সাহিত্য চর্চা বিষয়ক প্রাসঙ্গিকতা -০২

লিখেছেন লিখেছেন সেলিম উদ্দিন৭২১ ২৪ জুলাই, ২০১৫, ০৬:২২:৪৮ সন্ধ্যা

সাহিত্যকে গনমূখী করার ক্ষেত্রে নিকট অতীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য অধ্যাপক হুমায়ুন আহমদ, ইমদাদুল হক মিলনরা যেভাবে অগ্রনী ভূমিকা রেখেছেন তা উল্লেখ করার মত। তাঁদের রচিত উপন্যাস, গল্প কতটুকু মৌলিক সাহিত্য হিসেবে পরিগনিত তা নিয়ে অনেকের মধ্যে মতদ্বৈততা আছে। কিন্তু তাঁরা যে সময় লেখালেখি করছিলেন তখন তরুন্দের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ তুলনামূলকভাবে কম ছিল।চটুল সাহিত্য রচনার মাধ্যমে তাঁরা তরুনদেরকে বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট করতে পেরেছিলেন। এতে তাঁদের যথেষ্ট মুন্সিয়ানা আছে।

নিজস্ব রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেও তাঁরা দলীয় ব্যানারে আবদ্ধ থাকেননি। সে কারনে তাঁদের পাঠকের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। বিভিন্ন স্বনামধন্য সাহিত্যেকরাও তাঁদের কলম সচল রেখেছিলেন।মৌলিক সাহিত্যের প্রতি তরুনদের ঝোঁক কম থাকায় এসব সাহিত্যিকদের অনেকে জানতেননা। যাহোক, এ ধারাবাহিকতায় একে সময় গুঁটিকতেক তথাকথিত প্রগতিশীল নামধারী সাহিত্যিক নামের উইপোকা তরুনদের কাছে যৌন আবেদন সৃষ্টিকারি কামুক সাহিত্য নিয়ে হাজির হয়।গাঁজা, নারী, যৌনতাশ্রয়ী এসব সাহিত্য তরুনদের মাঝে তেমন সাড়া ফেলতে ব্যর্থ হলে জাতিকে দ্বিধা বিভক্ত করার সুগভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে এসব অপসাহিত্যিকরা।।আশির দশকের শেষের দিকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজেদের পকেটে পুরারও চেষ্টা করে হু মু এরশাদকে কবি হিসেবে জন্ম দিয়ে। এরশাদের সে কবিতাগূলো ফলাও হতে থাকে জাতীয় দৈনিকগুলোতে। পরবর্তিতে ১৯৯০ সালের ৬ই ডিসেম্বর কবি এরশাদের মৃত্যু হয় নারীলোভী এরশাদের রমরমা স্ক্যান্ডাল প্রকাশিত হবার মাধ্যমে।

যৌনতাসর্বস্ব কামুক প্রগতিশীল সাহিত্যিকরা স্বাধীনতার পক্ষে-বিপক্ষে ধুয়া তুলে পুরো দেশের সাহিত্যকে দু'ভাগে ভাগ করে ফেলে।নগ্নতা, যৌনতা, গাঁজার উত্‌কট গন্ধ, বাঙলা মদ, বীয়ার আর বেশ্যা পল্লীর ছোঁয়া থাকা মানেই হল স্বাধীনতার ধবজ়াধারী সাহিত্যিক আর না থাকা মানেই স্বাধীনতার বিপক্ষের সাহিত্যিক। অবশ্য মধ্যবর্তী একটা শ্রেনি এসবের বাইরে থেকে সাহিত্য চর্চা করে গেছেন নিরবিচ্ছিন্নভাবে।রুচিশীল,সৃজনশীল এসব সাহিত্যিকরা দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে আড়ালে রেখে মৌলিক সাহিত্য সৃজনে নিজেদের ব্যাপৃত রেখেছেন আগাগোড়াই।অন্যদিকে, দেশের প্রধান কবি শামসুর রাহমান, আল মাহমুদদেরকে শ্রেণিবিভাজনের যাতাকলে পিষে ফেলে দু'টি ধারা সৃষ্টি হইয়ে যায় সাহিত্য আঙিনায়।

সৈয়দ আলী আহসানের মতো বিদগ্ধ শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিককেও বিতর্কের বেড়াজালে ফেলে দেবার অপচেষ্টা করা হয়। আল মুজাহিদী, আবদুল হাই সিকদার প্রমুখ যশস্বী কবিদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে থাকে তসলিমা নাসরিনের শাড়ীর নিচে লুকিয়ে থাকা সৈয়দ শামসুল হকরা।

বিষয়টা এমন দাঁড়ায় যে, রবীন্দ্রনাথের কাব্য আকাশে যেমন ঈদের চাঁদ কখনো উঠেনি, শুধূ নজরুলের কাব্য আকাশেই শুধু ঈদের চাঁদ দেখা যেত তেমনি বেগুনের মত নির্মলেন্দু গুনরা কখনো শুদ্ধ সাহিত্য চর্চাকারীদের মধ্যে সাহিত্য দেখেনি মৌলবাদ ছাড়া। আধুনিকতা, প্রগতিশীলতা যেন শামসুল হক, নির্মেলেন্দু গুনদের পোষা কুকুর, তাদের চৌদ্দগুষ্টীর তালুক।

ইসলামী রেনেসাঁর কবি ফররুখকে তো ওরা অনেক আগেই মৌলবাদের লেবেল এঁটে বিতর্কিত করে ছেড়েছে। নজরুলের ভাগ্য ভাল যে তিনি নার্গিসকে ফেলে প্রমিলাকে বিয়ে করেছিলেন নতুবা "রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ" কিংবা

