জঙ্গি আবিরের জানাজাঃএটা ই বাংলাদেশ- মাহবুব সুয়েদ
লিখেছেন লিখেছেন সমশেরনামা ১২ জুলাই, ২০১৬, ১০:০৮:৫৩ রাত
image লেখক সাহিত্যিক আনিসুল হক।তার মুক্তিযোদ্ব বিষয়ক উপন্যাস ‘মা’র মাধ্যমে তার লেখনির সাথে আমার পরিচয়।পড়েছি,চিন্তিত হয়েছি,কেদেছি আর পাকিদের ঘৃনা করতে শিখেছি।সেই আনিসুল হকের আরেক পরিচয় তিনি জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর নিয়মিত এবং চুক্তিবদ্ব লেখক ও বটে।যেকোন বিষয়ে সাদাসিদে ভাবে তিনি লেখেন।জনপ্রিয় কলামিষ্ট এবং সুদর্শন পুরুষ।মুন্সিয়ানা থাকে তার লেখনীতে।সামান্য অতি সাধারন একটা বিষয়কে তিনি যে ভাষায় আর লোভনীয় শব্দ ভান্ডারে উপস্থাপন করতে পারেন তাতে তা অনেক উচ্চ মানের এবং সৃজনশীলতা পেয়ে যায়।আমার অন্যতম প্রিয় এই লেখক গত কয়দিন আগে ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিসান বেকারি নামক এক রেষ্টুরেন্টে জঙ্গি হামলায় নিহত! ফারাজের পক্ষে টানা দু দিন কলাম লিখলেন।ফারাজ হোসেন।কিশোর ফারাজ আমেরিকায় থেকে পড়াশোনা করত এবং প্রথম আলো গ্রুপের চেয়ারম্যান শিল্পপতি লতিফুর রহমানের নাতি।ফারাজ দেশে এসেছে এবং সেই দিন হামলাকারি জঙ্গিদের সাথে যোগসাজেস ছিল কি না তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে।একটি ভিডিও তে স্পষ্ট ফারাজকে জঙ্গিদের সাথে মিতালিপুর্ন হাটা হাটতে দেখা গেছে।এগুলো আইন-শৃংখলা রক্ষাকারি বাহীনির বিষয়।তারা তদন্ত করে বের করবে ফারাজ কে।জঙ্গি না ভিকটিম।কথা হচ্ছে ফারাজ নিহত হলে পরে জনাব আনিসুল হক দুইটা লেখা লেখেন ফারাজের মহাত্ম ফুটিয়ে তুলে।একটায় আবার একজন ফারাজকে গোটা বাংলাদেশের প্রতিমুর্তি বলে প্রতিষ্টার চেষ্টা করেন।যদিও অত্যাধুনিক এই যুগে মিডিয়ার কল্যানে সোস্যাল মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার বাড়তে থাকে ফারাজকে নিয়ে।ফারাজ যে জঙ্গিদের ই একজন তা প্রমানার্থে যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত আসতে থাকে মানুষের হাতে।এক পর্যায়ে প্রথম আলো গ্রুপ নিরব হয়ে যায়।ফারাজকে নিয়ে তাদের লস্ফঝস্ফ কমে আসে।একজন ফারাজ আর বাংলাদেশ নয় হয়ত সময়ের ব্যাবধানে একজন ফারাজ দেশের কলংক হিসেবে ই উঠে আসবে।পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন দেশের বৃহত্তর ঈদগাহ শোলাকিয়া মাঠে দেশের ইতিহাসে এক ন্যক্যারজনক ঘটনা ঘটে গেছে।এদিন জঙ্গি হামলায় নিহতের ঘটনা ঘটেছে।এই হামলায় জড়িত আত্মঘাতি জঙ্গি নর্থ সাউথ বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র আবির হোসেন।বয়সে তরুন এই জঙ্গি নিজে মরেছে এবং সাথে আরো বেশ কিছু লোককে ও মেরেছে।আফসোসের বিষয় হচ্ছে, এই জঙ্গিরা নিজেদের ইসলামপন্থি জিহাদিস্ট বলে দাবি করে থাকে যদিও ইসলাম আদৌ এমন কোন জঙ্গিবাদ বা হত্যার কাজকে সমর্থন করেনা।শান্তির ধর্ম ইসলামকে নিয়ে জায়োনিস্ট পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গোটা বিশ্ব জোড়ে আজ সন্ত্রাসি বা সন্ত্রাসের মদদ দাতা হিসেবে চিহ্নিতের অপচেষ্টা চলে আসছে।লাখো শহিদের বলিদান আর হাজার হাজার মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত ৭১ এর ১৬ ই ডিসেম্বরে লাল সবুজের পতাকা নিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নেয়া প্রিয় দেশ আজ জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ষড়যন্ত্রকারীদের শকুনীয় ও দানবীয় দৃষ্টির স্বীকার।ধর্মপ্রান কিন্তু ধর্মান্ধ নয় এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ দেশকে আজ জঙ্গিবাদ বা অস্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করে বিশ্বের কাছে ছোট করার ঘৃন্য ষড়যন্ত্র চলছে।খেলারামরা আপন মনে খেলে যাচ্ছে প্রিয় বাংলাদেশকে নিয়ে।মাফিয়া গুষ্টি বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের এ ঘৃন্য চক্রান্ত বাস্তবায়নের জন্যে বেছে নিয়েছে কিশোর বা তরুন বয়সি আবেগি তুর্কীদের।ভালো বা সম্ভ্রান্ত ধনীর দুলালদের তারা টার্গেট করেছে।মাদ্রাসা শিক্ষিত না কিন্তু ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে ব্রেন ওয়াশ করা সম্ভব এমন ছেলেরা ই তাদের টার্গেট।নিশপাপ ও আকর্ষনীয় চেহারার এ ছেলেগুলোর বেশিরভাগ ই বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র।ইতিমধ্যে হলি আর্টিসান বা শোলাকিয়ায় নিহত জঙ্গিদের পরিবার জানিয়েছে এদের প্রায় সবাই ৬/৭ মাস ধরে পরিবার থেকে নিখোজ রয়েছে।এমনকি পরিবারগুলো থানায় জিডি ও করেছে সন্ধান দাবি করে।কথা হচ্ছে অত্যাধুনিক এই ডিজুস টাইপ ছেলেগুলোর ব্রেন ওয়াশ করে যারা এদেরকে জঙ্গি বানায় তারা কতটা সফল হচ্ছে বা হবে।চিন্তা করে দেখুন এরা হয়ত সাময়িকভাবে জনমনে কিছুটা ভীতির সঞ্চার করতে পারে কিন্তু সামগ্রিকভাবে কি এরা আসলে সফল হবে? বা এরা কি দেশের সাধারন মানুষকে জঙ্গিবাদের পক্ষে দাড় করাতে পারবে?অন্যান্য দেশে কোন জঙ্গির মৃত্যু হলে দেখা নানা অজুহাতে বা রাজনৈতিক কারনে একটা পক্ষ এদের সাইডে চলে আসে এবং এদের জানাজায় ও উপস্থিতি কম হয়না।কিন্তু অতি সাম্প্রতিক নিহত জঙ্গিদের পরিবারগুলো এদের লাশ গ্রহনে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।ঢাকার আওয়ামীলিগ নেতা ইমতিয়াজ খান তার জঙ্গি পুত্রের ন্যক্যারজনক ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করে জাতীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।একজন পিতা তার পুত্র শোক ভুলে পুত্রের কু কর্মের কারনে প্রকাশ্যে ঘৃনা প্রকাশ চাট্রিখানি কথা নয়।একে ই বলে ধন্য পিতা।স্যলুট সেই পিতাকে।অন্যদিকে শোলাকিয়ায় নিহত আত্মগাতি জঙ্গি আবিরের জানাজার ছবি মিডিয়ায় এসেছে।এক কথায় অসাধারন এক বাংলার চিত্র ফুটে উঠেছে এই জানাজায়।নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ।সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে।এখানকার সাধারন মানুষ সরল ও ধর্ম অন্তপ্রান।ধর্মের জন্যে এরা জীবন দিতে যেমন প্রস্তুত তেমনি এরা ধর্মের নামে যেকোন ধরনের হানাহানি বা নাশকতাকে ঘৃনার সাথে পরিত্যাগ করেছে।এই দেশের সু-অতীত বলে যে, ধর্মীয় মৌলবাদকে এরা প্রত্যাখ্যান করেছে বরাবর।হাল যামানার জঙ্গিবাদকে ও এরা গিলবেনা বা এই থিওরি যে ব্যার্থ হবে তার ইঙ্গিত ইতিমধ্যে বিশ্ব পেয়ে গেছে।জঙ্গি আবিরের জানাজাকে আমি বলব এক অসাম্প্রদায়ি আর ধর্মপ্রান শান্তিকামি সোনার বাংলার প্রকৃত রুপ।একজন পিতা তার কলিজার টুকরো সন্তানের জানাজায় যায়নি।জন্মের পর হাতে হাত ধরে কাধে কাধ মিলিয়ে যেই সন্তানকে অতি আদরে লালন করে বিশ্ব বিদ্যালয়ে পাঠিয়েছে সেই ছেলের শেষ বিদায়ে শরিক না হয়ে ঘৃনা প্রকাশ কতটুকু শান্তিকামি মানুষ হলে পরে সম্ভব তার প্রমান করে।তার জানাজায় একমাত্র ইমাম ছাড়া আর একটা লোক ও অংশ নেয়নি।ধন্য হে পিতা, ধন্য হে গ্রামবাসি, ধন্য হে বাংলার মানুষ।পবিত্র ইসলামের নামে যেকোন ধরনের হিংসাত্মক বা ধংসাত্মক কাজকে কি পরিমান ঘৃনার চোখে বাংলার মানুষজন দেখে তার বাস্তব নমুনা জঙ্গি আবিরের এই জানাজা।একজন জঙ্গি সে তার জন্মদাতা পিতা-মাতার কাছে যেমন ঘৃনার পাত্র তেমনি সর্বসাধারনের কাছেও।সকল মহল অর্থ্যাত দলমত নির্বিশেষে সকলে যদি এরকম ঘৃনা অব্যাহত রাখে তাহলে আমার বিশ্বাস সব ষড়যন্ত্রকারিরা পরাজিত হবে আর কোমলমতি কিশোররাও আর জঙ্গিবাদে জড়াতে নিরুতসাহিত হবে।৭১ এ যেমন অসুরদের বিদেয় করেছিলাম আমরা তেমনি এবার ও এই জঙ্গিবাদকে ঐক্যবদ্বভাবে মোকাবেলা করে বাংলার মানুষ মহান মুক্তিযোদ্বের মুল আদর্শ নির্ভর একটি সোনার বাংলা গড়ে তুলবে বলে বিশ্বাস।
বিষয়: বিবিধ
১৪৮১ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে অনেক লেখা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ খুব মনযোগ বিলিয়ে পড়েছি। কিছু কিছু লেখার কিছু অংশ যৌক্তিক ও মনঃপূত হলেও অধিকাংশ লেখা একগাদা উপদেশ সমৃদ্ধ হতাশাব্যঞ্জক বেশ একতরফা মনে হয়েছে।
ভালো লাগলো এত সুন্দর যৌক্তিক সময়োচিত আশা সঞ্চারী ব্যাতিক্রম লেখা পড়ে।
ধন্যবাদ।
বাংলাদেশে আমরা ৯০% মুসলমানেরাই কেবল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দেখাই । অন্য ধর্মের মানুষেরা সেটা করে না । কারণ তারা সংখ্যায় খুব কম বলে জল ঘোলা করার সাহস পায় না , তারা বরং এসব ব্যাপারে ইনটেনশন নিয়েই চুপ থাকে ।
আমরা মুসলমানেরা দৃষ্টিকটূভাবেই বেশ উদার বলে এদের এহেন আচরণকেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে তারাও অবদান রাখছে বলে মনে করি।
অনুকূল পরিবেশে এরা কি রকম অসাম্প্রদায়িক তা ভালই টের পাওয়া গেছে যখন কুরবানির ইতিহাস নিয়ে একজন হিন্দু হাইকোর্টে রিট করে । আর আমরা মুসলমানেরা তাদের পূঁজা দেখতে যাই , তাদের অনূকরণে হোলি উৎসবে মেতে উঠি !
এই অতি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কি আমাদেরকে আমাদের ধর্ম থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে না ?
একটা দেশে নানা ধর্মের মানুষ থাকবে । কাউকে যেমন আন্ডার এস্টিমেট করা উচিৎ না তেমনি কাউকে আবার ওভার এস্টিমেট কারও ঠিক না । এতে নিজেদের গার্ডথ্স চলে যায়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন