জেদ্দা ইংলিশ স্কুলের চেয়ারম্যান কাজী বশীর আর ইঞ্জিনিয়ার গোলাম সরোয়ার কর্তৃক সাড়ে আট মিলিয়ন রিয়াল লুট!!!!। বিস্মিত প্রবাসী অভিভাকরা !!!!!!
লিখেছেন লিখেছেন কালের-কন্ঠ ২৫ অক্টোবর, ২০১৫, ০৫:৪৮:২৪ সকাল
(পুর্ব প্রকাশিতের পর)
অভিভাবকদের কষ্টার্জিত অর্থে পরিচালিত্ প্রবাসীদের অহংকার নামে খ্যাত জেদ্দা ইংলিশ স্কুলের ইতিহাসে এতবড় অর্থ লুটতরাজের ঘটনা আর কখনও ঘটেনি। কুমিল্লা সমিতির কাধে ভর করে ক্ষমতায় বসা একজন সাধারণ সেলসম্যান কাজী বশীর আর সীমিত আয়ে চলা ইঞ্জিনিয়ার গোলাম সরোয়ার - এ দুই খলনায়ক মিলে অভিনব সিন্ডিকেটের ম্যাধমে স্কুলের যে পরিমাণ অর্থ লুট করেছে, তা অভিভাকদের চরমভাবে হতাশ করেছে।
অভিভাকদের থেকে নেয়া বাড়তি টিউশন ফি এর বিশাল অংক দিয়ে ২০১৫ সালের প্রথম দিকে স্কুলের নতুন ভবন নির্মানের কথা থাকলেও অজানা কারনে বার বার নানা অজুহাতে পিছিয়ে যাচ্ছিল নিমানের কাজ। অবশেষে অডিটের মাধ্যোমে স্কুলের ফান্ডের হিসাব খুজতে গিয়ে অর্থ আত্মসাতের এ মহা লুটের রহস্য বেরিয়ে আসে। এখন অভিভাবক, শিক্ষক, ছাত্র ছাত্রী সহ সকল প্রবাসীর মুখে একটিই গুঞ্জন, এত টাকা কি করে লুট করে ফেলল। ভবন নির্মান করতে না পারলে এতগুলো ছাত্র ছাত্রীর ভবিষ্যত কি হবে??????
এ সিরিজে লিখা প্রতিটি শব্দ, অংক, ডকুমেন্টের ভিত্তিতে তৈরী করা হয়েছে। বরং লিখার কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় অনেকগুলো ছোট খাট হিসেবকে বাদ দিয়েই মুল বিষয়গুলোকেই শুধু তুলে ধরা হচ্ছে।
চেয়ারম্যান কাজী বশীর আর ইঞ্জিনিয়ার গোলাম সরোয়ারের যদি সাহস থাকে, তাহলে অভিভাকদের ডেকে এ লিখা চ্যালেঞ্জ করার জন্য আহব্বান করছি।
এটা দুনীতিবাজদের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। কারণ স্কুলের সামনে উত্তেজিত জনৈক অভিভাবক চেয়ারম্যানকে জুতা পেটানোর কথা বললেও তার নীরবতাই প্রমান করে - "আমার বলার কিছু ছিলনা..।"
চলুন, আত্মসাতের বাকী অংশটুকু জেনে নেই :
কম্পিউটার ক্রয় - ১৫ টি কম্পিউটার বাবাদ সর্বমোট ৩২,০০০- রিয়াল প্রদান করা হয় কোন ধরনের কোটেশন বা চেক কিংবা সাপ্লাইয়ার ছাড়া। উল্লেখ্য যে এর বিপরীতে কোন ধরনের ভাউচারও পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়াও স্কুল ইউনিফর্ম, ম্যাগাজিন বাবদ দেয়া অনুর্ধো ৫০,০০০- রিয়াল ক্যাশ দেয়া হয়েছে কোন ধরনের যাচাই বাচাই, কোটেশন ছাড়াই।
৭৩,৪৮২-রিয়াল কর্মচারীদের স্বাস্থ্য খাতে দেয়া হয়েছে যাচাই বাছাই ছাড়াই।
সিরাজ আল কাসীমকে দেয়া সার্ভিস বেনিফিট বাবদ২৫,১৫০।- রিয়ালের সাথে কোন ধরনের স্টেটম্যান্ট পাওয়া যায়নি।
এক কথায় কোন ধরনের কোটেশন ছাড়াই নিজেদের ইচ্ছেমত লক্ষ লক্ষ রিয়ালের খরচ দেখানো হয়েছে, যা স্বেচ্ছাচারিতা বৈ কিছুই নয়। এসব হিসেবে কোন ধরনের স্বচ্ছতা পাওয়া যায়নি।
স্কুল পিকনিক : ২০১১-১২ সালে স্খুল পিকনিক বাবদ ৩০,০০০।- রিয়াল এ্যাডভান্স নেয়া হলেও তা হিসেবের সাথে এ্যাডজাস্ট করা হয়নি। পিকনিকে কোন অভিভাবক কত দিয়েছে, কতটাকা বর্ধিত দেয়া হয়েছে এর ধরনের কোন হিসাব সংরক্ষণ করা হয়নি।
২০১১ সালে স্পোর্টস বাবদ ৩০,০০০।- রিয়াল খরচ দেখানো হলেও ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন সিস্টেম অনুসরণ করা হয়নি। এ বাবাদ এত বিশাল অংক খরচের যথার্থতাও খুজে পাওয়া যায়নি।
৩৪,৭০০।- রিয়াল রং করা বাবদ খরচ দেখানো হলেও তা ছিল খুবই সন্দেহ জনক।
উল্লেখ্যা যে, নতুন কমিটি আসার কয়েকমাস পর কাজী বশীর ১২ টি রুম বাবদ ২৪,০০০- (চব্বিশ হাজার) রিয়ালে রং করা শুরু করলে জনৈক মেম্বার এক ইয়েমেনিকে ডেকে এনে প্রতি রুম ২,০০০ হাজার এর পরিবর্তে মাত্র ২৫০।- রিয়ালে চুক্তি করলে চেয়ারম্যান হাতে নাতে ধরা পড়ে যায়। পরে বাকী রুমগুলো ২৫০ রিয়াল করেই করানো হয়। একটি রুম ২৫০ রিয়ালের পরিবতে যদি রং করতে ২০০০।- (দুই হাজার) রিয়াল লাগে, তাহলে এটি কি অবিশ্বাস্য মহা চুরি নয়!!!!!!
পুরোনো ক্যাম্পাসের ময়লা সরানো বাবদ সিটি বালাদিয়াকে ৪৮,০০০।- হাজার রিয়াল ক্যাশ প্রদান করা হয় যা কেবল মাত্র চেকের ম্যাধমে দেয়ার নিয়ম রয়েছে।
৩৭,০০০।-রিযার আকামা রিন্যু বাবাদ দেয়া হলেও এর বিপরীতে ব্যাংকে জমা দেয়ার কোন স্লিপ দেখাতে পারেনি।
৬৪,৭০০।- রিয়ালে কেনা এয়ারকন্ডিশনের বিপরীতে কোন ভাউচার দেখাতে পারেনি। সাদা কাগজে নিজেদের ইচ্ছেমত ভাউচার সংরক্ষন করেছে মাত্র।
.....এভাবে আরও প্রচুর অর্থ হিসেব বিহীন আর ভাউচার ছাড়া খরচ করা হয়েছে। হিসাব সংরক্ষণে কোন ধরনের নিয়ম নীতি অনুসরণ করা হয়নি। এত সব অনিয়ম করার পরও একজন চেয়ারম্যান কতটুক ক্ষমতালোভী আর আত্মসাতের টাকাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য আবারও প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতায় আসার দুরভিসন্ধি করতে পারে, তা এখন প্রতিটি অভিভাবক হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
অভিভাকদের না বলা কথা.....
-------------------------------------------------
..এই। তোমাকে কি এ্যাডমিট কার্ড দিয়েছে?
..না টিচার।
.. তোমার মাকে দাও...
ফোনের ওপার থেকে ছাত্রীর মায়ের ঘুমরে কান্নার শব্দে শিক্ষক নিশ্চুপ। বলার ভাষা নেই। ছাত্রীর মায়ের কান্নার শব্দ শূনে শিক্ষক নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। তাই ব্যথিত হৃদয় নিয়ে ফোনটা রেখে দিয়েছে।
আগামীকাল সকালে আইজিএসসি পরীক্ষা শূরু হতে যাচ্ছে। ক্লাশে খুব ভাল ছাত্রী এ মেয়েটি স্কুলের বেতন দিতে না পারায় বিগত ১০ বছরের সব অর্জন যেন শেষ। হত দরিত্র পিতার সামান্য আয়ে সংসার চলেনা বলে পড়ার ফাকে মেয়েটি টিউশনি করে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে অভাবের সংসারকে....
...আবারো শিক্ষকের ফোন। এবার মেয়েকে বলেছে তার বাবাকে দিতে।
..আমি স্কুল চেয়ারম্যানসহ অনেকের সাথে কথা বলেছি। অনুরোধ করেছি, আপনার মেয়েকে পরীক্ষা দেবার জন্য এ্যাডমিট কার্ড দিয়ে দিতে।
..ওরা কি আমার মেয়েকে পরীক্ষা দিতে দেবে? কারণ আমি অনেক অনুরোধ করার পরও আমাকে অনুমতি দেয়নি।
---আমি বলেছি, আপনার মেয়ের বেতন দেয়ার দায়ীত্ব আমার. শিক্ষক জবাব দিলেন।
মেয়ের মাকে কথাটা বলতেই শেষ সম্বল হাতের স্বর্নের চুড়ি দুটো খূলে দিয়ে বললো, যাও, এগুলো বিক্রী করে কিছু টাকা হলেও দিয়ে এসো।
তখন রাত ৮টা।
.................অবশেষে মেয়েটি পরীক্ষা দিতে পেরেছে জনৈক শিক্ষকের সহযোগীয়তা।
...এভাবে হাজারো হৃদয় ছোড়া না বলা কথার বিশাল মহাকাব্য রচিত হতে পারে এ স্কুলের অভিভাবকদের নিয়ে। তাদের খুব কখ্টের টাকায় পরিচালিত এ স্কুলের চেয়ারম্যান, মেম্বার আর অন্ধ সমর্থকদের দুনীতির খবর শুনে জনৈক অভিভাবক চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে দুহাত তুলে শুধু এতটুকুই বলেছে..,..
হায় আল্লাহ, আমার এ কষ্টের টাকা আত্মসাত কারীদের বিচার এ পবিত্র ভুমিতে দেখতে চাই।.......সিরিজ লিখায় এসব হৃদয় ছোয়া কথাগুলো উঠে আসবে। আমাদের সাথেই থাকুন।
(চলবে)
আগামী পর্বগুলোতে থাকবে--- স্কুলের অর্থ আত্মসাতে কুমিল্লা সমিতির সিন্ডিকেট দুনীতিবাজদের অবদান, কেবলা বাবার দরগাহের রাজনীতিতে কিছু মুখচেনা অন্ধ মুরিদের মায়াকান্না, সেলসম্যান থেকে চেয়ারম্যান হবার অন্তরালে.,,কাজী বশীরের দুনীতিতে কুমিল্লা সমিতি বিভক্ত, যে কোন সময় দুনীতিবাজদের বহিস্কারের আয়োজন.. )
বিষয়: বিবিধ
১৩২৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন