জাসদের সাথে সহবাসঃপিছিয়ে আছে কে? -মাহবুব সুয়েদ

লিখেছেন লিখেছেন সমশেরনামা ১৫ জুন, ২০১৬, ০৪:০০:৫৩ বিকাল

এক-অতি সম্প্রতি আওয়ামীলিগ সাধারন সম্পাদক ও মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফের দেয়া জাসদ আর ইনু সংক্রান্ত বক্তৃতা নিয়ে বলা যায় প্রায় রাজনীতির মাঠে এক ধরনের জুয়া খেলা শুরু হয়েছে।সৈয়দ সাহেব সেদিন বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পটভুমিতে জাসদ ছিল মুল ভুমিকা পালনকারি এবং জাসদকে মন্ত্রিত্ব দেয়ার জন্যে আওয়ামীলিগকে একদিন খেসারত দিতে হবে।

দুই-বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের স্লোগানকে সামনে রেখে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামীলিগ থেকে বেরিয়ে একটি অংশ জাসদ গঠন করেছিল।গনতন্ত্রে যে জায়গায় শক্তিশালী বিরুধীদল থাকা অপরিহার্য বলা যায় আমাদের সদ্য স্বাধীন দেশে জাসদ ছিল সেই বিরুধীতার প্রেরনার বাতিঘর।সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান দাদাভাই,শাজাহান সিরাজ,আসম রব,হাসানুল হক ইনুরা ছাড়াও সেনাবাহিনির অবসরপ্রাপ্ত কিছু অফিসার আর ৭১এ পরাজিত রাজাকারদের সমন্বয়ে জাসদের বুনিয়াদ গঠিত হয়েছিল।কিন্তু শক্তিশালী বিরুধীদল গঠনে যেখানে জাসদের উচিত ছিল গনরাজনীতি করা সেখানে জাসদের ভ্রান্ত নেতৃত্ব সাবেক মুজিববাদী ছাত্রনেতারা সমাজতন্ত্র আর 'গনবাহীনি'র নামে আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতি শুরু করে দেয়।

তিন-ভ্রান্ত নীতি আর সু-নেতৃত্বের অভাব জাসদ প্রতিষ্টার পরপর ই দেখা যায়।খান দাদাভাই নিজে নেতৃত্বে না এসে পেছন থেকে তাত্বিক ভুমিকা গ্রহন করে।সেক্টর কমান্ডার আর পাগলা মেজর এম এ জলিলকে জাসদ সভাপতি করা হলে এক পর্যায়ে জলিল জাসদ ছেড়ে ইসলামী লাইন ধরেন আর সাধারন সম্পাদক আসম রবের নেতৃত্বকে চ্যলেঞ্জ করে বারবার ভাঙ্গনের স্বীকার জাসদের নেতারা এক পর্যায়ে একে একে দল ছেড়ে চলে যেতে থাকেন।ভানুমতির খেলে জাসদ বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে নিজেদের আত্মরক্ষা করাটা মুখ্য হয়ে দাড়ায়।

চার-শুরুতে বলেছি আওয়ামীলিগের একটি অংশের উদ্যোগে ই মুলত জাসদ হয়েছিল আর এরা ছিল অপেক্ষাকৃত তরুন।বর্তমান সেতুমন্ত্রি ওবায়দুল কাদেরকে হারিয়ে ডাকসু বিজয় করেছিল জাসদ ছাত্রলীগ সভাপতি বর্তমানে কারারুদ্ব মাহমুদুর রহমান মান্না।বলা যায় গনরাজনীতিতে জায়গা করতে ব্যর্থ হলেও সারাদেশের তরুনদের কাছে জাসদ হয়ে উঠে অপ্রতিরুধ্য জনপ্রিয়।শিক্ষাপ্রতিষ্টান গুলোতে জাসদ ছাত্রলীগের দৌরাত্বে অন্যেরা ঠিকে থাকা দায় ছিল।ক্যাম্পাসগুলোতে রক্তগংগা বয়ে যেত জাসদের সাথে অন্য ছাত্র সংগঠনের দন্ধে।

পাচ-সৈয়দ আশরাফ যথার্থ ই বলেছেন বঙ্গবন্ধু হত্যার পটভুমিতে মুল ভুমিকা জাসদের ছিল।এক সময়ের রাজনৈতিক সন্তানদের উতপাতে অসহায় বঙ্গবন্ধু নিজের জীবন দিয়ে প্রায়শ্চিত্ব করতে হয়েছিল।শেখ সাহেব ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে এরা 'গনবাহীনি'র নামে হাজার হাজার সাধারন মানুষকে হত্যা করেছিল যার নেতৃত্বে ছিল আজকে বঙ্গবন্ধু কন্যার মন্ত্রিসভার সভ্য হাসানুল হক ইনু।জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত ভিসি অধ্যাপক আনোয়ার হুসেনের নেতৃত্বে ভারতীয় হাইকমিশনে হামলাও হয়েছিল এমনকি ততকালীন সরাষ্ট্রমন্ত্রির বাড়িতে হামলা করেছিল জাসদের উদভ্রান্ত কর্মিরা এই ইনু আনোয়ারদের নেতৃত্বে।

ছয়-বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে জাসদ কিছুদিন পর্দার আড়ালে চলে যায় এবং নেপথ্যে থেকে কলকাটি নাড়ার চেষ্টা করে।মুক্তিযোদ্বা কর্নেল তাহেরকে দিয়ে সেনাবাহীনিকে বিভক্ত করনের চেষ্টা চালায় এবং ততকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াকে দাবার গুটি বানানোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়।নানা ঘটনার মধ্যদিয়ে ৭ ই নভেমবর যে বিপ্লব হয় এবং তার মধ্য দিয়ে জেনারেল জিয়ার ক্ষমতা গ্রহন পর্যন্ত জাসদের ভুমিকা অস্বীকার করা যায়না।সচেতন জিয়া জাসদের চাল বুজতে পেরে শুরুতে ই স্বমুলে বিতাড়ন করেন জাসদিদের তার আশপাশ থেকে।

সাত-বঙ্গবন্ধুর সরকার জাসদের কারনে হতবিহবল থাকলেও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় জাসদ কোন রকমের সুবিধা করে উঠতে পারেনি।তারা প্রবল চাপের মুখে পড়ে যায়।জাসদের সাথে একি আচরন পরবর্তিতে জিয়া পত্নি বেগম খালেদা জিয়া তার তিন বারের ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে জারি রাখেন।এদের সাথে কোন ধরনের ঐক্যে যাওয়াতো দুরে থাক বরং কোন পাত্তা ই পায়নি জাসদ।অবশ্য শাহজাহান সিরাজের নেতৃত্বে জাসদের একাংশ নিজেদের বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দেয়।

আট-সামরিক স্বৈদাচার এরশাদের সময় একবার প্রধান সবদল নির্বাচন বর্জন করলে চতুর এরশাদ জাসদের সভাপতি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আসম রবকে দিয়ে বৃহত্তর বিরুধীদল সাজিয়ে জাসদকে বিরুধীদলের আসনে বসান।জাসদ নেতা রব বিরুধী দলীয় নেতা হিসেবে সাংবিধানিক মর্যাদা পান।অবশ্য জাসদকে সহ্যাসঙ্গি করেও এরশাদ পার পাননি।গন অভ্যুথ্বানে তাকে বিদেয় নিতে হয়েছিল।

নয়-১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দ্বীর্ঘ একুশ বছর পর তার নেতৃত্বে আওয়ামীলিগ ক্ষমতায় এলে সরকার গঠন করেন।সেই সরকারকে তিনি জাতীয় ঐক্যের সরকার ঘোষনা দিয়ে এরশাদের পর দ্বীতিয়বার জাসদকে সাংবিধানিক মর্যাদা প্রদান করেন জাসদ নেতা আসম রবকে ক্যাবিনেট মন্ত্রী করে।হাসিনা সরকারের প্রথম পাচ বছর রব দাপটের সাথে মন্ত্রীত্ব চালিয়ে যান।অথচ এই রব ছিলেন শেখ মুজিব হত্যার অন্যতম গ্রাউন্ড মেকার আর বাকশাল বিরুধী জনমত গঠনের প্রধান উদ্যোক্তা।২০০১ সালে বিএনপি জোট বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সরকার গঠন করলে আবারো শেখ হাসিনা জাসদের সাথে মিতালি গড়ে তুলেন।তবে এবার পুরনো সঙ্গি আসম রবকে বাদ দিয়ে জাসদের একাংশের নেতা ও গনবাহীনির উপ অধিনায়ক ও বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে টেংকে উঠে আনন্দোল্লাসকারি হাসানুল হক ইনুকে সঙ্গি করেন।গন রাজনীতিতে আসম রব ইনুর চেয়ে শতগুন ভাল ছিল এ কথা গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায়। কারন রব তার নির্বাচনী এলাকা থেকে এর আগেও সাংসদ হয়েছিলেন আর কোন সময় ই অপ্রকাশ্য রাজনোতিতে ছিলেননা।অন্যদিকে ইনু কোনদিন গনরাজনীতি করেনি উল্টো সশস্ত্র গনবাহীনি নামক সন্ত্রাসের সাথে সম্প্রিক্ত ছিল।ইনু এর আগে সাংসদ ও ছিলনা কিন্তু শেখ হাসিনা তাকে জাতীয় রাজনীতিতে তুলে নিয়ে আসেন নিজ স্বার্থে।সেই যে আওয়ামীলগের নৌকার সহ্যাসঙ্গি হয়েছিল ইনুর জাসদ আজ অবধি তা অব্যাহত আছে।ইনু এখন অনির্বাচিত সরকারের সবচেয়ে বেশি সরব মন্ত্রি আর বেগম জিয়ার বিরুদ্বে স্বোচ্চার কন্ঠ।অবশ্য জাসদের চিরায়ত নীতি অনুযায়ি ইতিমধ্যে তাদের আরেকদফা ভাঙ্গন হয়েছে।শরিফ নুরুল আম্বিয়া আর বাদলের নেতৃত্বে জাসদের আরেকাংশ সক্রিয় রয়েছে ১৪ দলীয় জোটে।

