নাম সমাচার

লিখেছেন লিখেছেন সেলিম উদ্দিন৭২১ ১২ আগস্ট, ২০১৫, ১১:৫৬:৫৫ রাত

সুন্দর নাম সকলকে সহজে আকৃষ্ট করে।সুন্দর নাম মানুষ মনে রাখে। সুন্দর নাম সহজে পরিচিতি পায়। সে কারনে মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাঙ্গন এমনকি সন্তান-সন্ততির সুন্দর নাম রাখতে এবং সুন্দর নাম খুঁজতে উদগ্রিব হয়। অনেকে সুন্দর নাম খুঁজে বের করার জন্য নানা পন্থা অবলম্বন করে। সুন্দর নাম খুঁজতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে পুরস্কারের ঘোষনা দিতেও দেখা যায়। অতএব,সুন্দর নামের জয় সর্বত্র এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়।

শুধুমাত্র সুন্দর নামে অনেক সময় সবকিছু হয়না। জাতি, গোত্র,বর্ণ,দেশ,পেশা ইত্যাদি বিষয়গুলো নামকরনের ক্ষেত্রে প্রধান উপকরণ হিসেবে কাজ করে।নামকরনের ক্ষেত্রে ধর্মের পরিচয় অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হিন্দু,মুসলিম,বৌদ্ধ,খ্রিষ্টান সব ধর্মের লোকই এ বিষয়টা মাথায় রেখে সন্তান-সন্ততির নামকরন করে থাকে।ব্যক্তিগত জীবনে বিভিন্ন কিছুর নামকরনের ক্ষেত্রে ও এর প্রভাব সুস্পষ্ট। তবে কিছু কিছু নাম প্রায় সব ধর্মেই সাধারন হিসেবে গণ্য হয়। সে কারনে অনেক সময় নাম শুনে ধর্মীয় পরিচয় জানার ক্ষেত্রে কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি হয় বৈকি।

আবার দেশভেদে ও নামের তারতম্য দেখা যায়। আরব দেশের নামগুলোতে আরবী শব্দের প্রচলন বেশি। আমাদের মত দেশের লোকেরা কোন কিছুর নামকরনের ক্ষেত্রে যার যার শিক্ষা, রুচি এবং অনুকরনকে কাজে লাগিয়ে থাকে। যে কোন নামকরনের ক্ষেত্রে তারা কিছুটা শাব্দিক তাত্‌পয্যতার চেয়ে গতানুগতিকতাকে সামনে রেখে নামকরন করতে চায়।ব্যতিক্রম যে নেই তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

আবার কিছু কিছু নাম যথেষ্ট ভাল অর্থবোধক হবার পরও ঐতিহাসিকভাবে নিন্দনীয় বিধায় মানুষ তা রাখে না। এটি আমাদের দেশের ক্ষেত্রে ধ্রুব সত্য। যেমন মীর জাফর আলী খাঁ নবাব সিরাজ উদ্‌ দৌলার প্রধান সেনাপতি ছিলেন। পলাশির যুদ্ধে মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতার জন্য এ নামটা ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিমদের মাঝে এত ঘৃণিত যে কেউ এ নামটা সন্তানের জন্য বাছাই করেনা। তদ্রুপ রায় বল্লভ,জগত শেঠ এসব বুনিয়াদী নাম হিন্দুরা রাখেনা তাদের ঐ সময়ের ন্যাক্কারজনক ভূমিকার জন্য।

আমাদের দেশে কিছু কিছু অশিক্ষিত লোক সন্তান-সন্ততির নাম করনের ক্ষেত্রে নামের অর্থকে বিবেচনায় রাখেনা বলে ঐসব সন্তান-সন্ততিকে নামের কারনে বড় হবার পর বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়।সভ্য সমাজে উঠা-বসা করার ক্ষেত্রে এসব নাম অনেক সময় লজ্জার কারন হয়। যদিও একসময় নিছক কুসংস্কারের কারনে আমাদের দেশের স্ত্রীরা তাদের স্বামীর নাম উচ্চারন করতোনা। এমনকি স্বামীর নামের সাথে মিলে যায় এমন কোন কিছুর নামও তারা উচ্চারন করতোনা। উদাহরণস্বরুপ বলা যায় কারো স্বামীর নাম যদি গুরা মিয়া হয় সে স্ত্রী গুরা (ছোট) কচুর নাম মুখে আনতোনা।সত্য মিথ্যে কতটুকু জানিনা-এমন ও নাকি হতো যে কারো স্বামীর নাম সালাম হলে সে স্ত্রী নামাজের সালাম ফিরানোর সময় আস্‌সালামু আলাইকুম এই অংশ বলার পর স্বামীর নাম সালাম হবার কারনে বাকী অংশ বলতো " আমাদের ঘরের সেটা"।

