ভাইজান,জিনষ কিন্ত ইনডিয়ান নেবেন নাকি-মাহবুব সুয়েদ
লিখেছেন লিখেছেন সমশেরনামা ২৪ জুন, ২০১৬, ০৯:১৩:১৭ সকাল
এক-রক্তগঙ্গা মাড়িয়ে নবাব সিরাজের সুবে বাংলা ৭১ এ পাকি বদমায়েশদের হাত থেকে স্বাধীনতার স্বাদ লাভ করেছিল।আজ সেই স্বাধীন বাংলার যেকোন বাজারে যেকোন প্রডাক্ট কিনতে গেলে দোকানি আপনাকে যাই দেখাবে তার সাথে বলবে,ভাই ইন্ডিয়ান (আপনার চাহিদার জিনিষ) আছে নেবেন নাকি?আমি আশ্চর্য হই ইউরোপের বড় বড় শপিং মল গুলোতে গেলে যেখানে আপনি ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা জিনিষ পাবেন সেখানে নিজ দেশে গিয়ে আপনাকে বাঙ্গালী দোকানি মেড ইন ইন্ডিয়ার সবকিছু এমনকি কন্ডম ও দিয়ে দেবে।গ্রামের এক ভাবিকে একবার একলোক বগলে পাটি নিয়ে ঘুরতে দেখে জিজ্ঞেস করল ভাবি সাথে পাটি ব্যাপারটা কি? ভাবি বলল ভাইরে গাও ভরতি দেবর কাকে ই বা না করি!
আজকে বাংলাদেশ ও সমান অবস্থায় আছে।ট্রানজিট,ভিসা,ব্যবসাপাতি সবকিছুতে আজ ভারতীয় আধিপত্য লক্ষনীয়।
দুই-বৃটিশ বেনিয়াদের কুটচালের নির্মম স্বীকার বাংলার শেষ নবাব সিরাজোদ্দৌলা পলাশীর আম্রকাননে ক্লাইভ আর মীর জাফর বাহিনীর হাতে পরাজিত হলে তার স্বপ্নের সুবে বাংলা চলে যায় বৃটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির করায়ত্বে।সময়ের ব্যবধানে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রায় দু’শ বছর নবাবের স্বাধীন বাংলা পরাধীনতার শিখলে আবদ্ব হয়ে বৃটিশদের গোলামির জীন্দেগি বহন করতে হয়।দু’শ বছরের শাসন-শোষন আর মজলুমদের ফরিয়াদ এবং ক্ষুদিরাম,সুর্যসেন,তীতুমির, শরিয়াতুল্লাহদের জানবাজির ফলে বাংলায় দখলদার বাহীনির বিরুদ্বে বিক্ষিপ্ত সংগ্রাম চালিত হলেও ১৯৪৭ সালে এসে বৃটিশরা চুড়ান্তভাবে সিদ্বান্ত নেয় আর উপমহাদেশকে স্বাধীনতা দেয়ার সিদ্বান্ত নেয়।নেহেরু আর গান্ধিজির কুটচাল এবং কায়েদে আজম জিন্নাহর লোলুপতার কুফলে নবাবের বাংলা আবারো চলে যায় প্রায় দেড় হাজার মাইল দুরবর্তী দুনিয়ার ইতিহাসে তৈরি আজব রাষ্ট্র ‘পাকিস্তানের’ অধীনে।নামে স্বাধীন এ বাংলা পুর্ব পাকিস্তান নাম ধারন করে নতুন রাষ্ট্রভুক্ত হলেও শোষন আর নির্যাতন চালিত হচ্ছিল সমানতালে বা কোন কোন ক্ষেত্রে বেশি।৪৭-৭১ এই সময়ের মধ্যে সামরিক সরকার আর রাজনৈতিক শুন্যতার ফলে বাংলায় আবারো মুক্তিকামি আর স্বাধীনচেতা মানুষের আন্দোলন দানা বেধে উঠতে থাকে।৬৯ এ চুড়ান্ত রুপ লাভ করলেও ৬৫র যুদ্বে পুর্বাংশের লোকেরা বীরদর্পে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্বে লড়াই চালিয়র যায়।৭১এ স্বাধীন বাংলাদেশ নাম ধারনের আগ পর্যন্ত বারবার নবাব সিরাজের সুবে বাংলা আক্রান্ত আর শোষিত হচ্ছিল নানা ধরনের দস্যু প্রকৃতির বনি আদমের দ্বারা।৭১ এর বিজয়ের মাধ্যমে বাংলার সাধারন জনতা মনে প্রানে বিশ্বাস করা শুরু করে যে,আমরা হয়ত এবার স্বাধীনতার পুর্ন স্বাদ পেলাম।
তিন-৪৭ সালে বাংলার একাংশ যখন পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হয় তখন ক্ষুদ্রাংশ বিরুধীতা করলেও ৭১ এ রাজনৈতিক নেতাদের উল্লেখযোগ্য অংশ পিন্ডী থেকে আলাদা হওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নেয়।তাদের বিপক্ষে থাকার পক্ষে প্রধান যুক্তি ছিল পশ্চিমাংশ থেকে আলাদা হলে হিন্দুস্তানের কাছে ‘সুবে বাংলা’ আবার বন্দিত্ব বরন করবে।কিন্তু ৫৬ হাজার বর্গমাইলের আম জনতা প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ নিতে পাগলপারা হয়ে যায়।রাজনৈতিক দলসমুহের অনেকে জনতার আবেগের মুল্যায়ন না করতে পারলেও রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলার মানুষ বিশ্ব মানচিত্রে ঠিকি স্বাধীন এক বাংলাদেশের জন্ম দেয়।
চার-স্বাধীন বাংলার অন্যতম কারন ছিল যাতে বাংলার আম জনতা সামরিক,রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক বা অন্য যেকোন ভাবে পরাধীন না হয়।পরিতাপের আজকের বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নতজানু হয়ে চলার ফলস্বরুপ অরক্ষিত সীমান্তে ফেলানির ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়।ট্রানজিটের নামে অবাধে যাতায়াত করতে পারে বহিঃরাষ্ট্রের বাহন সমুহ আবার দেশের শপিংমল থেকে ফুটপাত সব ধরনের বাজার দখল করে আছে প্রতিবেশি রাষ্ট্রের পন্য।আজ আপনি বাজারে যা কিছু কিনতে যান না কেন দোকানি আপনাকে জিজ্ঞেস করে, ভাইজান কি নিবেন ভারতীয় প্রোডাক্ট আছে।লজ্বায় মাথা হেট হয়ে যায়।যতদিন যাচ্ছে ততবেশি আমরা নতজানু হয়ে যাচ্ছি।অবস্থার পরিবর্তন না হলে সেদিন দুরে নয় যেদিন সেনাবাহীনি বা সীমান্ত দুইটার গুরুত্ব উঠে যাবে আর মানুষ ভূটানের মত স্বাধীন ভাবা শুরু করবে।জাগরুক হোক মহান মুক্তিযোদ্বের ‘স্বাধীন বাংলার’ চেতনা.
বিষয়: বিবিধ
৯৬১ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন