ইসলামে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে পিটানোর অধিকার সম্পর্কে কিছু বয়ান

লিখেছেন লিখেছেন দিগন্তের সূর্য ২৬ জুন, ২০১৬, ১২:৪৫:০০ রাত



সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের ইসলামি নজরিয়াত কাউন্সিল কর্তৃক এক খসরা আইনে সুপারিশ করা হয়েছে যে “কোনো স্ত্রী স্বামীর কথা না শুনলে তাকে `হালকা মার` দেয়া যেতে পারে।” এই খসরা আইনের প্রতিবাদ অনেকেই করেছেন বিশেষত নাস্তিকরা। নব্য একজন নাস্তিকও ইউটিউবে এই ব্যাপারে কড়া বক্তব্য দিয়েছে। আমি এখানে তাদের বক্তব্যকে খন্ডন করছি না। আমি আমার চিন্তার প্রকাশ ঘটাচ্ছি মাত্র । বাকিটুকু পাঠকের বুঝের উপর নির্ভর করবে।

নারী পুরুষ সমান

===========

নারী এবং পুরুষ সমান, সমান অধিকার এবং সমান মর্যাদার অধিকারী এগুলি নাস্তিক, সেকুলার এবং পুঁজিবাদীদের ধোকাবাজি বয়ান মাত্র। এই বয়ানগুলিতে সত্যের লেশমাত্র নেই। পৃথিবীর চালচিত্র, সেকুলার রাষ্ট্র, পুঁজিবাদী রাষ্ট্র, নাস্তিক্যবাদী রাষ্ট্র সমূহের দিকে তাকালে প্রত্যেক বোধসম্পন্ন মানুষ এই সত্যটি উপলব্ধি করতে পারবেন।

কিন্তু, ইসলাম এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। নারী পুরুষের অধিকাংশ সংরক্ষণে ইসলাম এমন কিছু নীতি প্রণয়ন করেছে যা বোধশক্তিতে গ্রহণযোগ্য। এখানে ধোঁকাবাজি নেই, চাতুরতা নেই। বাস্তবতাই মূখ্য।

মা ও প্রাপ্ত বয়স্ক ছেল

============

খেয়াল করুন! আমাদের প্রচলিত আইনগুলিতে সাধারণত আঠারো বছরের একজন ব্যক্তি স্বয়ংসম্পন্ন হয়ে থাকে। যারা সবদিক দিয়ে নারী এবং পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলে থাকেন তারাও নিশ্চয়ই এটা চাইবেন না যে, আঠারো বছরের একজন ছেলেকে যদি মা শারিরিক আঘাত করে তাহলে সেই ছেলেটিও তার বিয়াল্লিশ বছরের মাকে আঘাত শারিরিক আঘাত করবে!

বিবেক কিছুতেই সায় দিচ্ছে না যে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে সমান অধিকারের দাবি নিয়ে নিজের মাকে শারিরিক আঘাত করবে।

এখানে সমান অধিকার টিকে না। এখানে যা টিকে তাহলো মযর্দা। মা তার ছেলেকে অন্যায়ভাবে শারিরিক আঘাত করতে পারে যদিও কাজটি নিন্দনীয় কিন্তু ছেলে কিছুতেই মাকে আঘাত করতে পারে না। এখানে মায়ের মর্যদায় প্রাধান্য পেয়েছে। এটা বিবেকের কাছাকাছি। ঠিক ইসলামেরও একই বিধান। মায়ের অন্যায়ের কারণে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মাকে শারিরিক আঘাত তো দূরের কথা, মানসিক আঘাত করারও অধিকার রাখে না।

অতএব এখানে সমান অধিকারটি প্রয়োজ্য নয়। মর্যাদাই মূখ্য। ছেলে এবং মায়ের ক্ষেত্রে সমান অধিকার চলতে পারে না। এখানে মা অনন্য এক অধিকারের অধিকারী। মা কর্তৃত্বের অধিকারী। ছেলে আনুগত্যশীল।

স্বামী ও স্ত্রী

======

পৃথিবীর বাস্তব অবস্থা খেয়াল করুন। পৃথিবীর সিংহভাগ বিবাহিত নারী তার স্বামীর উপর নির্ভরশীল। অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত এটা চলে আসছে। একজন বিহাহিত নারী কেন তার স্বামীর উপর নির্ভরশীল তার যৌক্তিক এবং প্রাকৃতিক কারণ রয়েছে। এটাকে অস্বীকার করার উপায় নেই।

