জেদ্দা ইংলিশ স্কুল চেয়ারম্যান কাজী বশীরের নজিরবিহীন দুর্নীতি। অডিট রিপোর্ট দামাচাপা দিতে মরিয়া। অভিভাবকদের কষ্টার্জিত অর্থ লুটের বিচার আদৌ পাবে কি?
লিখেছেন লিখেছেন কালের-কন্ঠ ১৫ অক্টোবর, ২০১৫, ০৬:২১:৫৬ সকাল
(পুর্ব প্রকাশিতের পর)
বিশাল দুনীতি নিয়ে লিখা ধারাবাহিক সিরিজের এ অংশটি শুরুর প্রথমার্ধ মাত্র। একজন মানুষ সৌদি আরবের মত স্থানে থেকে কতটুক দুনীতিবাজ হতে পারে, দেশ ও জাতির সম্মানকে কতটুকু নীচে নামাতে পারে, অভিভাবকদের হাড় ভাংগা পরিশ্রমের অর্থে পরিচালিত আগামী দিনের ভবিষ্যত সন্তানদের স্কুলটির শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার পাশাপাশি এটিকে কতটুক দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্থে পৌছে দিয়েছে, তা পুরো জানার পর যে কোন বিবেকবান সচেতন মানুষ নি:সন্দেহে বলবে, এরা কি মানুষ না জানোয়ার! ছি!
নজীরবিহীন দুনীতিবাজ এসব ঘৃণিত মানুষকে সঠিক বিচারের মাধ্যমে সমাজ থেকে বহিস্কার যেন সময়ের শ্রেস্ঠ দাবী। আসুন এসব ক্ষমতালোভী মানুষগুলোর আসল চেহারা উম্মোচিত করে জনগনকে জানিয়ে দেই।
টিউশন ফি (REVENUE):
• স্কুল টিউশন ফি এর উপর স্কুলটি নির্ভরশীল হলেও এ ব্যাপারে বকেয়া ফি সংগ্রহের কোন সবোচ্চ প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়নি।
লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, চেয়ারম্যানের খুব কাছের কিছু অভিভাবক বছরের পর বছর কোন টিউশন ফি না দিলেও তাদের সন্তানদের পড়ালিখায় কোন সমস্যা হয়নি।
• নিয়ম ভং্গ করে স্কুল টিউশন ফি দেয়ার সুযোগ না থাকলেও মৌখিক নির্দেশে জনৈক অভিভাবকের বকেয়া স্কুল ফি বাদ দিয়ে নতুন স্কুল ফি সংগ্রহ করে রিসিপ্ট ইস্যু করা হয়েছে যা একেবারেই ক্ষমতার অপব্যবহার।
• ২০১১ সাল থেকে নতুনভাবে ভর্তি করা প্রতিটি ছাত্র থেকে যে বর্ধিত অর্থ =১,০০০.- (একহাজার ) করে সংগ্রহ হয়েছিল, হিসাব থেকে উধাও সেব সব অর্থের বিপরীতে ছাত্রদের লিষ্ট কিংবা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস চাইলে তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
• ২০১১ সাল থেকে কস্ট্রাকশন বাবদ বধিত টিউশন ফি ১০০ রিয়াল এর বিপরীতে ছাত্রদের লিষ্ট ও তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
• সেপ্টম্বর ২০১১ সাল থেকে ৩০.০৪.২০১৫ পর্যন্ত বার্ধিত নুতন ফি আর এডমিশনের জন্য নেয়া টাকার বিপরীতে তথ্য প্রদানের জন্য বার বার অনুরোধ করলেও তা দিতে পারেনি যার সর্বমোট অর্থ কয়েক মিলিয়ন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
• কমিটির সমর্থক গোষ্ঠীর অনেক থেকেই বর্ধিত ফি বছরের পর বছর সংগ্রহ করা হয়নি।
• বকেয়া টিউশন ফি ছিল নিম্নরুপ :
২০০৯-১০ ২,১৩,১২৫ রিয়াল
২০১০-১১ ৩,০৪,৮৮০