"মসজিদের ঐ পাশে আমায় কবর দিও ভাই' এসব কালজ়য়ী গান লেখার অপরাধে তাঁকেও মৌলবাদের লেবেলে মুড়িয়ে ফেলা হত অবলীলায়।

চলবে-------------

বিষয়: বিবিধ

১৭০৭ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

331389
২৪ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪৮
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম লিখেছেন :
https://www.youtube.com/watch?v=MUKJljZ8GLM



"মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই - এই গানের মধ্যে ধর্মনিরোপেক্ষরা মৌলবাদ খুজে পেয়েছে ।

এই গানের মধ্যে জামায়াত-শিবির, আহলে হাদিস , সালাফী, ওহাবী ইত্যাদি জঙ্গী সম্প্রদায় শিরক বিদাত খুজে পেয়েছে ।

এই গানের কথাগুলো উল্লেখ করছি এবং যেখানে শিরক - বিদাত জামায়াত-শিবির, আহলে হাদিস , সালাফী, ওহাবী ইত্যাদি জঙ্গী সম্প্রদায় শিরক বিদাত খুজে পেয়েছে তা ব্লোড করে দিলাম :
মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই।
যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই।।

আমার গোরের পাশ দিয়ে ভাই নামাজীরা যাবে,
পবিত্র সেই পায়ের ধ্বনি এ বান্দা শুনতে পাবে
গোর - আজাব থেকে এ গুনাহগার পাইবে রেহাই।।

কত পরহেজগার খোদার ভক্ত নবীজীর উম্মত
ঐ মসজিদে করে রে ভাই, কোরান তেলাওয়াত।
সেই কোরান শুনে যেন আমি পরান জুড়াই।।

কত দরবেশ ফকির রে ভাই, মসজিদের আঙ্গিনাতে
আল্লার নাম জিকির করে লুকিয়ে গভীর রাতে
,
আমি তাদের সাথে কেঁদে কেঁদে
(আল্লার নাম জপতে চাই) ।।

ব্লোড করা অংশগুলোতে এরা শিরক বিদাত খুজে পেয়েছে ।

এব্যাপারে আপনার অভিমত কি ?

331395
২৪ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১৪
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : কলকাতা ঘেঁষা কবিরাই ইসলামিস্টদেরকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে, চালাচ্ছে এবং চালাবে..শুদ্ধ সাহিত্য চর্চার পরিধি আরো ব্যাপক হলে কুচক্রীরা কিছুটা হলেও দমবে..
ধন্যবাদ..
২৫ জুলাই ২০১৫ রাত ০১:১২
273731
সেলিম উদ্দিন৭২১ লিখেছেন : ধন্যবাদ মাছুম ভাই সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
331406
২৪ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
এই ক্ষেত্রে যারা আদর্শের সাহিত্যিক তাদের ও বড় দোষ আছে। তারা বিনোদনমুলক সাহিত্য রচনা কে নিচু কাজ বলে মনে করেন। অথচ রবিন্দ্রনাথ-নজরুল এমনকি ইকবাল ও রচনা করেছেন এই ধরনের সাহিত্য। যেটা মানুষকে প্রথমে আকর্ষিত করবে।
২৫ জুলাই ২০১৫ রাত ০১:১৩
273734
সেলিম উদ্দিন৭২১ লিখেছেন : ভালো মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ রিদওয়ান কবির সবুজ।
331410
২৪ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩৯
ফাতিমা মারিয়াম লিখেছেন : চমৎকার পোস্ট। ধন্যবাদ।
২৫ জুলাই ২০১৫ রাত ০১:১৩
273735
সেলিম উদ্দিন৭২১ লিখেছেন : ধন্যবাদ।
331420
২৪ জুলাই ২০১৫ রাত ০৮:০৭
প্রবাসী যাযাবর লিখেছেন : আপনার ক্ষুরধার লেখনী চালিয়ে যাবার অনুরোধ করছি । শেষের দিকে আশা করি দিকনির্দেশনা থাকবে সুস্থ সাহিত্য সংস্কৃতিকে কিভাবে আরো ব্যাপক আকারে চর্চা করা যাবে সেই ব্যাপারে ।
২৫ জুলাই ২০১৫ রাত ০১:১৫
273736
সেলিম উদ্দিন৭২১ লিখেছেন : ধন্যবাদ প্রবাসী যাযাবর। নিজ়স্ব কিছু দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
331423
২৪ জুলাই ২০১৫ রাত ০৮:০৮
ঝিঙেফুল লিখেছেন : ধন্যবাদ Rose
২৫ জুলাই ২০১৫ রাত ০১:১৫
273737
সেলিম উদ্দিন৭২১ লিখেছেন : ধন্যবাদ ঝিঙে ফুল।
331428
২৪ জুলাই ২০১৫ রাত ০৮:২২
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : চমৎকার! চালিয়ে যান, সাথে আছি।
২৫ জুলাই ২০১৫ রাত ০১:১৬
273738
সেলিম উদ্দিন৭২১ লিখেছেন : ধন্যবাদ লোকমান ভাই।
331448
২৪ জুলাই ২০১৫ রাত ১১:২০
আবু জারীর লিখেছেন : সুস্থ্য ধারার সাহিত্য চর্চার লোকের অভাব না থাকলেও পৃষ্ঠ্যপোশকতার খুবই অভাব।
২৫ জুলাই ২০১৫ রাত ০১:১৬
273739
সেলিম উদ্দিন৭২১ লিখেছেন : আপনার সাথে সহমত পোষন করছি আবু জারীর।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File