বাহ্যিক শারিরিক গঠন এবং মস্তিকের অভ্যন্তরীন গঠনের দিক দিয়ে নারী পুরুষের প্রার্থক্য রয়েছে। পেশী শক্তির দিক থেকে পুরুষই শক্তিশালী। নারীকে গর্ভধারণ করতে হয়। এইসব ব্যাপারগুলি সার্বজনীন। কেউ অস্বিকার করলেই এগুলিকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।

অভিজ্ঞদের দৃষ্টিতে নারীর বাহ্যিক শারিরিক গঠন এবং তার গর্বধারণ; এই দুটি বিষয়ের কারণেই একজন নারীকে তার স্বামীর উপর নির্ভরশীল হতে হয়। এইদিক দিয়ে অর্থনৈতিক ব্যাপ্যারটা গৌণ। কিন্তু অতীত এবং বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করলে এটাও স্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, পৃথিবীর অধিকাংশই বিবাহিত নারী তার স্বামীর অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল। এটাকে যদি আপনি পুরুষতান্ত্রিকতার ষড়যন্ত্র বলেন তো বলতে পারেন কিন্তু ষড়যন্ত্র হোক আর নাই হোক এটাই বাস্তব।

পুরুষতান্ত্রিকতার ষড়যন্ত্র ছাড়াই নারীর বাহ্যিক গঠন ও তার গর্ভধারণ পদ্ধতি এবং ষড়যন্ত্রসহ বা ষড়যন্ত্র ছাড়া বিবাহিত নারীর তার স্বামীর অর্থের উপর নির্ভরশীলতা বিবাহিত পুরুষকে তার স্ত্রীর উপর স্বাভাবিক কর্তৃত্ব দান করেছে। এটাই বাস্তব। এটা বোধশক্তির কাছাকাছি এবং অতীত বর্তমানের চালচিত্র এই সত্যের প্রমাণ বহন করছে।

উক্ত কারণগুলি ছাড়াও আরও কিছু কারণে ইসলাম বিবাহিতদের ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষে স্বামীর কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ‘শর্তসাপেক্ষ’ শব্দদ্বয়ের উপর খেয়াল করবেন কিন্তু।


স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে পিটানো

===============

কিছু যৌক্তিক কারণে ইসলাম স্বামীকে তার স্ত্রীর উপর কর্তত্ব দিয়েছে যেমন কিছু যৌক্তিক কারণে মাকে তার সন্তানের উপর কর্তৃত্ব দিয়েছে। এই কর্তৃত্বের ব্যাপারটি বোধশক্তির কাছাকাছি। ঠিক এই কর্তৃত্বের কারণেই স্ত্রীর অন্যায়ের প্রেক্ষিতে কিছু শর্তসাপেক্ষে ইসলাম তার স্ত্রীকে হাকলকা প্রহার করতে অনুমতি দেয়। কুরআন এবং সুন্নাহর আলোকে এই ‘হালকা’ শব্দটিকে মেনে নেওয়া ওয়াজিব। যত ইচ্ছে এবং যেভাবে ইচ্ছে স্ত্রীকে শারিরিকভাবে আঘাত করা হারাম।

কর্তৃত্ব শব্দটির ব্যাপারে ইসলামের ব্যাপারগুলি লক্ষ্য করুন। মা যদিও তার ছেলেকে অন্যায়ভাবে প্রহার করে তবুও ছেলে কোনভাবেই তার মাকে কষ্ট দিতে পারবে না এবং মাকে ত্যাগ করতে পারবে না। সর্বাবস্থায় মায়ের খেদমত করা সন্তানের জন্য ওয়াজিব। মায়ের শত অত্যাচারেও সন্তান মায়ের যত্ম নিতে বাধ্য। কিন্ত ঠিক একই কর্তৃত্বের দাবিদার হওয়া সত্বেও একজন স্বামী তার স্ত্রীকে অন্যায়ভাবে প্রহার করার অধিকার রাখেন না। স্বামী যদি এমনটা করে তাহলে স্ত্রী তার স্বামী থেকে পৃথক হয়ে যেতে পারবে।

যারা বিরোধীতা করছেন

===============

সমান অধিকারের দোহায় দিয়ে স্বামী কর্তৃক শর্তসাপেক্ষে স্ত্রীকে হালকা প্রহারের বিরোধীতা যারা করছেন তাদের উচিত হবে ঐ সমান অধিকারের দোহায় দিয়ে ছেলে কর্তৃক নিজ মাকে আঘাত করতে অনুমতি দেয়া যখন মা তার ছেলে আঘাত করে।

মূলত অধিকার সমান

=============

ইসালামিক দৃষ্টিকোণ থেকে অভিভাবকত্ব এবং মর্যাদার ক্ষেত্রে একজন নারী তার সন্তানদের উপর যে কর্তৃত্ব করতে পারে একজন স্বামী তার স্ত্রীর উপর সেই কতৃত্ব করতে পারে না।

আঘাত বনাম পাল্টা আঘাতের ভারসাম্য

========================

স্বাভাবিকভাবে আমরা শারিরিক আঘাতের বিরোধতিা করবো। শারিরিক আঘাতের বিরোধিতা স্বত্বেও যদি মা তার প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানকে আঘাত করে তাহলে এহেন অবস্থায়ও সন্তানের অধিকার নেই সে তার মাকে আঘাত করার। এখানে মর্যাদা এবং অভিভাবকত্ব গুরুত্বপূর্ণ।

স্বামী এবং স্ত্রীর বেলায় একই কথা প্রযোজ্য। সমান অধিকারের দোহায় দিয়ে সবক্ষেত্রে পাল্টা আঘাতের সুযোগ দেয়া হলে মানবিক যে মর্যাদা এবং অভিভাবত্বের কথা আমরা বলি তার ভারসাম্য ক্ষুন্ন হতে বাধ্য। অধিকার বনাম মর্যাদা এবং অভিভাবকত্বে মধ্যে একটা প্রার্থক্য রেখা টানতেই হবে। নচেৎ মানবিকতা বলে কিছু থাকে না।

বিষয়: বিবিধ

১৫৯৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

373150
২৬ জুন ২০১৬ রাত ০৪:৩১
শেখের পোলা লিখেছেন : আপনার সাথে সহমত।
১৫ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:৫১
314349
দিগন্তের সূর্য লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাই।
373151
২৬ জুন ২০১৬ রাত ০৪:৪১
নাবিক লিখেছেন : আল্লাহ সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুক, অনেক ধন্যবাদ। Rose
১৫ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:৫১
314350
দিগন্তের সূর্য লিখেছেন : আমিন। আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
373157
২৬ জুন ২০১৬ সকাল ০৫:৪৭
কুয়েত থেকে লিখেছেন : লেখাটি অনেক ভালো লাগলো নারী এবং পুরুষ সমান, সমান অধিকার এবং সমান মর্যাদার অধিকারী এগুলি নাস্তিক, সেকুলার এবং পুঁজিবাদীদের ধোকাবাজি মাত্র। এতে সত্যের লেশমাত্র নেই অনেক ধন্যবাদ
১৫ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:৫২
314351
দিগন্তের সূর্য লিখেছেন : পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই।
373166
২৬ জুন ২০১৬ দুপুর ১২:৫২
হতভাগা লিখেছেন : নারীরা আছে মহা মজায় ।

শরিয়ত মোতাবেক তাদের পাওয়া ঠিকই পাচ্ছে , আবার নিজেদের যে কর্তব্য তা পালন না করলেও সমস্যা নেই । কাব যাব করলে তার এক কথাতেই স্বামীকে তার গুষ্টিশুদ্ধ জেলে ঢুকিয়ে দেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।

আল্লাহর আইনের বিপরীতে মনুষ্য আইনের আশ্রয় নিয়ে তারা ভালই রাজ করতেছে সংসার ও পারিবারিক জীবনে ।
এতে পারিবারিক ও সামাজিক হারমনি বিনষ্ট হয়ে গেছে ।
১৫ নভেম্বর ২০১৬ সকাল ১০:৫২
314352
দিগন্তের সূর্য লিখেছেন : মহান আল্লাহ রক্ষা করুন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File