২০১১-১২ ৪,৯৮,৭৩০
২০১২-১৩ ৭,৬৬,৮৭৪
২০১৩-১৪ ১১,০৪,৯০৬
সৌদি ব্রিটিশ ব্যাংকে টাকা সংরক্ষণ পদ্ধতি
• সৌদি ব্রিটিশ ব্যাংকে ২০১০-১২ বছরের মেয়াদী ১,২ মিলিয়ন (১২ লক্ষ রিয়াল) জমা করলেও কমিটির কোন অনুমোদন ছাড়াই ২০১১-১২ সালে তা উত্তোলন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে চেয়ারম্যান সঠিক উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
ও লেভেল ও এ লেভেল পরীক্ষার্থীদের জন্য ভাড়া করা বাস
• ও এবং এ লেভেলের পরীক্ষার্থীদের জন্য ভাড়া করা বাসের জন্য দেয়া সর্বমোট রিয়াল ছিল ৭৯, ৯০২. এসবের বিপরীতে কোন অরিজিনাল ভাউচার কিংবা প্রয়োজনীয় সাপোর্টং ডকুমেন্ট সংশ্লিষ্ট কোম্পানীর ছিলনা যা সন্দেহযুক্ত। তথ্য সংরক্ষনে এ ব্যাপারে কোন নীয়ম নীতি অনুসরন করা হয়নি।
• বাসের জন্য প্রদত্ত অগ্রীম ৩৯,০০০.- রিয়াল এর বিপরীতে সংশ্লিষ্ট কাষ্টমার থেকে কোন লিখিত কাগজ পাওয়া যায়নি।
• স্কুলের নতুন ক্যাম্পাস বিনির্মানে টাইলসের জন্য সংগৃহীত কোটেশন ছিল একটি সাদামাটা কাগজে যা খুবই সন্দেহ জনক। এ ব্যাপারেও বিশাল অংক আত্মসাত হয়েছে বলে প্রতিয়মান হয়।
• স্কুল রুম রং করার জন্য সর্বমোট খরচ দেখানো হয়েছে ৭৯,৯০৭ রিয়াল। এর মধ্যে রং এর দাম ছিল ১১,৫৩০ রিয়াল। লেবার বাবাদ দিয়েছে ২৮,৪৭০। রং এর জন্য খরচ করা এ সমুদয় অর্থ দিয়ে স্কুল রুমগুলো ৬ বার রং করা যেতো।
• রং বাবদ স্কুলের ফটোকপিয়ার হেলাল (চেয়ারম্যানের ভাগীনা)কে প্রদত্ত অগ্রীম টাকা কেন দিয়েছিল কোন কারন দর্শাতে পারেনি।
স্পন্সারশীপ ট্রান্সফার:
• স্কুলের অধীনে ইকামা টান্সফার করা কর্মচারীদের জন্য হিসাব বিহীন খরচ দেখানো হয়েছে যার কোন তথ্য বিবরনী দেয়া হয়নি যে কার বিপরীতে কত রিয়াল খরবচ হয়েছে।
• লিগ্যাল-ইলিগ্যাল সবার জন্য ইকামা ট্রান্সফার বাবদ সমপরিমান খরচ দেখানো হয়েছে যা বিস্মিত হবার মত।
• ইকামা ট্রান্সফার বাবদ প্রতি কর্মচারী হতে ৪,২০০ রিয়াল করে পর্যায়ক্রমে কর্তন করা হলেও তা ক্যাশে জমা না দিয়ে জনৈক কর্মচারীর দ্বারা সংগ্রহ করা হয়েছে। যেটি হিসেবে জমা দেয়ার কোন তর্থ্য বিবরনী দিতে পারেনি।
• অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, নকল মালুমাতের জন্যও কিছু কর্মচারীর বিপরীতে ২,০০০ (দুই হাজার রিয়াল) করে খরচ
দেখানে হয়েছে যা সৌদি সরকার বিনামুলো করে থাকে।
সার্ভিস বেনিফিট :
টিসিং এবং নন টিসিং ষ্টাফদের সার্ভিস বেনিফিট দেয়ার ক্ষেত্রেও চরম দুনীতি লক্ষ্য করা গেছে। যেমন
• সাহাবুদ্দিন খায়ের নামে জনৈক কর্মচারীকে একই সময়ে ভিন্ন পদবী দেখিয়ে দু দুবার সার্ভিস বেনিফিট দেয়া হয়েছে। একবার ড্রাইভার হিসেবে। আর একবার সুপারভাইজার হিসাবে। একই ব্যক্তির নামে দুবার সার্ভিস বেনিফিট দেয়া চরম দুনীতি নয়কি?
• ফিরোজ আলমকে মানবিক কারণ দেখিয়ে সার্ভিস বেনিফিট দেয়া হয়েছে যা কোন নিয়মের মধ্যে পড়েনা।
• চেয়ারম্যান কাজী বশীরের ভাগীনা হেলাল উদ্দীনকে সেপ্টেম্বর’১৩ এবং অক্টোবর’১৩ এ দুমাসে পর পর দুইবার বেতন বাড়ানো হয়েছে যার কোন অনুমোদন কপি পাওয়া যায়নি।
• আব্দুল লতিফ আর শওকত মোল্লা নামের দুজন কর্মচারীকে ২,৩১০ রিয়াল করে বেতন দেয়া হয়েছে যদিও তাদের বেতন মাত্র ১,৯০০.- করে।
কর্মচারীকে খরচ বাবদ অনুনোমদিত প্রচুর অর্থ প্রদান
• হিসাব বিভাগের জনাব নুরুল্লাকে ২০১৪ অর্থ বছরে এসজিবির কোন ধরনের অনুমোদন ছাড়াই নতুন ক্যাম্পাস খরচ বাবদ ৪৫২,০০০ (চার লক্ষ বায়ান্ন হাজার) রিয়াল দেয়া হয়েছে। তাকে দেয়া এ বিশাল অংক ১২টি চেকের মধ্যে শুধু মাত্র ৫০,০০০.- (পঞ্চাশ হাজার রিয়ালের) একটি চেকের অনুমোদন রয়েছে। এসব অর্থ কাকে, কেন কিভাবে দেয়া হয়েছে তার কোন তর্থ্য বিবরনী কিংবা ইনেভয়েস তৈরী করা হয়নি।
• বিভিন্ন সময়ে মেশিনারিজ ভাড়া এবং লেবার খরচ বাবাদ ৭৫,০২৫৫.- (পচাত্তর হাজার দুশত পঞ্চান্ন) রিয়াল দেখানে হলেও কতজন লেবার বাবাদ কোন খাতে এত রিয়াল খরচ হয়েছে তার কোন সুনিদ্দিষ্ট তথ্যবিবরণী দেখাতে পারেনি। এমনটি লেবারগন কতঘন্টা কাজ করেছে তার বিপরীতে কোন হাজিরা খাতাও দেখাতে পারেনি।
• এ বিশাল অংক খরচ হিসেবে আল মুলাদি কোম্পানীর নামে দেখালেও শুধু মাত্র স্কুল কর্মচারীদেরকে দেয়া হয়েছে ৬২,৬২৫.- রিয়াল। স্কুলের কর্মচারীদেরকে মাসিক বেতন দেয়ার পাশাপাশি এ বিশাল অর্থ কেন দেয়া হয়েছে তার কোন ব্যখ্যা নেই।
নতুন ক্যাম্পাসের জন্য ডকুমেন্ট বিহীন খরচ
• নুতন ক্যাম্পাসের জন্য ৮৯,৩২০-(উনানব্বই হাজার তিনশত বিশ) রিয়াল তিনটি কোম্পানীকে দেয়ার কথা বললেও এসব কোম্পানীর পক্ষ থেকে টাকা গ্রহনের কোন তথ্য দেখাতে পারেনি। বরং একই ব্যক্তি তিন কোম্পানীর পক্ষ থেকে সব টাকা গ্রহন করেছে বলে দেখানো হয়েছে।
• কনস্ট্রাকশন খরচ বাবাদ ৩৯,৮৭৮ (উনচল্লিশ হাজার আটশত আটাত্তর) রিয়াল স্কুলের কর্মচারীকে দেয়ার উল্লেখ থাকলেও হিসাবের খাতায় তা তোলা হয়নি।
