@@@সপ্তাহে সাতদিন নাম করণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস @@@

লিখেছেন লিখেছেন নিউজিল্যান্ড প্রবাসী ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০১:১০:২২ রাত



প্তাহে ৭ দিনের প্রতিটা দিনের নামের পেছনেই রয়েছে প্রাচীন মানুষের, তৎকালীন সামাজিক বিশ্বাসের ধ্যান ধারনার প্রতিফলন। সপ্তাহের ৭ দিনের নামের নামকরণের ইতিহাস সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হল। Thursday/বৃহস্পতিবার:

Thor’s Day. বজ্র-দেবতা থরের দিন। প্রাচীন জার্মান বজ্র-দেবতা থর (Thor), যাকে Thunderও বলা হয়। জার্মান বজ্র-দেবতা থর এর রোমান ভার্শন জুপিটার (Jupiter) এবং গ্রীক ভার্শন জিউস (Jeus)। অবশ্য অঞ্চলভেদে এই একই দেবতার অস্ত্রের পার্থক্য রয়েছে। যেমন জার্মানদের কাছে থরের রয়েছে বিশাল হাতুড়ি।যে হাতুড়ি তৈরি একটি তারা দিয়ে।থর যখন রেগে যায় তখন তার হাতুড়ি ছুড়ে মারে এবং তখন বিদ্যুৎ চমকায়। তারপর থর ছাগল চালিত একটি গাড়িতে চড়ে বসে যে গাড়ির চাকার শব্দই হচ্ছে বিদ্যুৎ চমকানোর শব্দ। জিউস বা জুপিটারের হাতে হাতুড়ি দেখা যায়না। দেখা যায় সরাসরি বিদ্যুৎ।বজ্র-দেবতার প্রতীক বৃহস্পতি গ্রহ (Jupiter).

Friday/শুক্রবার:

Friday হচ্ছে Firgg’s Day. এ্যাংলো-এ্যাক্সোন প্রেমের দেবী ও সবথেকে সুন্দরী দেবী Fríge. জার্মান নাম Frigg, যিনি সবচেয়ে শক্তিশালী দেবতা Odin এর স্ত্রী। রোমানদের কাছে Venus এবং গ্রীক ভার্শনে Aphrodite. Venus অর্থাৎ শুক্র গ্রহ হচ্ছে ফ্রিগ দেবীর প্রতীক। ফ্রিগ দেবী সকল দেব-দেবী ও মানুষের প্রেম পরিণয়সহ সমস্ত প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করে। প্রার্থনার দিন শুক্রবার।

Saturday/শনিবার:

Saturday হচ্ছে Saturn’s Day. ঝড়-বৃষ্টি-তুফান নিয়ন্ত্রণকারী দেবতা স্যাটার্ন (Saturn) যার হাতে চাষাবাদ নিয়ন্ত্রিত। প্রতীক শনি গ্রহ। প্রার্থনার দিন শনিবার।

Sunday/রবিবার:

নামেই বোঝা যাচ্ছে Sunday হচ্ছে sun’s day. বাংলায় রবি’র দিন। দক্ষিণ ইউরোপের প্রাচীন মানুষের বিশ্বাস ছিল সূর্য দেবতা প্রতিদিন একটি আলোক পিণ্ড আকাশে ছুড়ে দিয়ে জগত আলোকময় করে। ল্যাটিন ভাষায় এর নাম Solis. সূর্য দেবতার প্রার্থনার দিন ছিল Dies Solis অর্থাৎ সূর্যের দিন। উত্তর ইউরোপে এর নাম ছিল ‘সাননানজায়েজ (Sunnandæg) আর বর্তমানে এই Sunnandæg থেকেই Sunday. ইউরোপিয়ান অন্যান্য ভাষায় এটাকে The Lord’s day নামেও অভিহিত করা হতো।

Monday/সোমবার:

Moon’s day অর্থাৎ চাদের দিন। চন্দ্র দেবতার প্রার্থনার দিন। প্রাচীন ইউরোপীয় ভাষায়‘মোনানডায়েচ (Mōnandæg) । এটি ল্যাটিন শব্দ Dies Lunae.

Tuesday/মঙ্গলবার:

প্রাচীন রোমান ও জার্মান যুদ্ধের দেবতা টিউ (Tiw) যার হাত মাত্র একটি। সে যুদ্ধে মানুষকে সাহায্য করে, মঙ্গল করে এবং যারা তার উপাসনা করে সেইসব যোদ্ধাদের সেবাযত্ন করার জন্য একদল স্বর্গীয় নারী পাঠায়। মঙ্গলকারী দেবতা Tiw এর প্রার্থনার দিন Tuesday, বাংলায় মঙ্গলবার। ল্যাটিন ভাষায় Dies Martis মানে Day of Mars. টিউ দেবতার প্রতীক মঙ্গল গ্রহ (Mars).

Wednesday/বুধবার:

Wednesday হচ্ছে Wodan’s day. ল্যাটিন ভাষায় dies Mercurii অর্থাৎ Day of Mercury. প্রাচীন জার্মানের সবথেকে ক্ষমতাশালী দেবতা উডেন (Wodan) যে ছিলো অত্যন্ত জ্ঞানপিপাসু। জ্ঞান আহরণ করতে করতে তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। তার নষ্ট চোখটি সে ঢেকে রাখে মাথায় বিশাল কালো হ্যাট দিয়ে। তার দুই ঘাড়ে থাকতো দুটি কালো রংয়ের পাখি যারা সন্ধ্যার পর সারা পৃথিবী ঘুরে তার জন্য তথ্য সংগ্রহ করে দিতো আর দেবতা স্বর্গে বসেই সব খবর পেয়ে যেত।

সভ্যতার শুরু থেকেই প্রাচীনকালের মানুষ অনেককিছুই আবিষ্কার করেছে এখনও আমরা সরাসরি ব্যাবহার করে আসছি। যেমন প্রাচীনকালের মানুষের সেই সপ্তাহ মাস দিন গণনার নিয়মেই আমরা এখনও গণনা করি। তাদের দেওয়া সপ্তাহের নামের পেছনের কারণ এখন আমাদের কাছে অযৌক্তিক ও কাল্পনিক মনে হলেও তাদের পদ্ধতিটা কিন্তু বেশ মজাদার।

বিষয়: বিবিধ

১৮৫৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

341155
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রাত ০১:৪১
আবূসামীহা লিখেছেন : একত্ববাদী মানুষেরা দিনের এই সমস্ত নাম কিন্তু ব্যবহার করে না। যেমন আরবী ও হিব্রু। এতে দিনগুলোতে প্রথম, দ্বীতিয়, তৃতীয়, ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়।
রবিবার হচ্ছে ইয়াউম আল-আহাদ (প্রথম দিন০, সোমবার হচ্ছে দ্বীতিয় দিন [ইয়াউম আস-সানী], মঙ্গলবার তৃতীয় দিন [ইয়াউম আস-সুলাসা], বুশবার ৪র্থ দিন [ইয়াউম আল-আরবিয়া], বৃহস্পতিবার হল পঞ্চম দিন [ইয়াউম আল-খামীস], শুক্রবার দিন ষষ্ঠ দিন [ইয়াউম আল-সুদাসা, কিন্তু জুমু'আর কারণে এটা এখন ইয়াউম আল-জুমু'আহ] আর শনিবার সপ্তম দিন [ইয়াউম আস-সাবত]।
341177
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ০৮:৫৩
নাবিক লিখেছেন : ভালো লাগলো, অনেক ধন্যবাদ।
341190
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:২৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আপনার পোষ্ট এবং আবু সামিহা ভাই এর কমেন্ট উভয়ই ভাল লাগল।
341251
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৪:৫৭
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

প্রাচীনকালের মানুষের সেই সপ্তাহ মাস দিন গণনার নিয়মেই আমরা এখনও গণনা করি



প্রাচীনকালের মানুষেরা নয়, বরং আল্লাহতায়ালাই সৃষ্টির সূচনাপর্ব থেকেই (সপ্ত+অহ=)সাতদিন ও বারোমাসের হিসাব পদ্ধতি জারী করেছেন


নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী এবং পৃথিবীর সৃষ্টির দিন থেকে আল্লাহর নিকটে আল্লাহর নির্ধারণ অনুযায়ী
মাসের সংখ্যা বারোটি..
সূরা তওবা : আয়াত ৩৬


[আবূসামীহা] ১নং মন্তব্যটি যথার্থ


বর্তমান বিশ্বে আন্তর্জাতিক কারবারে প্রচলিত নামগুলোর উতসের ইতিহাস ও তথ্য জেনে রাখা ভালো-
এ জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ..

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File