দশ-৫৬ হাজার বর্গ মাইলের স্বাধীন বাংলার জন্ম যুদ্বের সাথে জাসদ নেতাদের ভুমিকা ছিল এ কথা অস্বীকার করা যাবেনা।দেশ স্বাধীনের পর থেকে আজ অবদি জাসদ আমাদের ইতিহাসের এক অপরিহার্য অংশ।তবে এ অংশীদারিত্ব ইতিবাচক থেকে নেতিবাচক বেশী তা উচু গলায় বলা যায়।সৈয়দ আশরাফের আক্ষেপ বা হুশিয়ারিকে তুড়ি মেরে ফেলার নয়।কথায় আছে, দুষ্ট গরুর চেয়ে শুন্য গোয়াল শতগুনে ভাল।কিন্তু জাসদের মত রাজনৈতিক দুষ্ট এ দলটিকে বর্জন করাটা যেখানে করনীয় ছিল সেখানে এদের সাথে রাজনৈতিক সহবাস তারা ই বেশী বেশী করেছে যাদেরকে জাসদ এক সময় নিয়মিত বলপুর্বক সঙ্গম করত।অতএব নিজেদের আভ্যন্তরিন কলহ বাইরে না এনে এখন ও এদের সাথে সহবাস করে যাওয়া দলের উচিত এদেরকে ঝেটিয়ে বিদেয় করুন।মনে রাখবেন এরা কারো নয় এরা সবার।।।

বিষয়: বিবিধ

১৩২৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

372056
১৫ জুন ২০১৬ বিকাল ০৪:১৮
কুয়েত থেকে লিখেছেন : জাসদকে মন্ত্রিত্ব দেয়ার জন্যে আম্লীগকে একদিন কেন যুগযুগ ধরেই খেসারত দিতেই হবে। সন্ত্রাস তো সন্ত্রসকেই দমন করবেই ওদের কারো কাছে কোন আদর্শ নেই সন্ত্রসী কর্মকান্ড ছাড়া। ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১৫ জুন ২০১৬ রাত ০৮:০৬
308858
হতভাগা লিখেছেন : জাসদকে মন্ত্রিত্ব দেয়ার জন্যে আম্লীগকে একদিন কেন যুগ যুগ ধরেই খেসারত দিতেই হবে।

০ সেটা কি রকম ? যেমনটা বিএনপি দিচ্ছে নিজামী-মুজাহিদকে মন্ত্রীত্ব দিয়ে - এমন ?
১৮ জুন ২০১৬ দুপুর ০২:৫৬
309160
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ভাই হিসাবতো আপনি আমার চেয়ে বেশী বুঝবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন যে ভালো কাজ করলো তা সে নিজের জন্যই করলো আর যে মন্দ কাজ করলো তাও সে তার নিজের জন্যই করলো তৈামার প্রতি পালক কারো উপর জুলুম করেননা।আল্ কুরআন।।ধন্যবাদ অপনাকে
372065
১৫ জুন ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫২
শেখের পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ।
372068
১৫ জুন ২০১৬ রাত ০৮:০৭
হতভাগা লিখেছেন : বাঘের ঘরেই ঘোঘের বাসা
372078
১৫ জুন ২০১৬ রাত ০৯:০০
সিরাজ ইবনে মালিক লিখেছেন : একমত,ভাল লাগলো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File