বদর যুদ্ধ আক্রমণাত্মক নাকি আত্মরক্ষা মূলক?

লিখেছেন লিখেছেন দিগন্তের সূর্য ২৪ মে, ২০১৭, ০৫:২৩:২৯ বিকাল

বলার অপেক্ষা রাখে না, মুসলিমদের নিকট বদর যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তার তাৎপর্য বিচার বিকৃতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। বিকৃত বিচারের মূলে রয়েছে রাজনৈতিক ধান্দা। এটা বললে বেশি বলা হবে না যে, ইসলামের ইতিহাস আমাদের দেশে পড়ানো হয় মূলত অমুসলিমদের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে। সহজ কথায় সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তির চিন্তার আলোকেই আমাদের ইসলামের ইতিহাস পড়ানো হয়।

বর্তমানে এখানে ঔপনিবেশিক শক্তি নাই কিন্তু তাদের চিন্তাধারা আমাদের মজ্জায় রয়ে গেছে। সাথে তো পশ্চিমা চিন্তাধারা আমাদের সেকুলার বন্ধুদের লোপকূপ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে, আমাদের এখানে যারা ইসলামের ইতিহাস রচনার চেষ্টা করেছেন তা ঔপনিবেশিক ও পশ্চিমা চিন্তার আলোকে। কষ্ট তখনই হয়, যখন দেখি ইসলামপন্থী কিছু পরিচিত মুখ তাদের কাতারে শামিল হয়েছেন বা কেউ কেউ হওয়ার চেষ্টা করছেন!

বদর যুদ্ধের ইতিহাস তাৎপর্য বিচারের ক্ষেত্রেও রয়েছে পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি। সরলতার সাথে প্রচার করা হয়েছে যে, বদর যুদ্ধ ছিলো মুসলিমদের আত্মরক্ষার যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধে পরাজিত হলে ইসলাম চিরদের জন্য ইতিহাসের গর্ভে বিলিন হয়ে যেত!! আর মুসলিমরাও ঐতিহাসিকদের এইসব কথা বিশ্বাস করে চলেছে। আর এখনকার অবস্থা তো আরো করুন, কারবারী ও দরবারী মোল্লারা দেদারসে প্রচার করে চলেছে যে, ইসলামে আক্রমণাত্মক যুদ্ধের কোন স্থান নেই, ইসলাম তখনই যুদ্ধের অনুমতি দেয়, যদি ইসলাম আক্রান্ত হয়! নাউযুবিল্লাহ। ইসলাম যদি আক্রান্ত হয়! এই কারবারী ও দরবারী মোল্লারা মুসলিম আক্রান্ত হওয়ার কথা বলছে না! বলছে শুধু ইসলাম আক্রান্ত হওয়ার কথা! লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ।

ইতিহাস চর্চা সহজ নয়। চৌকষ পর্যবেক্ষণ শক্তি না থাকলে ইতিহাস চর্চা করতে গিয়ে ভুল পথে পরিচালিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। একই ব্যক্তি, প্রেক্ষিত, কিন্তু ইতিহাসবিদরা পরস্পর বিপরীত আলোচনা করেছেন! এখানেই আপনার বিপদ। ইসলামের ইতিহাস অধ্যয়ন করতে গিয়ে সাধারণ পড়ুয়াদের ব্যাপারটি মাথায় রাখা ফরয। বদর যুদ্ধের ব্যাপারটিও এর ব্যতিক্রম নয়। বদর যুদ্ধের আলোচনায় দেখবেন অনেকে আপনার বিশ্বাসকে টলিয়ে দিবে। যেমন আপনারা জানেন, বদর যুদ্ধে মুসলিমরা পরাজিত হলে ইসলাম পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহৃ হয়ে যেত! আপনাকে কেন এটা গিলানো হচ্ছে যে, মুসলিমরা হেরে গেলে ইসলামও হারিয়ে যেত?

বদর যুদ্ধ নিয়ে সব চাইতে বড় যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে তা হচ্ছে এই যুদ্ধটি মুসলিমদের অনিচ্ছায় সংঘটিত হয়েছিলো। একান্ত বাধ্য হয়েই তারা নিজেদের আত্মরক্ষার তাগিদে এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলো। অথচ এই বয়ান ডাহা মিথ্যা। বরং উল্টোটাই সত্য। আবু সুফিয়ানের কাফেলাকে আক্রমণ করার জন্য মুসলিমরাই সর্বপ্রথম মদীনা থেকে বের হয়েছিলো। সর্তক আবু সুফিয়ান এই সংবাদ পেয়ে মক্কায় সাহায্য চেয়ে বার্তাবাহক প্রেরণ করে। এরপরই মক্কার মুর্খরা যুদ্ধের আড়ম্বরপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে বদর প্রান্তরে এসে জমায়েত হয়। কিন্তু যেভাবেই হোক, আবু সুফিয়ান রাস্তা পরিবর্তন করে নিরাপদে মক্কার দিতে এগুতে থাকে এবং আবু জেহেলকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, তার কাফেলা নিরাপদে মক্কার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সংবাদ প্রাপ্ত হওয়ার পরও আবু জেহেল বদর প্রান্তরে আরো তিন দিন অবস্থান গ্রহণের সিন্ধান্ত নেন, যাতে মুসলিমরা বুঝতে পারে কত শান শওকতের সাথে কুরাইশরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলো। আবু জেহেলের উদ্দেশ্য ছিলো, মুসলিমদের অন্তরে ভীত সৃষ্টি করা। আক্রমণ করা তার উদ্দেশ্য ছিলো না। কিন্তু মহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাচ্ছিলেন যুদ্ধ। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধেরই সিন্ধান্ত হয়েছিলো।

বদর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করলে এটা স্পষ্ট হবে যে, এটা ছিলো মুসলিমদের পক্ষ থেকে আক্রমণাত্মক একটি যুদ্ধ। তবে, আরো পূর্বে যদি ফিরে যেতে চান, যেমন মক্কায় মুসলিমদের উপর নির্মম নিপীড়ন, দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করা ইত্যাদি তাহলে আপনারা বদর যুদ্ধকে একটি প্রতিশোধমূলক যুদ্ধ বললেও বলতে পারেন কিন্তু কিছুতেই এই দাবি করা সহী হবে না যে, এটা ছিলো মুসলিমদের আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ।

ইসলাম এসেছে পৃথিবীর মানুষকে মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে। যেখানে মানুষেরা মানুষের দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ সেখানেই ইসলামের বীর সেনানীদের আগমন। ইতিহাসে আমরা এমনটাই দেখতে পায়।

ফেসবুকে আমি

বিষয়: বিবিধ

১৩৫১ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

383113
২৪ মে ২০১৭ সন্ধ্যা ০৬:২৬
শফিউর রহমান লিখেছেন : প্রেক্ষাপটটা ভালভাবে সামনে রাখার দরকার আছে। বিশেষ করে আবু সুফিয়ানের কাফেলাকে আক্রমণ করার ঘটনাটা বিস্তারিতভাবে সামনে থাকা দরকার। মুসলমানরা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে বদর যুদ্ধ বাঁধিয়েছিল - ব্যাপারটি একেবারেই এরকম নয়।

আপনার কথা ঠিক যে, ইসলাম আক্রান্ত হলে বা হবার সম্ভাবনা তৈরী হলে তবেই যুদ্ধে অবতির্ন হতে হবে বা হয়েছিলেন এমন ধরাবাঁধা নিয়ম নাই। ইসলাম এসেছে আল্লাহর প্রতিনিধি (খলিফা) হয়ে দুনিয়াতে রাজ করতে - দুনিয়ার রাজা বা সম্রাটদের অনুগত থাকতে নয়। কিন্তু আমরা যারা মুসলমান তাদের অধিকাংশই তা ভুলে গেছি। আর যারা ইসলামের এই বেসিক দর্শনকে বুঝতে পারে তার আলোকে কাজ করতে সচেষ্ট হয়েছে বা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এমনকি মুসলমান শাসক থেকে শুরু করে মুসলমান জনগোষ্ঠীও। এটাই আমাদের সবচাইতে বড় দূর্ভাগ্য।
383116
২৪ মে ২০১৭ রাত ১১:৫৩
স্বপন২ লিখেছেন : ভালো লাগলো, অনেক ধন্যবাদ
383117
২৪ মে ২০১৭ রাত ১১:৫৭
মনসুর আহামেদ লিখেছেন :
অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File