শিবিরের জন্মদিনঃবিক্ষিপ্ত কথামালা-মাহবুব সুয়েদ

লিখেছেন লিখেছেন সমশেরনামা ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১০:৩৫:১৯ সকাল

শিবিরের জন্মদিনঃবিক্ষিপ্ত কথামালা-মাহবুব সুয়েদ

##৭ই ফেব্রুয়ারি ১৯৭৭সাল।ঢাকা বিশ্ব বিদ্বালয়ের কেন্দ্রিয় মসজিদ থেকে সদ্য স্বাধিন বাংলায় ইসলাম এবং আধুনিকতার স্লোগানকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করেছিল আজকের সুপরিচিত এবং সুশৃংখল সংগটন 'ইসলামী ছাত্রশিবির'।নিষিদ্ব ঘোষিত ভারতীয় আধিপত্যবাদ বিরুধী ইসলামপন্থিদল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন হিসেবে ই মুলত(বাহ্যিক অর্থে অস্বীকার করা হয়)ছাত্রশিবিরের যাত্রা যার পুর্বনাম ছিল 'ছাত্রসংঘ'।রাজনৈতিক কৌশলের কারনে ৭১র ভুমিকা বিবেচনায় ছাত্রসংঘ নতুন খোলসে নতুন নামে নতুন নেতৃত্বে এবং ডাইনামিক কর্মসুচী নিয়ে হাজির হয় সদ্য স্বাধিন দেশের ছাত্রসমাজের কাছে।জিয়াউর রহমানের সরকার তখন বহুদলীয় গনতন্ত্রের অনুমতি দিলে জামায়াত ও শিবির তাদের প্রকাশ্য কার্যক্রম শুরু করে।

##মরহুম মুজাদ্দিদ মাওলানা মওদুদী(রঃ)র প্রনীত সাংগটনিক চর্চায় অভ্যস্ত ছাত্রসংঘের সাবেক নেতারা নব ঘোষিত এ সংগটনে পুনর্বাসিত হন।মরহুম প্রফেসর গোলাম আজম, মাওলানা নিজামি, শহিদ মুজাহিদ, কামারুজ্জামান আর মীর কাসেম আলীর সার্বিক তত্বাবধানে সংগঠনটি শুরুতে ই সারাদেশে বাম এবং বিশেষ করে আওয়ামীলিগ এবং জাসদপন্থি ছাত্রলীগের তীব্র বাধার সম্মুখিন হয় শুরুতে এবং 'যত যাবে রক্ত-শিবির হবে শক্ত' স্লোগানকে ধারন করে তাদের আদর্শিক ঝান্ডাকে সামনে রেখে জানবাজ কর্মিদের জীবন, সময়, ত্যাগ, ক্যারিয়ার, হাত-পা, আর্থিক,শারিরীক, মানসিক সাহায্য বা কুরবানীর(তাদের ভাষায়) বিনিময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক ছাত্রপ্রিয় হয়ে উঠে।এমনকি বিভিন্ন প্রতিষ্টানে ছাত্রসংসদ নির্বাচনে তাদের একক প্যানেলের মোকাবেলা করতে হিমশীম খেতে হয় বিরুধী সম্মিলিত ছাত্রজোটকে।মুলত মাওলানা মওদুদী এবং জামায়াতের ভাবাদর্শে উদ্ভুদ্ব হলেও শিবিরের নেতারা সংগঠন পরিচালনায় স্বাধিন সিদ্বান্ত গ্রহনের অধিকারি ছিলেন বলে সারাদেশে সেই ৮০র দশকে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও শিবির হয়ে উঠছিল অপ্রতিরোধ্য।

##প্রথম ভাংগন-১৯৮২সালে ছাত্রশিবিরে সর্বপ্রথম ভাংগন দেখা দেয় আদর্শিক ধন্ধকে সামনে রেখে।সেই সময়কার পরিষদে অসাধারন সাংগঠনিক মেধাসম্পন্ন লোকদের সাথে জামায়াত শীর্ষ নেতৃত্বের মতবিরুধের ফল ছিল ৮২র ভাংগন।আজকের ছাত্রমজলিসকে শিবিরের বি-টিম বললে অত্যুক্তি হবেনা।শিবির থেকে চলে যাওয়া অংশের নেতৃত্বে আজকের ছাত্রমজলিসের যাত্রা শুরু হয়।সেই ভাংগনকে মোকাবেকা করে শিবির তারপরও উদ্যোম গতিতে হেটে চলে নিজ গন্তব্যে আদর্শকে সামনে রেখে।

##৯০র স্বৈরাচার বিরুধী আন্দোলন, কেয়ারটেকার সরকার দাবীতে আন্দোলন, ৯৬-২০০১পর্যন্ত আওয়ামী বিরুধী আন্দোলনে শিবিরের গৌরবোজ্জল ভুমিকা ছিল এবং ২০০১সাল পরবর্তিতে অনুকুল পরিবেশে শিবির টানা ৫বছর সারাদেশে ব্যাপক সাংগঠনিক মজবুতি অর্জন করে।আজ নির্দ্বিধায় বলা যায় সাউথ এশিয়ায় সবচেয়ে বড় ইসলামী ছাত্র সংগঠনের নাম হল 'ছাত্রশিবির'।বিগত ২০০৯সালে শিবিরের আভ্যন্তরীন নেতৃত্বের ধন্ধ দেখা দিলেও কৌশলি ভুমিকা এবং বিদ্রোহীদের পুনর্বাসন ছাত্রশিবির আর জামায়াতকে ভাংগন থেকে রক্ষা করে যা ৮২তে পারা যায়নি।সবকিছুর পরও শিবিরের রয়েছে নিজস্ব কর্মপদ্বতি এবং সু-শৃংখন সাংগঠনিক বিধান।এটি ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন এবং চলমান কর্মীরা এর আদর্শিক এবং দলীয় কর্মসুচীর বাস্তবায়নকে ইসলামের অন্যতম ফরজ বলে ই মনে করে তা পালনে বদ্দপরিকর থাকে বিধায় আজ এত কিছুর পরও শিবিরের চেইন অফ কমান্ড রয়েছে সু-দৃঢ়।

##৩৯ বছরের যুবক শিবির-ছাত্রশিবির আজ ৩৯ বছর বয়সে পদার্পন করছে। বলা যায় উদ্দাম যৌবনে পদার্পন করছে আজ।এই ফেলে আসা দিনগুলোতে অসংখ্য জানবাজ কর্মিদের জীবন আর ত্যাগের বিনিময়ে শিবির তার আজকের অবস্থানে এসেছে।নিসন্দেহে বলা যায় শিবির আজ নিয়মিত ছাত্রদের এক বিরাট কাফেলার নাম।যুবক শিবিরের এই দ্বীর্ঘজীবনে নিশ্চয় আজ পর্যালোচনার দাবী রাখে তার অর্জন আর লক্ষ্য হাসিলে কতটুকু সফল তা নিয়ে।

পর্যালোচনা করলে ঘোর শিবির বিরুধী যে কেউ স্বীকার করতে বাধ্য যে শিবির একঝাক মেধাবি আর উদ্ভবনা শক্তি সম্পন্ন জনসম্পদ দান করেছে জাতীকে।সাবেক শিবিরদের বলা যায় শতকরা ৭৫% লোক যারা আজ জামাতে একটিব পলিটিক্স করছে তারা আধুনিক মননশীল এবং ইসলামী আর বৈশ্বিক মেধাসম্পন্ন লোক বলা যায়।একটি 'কল্যান রাষ্ট্র' গটনে অন্য যেকোন দলের চেয়ে শিবিরের প্রোডাকশন সবচেয়ে বেশি কাজে দেবে তা আজ ঐতিহাসিক সত্য।ত্যাগ-তীতিক্ষা আর লক্ষ্য হাসিলে প্রতিশ্রুতিবদ্ব মানব সম্পদ তৈরিতে শিবিরের ভুমিকা অস্বীকার করা যাবেনা।

শিবির সারাদেশে বিভিন্ন সেক্টরে আদর্শিকভাবে সুদৃঢ় বিপুল জন সম্পদ দিলেও প্রগতিশীল চিন্তার বিপরীত চিন্তায় উদ্ভুদ্ব কিছু অতি 'ইসলামিস্ট' ও এখান থেকে বের হয়েছে তাও সত্য।অতি আবেগী আর স্বল্প জ্ঞান নির্ভর কিছু কর্মি যারা ধর্মীয় উস্কানীমুলক কাজে বিশ্বাসী তাদের কারনে নির্যাতিত এ কাফেলার গৌরবের পতাকায় মাঝে মাঝে কালিমা লেপিত হয়।ব্যালেন্সফুল জীবনের চেতনায় বিশ্বাসী শিবির নেতৃত্বকে এ ব্যাপারে সজাগ থাকা চাই।ছাত্র রাজনীতিতে মেধাবীদের বিচ্ছুরন ঘটেছে শিবিরের হাত ধরে তা স্বীকার করতে দ্বীধা নেই কিন্তু সন্ত্রাস আর অস্ত্র নির্ভর রাজনীতিতে ক্যাম্পাসে 'ফুল নির্ভর' রাজনীতির প্রবর্তনে শিবিরকে এগিয়ে আসা চাই।মহান মুক্তিযোদ্বকে প্রতিদ্বন্ধি বানিয়ে দিতে বদ্দপরিকর আধিপত্যবাদি সেক্যুলার গোস্টির মুখে চুনিকালি দিয়ে শিবিরকে মুক্তিযোদ্ব আর মুক্তিযোদ্বাদের ব্যাপারে আরো সচেতন এবং সংবেদনশীল ভুমিকা পালন জরুরি।রজনীতিতে পরমত সহিনষুতাকে মেনে নিয়ে 'শৈল্পিক চর্চায়' অভ্যস্ত হওয়া চাই শিবিরকে।সকল ইসলামপন্থি ছাত্রসংগঠন গুলোকে সাথে নিয়ে কাজ করলে ফলাফল আরো ভাল হবে।নিজেদের অভ্যন্তরে সিস্টেমেটিক ডেমোক্রেসির চর্চা না করে সত্যিকার গনতান্ত্রিক চর্চার দরকার যাতে৮২ বা ২০০৯আর ফিরে না আসে।

##বিক্ষিপ্ত এ কথামালা লেখার সময় আমার হাত কাপছিল।গুছিয়ে না লিখে মনের মাঝে কিলবিল করতে থাকা কথামালাকে প্রসব করালাম মাত্র।শিবিরের দুর্দিনে আজকে এই জন্মদিনে তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।শিবির আমার সাবেক প্রেমের স্পন্দন ছিল।এইতো মাত্র কয়বছর আগেও।কত মধুর বা বেদনার স্মৃতি জড়িয়ে আছে এ সংগঠন ঘিরে।নিজ লক্ষ্য হাসিলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ কর্মীদের এ সংগঠন লক্ষ্য অর্জনে কতটুকু সম্ভব হবে জানিনা তবে এর সাফল্য কামনা করি হৃদয়ের গভির থেকে।একটি পরিপুর্ন গনিতান্ত্রিক আদর্শ নির্ভর সংগঠনে পরিনত হয়ে উটুক এ কাফেলা।সাবেক এবং বর্তমান সকল শুভানুধ্যয়িদের জানাই 'শুভ জন্মদিন'।

বিষয়: রাজনীতি

১৪৫৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

358698
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ১২:৩৩
জেদ্দাবাসী লিখেছেন : ২০০৯ সালে কি হয়েছিল? যদি সম্ভব হয় জানানোর অনুরুধ রইল। পোস্ট ভাল লিখেছেন। অনেক ধন্যবাদ






আমাদের এ মিছিল নিকট অতীত থেকে অনন্ত কালের দিকে
আমরা বদর থেকে ওহুদ হয়ে এখানে,
শত সংঘাতের মধ্যে এ কাফেলায় এসে দাঁড়িয়েছি।
কে প্রশ্ন করে আমরা কোথায় যাবো ?
আমরা তো বলেছি আমাদের যাত্রা অনন্ত কালের।
উদয় ও অস্তের ক্লান্তি আমাদের কোন দিনই বিহ্বল করতে পারেনি।
আমাদের দেহ ক্ষত-বিক্ষত,
আমাদের রক্তে সবুজ হয়ে উঠেছিল মূতার প্রান্তর।
পৃথিবীতে যত গোলাপ ফুল ফোটে তার লাল বর্ণ আমাদের রক্ত,
তার সুগন্ধ আমাদের নিঃশ্বাস বায়ু।
আমাদের হাতে একটিমাত্র গ্রন্থ আল কুরআন,
এই পবিত্র গ্রন্থ কোনদিন, কোন অবস্থায়, কোন তৌহীদবাদীকে থামতে দেয়নি।
আমরা কি করে থামি ?
আমাদের গন্তব্য তো এক সোনার তোরণের দিকে যা এই ভূ-পৃষ্ঠে নেই।
আমরা আমাদের সঙ্গীদের চেহারার ভিন্নতাকে গ্রাহ্যের মধ্যে আনি না,
কারন আমাদের আত্মার গুঞ্জন হু হু করে বলে
আমরা একআত্মা, এক প্রাণ।
শহীদের চেহারার কোন ভিন্নতা নেই।
আমরা তো শাহাদাতের জন্যই মায়ের উদর থেকে পৃথিবীতে পা রেখেছি।
কেউ পাথরে, কেউ তাঁবুর ছায়ায়, কেই মরুভূমির উষ্ণ বালু কিংবা সবুজ কোন ঘাসের দেশে চলছি।
আমরা আজন্ম মিছিলেই আছি,
এর আদি বা অন্ত নেই।
পনের শত বছর ধরে সভ্যতার উত্থান-পতনে আমাদের পদশব্দ একটুও থামেনি।
আমাদের কত সাথীকে আমরা এই ভূ-পৃষ্ঠের কন্দরে কন্দরে রেখে এসেছি-
তাদের কবরে ভবিষ্যতের গুঞ্জন একদিন মধুমক্ষিকার মত গুঞ্জন তুলবে।
আমরা জানি,
আমাদের ভয় দেখিয়ে শয়তান নিজেই অন্ধকারে পালিয়ে যায়।
আমাদের মুখায়ববে আগামী ঊষার উদয়কালের নরম আলোর ঝলকানি।
আমাদের মিছিল ভয় ও ধ্বংসের মধ্যে বিশ্রাম নেয় নি, নেবে না।
আমাদের পতাকায় কালেমা তাইয়্যেবা,
আমাদের এই বাণী কাউকে কোনদিন থামতে দেয়নি
আমরাও থামবো না।

আমাদের মিছিল - কবি আল-মাহমুদ
BANGLADESH ISLAMI CHHATRASHIBIR এর পেইজ থেকে



জাযাকাল্লাহ খায়ের

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File