• সৌদি সরকারের সাধারণ ক্ষমা ঘোষনাকালীন সময়ে ইকামা ট্রান্ষফার এবং নবায়ন বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে =৭০,০০০.- (সত্তর হাজার) রিয়াল। এর ম্যধ্য ৫৫,০০০.- জনৈক সেৌদিকে দেয়া হলেও বাকী ১৫,০০০ হাজার রিয়ালের কোন হিসাব পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে পেমেন্ট ভাউচারের মাধ্যমে সর্বমোট খরচ দেখানো হয়েছে =১২৫,০০০.-(এক লক্ষ পচিচ হাজার রিয়াল। খরচের সাথে প্রদত্ত টাকার কোন মিল নেই, তথ্য নেই, সুনিদ্দিষ্ট ব্যাখা নেই।
• কোন ধরনের কোটেশন ছাড়াই জেদ্দা ইলেকট্রিক ও সৌদ ইলেকট্রিক হতে ইলেকট্রিক্যাল এবং প্লাম্বিং এর যাবতীয় ক্রয়ে দেখানো হয়েছে। এমনকি স্কুলের ভেতরে জেদ্দা ইলেকট্রিক এর খালি ইনভয়েস বই পাওয়া গিয়েছে। এসব ইনভয়েস প্রযোজন অনুসারে স্কুলেই তৈরী করা হয়েছে।
• এমনকি জেদ্দা এয়ার কন্ডিশন এর খালি ইনভয়েস বই পাওয়া গিয়েছে যা নিজেদের প্রয়োজনমত ব্যবহার করার জন্য রাখা হয়েছে। এমনকি আই.ও.ইউ নামে এক কোম্পানীকে ৫০০০ (পাচ হাজার রিয়াল) অগ্রীম দেয়া হয়েছে কোন কারন ছাড়াই।
• ৯,৪৫০ এবং ৬,০০০.- হাজার রিয়ালের ভাউচার মেইন্টেন্যান্স বাবদ দেখানো হলেও কোন কোটেশন দেখাতে পারেনি।
• প্রিন্টিং এর জন্য প্রদত্ত ৩২,০০০.- হাজার রিয়াল এবং এ্যাডভান্স ১৫,০০০ হাজার রিয়ালের বিপরীতে কোন ভাউচার পাওয়া যায়নি।
• একমাসে স্কুল সুপারভাইজার ৩৫,২৫২.- রিয়াল খরচ দেখালেও এর বিপরীতে কোন তথ্য বিবরণী পা্ওয়া যায়নি।
• ৩৯,৫২৫ রিয়াল স্কুল ফার্নিচারের জন্য খরচ দেখানো হলেও কোন কোটেশন নেয়া হয়নি।.
• ৩৭,৯৬০.- রিয়াল স্কুল কর্মচারীদের ওভারটাইম বাবদ দেয়া হলেও কোন ধরেনর টাইম সীট, কাজের ধরন কিছুই পাওয়া যায়নি।
• ফার্নিচার কেণার জন্য ১০,৬১০ রিয়ালের চেকা ইস্যু হবার পরও সুপার ভাইজারের ম্যাধ্যমে ১২,০০০.- রিয়াল ক্যাশ দেবার কোন কারণ উল্লেখ করা হয়ণি।
• শিক্ষক নিয়োগের জন্য পত্রিকা এ্যাড দেয়ার জন্য কোটেশনে ছিল৭২,৮২০.- রিয়াল। প্রদত্ত রিয়ালের ভাউচারের পরিমান ছিল ৭১,৮৩০.- আর সংশ্লিষ্ট ফার্মকে ট্রান্সফার বাবদ দেখানো হয়েছে=৬৯,৫১০.-। খুবই অবিশ্বাস্য এবং অনিয়মে ভরপুর।
• সেপ্টি ও ওলার্ম বাবদ একাউন্টেন্ট এর নামে চেক ইস্যু করা হলেও আবার ক্যাশ ২৫,০০০.- রিয়াল দেয়া হয়েছে স্কুল সুপারভাইজরকে। এসব পেমেন্ট এর কোন এ্যাডজাষ্টম্যান্ট দেখানো হয়নি।
(চলবে)
বিষয়: বিবিধ
২৭৬৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাঙ্গালি আওয়ামি যেখানে যায় চুরি করে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন