পরিবার,এক গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম

লিখেছেন লিখেছেন সেলিম উদ্দিন৭২১ ২০ জুলাই, ২০১৫, ০১:২৬:৫৫ রাত



আদিকাল থেকেই মানুষ পরিবারবদ্ধ হয়ে বসবাস করে আসছে। আদিকালে মানুষকে যখন প্রকৃতি ও অন্যান্য দৃশ্যমান প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হত তখন পরিবার জীবন রক্ষায় এক অসাধারন ও অকল্পপনীয় ভূমিকা রাখত। সে কারনে মানুষ যতটুকু সম্ভব পরিবারবদ্ধ হয়ে বসবাস করতো। পরিবারের কারনে মানুষ খাদ্য চাষ, শিকার করতে অস্ত্র তৈরি শেখা, আগুন জ্বালানো শেখা ইত্যাদি যুগান্তকারী কাজগুলো শিখতে বাধ্য হয় যা সভ্যতাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।

পরিবার একজন শিশুর প্রথম পাঠশালা। এখানেই শিশু প্রথম পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে সব বিষয়ে পাঠ গ্রহন করে নিজেকে বাইরের জগতে মানিয়ে নেবার প্রস্তুতি গ্রহন করে। যে দেশের পরিবার ব্যবস্থা যত ভাল সে দেশের নাগরিকরা তত সভ্য ও শিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠতে পারে। তাই পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম।

বিভিন্ন দেশের পারিবারিক বন্ধন বিভিন্ন রকম। কিন্তু পারিবারিক শিক্ষা প্রায় অভিন্ন। সে কারনে পারিবারিক বন্ধনের উপর প্রতিটি সচেতন মানুষের সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিত। পরিবার থেকে মানুষ যে নৈতিক শিক্ষা পায় তা ব্যতিক্রমী ছাড়া প্রতিটি মানুষ আমৃত্যু লালন পালন করে। সে কারনে শিশুদের পারিবারিক শিক্ষার উপর আমাদের জোর দেয়া অত্যাবশ্যক। পরিবার থেকে মানুষ যে নৈতিক শিক্ষা পায় তা তাকে নানা রকম অনাচার, অনিয়ম,বিশৃংখলা, অনৈতিকতা,দূর্নীতি, অসদাচারন ও সামাজিক অপরাধ থেকে মুক্ত রাখে।

কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, পারিবারিক শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। ফলত, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বিশৃংখলা বৃদ্ধি পাচ্ছে আশংকাজনকভাবে। বহুবিধ কারনে পারিবারিক বন্ধন ক্রমাগত শিথিল হয়ে যাচ্ছে। আধুনিক বিশ্বে এখন বিভিন্ন মাত্রার পরিবার আর্বিভূত হচ্ছে। এসব পরিবার পূর্বেকার পরিবারগুলোর মত নিরাপত্তা ও নৈতিক শিক্ষাদানে চরমভাবে ব্যর্থ ।

পরিবারের সদস্যদের মাঝে নানা কারনে দুরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। আধুনিকতার নামে আমরা আমাদের চিরস্থায়ী সুখের ঠিকানা পরিবারগুলোকে ভেংগে তছনছ করে ফেলছি। এর ফলও আমরা হাতেনাতে পাচ্ছি। বর্তমান সময়ে সংঘটিত বেশিরভাগ অপরাধের শিকড় খুঁজতে গেলে আমরা পারিবারিক ব্যবস্থার পরিবর্তনকেই মূল কারন হিসেবে চিহ্নিত করব।

বিভিন্ন সামাজিক আচার আচরন, বিয়ে, উত্‌সব পার্বণ ইত্যাদি অনুষ্টানে আগে যে আমেজ ছিল এখন তা আর নেই। এক রকম নির্লিপ্ত, যান্ত্রিকতা যেন সব কিছুকে গ্রাস করে নিয়েছে। যেতে হবে যাচ্ছি, করতে হবে করছি এমনতর মন মানসিকতার কারনে এসব অনুষ্টানাদি স্রেফ লৌকিকতায় পরিণত হয়ে যাচ্ছে। একক পরিবাবের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার কারনে মন মানসিকাতায় ও একাকিত্ববোধের জন্ম নিচ্ছে সবার অগোচরে।

বিশ্বায়নের যুগে নিজস্ব সংস্কৃতি,আচার-আচরন, মূল্যবোধ, ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে চাইলে পারিবারিক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ করার কোন বিকল্প নেই।ক্যান্সারের মত অপসংস্কৃতি আমাদের নিজস্ব মূল্যবোধকে ক্ষয় করছে চোখের আড়ালে। এ বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি দেয়া উচিত।

পরিবার সুখের হলে জীবন সুখী হয় এটা আমরা সকলে মানি কিনতু ভুলে যাই। স্বার্থের কাছে আমরা পরাজিত হয়ে জলাঞ্জলি দিই আমাদের সুখের ঠিকানা পারিবারিক বন্ধনকে।পার্থিব স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে অনেক সময় আমরা পারিবারিক কলহ,বিচ্ছেদ,মন মালিন্যের মত অনাকাংখিত পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটাই।এ কারনে তৈরি হয় দুরত্বের সীমারেখা। "একতাই বল" এ যুগান্তকারী প্রবাদ বাক্যের সহজ উদাহরন হতে পারে পারিবারিক বন্ধন-সুশৃংখল পরিবার।

আসুন, এ প্লাটফর্মকে বাঁচিয়ে রাখি, নিজেরা বাঁচি, সমাজকে বাচাই, দেশকে বাচাই,সভ্যতাকে বাচাই।

বিষয়: বিবিধ

৮৮১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

330738
২০ জুলাই ২০১৫ রাত ০৩:০০
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : পরিবার সমাজের একটি সংগঠন বা একক। একটি সেল বা কোষ। শরীরের একটি কোষে ক্যান্সার হলে সমগ্র শরীরে ইফেক্ট হয়। তাই পরিবার যদি ধ্বংস হয়,সমাজ ও ধ্বংস হবে। তাই পরিবারকে ভালভাবেই আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে.. অনেক ধন্যবাদ।
২০ জুলাই ২০১৫ সকাল ১০:১৮
272995
সেলিম উদ্দিন৭২১ লিখেছেন : ধন্যবাদ মাছুম ভাই।
330773
২০ জুলাই ২০১৫ সকাল ১১:৩০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ব্যাক্তি প্রাধান্যের স্বার্থপরতা নষ্ট করছে মানবিকতা।
২১ জুলাই ২০১৫ রাত ১২:২৭
273094
সেলিম উদ্দিন৭২১ লিখেছেন : ধন্যবাদ রিদওয়ান কবির সবুজ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File