ই আগষ্টঃ বেনিফিশিয়ারি কে আওয়ামীলিগ না শহিদ জিয়া- মাহবুব সুয়েদ
লিখেছেন লিখেছেন সমশেরনামা ২০ আগস্ট, ২০১৬, ০৭:৩৩:৪২ সকাল
imageএক-রক্তগঙ্গা মাড়িয়ে স্বাধীন সার্বভৌম দেশে সরকার গঠন করলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।১৯৭২ টু ৭৫ সাল।এই সময়ের ভেতর বঙ্গবন্ধু কয়েকবার প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রী হলেন।সংবিধান বদলালেন কয়েকবার।সর্বশেষ আজীবন গনতন্ত্রের পথে হাটা এ নেতা একদলীয় শাসনের পথে হাটা শুরু করলেন।কায়েম করলেন বাকশাল।সবদল নিষিদ্ব হয়ে গেল।সংবাদপত্র ও বন্ধ করা হল।সামরিক বাহীনির কাউন্টার গ্রুপ হিসেবে তোফায়লের (বর্তমান মন্ত্রী) তত্ববধানের গঠিত হল ‘রক্ষী বাহীনি’।সারাদেশে আওয়ামীলিগ নেতাদের লুটতরাজ চলল দেদারছে।সবকিছু নষ্টদের দখলে চলে গেল।বিরুধী মতকে বিনাশ করার মানসে শুরু হল হত্যার রাজনীতি।তাছাড়াওয়ামীলিগ থেকে বেরিয়ে যাওয়া বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী অংশের নেতৃত্বে জাসদ গড়ে উঠল আর শুরু করে আন্ডার গ্রাউন্ড পলিটিক্স।সদ্য স্বাধীন দেশ তখন দেউলিয়া হওয়ার পথে।
দুই-নানা ঘটনা আর দুর্ঘটনায় বিপর্যস্ত জাতীর সামনে কোন বিকল্প ছিলনা।একদিকে সদ্য যুদ্ববিধ্বস্থ অপরদিকে দুর্ভিক্ষ আর তার সাথে যোগ হল এক দলীয় শাসনের যাতাকল।দিশেহারা জাতী তখন পাগল প্রায় অবস্থায়।সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালী যার নামের জিগির তুলত যার নামে বা ভাষনে বুড়ি গঙ্গার পানি খরস্রোত থেমে যের সেই মহান জনপ্রিয় আর কিংবদন্তি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তা তখন শুন্যের কোটায় বা বলা যায় মাইনাস শুন্যে চলে গেছে।সত্য ইতিহাস বলতে গেলে বলতে হয় বঙ্গবন্ধু জনপ্রিয় নেতা ছিলেন কিন্তু শাসন কার্য পরিচালনা করার মত দক্ষতা বা সক্ষমতা তার ছিলনা।তাছাড়া ওয়াশিংটন আর পাকিস্তানের বহুমুখি চক্রান্ত ছিল তাকে ঘিরে।সব মিলিয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগষ্ট তাকে স্বপরিবারে জীবন দিতে হয় স্ব-জাতীর কিছু লোকের হাতে।
তিন-আকাশসম জনপ্রিয়তা নিয়ে আসা উপমহাদেশের ইতিহাসের অন্যতম মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুর্ভাগ্যজনকভাবে স্ব-পরিবারে নিহত হলে সদ্য স্বাধীন দেশের ইতিহাসে একের পর এক ধারাবিহ ঘটনা ঘটতে থাকে।জাতীর অন্যতম এ শ্রেষ্ট সন্তানকে হত্যার ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিলনা।এর হত্যাকারিরাও গুপ্ত ঘাতক বা অপরিচিত ছিলনা।হত্যাকারিরা স্ব-দম্ভে রেডিও টেলিভিষনে ভাষন দিয়েছে।মেজর ডালিম,শাহরিয়ার,রশিদসহ আরো কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যরা ইতিহাসের এ নির্মম হত্যাকান্ড ঘটিয়ে দায় স্বীকার ই করেনি তারা স্বাধীন এ বঙ্গভুমিতে রাজনীতি করেছে এমনকি সংসদেও গিয়েছে।তারা ইতিহাসের চাকাকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল।মহানায়ককে বিদেয় করেছিল।কিন্তু কথা হল এই নির্মম হত্যা যারা ঘটিয়েছে তারা খুব বেনিফিশীয়ারি না হলেও মুল বেনিফিশীয়ারি কে বা কারা?কয়েক দশক থেকে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সমর্থক বিভিন্ন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্টান ইনিয়ে বিনিয়ে বা সরাসরি শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াকে বঙ্গবন্ধু হত্যার মুল বেনিফিশীয়ারি হিসেবে চিহ্নিত করতে স্বচেষ্ট থাকেন।আমরা এখানে সংক্ষেপে ১৯৭৫ এর ১৫ ই আগষ্ট থেকে মেজর জিয়ার ক্ষমতায় আসা পর্যন্ত আলোচনার চেষ্টা করব নিরপেক্ষভাবে।
চার-মুজিব নিহত হলেন স্ব-পরিবারে।তার লাশ পড়ে রইল ধানমন্ডি ৩২ এর সিড়িতে।তিন দিন এভাবে লাশ পড়ে থাকল।তার দল যার সভাপতি ছিলেন তিনি এবং যেই দলের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযোদ্ব সংগটিত হল সেই বাংলাদেশ আওয়ামীলিগের একটা নেতা বা কর্মীও প্রতিবাদ করলনা।কাদের সিদ্দীকির নেতৃত্বে একাংশ বিদ্রোহী হিসেবে বেরিয়ে গেলেও এরা খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি জনমনে।সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ভাবে ঢাকার রাস্তায় নেতা ও পিতা হত্যার প্রতিবাদ না করে মানুষ শোকরিয়া মিছিল করে বসল।তার পক্ষে একটা বিবৃতিও দিলনা কেউ।শেখ সাহেবের চরম দুর্ভাগ্য ই বলতে হয়।চামচা আর তেলবাজ গুষ্টি যারা তাকে শিরতাজ বানিয়েছিল যারা দিনে রাতে তাকে তৈলমর্দনে ব্যাস্ত ছিল।তারা তার সব কাজের সমর্থক ছিল সেই চামবাজরা কেউ প্রতিবাদ করেনি।একজন মুজিবের শেষ নিঃশ্বাসের সাথে তার ভক্ত ও কর্মীকুলের বিদেয় হল নিরবে নিভৃতে।
পাচ– শেখ সাহেবের লাশ দাফনে শরিক হলনা আওয়ামীলিগের কোন নেতা কিন্তু নতুন সরকারে শামিল হলেন দুই তৃতীয়াংশ।শেখ মুজিবের অতি আপন বন্ধু ও শেখ কামালের উকিল বাপ যার সাথে মুজিবের সম্পর্ক ছিল তুই-তুকারি সেই খোন্দকার মোশতাক সাহেব চোশত পাজামা আর জিন্নাহ টুপি পরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিলেন।তার মন্ত্রীসভায় যোগ দিলেন আওয়ামীলিগ নেতা ফনি ভুষন মজুমদার, শাহ মোয়াজ্জেম,কে এম ওবায়েদ,দেওয়ান ফরিদ গাজী প্রমুখ।পাচ- মেজর জিয়াউর রহমানকে ডিঙ্গিয়ে সেনা প্রধান করেছিলেন মেজর জেনারেল শফিউল্লাহকে শেখ সাহেব।আর্মি যখন তার বাড়ি আক্রমন করে তখন শেখ সাহেব সেই শফিউল্লাকে সাহায্যের জন্যে ফোন করলে সে তাকে পেছন দিয়ে পালিয়ে যেতে পরামর্শ দেয়।বিমান বাহীনির চিফ ছিলেন সদ্য সাবেক মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকার।তার ও কোন ভুমিকা ছিলনা।শেখ সাহেবের বন্ধু মুক্তিযোদ্বের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী হলেন মোশতাকের সামরিক উপদেষ্টা।তাহের ঠাকুর হল প্রতিমন্ত্রী।মালেক উকিল লন্ডনে মুজিব নিহতের খবর শুনে বললেন ফেরাউনের পতন হয়েছে।এই মালেক উকিল ই পরবর্তী আওয়ামীলিগ দলীয় সভাপতি হন।শেখ মুজিব নিহত হলে তার লাশ ফেলে রেখে যেই সরকার শপথ নেয় সেখানে পাকিস্তানপন্থি কেউ ঠাই পায়নি।সবাই ছিল মুক্তিযোদ্বে অবদান রাখা বীর বা সংগঠক ও খাটি আওয়ামীলিগার।মেজর জিয়া তখন সেনাবাহীনির সেকন্ড ম্যান।কিন্তু ক্ষমতার ধারে কাছে তিনি ছিলেননা।৭ ই নভেম্বরে তার যেই উথ্বান তা ছিল নিছক ঘটনার প্রেক্ষিত আর কিছু নয়।সুষ্ট এবং ঠান্ডা আর নিরপেক্ষ মন নিয়ে চিন্তা করলে দেখবেন শহিদ জিয়া নয় বঙ্গবন্ধু হত্যার মুল বেনিফিশীয়ারি ছিল আওয়ামীলিগের ই একাংশ।রাষ্ট্রপতি মুজিব নিহত হলে সেখানে শুধু ব্যাক্তির পরিবর্তন হয় কিন্তু দল বা পরিষদ প্রায় সমান ই ছিল।বঙ্গবন্ধুর অতি বিশ্বস্ত তোফায়েল , রাজ্জাক, আমুরা কোন প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের ডাক দেয়নি।ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে তার ই ভাবশিষ্য সিরাজুল আলম খান দাদাভাই,আসম রব, শাহজাহান সিরাজ বা আজকের ইনুরা তার হত্যার পটভুমি রচনা করেছিল।এরাও ছিল আওয়ামীলিগার।কাজে ই নির্দ্বিধায় বলা যায়, বঙ্গবন্ধু হত্যার পটভুমি তৈরিতে ছিল লীগাররা আর সুবিধাভোগী ছিল খাটি আওয়ামীলিগ।তর্কের খতিরে বা রাজনীতির খাতিরে এখানে শহিদ জিয়াকে ঠেনে আনা উচিত নয়।
বিষয়: বিবিধ
৮৯৯ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নাম না জানা সেই আমলের বেশ কিছু বিদেশী সাংবাদিকদের লিখা বা প্রতিবেদন বা অবজার্বেশন প্রচার করে যাচ্ছে । যাতে কোন না কোন ভাবে জিয়াকে কানেক্ট করা যায় এই হত্যাকান্ডে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন