বিশ্ব ব্যাবস্থার অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত রহস্য এবং স্বরূপ উম্মোচন
লিখেছেন লিখেছেন আশরাফ ইমাম ১২ মার্চ, ২০১৫, ০৬:৫১:০৬ সন্ধ্যা
-মো: ওলিউর রহমান
দারিদ্রতা যখন বেধেঁ রেখেছে আমাদের হাত-পা, শাসন যখন শোষণের হাতিয়ার, কাপূরুষতা আর স্বার্থা-কাঙ্খা যখন গ্রাস করে ফেলেছে নীতি-নৈতকতাকে, জীবন যখন আজ বিপন্ন তখন চলুন না একবার না হলেও ফিরে তাকাই এর গোড়ার দিকে-
লেখাটা একটি কাহীনি দিয়েই শুরু করব। এটা সত্যও হতে পারে আবার কল্পনিকও হতে পারে। তবে আমার কাছে আলোচ্য বিষয় হলো এর বিষয়বস্তু।কাহীনিটা হলো ১৮০ খ্রীষ্টাব্দের।
জেনারেল ম্যাস্কিমাস নামে রোমানদের একজন সেনাপতি ছিল। তখন রোমানদের রাজা ছিলেন সম্রাট মারকাস । সম্রাটের বয়স হয়ে গিয়েছিল অনেক তাই তার মৃত্যুর সময় ছিল অনেক নিকটে আর তখন রোমান সম্রাজ্য ছিল অনেকটা যুদ্ধগ্রস্ত । রাজা ভাবেলন রোমান সম্রাজ্যের এই সংকাটাপন্ন অবস্থায় তার মৃত্যুর পর বহুযুদ্ধ জয়ী সেনাপতি মেক্সিমাস ছাড়া সিংহাসনের যোগ্য উত্তরাধিকারী আর কেউ হতে পারে না। যেহেতু তার ছেলে কমোডাস ছিল ধূর্ত প্রকৃতির, বিপদগামী এবং অসৎ। তিনি রাজপ্রথা ভেঙ্গে রোমান সম্রাজ্য রক্ষার তাগিদে রাজসিংহাসন সেনাপতির কাছে হস্তান্তরের জন্য নিজ ছেলের কাছে তার দৃঢ় অভিব্যক্তি ব্যাক্ত করলেন। ছেলে তখন রাজসিংহাসন হারানোর ভয়ে তার নিজ পিতাকে স্বহস্থে হত্যা করে নিজেকে রাজা ঘোষনা করে বসে।
এবং সিংহাসনে আরোহন করার সাথে সাথেই সে সেনাপতিকে তার পরিবার সহ হত্যা করার নির্দেশ দেয় এবং রাজপরিষদের যেসব সদস্যরা কমোডাসের এই দূরভিসন্ধির বিষেয় অবগত ছিল তাদের কে কারাগারে আটকে রাখে। আর যখন অনেকেই অবগত হল যে কমোডাস তার বাবার হত্যাকারী ঠিক তখনই সে জনগনের দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরানোর জন্য ১৫০ দিনের একটি ধারাবাহিক প্রতিযোগিতামূলক খেলার আয়োজন করল। যেটাকে আমরা এখন টুর্নামেন্ট বলে থাকি। কমোডাস এই প্রতিযোগিতা মূলক খেলায় জীবন বাজী রেখে অংশগ্রহণ করার জন্য সুদর্শন এবং সুঠামদেহি দাসদেরকে খরিদ করত লাগলো। যাদেরকে বলা হত গ্লাডিয়েটর।
টুর্নামেন্ট শুরু হল তখনকার রোম সম্রাজের কেন্দ্রস্থল বর্তমান ইতালির কলোসিয়ামে। যেখানে প্রতিদিন নিত্যনতুন প্রতিযোগিতা মূলক যুদ্ধ চিত্র আর ছকের অবতারনা করা হত। এবং প্রতিবারই অতি অল্পসংখ্যাক গ্লাডিয়েটরদের সাথে সর্বোচ্চ সংখ্যাক স্বশস্ত্র অত্যাধুনিক অস্ত্র সজ্জিত সৈন্যদেরকে যুদ্ধ করতে নামিয়ে দেওয়া হত। আর প্রতিবারই উভয় পক্ষের অনেকই্ নিহিত হচ্ছিল। ১৫০ দিনের টুর্নামেন্টটি রোমানবাসীদের কাছে আরো উত্তেজনপূর্ণ এবং গুরুতত্বপূর্ণ করতে রাজা আরো ঘোষনা দিলেন যে, ১৫০ ধারাবহিক প্রতিযোগিতামূলক যুদ্ধের শেষ ধাপে যে যোদ্ধা বিজয়ী হবে তার সাথে রাজা স্বয়ং যুদ্ধ করবেন।
ঘটনাটি ছিল ১৮০ খ্রীষ্টাব্দের।
আর আজ ২০১৫ সাল।
ধীরে ধীরে আমাদের এই ধরণির লোকবল ১০০.....২০০......৩০০……৪০০ এরকম করে আজ অবধি সংখ্যাটা ৭০০ কোটিরও বেশির সংখ্যায় গিয়ে টেকেছে।সময়ের এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় কমোডাসের মত এরকম পৃতিহন্তক এবং অসৎ শাসক অনেক আসতে থাকল। এরকম নীল-নকশা এবং দূরভিসন্ধি হতেই থাকল যার দ্বারা তারা জনগনকে বোকা বানিয়ে বুলিযে-বালিয়ে তাদেরকে বিপদগামী করতে থাকল এবং শাসন ও শোষন করতে থাকলো।
তাই বছরের পর বছর এরকম আরো অনেক ক্রীড়াক্ষেত্র আবিষ্কার হতে থাকল এবং নিত্য-নতুন খেল তামশা এসবের খোরাক দিতে থাকল। আর খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি সহ সকল রকমের অবরাধ, সাথে আরো নিত্য-নতুন অপরাধবৃত্তি মাত্রা এবং স্যংখ্যা দু’দিক দিয়েই বাড়তে থাকলো দ্বি-গুণ থেকে দ্বি-গুণতর হারে।
ইতালির ওই কলোসিয়ামের মত স্টেডিয়াম গুলোও তৈরি হতে হতে তা আজ ৬০ হাজারেরও বেশি হয়ে গেছে। তৈরি হতে থাকল থিয়েটার হল, নাট্যমঞ্চ, আর সিনেমা হল। কিন্তু এরপরও এসব ক্রীড়াক্ষেত্রগুলোতে জনগনের জায়গার সংকুলান হচ্ছিল না।
প্রযুক্তি এক্ষেত্রে শয়তানদেরকে এক বিশাল সুবিধা এনে দিল। আবিষ্কার হল টিভি, মুভি, গান, ছায়াছবি, খবর, নতুন-পুরাতন প্রকৃত অথবা বিকৃত ইতিহাস, হাসি-খেল-তামশা, ইত্যাদি ইত্যাদি।
যারা শয়তানদের ক্রিড়া ক্ষেত্রগুলোতে যেতে পারে না বা যেতে চায় না, ইবিলস তাদের বাসায় বাসায়, ঘরে ঘরে ক্রিড়াক্ষেত্রের খেল-তামশাগুলো দেখার ব্যাবস্থা করে দিয়ে অনবরত প্রচার এবং প্ররোচনার কাজ অব্যাহত রাখল। পৃথিবী ছোট হতে হতে এতই ছোট হল যে শয়তান শেষ পর্যন্ত এই স্টেডিয়ামগুলোকে আমাদের পকেটে জায়গা সংকুলান করে দিলে। প্রযুক্তির সুবাদে এখন শয়তানদের খেল তামশা দেখতে গেলে আপনাকে ঘরের কোণে বসে না থাকলেও চলবে। মোবাইল জাতীয় ডিভাইসের মাধ্যমেও ওদের কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করা সম্ভব।
কিন্তু এতে শয়তানের এবং তার সংঙ্গী-সাথীদের লাভ কি? তার এবং তার সংঙ্গী-সাথীদের লাভ হচ্ছে এই যে তারা আমাদেরকে ভুলিয়ে-বিলিয়ে এসম্পর্কে বেখবর করে দিচ্ছে যে কোনটা ভালো এবং কোনটা মন্দ। আরও অসতর্ক করে দিচ্ছ যে, সেই হল আমাদের প্রকাশ্য শত্রু।তারা ভুলিয়ে দিচ্ছে-
তাদের অসৎ প্ররোচনা এবং অসৎ কার্যে সহযোগিতার ধরুন রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক গোষ্টি এবং তাদের সহযোগি গোষ্টির হাতে কত নিরিহ প্রাণ বধ হচ্ছে আর কত পিতা-মাতা আর সন্তান-সন্ততি প্রতিনিয়ত খুন হচ্ছে। আর আমাদের কি পরিমান সম্পদ ওরা প্রতি মূহুর্তে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের নিজেদের দেশের কথাই ধরুন-
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারাকাতের বাংলাদেশে কালো টাকা এবং এর উৎস’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি বছর দেশে দুর্নীতিসহ অনৈতিক পন্থায় ৭০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। এরমধ্যে ঘুষ ও চোরাচালানের ১২ হাজার কোটি টাকা, বৈধ কাজের জন্য দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ আয় ৫৮ হাজার কোটি টাকা, আবগারি শুল্ক বাবদ দুর্নীতি ২৫ হাজার কোটি টাকা, ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংক, বীমা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকি ১৬ হাজার কোটি টাকা, আয়কর ফাঁকি বাবদ ৭ হাজার কোটি টাকা, আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে শুল্ক ফাঁকি ৬ হাজার কোটি টাকা, ভ্যাট ফাঁকি ৫শ’ কোটি টাকা, স্ট্যাম্প, ভূমিকর, নিবন্ধন প্রভৃতি খাতে দুর্নীতি ১ হাজার কোটি টাকা, প্রতিবছরই এ ধরনের লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে। ব্যবসায়ী, আমলা, ক্রেতা, বিক্রেতা ও রাজনীতিবিদরা কালো টাকার এসব উৎসের সঙ্গে জড়িত।
দেশে কালো টাকার সঠিক হিসাব পাওয়া না গেলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক হিসাবে এ ধরনের অর্থের পরিমান জিডিপির ৪০ থেকে ৮০ শতাংশের সমান হতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছে। গত (২০১১-১২ অর্থবছরে জিডিপির আকার ছিল ৯ লাখ ১৪ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা। এই হিসাবে দেশে মোট কালো টাকার পরিমাণ প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা থেকে ৭ লাখ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
আর এভাবেই আমরা যখন এসবকিছু সম্পর্কে বেখবর হয়ে ঘরের কোণে পড়ে রইলাম শয়তান এবং তার সঙ্গী-সাথীরা তখন ধীরে-ধীরে আকাশ-বাতাস-মাটী এবং পানির যে সমস্ত জায়গা থেকে আমরা আমাদের জীবিকা আহোরন করতাম এবং যে সমস্ত জায়গায় আমরা আবাস গাঢ়ি তার সবকিছু এক এক করে দখল করে নিল এবং এসবের উপর তার একক নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করল।
আমাদের আত্মার বিবেক তাড়িত সত্য-প্রত্যাশী অংশটুকু থেকে যখন তাগিদ আসল কিছু একটা করেন….তখন আমরা জবাব দিলাম আমাদের তো কিছু করার নেই আর ওগুলো আমাদের দায়-দায়িত্বের অন্তর্ভূক্তও না। আর যখন আমরা বুঝতে সক্ষম হলাম অথবা কেউ একজন আমাদের বুঝাতে সক্ষম হল আমাদের দায়িত্ব আছে তখন আমরা খুজে পেলাম ততক্ষণে আমাদের সময় ফুরিয়ে গেছে। আর যখন আমরা সময় খুজে নিলাম তখন আমরা নিজেদেরকে আবিষ্কার করলাম অর্থশুণ্য হিসেবে।
আর যখন কাজের জন্য দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিতে থাকলাম তখন আবিষ্কার করলাম যে ভালো কাজে তেমন কোন অর্থ-কড়ি নেই। অর্থ-কড়ি আছে স্মাগলিং, কিডন্যাপিং, চুরি, ডাকাতি, খুন, রাহাজানি, সুদ, ঘুষ, পতিতাবৃত্তি ইত্যাদিতে।
তাই সব মিলিয়ে বাঁচার তাগিদে অনেকেই এগুলোকে সমাজে একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ঘোষনা দিতে লাগলেন। আর এভাবেই আমরা ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায় হোক সামজের অবিচ্ছেদ্য খারাপ অংশের সাথে কোন কোন ভাবে জড়িয়ে পড়লাম কিংবা ওরা আমাদেরকে জড়িয়ে নিল। আমরা তাই নিতান্তই অসহায় বোধ করলাম। আর এই অসহায়ত্বের চাতাকলে অনেকই পরিণত হলেন তাদেরই আরেকটি অবিভাজিত অংশে। আর সামজের সেই অবিচ্ছেদ্য খারাপ অংশটুকু হয়ে গেল আমাদের অঘোষিত নিয়ন্ত্রক।
বিল গেটস যদি প্রতিদিন ১০ লাখ ডলারও যদি খরচ করেন, তাতেও তার পুরো অর্থভাণ্ডার শেষ হতে লাগবে ২১৮ বছর! এ মুহূর্তে তার সম্পত্তির পরিমাণ সাত হাজার ৯০০ কোটি ডলার। এই মুহূর্তে পৃথিবীর সব থেকে ধনী ব্যক্তি মেক্সিকোর কার্লোস স্লিম। তিনিও যদি দৈনিক ১০ লাখ ডলার খরচ করেন, তাতেও তার অর্থভাণ্ডার শেষ হতে সময় লাগবে ২২০ বছর। আর ওয়ারেন বাফেট যদি একই পরিমাণ অর্থ প্রতিদিন খরচ করেন, তাহলে তার অর্থসম্পদ শেষ হতে সময় লাগবে ১৬৯ বছর।
সুতরাং ওদের মত আরও যারা অর্থ-বিত্তের মালিক বনে গেছেন তারা চাল, ডাল, পেঁয়াজ, মরিচ , সবজি আর খাদ্য-দ্রব্যাদি ক্রয় করে অথবা ওগুলোর ন্যায্য বন্টনে মাথার বুদ্ধি খরচ করে কি করবে।
ওদের অর্থ-সম্পদ খরচ হতে থাকলো খারপ কাজে এবং এগুলোর প্ররোচনায় আর প্রচারণায় যা থেকে ওরা আরো দ্রুত এবং বেশি লাভবান হতে পারে।
ওদের টাকা পয়সা খরচ হতে থাকল মদের পিছনে, সুদের পিছনে, অস্ত্রের পিছনে, পতিতা এবং পতিতাবৃত্তির পিছনে, অশ্লিলতা এবং খারাপ কাজকে আরো দ্বিগুণ হারে ছিড়েয়ে দেওয়ার পিছনে।
এরই পরিক্রমায় আজ বিশ্বব্যাপী বিনোদন জগতের বার্ষিক লভ্যাংশ দুই লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের উপরে গিয়ে ঠেকেছে। $২০০০০০০০০০০০০.০০*৳৭৮.২৯= (দুঃখিত আমার ক্যালকুলেটারে বাংলাদেশী টাকার হিসেবের স্যংখাটি ধরে নি।) এই বিনোদন এবং মিডয়া জগত থেকে শুধু আমেরিকাই রেভিনিউ পায় ১.৬৩৯ ট্রিলিয়ন। রিপোর্ট (Price Water House Coopers).
আর, প্রতিদিন কেবল সুদ থেকেই এক কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার আয় করেন বিল গেটস।
প্রতি সেকন্ডে পর্নগ্রাফির পিছনে খরচ হয় ৩০৭৫ ডলার। আর এগুলো চালিয়ে চায়না, আমেরিকা, সাউথ কোরিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইউকে, ইতালী যে পরিমাণ টাকা সংগ্রহ করে তা দিয়ে পৃথিবির ক্ষুধার্ত জনগোষ্টিকে ২ বৎসর যাবত খাবারের ভরণ পোষণ করা সম্ভব।
আমরা যদি চিন্তা করে থাকি যে এইসব বক্তব্য আমার জন্য প্রযোজ্য হবে না। আমরা ছবি-সেনেমা দেখবো না, মদ খাবো না, চুরি-ডাকাতি-রাহাজানি এসব করব না, পতিতার কাছে যাব না, সুদ খাব না ঘুষ দেব না আর এসবের আশে-পাশে যাবও না। আমরা কোথাও ইমামতি, হুজুরগিরি, কৃষিগিরি অথবা দোকানদারীর মত আরো অন্যান্য হালাল রুজি উপার্জন করে দিন গুজরান করব।
সমস্যা নেই। এই সৎ সিন্ধান্তটিকে স্বাগত জানানো যেতে পারে। কিন্তু আমাদেরকে এটা আবশ্যই স্বরণ রাখা দরকার যে, এই ভালো ভালো কাজ এবং হাড়-ভাঙ্গা খাটুনীর বিনিময়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে তেল, চাল, ডাল, লবণ, মসলা, সাবান, জুতা সহ বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, আইন-আদালত অর্থাৎ জীবনের-যাপনের যে উপকরণগুলো আমরা ব্যাবহার করব তার সবকটাই তো ওরা প্রক্রিয়াজাতকরণ, বাজারজাত-করণ এবং নিয়ন্ত্রন করছে।
আমাদের ভালো ভালো কাজ এবং হাড়-ভাঙ্গা খাটুনী বিনিময়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে কেনা বস্তুর লভ্যাংশ ওইসব শয়তান এবং তার সাথীদের ফান্ডে প্রতিনিয়ত জমা হচ্ছে। আর ওইসব অর্থ সর্বদা চক্রাকারে আবার আমাদেরই ভাই-বোন, সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব আর্থাৎ সবাইকে মন্দের দিকে আহ্বান জানানোর কাজে ব্যাবহৃত করা হচ্ছে। ঐসব টাকা তাদের পছন্দসই খাতগুলোতে বিনিয়োগ করে আমোদ-ফূর্তিতে ওরা হইহুল্লোড় দিচ্ছে।
আর জীবন ধারণের ওই উপকরণ গুলোর উপর আমাদের কতৃত্ব ক্রমাগত হাতছাড়া হওয়ায় আমরাও ক্রমাগত দরিদ্র থেকে দরদ্রতর হচ্ছি। আর যারা গরিব ছিল তাদের সন্তান-সন্ততিরা দিন দিন আরো গরিব হচ্ছে কারণ তারা আকাশ-বাতাস-জমিন-জল এগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জীবন উপকরণ গুলোতে হস্তক্ষেপ করতে পারছে না। তা না হয় একবার বুঝতে চেষ্টা।
অক্সফাম এর রিপোর্ট অনুযায়ী মাত্র ৮৫ জন লোক এই বিশ্বের অর্ধেক জনগোষ্ঠির সমান সম্পদ হস্তগত করে রেখেছে্। তাদের সম্পদ প্রতিদিন ৬৬৭,০০,০০০. ডলার (৳৫৩৪,৪০,০০০,০০০.) করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ওইসব বিলিয়নিয়াররা যদি তাদের জমিয়ে রাখা সম্পদের উপর ২.৫% হারে কর দিত তবে বিশ্বে সকল জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থের যে ফান্ড প্রয়োজন ছিল তার ঘাটতি মেটানো সম্ভব ছিল্।
ওইসব ধন-সম্পদের উপর ভর করে শয়তান মানব সম্প্রদায়কে আজ নিদারুণভাবে প্রতারিত করছে।
শাসক-শোষক শ্রেণী, শয়তান শ্রেণী, প্রতারক শ্রেণী, প্ররোচনা এবং প্রচারনা দান কারী শ্রেণী সবাই মিলে আজ মানব সম্প্রদায়ের হাত-পা বলির পাঠার মত আষ্টে-পৃষ্টে বেধেঁ ফেলেছে। ওরা যাকে ইচ্ছা, যখন ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা, জবাই করছে। আমরা শুধু নির্বোদের মত তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় দেখছিনা অথবা শুধু ফুসফাস করেই কান্ত হচ্ছি।
আমরা যখন অর্থকষ্টে কিংবা অভাব-অনটনে পরি ওরা আমাদের জন্য তখন অবৈধ পথগুলোকে উম্মোক্ত করে দেয়।
নারীরা অর্থকষ্টে পড়লে ওরা তাদেরকে পতিতা বৃত্তির দিকে ঠেলে দেয়। বেশি দুশ্চিন্তিত হলেও কোন সমস্যা নেই ; ওরা এর জন্য মাদক সরবরাহের ব্যাবস্থা করে রেখেছে।
মানবতা এবং মানব সম্প্রদায় দুটিই আজ ওদের কাছে জিম্মি। ওরা তাদের মতাদর্শ, অসৎ প্ররোচনা এবং প্রচারণা, এবং সত্যের বিরূধিতায় ক্রমাগত খবর পরিবেশন করছে, এর স্বপক্ষে ম্যাগাজিন বের হচ্ছে, বই ছাপাচ্ছে, সাক্ষাৎকার নিচ্ছে, প্রমাণ্যচিত্র তৈরি করছে, সিনেমা আর নাট্যচিত্র পরিবেশন করছে।
তাই সমাজ আজ আমাদেরকে আর সহযোগিতা করতে প্রস্তুত হচ্ছে না। ওরা এমন এক সংস্কৃতির আবির্ভাব ঘটিয়েছে যেখানে উপভোগই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। ওরা আজ মুছে ফেলেছে ন্যায়-অন্যায় কিংবা বৈধ-অবৈধতার মানদন্ড। অবৈধ যখন বৈধ, ন্যায় যখন অন্যায়, সত্য যখন অসত্য মিথ্যা যখন আচ্ছন্ন করে ফেলেছে গোটা পৃথিবী তখন আপনি নিশ্চিতভাবেই ধরে নিতে পারেন জীবন আমাদের অনিশ্চিতার দোলাচলে তাদেরই কালো থাবার ভয়ংকর গ্রাসে বিলিন হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। তাই জেগে উঠার দাবীটা আজ শুধু আমাদের জন্য নয় এটা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে আধুনিক দাসত্ব থেকে সুরক্ষার জন্যও জরুরী হয়ে পড়েছে।আর আন্দোলনটা হতে হবে পৃথিবী এবং এর অধিবাসীদেরকে শয়তান এবং শয়তানদের শাসন ব্যাবস্থা এবং শৃংখল থেকে মুক্ত করার।
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১১২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন