কামারুজ্জামানকে যেমন দেখেছি
লিখেছেন লিখেছেন SM SOHEL RANA ১৪ এপ্রিল, ২০১৫, ০৯:২৩:৪৮ সকাল
উনি তখন এসেছিলেন আমেরিকার ডেট্রয়টে শহরে। তখনি বেশ কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়। যেরকম দেখেছিলাম, তার দুয়েকটা কথা আপনাদের জন্য আজকের লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করব:
দেশের প্রতি মমত্ববোধ:
এই লোকটি যে বাংলাদেশকে এত ভালবাসতেন তা আগে জানতাম না। যেখানেই যেতেন বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলতেন, গর্ব করতেন। অস্বাভাবিক রকমের আশাবাদী ছিলেন দেশ নিয়ে। কি নির্মমতা, সেই দেশই তাঁকে ফাঁসি দিল!
একদিন মিশিগানের বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের নিয়ে এক সভা হয়। দেশের অতীত ইতিহাস তুলে ধরলেন। নিজ দলের একটা কথাও উচ্চারণ করলেন না। প্রবাসীদের বোঝালেন বিনিয়োগের সফলতা। একটা টুপির বিজনেস করলেও আপনি সফল হবেন। আমাদের দেশে রয়েছে প্রচুর মানব সম্পদ। এই সম্পদকে কাজে লাগান। এখানে যাই কিছু করেন না কেন দেশেও কিছু একটা করেন, দেশ ভুলে যাবেন না ইত্যাদি। আমার ডেট্রোয়েটের রুমমেট যিনি কিনা আমাদের একই ইউনিভার্সিটির একটি হলের ভিপি ও জিএস ছিলেন। উনার দল থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরুর সংগঠন থেকে আসা। তিনি বললেন এতদিন ধরে রাজনীতি করলাম কিন্তু এরকম রাজনীতিক জীবনে দেখলাম না!
এক কংগ্রেসম্যানের সাথে উনার বৈঠক হয়। কংগ্রেসম্যান ইনিয়ে বিনিয়ে বাংলাদেশের সমালোচনা শুরু করলেন। আমাদের গণতন্ত্র নিয়ে বললেন, "তোমাদের Poor গণতন্ত্র।" সাথে সাথে কামারুজ্জামান সাহেব বললেন, Poor democracy is better than no democracy। এর মাধ্যমে সেই কংগ্রেসম্যানকে উনি বোঝায়ে দিলেন, তোমরা মধ্যপ্রাচ্যে রাজা-বাদশাহ, একনায়ক, স্বৈরশাসকদের সমর্থন করো, আমাদের চাইল্ড ডেমোক্রেসিকে কেন আগায়ে নিতে সাহায্য করছ না? কংগ্রেসম্যান চুপ মেরে গিয়েছিলেন।
তরুনদের প্রতি ভালবাসা:
তরুনদের অত্যন্ত ভালবাসতেন। পড়াশোনার খবর নিতেন। উপহার সামগ্রী পাঠাতেন। সেই ঢাকা থেকে পোস্ট করে আবার খবরও নিতেন সেটি পেয়েছো কিনা। ধন্যবাদ দিতেন উপহারটি গ্রহণ করার জন্য! কি বিনয়তা! আমাকে একটি ফতুয়া উনি উপহার দেন। যদি আগে জানতাম উনাকে আল্লাহ এরকম উচ্চ মর্যাদা দান করবেন, আমি ওটি অতি যত্নে রেখে দিতাম, ব্যবহার করতাম না।
পড়তেন প্রচুর
রাতে একসাথে ছিলাম। ফজরের নামাজ শেষে দেখলাম ব্যাগ থেকে কোরআন শরীফ বের করে এনে পড়া শুরু করে দিলেন। আমি মনে মনে ভাবি দুইদিনের জন্য বেড়াতে এসেছেন, তাও পড়তেই হবে! অনেক রাতও তো জাগলেন, জেটল্যাগও আছে, ফজরের পর একটু ঘুমাবেন না!
দেখতাম কোন অবসর পেলেই কিছু একটা পড়ছেন।
তেজস্বী বক্তা ছিলেন
ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতে পারতেন, কিন্তু গলা ভাঙতো না। উনার মধ্যে কেন জানি সুস্থ ও অসুস্থতার মাঝখানে একটা সমন্বয়তা ছিল। অনেক জটিল রোগের ভিতরই উনি নির্দ্বিধায় সব কাজ স্বাভাবিকভাগে চালিয়ে যেতেন। কখনো বিরুক্তি প্রকাশ কিংবা বিশ্রামের কথাও বলতেন না।
সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি উনার জন্য কান্না করব না, উনার জন্য জান্নাতও চাইব না। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা যাঁকে জান্নাতের মেহমান হিসাবে কবুল করে নিয়েছেন, যাঁকে রিযিক দিচ্ছেন, যাঁকে নিহত বলতে নিষেধ করেছেন, যাঁকে নবী-রাসুলদের সাথে হাশর-নাশরের ওয়াদা করেছেন তাঁর জন্য আমি কাঁদব কেন? আমি শুধু চাইব আল্লাহ যেন আমাকে তাঁদের সাথী বানিয়ে দেন। বিষয়: রাজনীতি
Share on facebook Share on email Share on print 19
৭১৩৪ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
১ 314684 ১৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৯:৪৪
আশাবাদী যুবক লিখেছেন : ক্ষণজন্মা এক ব্যক্তিত্ব
১৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৯:৪৬255564
নয়ন খান লিখেছেন : ঠিকই বলেছেন।
২ 314685 ১৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৯:৪৬
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৯:৪৭255567
নয়ন খান লিখেছেন : ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
৩ 314686 ১৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৯:৪৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৯:৫১255572
নয়ন খান লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও।
৪ 314702 ১৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:১৪
সাদাচোখে লিখেছেন : সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি উনার জন্য কান্না করব না, উনার জন্য জান্নাতও চাইব না। কারণ আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা যাঁকে জান্নাতের মেহমান হিসাবে কবুল করে নিয়েছেন, যাঁকে রিযিক দিচ্ছেন, যাঁকে নিহত বলতে নিষেধ করেছেন, যাঁকে নবী-রাসুলদের সাথে হাশর-নাশরের ওয়াদা করেছেন তাঁর জন্য আমি কাঁদব কেন?
এ অংশটুকু যদি সাহিত্যের পার্ট হয়। কিছু বলার নেই।
কিন্তু এটা যদি আপনার বিশ্বাস হয় - তবে বলবো দয়া করে রিভার্স করুন এবং ওনার জন্য প্রার্থনা করুন এবং সাথে আপনার আমার এবং সমস্ত উম্মাহ র জন্য ই প্রার্থনা করুন।
আল্লাহ ওনাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন।
বিষয়: বিবিধ
৮১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন