষতি হয় তা নিয়ে নিজস্ব পন্থায় জনমগ গড়ে আন্দোলনে প্রয়াসি হয়।বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এখানে বিদ্যুতের চাহিদা প্রচুর এবং সরকার তা যে কোন ভাবে মেটাক তা নিয়ে জনসাধারন খুব একটা মাথা ঘামায়না।কিন্তু তাই বলে আমাদের গৌরবের প্রতিক দেশের নাম ফুটে উঠে যেই জায়াগায় সেই সুন্দরবন বিনাশী বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে কোন দেশ প্রেমিক নাগরিক ই একমত হওয়ার কথা না।রামপাল আমাদের সুন্দরবন বিনাশ করবে।এটা নিশ্চয় কষ্টের বিষয়।তবে দেশে বিদ্যমান সরকার ই তা নিয়ে ভাবুক আর বিরুধী যারা তারাও ভাবুক বা জনমত গড়ুক সেই প্রত্যাশা করছি।
পাচ-গত কয়দিন আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ার পার্সন বেগম খালেদা জিয়া রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের ক্ষতিকর দিক সমুহ উপস্থাপন করেন তথ্য উপাত্ত প্রদান করে।দেশের প্রায় সব মিডিয়ার সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে তিনি রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের বিরুধীতা করে এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।বেগম জিয়ার বক্তব্যের দু-দিন পরে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করেন একি ইস্যুতে।বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই কাউন্টার পাল্টা কাউন্টার হবে এটা অতি স্বাভাবিক।বেগম জিয়া যেহেতু সংবাদ সম্মেলন করেছেন সেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ও করতে হবে।কোন কারনে তিনি যদি এমনটি করতে না ও চান তবু তার মোসাহেবরা তাকে কৌশলে তা করাবে।কিন্তু কথা হল এই দুই সংবাদ সম্মেলন জাতীর কাছে যতটুকু গুরুত্বের দাবি রাখে তার চেয়ে বেশি আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে কতিপয় সিনিয়র সাংবাদিকের প্রশ্ন কাম বক্তৃতা আর তৈল মর্দনের ধরন দেখে।
ছয়- সংবাদ সম্মেলনে অনেকে ই তেলের প্রয়োগ করেছেন আচ্ছেমত।কিন্তু সিনিয়র তিনজন আর সু-পরিচিত একজনের কথা গুলো শুনে আমার কাছে মনে হল, শেখ হাসিনা ও বুঝি মনে মনে হেসেছিলেন আর ভাবছিলেন,এই তোমরা ই তরী ডুবাও কারো কারো আবার এখানে এসে আমার মালিশ দাও।মোজাম্মেল বাবু, ৭১র প্রধান।তিনি তার বক্তব্য(ইহা প্রশ্নোত্তর বললে ভুল হবে)শুরু করলেন নিজের তারিফ করে।উনার দাবী মতে উনি আর হাসান মাহমুদ ছাড়া দেশে আর কেউ পরিবেশের উপর সু-শিক্ষিত নয়।তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যখন তেল দিচ্ছিলেন আর তা প্রয়োগের মাত্রা বাড়াচ্ছিলেন আমি কেন জানি খুব লজ্বা পেলাম।আমার দুই চোখ বুজে কানের ভেতর অঙ্গুলি দিতে ইচ্ছে করেছিল।তেল দেয় মানুষজন স্বভাবত।কিন্তু তেলের প্রয়োগটা যে এরকম ভাবে হবে তা কেউ কি কোনদিন ভাবছে?দেশের আর দশটা টিভু চ্যনেলের মালিকের চেয়ে বাবু তো অনেক সচেতন।তেল দিয়ে দিয়ে তিনি জাতীর কতবড় সর্বনাশা সিদ্বান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন সরকারকে একবার ও কি তিনি ভেবেছেন? সমকালের সম্পাদক প্রবীন মানুষ গোলাম সারওয়ারের কথা শুনে মনে হল তিনি আওয়ামীলিগের দলীয় কোন সভায় লীগের মহানগরি পর্যায়ের নেতা হিসেবে আগামীতে দলেত পদ পদবী পাওয়াটা নিশ্চিত করছেন তেলের সঠিক ব্যাবহারে ভদ্রতা আর সতর্কতার সাথে।আরেক গুরুজন মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল তো তেলকে হীরের তরল রুপে নিয়ে গেছেন প্রয়োগ করতে করতে।সিলেট থেকে আমার এক বড় ভাই ইনবক্স করলেন, আফসোস বুলবুল ভাই আর পারবেননা আমাদের এসে নীতিকথা শুনাতে।তার আকুতি দেখে আমার কাছে খুবি খারাপ লেগেছিল।এই বাবু,সরওয়ার,বুলবুলদের মানুষজন আইডল মনে করত।যদিও সবাই নয় কিন্তু একটা বিশালাংশ তাদের অনুসারি রয়েছে।এরা তাদের চামচামি আর তেলবাজি দেখে রীতিমত হতাশ ও ক্ষুদ্ব হয়েছে।বিস্মিত ও হয়েছে অনেকে।তেলের এত সস্তা প্রয়োগ করবে ইনারা তা কোনদিন ও অনুসারি গ্রুপ কল্পনা করেনি।এটিন বাংলার জ ই মামুন তো তার ফেবুতে রামপালে বিদ্যুত স্থাপন নিয়ে কথা বলায় বেগম জিয়াকে দায়ি করে বসলেন।হাসব না কাদব।বিবেক বুদ্বিহীন এরা আজ তেলের প্রয়োগে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছেন ঠিকি কিন্তু সুজলা সুফলা এ বাংলার বারোটা বাজাচ্ছেন।হরপ্রসাদ শাস্ত্রির সেই তেলের ব্যাবহার করছেন।তৈল মর্দনকে আজ উনারা রাষ্ট্রিয় পর্যায়ে নিয়ে গেছেন।হয়তবা এওয়ার্ড টেওয়ার্ড পেয়ে যেতে পারেন ‘তৈল মর্দন’ বিশেষজ্ঞ হিসেবে।আগের যুগে রাজা বাদশার দরবারে কবিরা বসে তেল দিত আর এখন দরবারে খাসে বসে ‘নহরে তেল’ থেকে বালতি বালতি তেল নিয়ে দিচ্ছেন সাংবাদিকেরা।লজ্বা উনাদের না হলেও লজ্বা আমরা পাই।জয়তু তৈল মর্দন।জয়তু বাবু,সরওয়ার বুলবুল ভায়েরা!!!
http://www.bangla.pt
বিষয়: বিবিধ
৮২৪৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন