সাম্প্রতিক বাংলাদেশঃদরকার জঙ্গিবাদ বিরুধী উত্তাল গনজাগরন এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ঐক্য- মাহবুব সুয়েদ

লিখেছেন লিখেছেন সমশেরনামা ০৮ জুলাই, ২০১৬, ০৭:১৬:৩২ সন্ধ্যা

১৯৪৭ সালে বৃটিশরা যখন দু'শ বছরের উপমহাদেশকে তাদের গোলামির জিঞ্জির থেকে মুক্তি দিয়ে স্বাধীন করে দেয়ার সিদ্বান্ত নেয় তখন সেক্যুলার আদর্শে বিশ্বাসী ব্যারিষ্টার এবং শিয়া মুসলিম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর রাজনৈতিক কুটচাল ও আলেম সমাজের একাংশের(যারা রাজনৈতিক মনোভাবাপন্ন) অতি উতসাহে বৃটিশরা সুদুর প্রসারি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হাজারো বছরের ঐতিহ্যমন্ডিত ভারতীয় উপমহাদেশকে ভেঙ্গে দু-টুকরো করে দিয়ে 'ভারত' ও 'পাকিস্তান' নামক দু-রাষ্টের জন্ম দিয়ে যায়।পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল 'ধর্মীয় চেতনা'কে সামনে নিয়ে এবং এর নাম করন করা হয় 'ইসলামিক রিপাবলিক অফ পাকিস্তান'। নামে ইসলামীক রিপাবলিক হলেও গুনে বা কর্মে পাকিস্তান কখনো ইসলামের মুল চেতনার সাথে মিল রেখে বা ইসলামী আদর্শকে ধারন করে কোনদিন ছিলনা এবং হওয়ার সম্ভাবনা ও নেই।প্রায় দেড় হাজার মাইল দুরে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের একাংশ যা আজকের বাংলাদেশ এ অংশের মানুষ ও ধর্মীয় চেতনা অন্তরে লালন করত।ধর্মপ্রান জনসাধারন ছিল।সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজমান ছিল জনসাধারনের মনে কিন্তু উগ্রতা বা আজকের মত জঙ্গিবাদকে সমর্থন দিতনা।অনেক চড়াই উতরাইয়ের পর ৪৭ সালে জন্ম নেয়া দেশ ৭১ এ ভেঙ্গে দুভাগ হয়ে যায় এবং পুর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ নামে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নেয়।স্বাধীন বাংলায় বা পুর্ব পাকিস্তান থাকাবস্থায় কোনদিন ও জনগন ধর্মীয় উগ্রতাকে প্রশ্রয় দেয়নি।ঊনিশ শতকের শেষ পর্যন্ত অর্থ্যাত ২০০০ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষ ধর্মের জন্যে জীবন বাজি রাখতে যেমন প্রস্তুত থাকত কিন্তু ধর্মীয় আবেগকে ব্যাবহার করে ফায়দা হাসিল বা উগ্রবাদকে বরাবর প্রত্যাখ্যান করে আসছে ব্যালটের মাধ্যমে।শুধু ধর্মীয় ক্ষেত্রে নয় ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলায় বিশ্বাসী এদেশের জনগন উগ্র জাতীয়তাবাদকে প্রশ্রয় দেয়না যার প্রমান এখানে নানা উপজাতী লোকের বসবাস।এখানে রোজা এবং পূজা একসাথে হত।ওয়াজ মেহফিল আবার যাত্রার আসর ও বসত।সংসদে সব মতের দলীয় সদস্যরা এসেছে।ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী, জাতীয়তাবাদি আদর্শে বিশ্বাসী, ধর্মীয় আইনে বিশ্বাসী, সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী অর্থ্যাত সকল মহলেরি প্রতিনিধীরা পার্লামেন্টে এক সাথে একি মঞ্চে বসেছে বা বসতে পারত।সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ দেশে বিপত্তিটা শুরু হয় ২০০১ সাল থেকে।যদিও ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত কিছু কিছু ক্ষুদ্রাংশ চেষ্টা করেছিল জঙ্গিবাদকে বিস্তার করতে কিন্তু সাধারন জনমনে কোন প্রভাব বিস্তার করেনি।বিপত্তী চলে আসে ২০০১ সালে বিএনপি জোট ক্ষমতায় আসার পর থেকে।প্রেসিডেন্ট জিয়ার গড়া দল বিএনপি এর আগে এককভাবে তিনবার ক্ষমতায় এসেছে এবং প্রেসিডেন্ট ও প্রধান মন্ত্রির পদ অর্থ্যার সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান দুইটা ই এরা চালিয়েছিল।কিন্তু ২০০১ এ বিএনপি এককভাবে ক্ষমতায় না এসে বিপুল সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে জোটবদ্বভাবে সরকার গঠন করে।বিএনপির সাথে দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী রাজনৈতিক দল জামায়াত ও দ্বীতিয় বৃহত্তম ইসলামী এলায়ন্স যার নেতৃত্বে শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, মুফতি আমিনী, মাওলানা মহি উদ্দীন খান (রঃ)প্রমুখের মত ব্যক্তিত্বরা ছিলেন তারা শরীক ছিলেন।ততকালীন সময়ের সরকারকে মোটামোটি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ইসলামীক সরকার ই বলা যায় (যদিও ইসলামী আদর্শের কোন বাস্তবায়ন হয়নি)। অর্থ্যাত পাকিস্তান যেমন নামে ইসলামীক রিপাবলিক কিন্তু কর্মে কিছু নেই তেমনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে বড় বড় সব ইসলামীক নেতা আর দল থাকলেও কর্মে সরকার আগের মত ই ছিল।যেহেতু সরকারে এবং পার্লামেন্টে ইসলামপন্থীরা ছিল তাই ২০০১ সাল থেকে ই অতি সেক্যুলার এবং বামধারায় বিশ্বাসী দেশীয় গোষ্টির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক রাজনীতির স্বীকার হতে শুরু করে বাংলাদেশ।বিশ্ব রাজনীতির গতি নির্ধারকরা বাংলাদেশে ইসলামপন্থিদের ঐক্য আর উথ্বানকে স্বাভাবিকভাবে বাকা চোখে দেখতে শুরু করে।বিশেষত প্রতিবেশী রাষ্ট্র একে বেশী নেতিবাচক নিতে শুরু করে।যেহেতু ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের ইসলামপন্থীদল সমুহ ভারত বিরুধীতা করে আসছে তাই স্বাভাবিকভাবে ভারত সরকার ইসলামপন্থীদের এ উথ্বান বা সরকারে অংশীদারকে মেনে নেয়াটা সহজ ছিলনা।যাইহোক ২০০১ সাল থেকে শুরু হয়ে যায় জঙ্গিবাদি কার্যক্রমের উথ্বান।আর নেপথ্যে থাকে দেশী-বিদেশী আন্তর্জাতিক চক্র যারা বাংলাদেশকে স্থিতিশীল দেখতে চায়না আর ইসলামপন্থীদের দমিয়ে রাখায় বিশ্বাসী ছিল।প্রথমে বিচ্ছিন্ন ভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্রাংশের মাধ্যমে টেস্ট কেস চালানো হলেও পরে তা শায়খ রহমান আর বাংলাভাইদের জেএমবি দ্বারা প্রকাশ্য রুপ দেয়া হয়।একযোগে সারা দেশে বোমা হামলার ঘটনা এবং কয়েকটি জেলা আদালতে বোমা হামলা বা বিচারক হত্যার মত ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশে তথাকথিত 'ইসলামী জঙ্গিবাদকে' প্রাতিষ্টানিক রুপ দেয়ার চেষ্টা করা হয়।কিন্তু বরাবরের মত দেশের সাধারন জনগন এবং সর্ব মতের আলেম সমাজ জঙ্গিবাদ বিরুধী জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলেন।জাতীয় মসজিদের মরহুম খতিব আল্লামা ওবায়দুল হক সাহেব সারা দেশে জুময়ার খোতবায় জঙ্গিবাদকে হারাম আর যারা ইসলামের নামে মানুষ হত্যায় মেতেছে তাদের ইসলাম বিরুধী ষড়যন্ত্রকারি হিসেবে ঘোষনা দিতে আর জনমত গড়তে ইমামদের প্রতি আহবান জানান যার প্রভাবে সারাদেশে ব্যাপক গনজাগরন তৈরি হয়ে যায়।জঙ্গিবাদ বিরুধী ঐক্য দৃঢ়তা পায় আর ইমামেরা খোতাবায় এবং মুসল্লিরা জুম্মার নামাযের পর মিছিলে মিছিলে প্রতিবাদী হয়ে উঠলে সে যাত্রায় দেশে জঙ্গিবাদের উথ্বানকে ঠেকিয়ে দেয়।সাম্প্রতিক বাংলাদেশে আবারো ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ আর সন্ত্রাসের উথ্বান বাড়ছে।তবে এবারকার টার্গেট ভিন্ন।আগের বার শায়খ রহমান টাইপ কিছু আলেম নামধারী বিপথগামীদের ব্যাবহার করলেও এবার করা হচ্ছে সাধারন শিক্ষায় শিক্ষিত উচ্ছ ঘরের সন্তানদের।মগজ ধোলাই দিয়ে বড় লোকের আদরের দুলালদের জান্নাতের লোভ দেখিয়ে ভুল পথে ঠেলে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।একটু গভিরে চিন্তা করলে দেখা যাবে, এই জঙ্গিবাদে যারা জড়িত বা নেপথ্যে যেই অশুভচক্র কাজ করছে তারা কিন্তু ইসলামী আদর্শের বাস্তবায়ন বা রাসুল মোহাম্মদ (সঃ)র দেখানো পথে না হেটে ভিন্ন ভাবে ভিন্ন পথে হাটছে।এরা ব্রেন ওয়াসড কিছু কালশাপের আকারে ছড়িয়ে পড়ছে যেমনটি ইসলামের ইতিহাসে সেই রাসুলের প্রথম যোগ থেকে ই ছিল বলে অস্তিত্ব পাওয়া যায় বা যাচ্ছে।ইসলামের তো ক্ষতি হচ্ছে ই এবং এর দ্বারা এরা মুসলমানদের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারনা ছড়িতে দিতে বদ্ব পরিকর উপরন্তু এই সব গোষ্টির কারনে জনমনে আতংক এবং দেশের ব্যপারে গোটা দুনিয়ায় বাকা চোখে দেখা শুরু হয়ে গেছে।কোনভাবে ই বা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে এইসব ধংসাত্মক কাজে নিয়োজিতদের সাধুবাদ দেয়া যায়না।আজকে দেশের স্বার্থে দেশের মানুষের স্বার্থে সর্বোপরি ইসলামের পবিত্রতা রক্ষার স্বার্থে এইসব গোষ্টির বিরুদ্ব মরহুম খতিব সাহেবের মত ধর্মীয় নেতাদের এগিয়ে আসা জরুরী।ধর্মপ্রান জনগনকে এর কুফল সম্পর্কে সচেতন এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে এরা যে ধর্ম বিরুধী কাজে লিপ্ত তার সচেতনতা তৈরি জরুরি।রাজনৈতিক সব দলকে দেশের জাতীয় স্বার্থে এক কাতারে নেমে এসে গনজাগরন করা দরকার।ক্রসফায়ার বা সাময়িক দমন সফলতা দেবেনা।ব্যাপক গনজাগরন আর জঙ্গিবাদ বিরুধী রাজনৈতিক ধর্মীয় ঐক্য ই কেবল পারবে এই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে এবং চিরতরে নির্মুল করবে বলে ও আমার বিশ্বাস।

বিষয়: বিবিধ

১২৯৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

374206
০৮ জুলাই ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫১
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনার বিশ্লেষণ ভাল লাগল তবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় আপনি শুধু জিন্নার কথাই বলেছেন। শেরে বাংলা বা অন্যান্ন জনপ্রীয় ইসলামপ্রীয় মুসলীমদের কথা বা অবদানের কথা বলেন নি। সিদ্ধান্তটি আমার মতে কিছু গলদ থাকলেও সঠিক ছিল। পিছনে উদ্দেশ্য ছিল ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে বিশ্বে মোডেল হওয়ার। কিন্তু দেশ প্রতিষ্ঠার পর সবাই আসল উদ্দেশ্য বে মালুম ভুলে যায়। আর সেটাই আজকের অবস্থানের জন্য দায়ী। ধন্যবাদ।
০৮ জুলাই ২০১৬ রাত ০৯:৫০
310464
সমশেরনামা লিখেছেন : রেসপেকট
374213
০৯ জুলাই ২০১৬ রাত ০৩:০৭
কুয়েত থেকে লিখেছেন : নামে ইসলামীক রিপাবলিক হলেও গুনে বা কর্মে পাকিস্তান কখনো ইসলামের মুল চেতনার সাথে মিল রেখে বা ইসলামী আদর্শকে ধারন করে কোনদিন ছিলনা ভালো লাগলো অনেক অনেক ধন্যবাদ
০৯ জুলাই ২০১৬ সকাল ০৫:২০
310466
সমশেরনামা লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে ও। ইতিহাস যা বলে আমি শুধু তা বলার চেষটা করেছি ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File