কিছু কিছু নাম মানুষ ইচ্ছে করে বিকৃত করে। এ প্রবণতা গ্রামে বেশি দেখা যায়। গ্রামের মানুষ কারো নামের সাথে অতিরিক্ত যোগ করে দেবার ক্ষেত্র জুডিহীন। যেমন-কারো নাম যদি হয় আমিন, গ্রামে সেটা অনায়াসে হয়ে যাবে আমিন্যা।মেয়েদের নামের ক্ষেত্রে ও একি অবস্থা। নাম শাহানা কিন্তু তা হয়ে যায় শানুনী। আবার অনেক ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে কেউ কেউ নামের বিকৃতি ঘটায় কিংবা পেশার সাথে মিশিয়ে নামকে বিতিকিশ্রী করে তুলে। বলা যায় কেউ মুরগী বিক্রি করে এবং তাত নাম শুক্কুর কিন্তু সে হয়ে গেল কুরা (মুরগী) শুক্কুর। এমনটা আরব দেশসমুহে বাঙালীদের মাঝে বেশি দেখা যায়। কারো নাম মেরা শফি(শারীরীকভাবে চিকন বলে), কেউ আবার টাঙ্কি শফি( পানির ট্যাঙ্ক তৈরি করে বলে)ইত্যাদি।

বাড়ির কিংবা স্থানের নামের ক্ষেত্রেও এ রকম অশালীন ব্যবহার দেখা যায়। যেমন আমাদের চট্টগ্রামের বাকলিয়ায় আতুজ্জার দোকান নামে এক জায়গা আছে। এক আতুর ব্যক্তি এখানে বসে ভিক্ষা করতো বলে ঐ জায়গার নাম এমন হয়ে গেছে। আনোয়ারা রোড়ে ফকিরন্যির হাট নামে এক হাট আছে। কিভাবে এ নাম হয়েছে জানিনা। যেভাবেই হোক এ নাম যে সুখকর নয় তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এমনতর হাজারো বিকৃত কিংবা অশালীন নামের অস্তিত্ব বাংলাদেশ জুড়ে পাওয়া যাবে যা আমাদের রুচিবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিশ্বায়নের এ যুগে এসব নাম নিয়ে বাঙালীদের বিশ্বব্যাপী বিব্রতকর পরিস্থিতির সন্মুখীন হতে হয়।

মানুষ এখন সচেতন হচ্ছে। কিন্তু তারপরও নামের বিকৃতকরন কিংবা অসুন্দর নামগুলো প্রতিনিয়ত আমাদের রুচিবোধ নিয়ে ব্যঙ্গ করে। বিকৃত রুচিবোধ আমাদের যেন মজ্জাগত হয়ে গেছে।এ সম্পর্কে আমরা অচেতন। এ বিষয়ে সকলকে সচেতন হওয়া উচিত। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে আমরা যেন অপরের নামকে অশুদ্ধ উচ্চারন না করি। জেনে শুনে কারো নামকে বিকৃত না করি। কোন নাম রাখার ক্ষেত্রে নামের অর্থের প্রতিও দৃষ্টিপাত করা উচিত। আশা করি আমরা সবাই এ বিষয়ে সচেতন হবো।

বিষয়: বিবিধ

১৩৩৮ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

335546
১৩ আগস্ট ২০১৫ রাত ০১:০৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : নাম বিকৃত করায় কিন্তু চট্টগ্রামবাসির সুনাম আছে!!
335577
১৩ আগস্ট ২০১৫ সকাল ১১:১৯
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : ভালো লাগলো
335598
১৩ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ১২:১৪
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : ধন্যবাদ, একটি সুন্দর লেখা উপহার দেয়ার জন্য। মীরজাফর নাম নিন্দনীয় তার কুকর্মের কারণে। কিন্তু মীরজাফরদের সাথে জগৎশেঠেরাও ছিল অন্যতম কুখ্যাত হিসেবে। মুসলিম হওয়ার কারণে মীরজাফরের নামটা বেশি অপব্যবহার হয়ে গেছে..
335654
১৩ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৫:২৬
বার্তা কেন্দ্র লিখেছেন : নাম সমাচার০অনৈক চমৎকার হয়েছে... ধন্যবাদ
335680
১৩ আগস্ট ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১৩
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : মানুষকে ভাল নামে ডাকার জন্য কোরানে বলা হয়েছে....... ধন্যবাদ ভালো লাগলো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File