জেদ্দা ইংলিশ স্কুলের অডিট রিপোর্ট ও চেয়াম্যান কাজী বশীরের নেতৃত্বাধীন কমিটির চরম দুনীতির খতিয়ান

লিখেছেন লিখেছেন কালের-কন্ঠ ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৪:০৮:০৫ রাত

প্রবাসী বাংলাদেশী সন্তানদের গর্বিত বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ইরেজী শাখার (জেদ্দা) সর্বশেষ চেয়ারম্যান কাজী বশীরের নেতৃত্বাধীন কমিটির দুনীতি অতীতের সব রেকর্ডকে ভংগ করেছে। অতীতে স্কুলটির বিদায়ী কমিটির দুনীতি তদন্তে একাধিকবার অডিট হলেও সিন্ডিকেট দুনীতিবাজদের প্রভাবে সেটি কখনও আলোর মুখ দেখেনি।

জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের পরামশ ও সহযোগীতায় এবারের অডিট রিপোর্টটি হবার কারণে এটি নিয়ে অভিভাবকদের মাঝে দারুণ উতসাহ উদ্দীপনা কাজ করছিল শেষ দেখার জন্য। কিন্তু চেয়ারম্যান কাজী বশীরের লাঠিয়াল বাহীনী নামে পরিচিত মুখচেনা সেই লোকগুলো এটিকে দামাচাপা দেয়ার অনেক চেষ্টা করেও অবশেষে ব্যর্থ হয়েছে। জনাব জাফরের নেতৃত্বে একদল অভিভাবক এর অনাকাংখিত উপস্থিতির কারণে এটিকে আর দামাচাপা দেয়া সম্ভব হয়নি। অবিশ্বাস্যভাবে সব পরিকল্পনাই যেন ভেস্তে গেল মুহুর্তে। হট্রগোল, বাক-বিতন্ডা আর মারামারির মধ্য দিয়ে অভিভাবকদের কষ্টার্জিত অর্থ স্কুল থেকে লুটপাটের সচিত্রতা নিয়ে করা অডিট রিপোর্টটি প্রকাশ হয়ে পড়ে।

নতুন কমিটির সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন মেম্বার যে কোন উপায়ে এটি প্রকাশ করার পক্ষে ছিল বলেই অডিট রিপোর্টের সমুদয় তথ্য এখন অভিভাবকদের মুখে মুখে। মহা দুনীতির এ খবরটি শুনে কাজী বশীরের অনেক কাছের লোককেও অবিশ্বাস্যভাবে ঘৃনা করতে দেখা গিয়েছে। বাংলাদেশ কনস্যুলেটে সদ্য অনুষ্ঠিত প্রাক্তন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর অনুষ্ঠানে আওয়ামীলীগের এক নেতা জনসম্মুখে আংগুল উচিয়ে কাজী বশীরকে দেখিয়ে বলেই দিয়েছে, কাজীকে বিশ্বাস করবেন না। ও একটা চোর। ও আমাদের স্কুলের টাকা লুট করে খেয়েছে। ও একটা মহা চোর.।ছি।

অভিভাকদের কষ্টার্জিত অর্থে পরিচালিত স্কুলের টাকা কিভাবে সিন্ডিকেট দুনীতিবাজরা লুটপাটের নেশায় মেতেছিল, সে সব না জানা সব অপকমের্র লোমহর্ষক চোখ ধাধানো এ ধারাবাহীক সিরিজে ডকুমেন্টারী সবগুলো লিখা নিয়মিতভাবে পড়ি। অন্যকেও পড়তে দিন। মুখোশ উম্মোচিত করে দিন সমাজ সেবার নামে পর্দার অন্তরালে ঢেকে থাকা এসব ঘৃন্যতম মানুষগুলোর আসল চরিত্র।

হিসাব রক্ষনের নামে মহা-লুটপাট :

-------------------------

* হিসাব সংরক্ষনে একাউন্টিং পদ্ধতিকে একেবারেই পদদলিত করে দেয়া হয়েছে। টাকা লেন দেন, জমা-উত্তোলনসহ সব খানেই ছিল অনিয়মে ভরপুর। আয় ব্যায়ে ভাউচার তৈরী বা অনুমোদন ছিল একেবারেই উপেক্ষিত।

* অভিভাবকদের থেকে দৈনিক সংগৃহীত টাকা দিনের শেষে কখনই ব্যাংকে জমা দেয়া হয়নি। প্রাপ্ত ক্যাশ টাকা নিজেদের ইচ্ছেমত খরচ করা হয়েছে। দিন শেষে আয় ব্যায় রেকর্ড করে কখনোই ফাইলবন্দী করা হয়নি। হিসাব রক্ষেণে কোন ধরনের ইনভেনটরী, কেশ ইন-আউটে মাসিক ব্যালেন্স , ত্রৈমাসিক, ষাম্বাষিক বা বাতসরিক কোন ধররনের একান্টিং পিরিয়ড ছিলনা। ক্যাশে কখন কতটাকা ছিল, কত টাকা দৈনিক বা মাসিক ব্যায় এর উপর কোন ধরনের তদারকী ছিলনা। এক কথায় স্কুলের হিসাব রক্ষনে চরম অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার পদচিহ্ন ছিল প্রতিটি পরতে পরতে।

স্কুল রেন্টিং এ মহা ডাকাতি:

১-স্কুলের ভাড়া (লীড এগ্রিমেন্ট) : ২০ মিলিয়ন রিয়াল ভাড়ার বিপরীতে স্কুলটির বর্তমান খালি জায়গাটি ২১ বছরের জন্য লীজ এগ্রিমেন্ট হয়েছিল। শর্ত ছিল

- এটির প্রথম দশ বছরের ভাড়া ৯,০০,০০০ (নয় লক্ষ রিয়াল) করে । - -

- দ্বিতীয় দশ বছর ১১,০০,০০০ (এগার লক্ষ রিয়াল) করে।

- এক বছর ফ্রি।

স্কুলের জায়গা ভাড়া, লীজ এগ্রিমেন্ট, টাকা লেনদেন সব কাজটি মাত্র একজন মেম্বার হ্যান্ডেলিং করে কমিটির মিটিং এ অনুমোদনের জন্য জমা দিয়েছে। উল্লেখ্য যে, সেই অজানা কমিটি মেম্বারের অনুরোধে পুরো ভাড়ার উপর ২,৫% কমিশন হিসেবে ৫,০০,০০০ (পাচ লক্ষ রিয়াল) দেয়া হয়েছে দুজন মধ্যস্থতাকারীকে।

স্কুল ফান্ড থেকে কমিশন হিসেবে পাচ লক্ষ রিয়াল কেন দেয়া হবে তার কোন ডকুমেন্ট, বিবরনী, কিংবা দাতা গ্রহীতার স্বাক্ষর কিছুই সংরক্ষণ করা হয়নি। ২১ বছরের জন্য স্কুলের জন্য লীজ নিতে ভাড়ার উপর পাচ লক্ষ রিয়াল কমিশন দেয়া কোন নিয়মের মধ্যই পড়েনা।

সবচেয়ে আশ্চয্যর বিষয় হল, স্কুল কমিটির বোর্ড রেজুলেশনে কাটা ছেড়া করে দেয়া টাকা এক লক্ষ, দুই লক্ষ, পঞ্চাশ হাজার ইত্যাদি মেয়াদে দেয়া রিয়ালের গ্রহীতার কোন দস্তখত বা ঠিকানা নেই।

নতুন ক্যাম্পাস নির্মানে মহা দুনীতি:

স্কুল গভর্নিং বডির মিটিং এ নতুন ক্যাম্পাস বিনির্মানে ৬৫০,০০০ (ছয় লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) রিয়াল বায়ের বাজেট করা হলেও পরে আরও অতিরিক্ত ১,১ মিলিয়ন (১১ লক্ষ রিয়াল) বেহিসাবী খরচ হওয়ায় জনৈক বোর্ড মেম্বার তা অনুমোদনে সম্মতি দেননি। তবুও বাজেট ফেল করা এ বিশাল খরচ থেমে থাকেনি। চেয়ারম্যান সহ বাকী একজন মেম্বার নিজেদের দস্তখতে ইচ্ছে মত শূধু খরচ করেনি। এটিকে দামাচাপা দেয়ার জন্য

- কন্সট্রাক্শন কাজে খরচকৃত ভাউচারের অধিকাংশ ইনভয়েস ফেলে দেয়া হয়েছে।

- হিসাব মিলানোর জন্য অনেক গুলো নতুন ভাউচার বানানো হয়েছে যার সাথে কোন সাপোর্টি ডকুমেন্টস নেই। অনুমোদন নেই।

- অনেক গুলো ভাউচার কম্পিউটারে এডিট করা হয়েছে যা চরম দুনীতি বৈ কিছূই নয়।

- কন্সট্রাকশন কাজে দেয়া টাকার বিপরীতে সংরক্ষন করা ৫টি পেমেন্ট বই এর মাত্র একটি আছে। বাকী ৪টি বই নাকি হারিয়ে গেছে। ছি। ছি । ছি।

- অধিকাংশ ভাউচারে সংশ্লিষ্ট কমিটি মেম্বারের অনুমোদন না থাকায় প্রিন্সিপাল কতৃক নোট লিখে দেয়া হয়েছে মাত্র।

[b]আমেরিকা শিক্ষা সফরে দুনীতি/b]

- আমেরিকায় যাবার জন্য প্রতি ছাত্র থেকে ২৫,০০০ (পচিশ হাজার) রিয়াল করে নেয়া হলেও মাথাপিছু খরচ হয়েছে মাত্র ১৫,০০০ (পনের হাজার) রিয়াল। বাকী টাকা স্কুল হিসেবে জমা করার কোন ডকুমেন্ট বা রেকর্ড দেখাতে পারেনি।

- আমেরিকা গামী ছাত্রদের থেকে বিভিন্বন র্ধিত ফি জমা দেয়ার ডকুমেন্ট পাওয়া গেলেও তা কি জন্য নেয়া হয়েছে, কোথায় খরচ করা হয়েছে, কেন নেয়া হয়েছে তার কোন সঠিক জবাব দিতে পারেনি। গৃহীত টাকার ও কোন সংরক্ষিত হিসাব দেখাতে পারেনি।

- এ ব্যাপারে স্কুল প্রিন্সিপালকে কোথাও সংশ্লিষ্ট না রেখে একজন শিক্ষক এবং একজন কমিটি মেম্বার পুরো ব্যবস্থাপনাটি তদারকী করেছে।

-্ এ সফরে সর্বমোট কতজন ছাত্র ছাত্রী নেয়া হয়েছে তার কোন সঠিক লিস্ট সংরক্ষণ করা হয়নি।

(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

১৩৫৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

343696
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:০৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে।
বাঙ্গালি বেহেশতে গেলেও দুর্ণিতি করে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File