ড. আতিউর রহমান বনাম মুসলিম তরুন সমাজের মানস সংকট
লিখেছেন লিখেছেন দিগন্তের সূর্য ১৯ মার্চ, ২০১৬, ০১:৪০:১৩ দুপুর
কেহ কেহ তাঁর বাল্যকালের আবেগময় ঘটনা পড়ে তাকে হিরো জ্ঞান করছে!! যেন তার বাল্যকালের ঘটনাই সততার মানদন্ড!!! আসলে বাংলাদেশীরা কাকে আদর্শ হিসেবে নিবে এই নিয়ে তারা অস্তিত্বের সংকটে ভুগে। যখন তখন যাকে তাকে তারা আদর্শ মনে করে। একটু আবেগী কিছু পেলেই হলো! আসলে আবেগই বাঙালীর হাতিয়ার!
কেহ কেহ রিজার্ভ অর্থ লোপাট হওয়ার কারনে তাকে ভিলেন মনে করছে!! মারাত্মক অন্যায় যে চিন্তার প্রকাশ তারা ঘটাচ্ছে তাতে আমি রীতিমত আতংকিত বোধ করছি। তাদের অন্যায় চিন্তাটি হলো- ড. আতিউর রহমানকে ‘রাখাল বালক’ বলে তাচ্ছিল্য করা। তাদের আলোচনা পড়ে মনে হয়েছে রাখাল বালকের যেন গভর্নর হওয়ার কোন অধিকার নাই। এটা যেন কবিরাহ গুনাহের মত!! কী প্রান্তিক চিন্তা!
মূলকথা হলো, ড. আতিউর রহমানের বাল্যকালের আবেগময় ইতিহাস, রবীন্দ্রনাথের প্রতি তাঁর ভক্তি, তার ব্যক্তিগত ভালোমানুষী, তিনি কতটা মুজিব ভক্ত ইত্যাদির আলোচনা খুবই অপ্রাসঙ্গিক যখন আমরা তার পেশাদারিত্ব নিয়ে আলোচনা করবো।
তাই আমরা নির্মোহ বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছি। তার আগে বলে নিই, আমরা চরমভাবে সেকুলারিজম এবং ক্যাপিটলিজমের বিরোধী। তাই হয়ত পুরো নির্মোহ থাকা সম্ভব নাও হতে পারে।
==============
মধ্যমপন্থারা একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করছ-
ড. আতিউর রহমান একজন সজ্জন মানুষ এই ব্যাপারে কারও দ্বিমত নাই। তার বাল্যকাল ছিলো আমাদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক তাতেও কোন সন্দেহ নাই।
কিন্তু আমরা যদি তাঁর বাল্যকালকেই তার সততার মানদন্ড মনে করি তাহলে বিষয়টি কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখা উচিত। আমাদের মনে রাখা উচিত, আমরা ব্যক্তি হিসেবে তার সমালোচনা করছি না, আমাদের টার্গেট মূলত তার গভর্নর সময়কালীন সফলতা- ব্যর্থতার বিষয়টি।
ব্যাংকিং থাতে নজীরবিহীন বিপর্যয় বাংলাদেশীরা দেখেছে কিন্তু গভর্নরের কোন কার্যকর ভূমিকা জাতি দেখে নি। অথচ বলিষ্ট ভূমিকা নেয়ার অধিকার তাঁর ছিলো। গতবছর একজন ইন্ডিয়ান চোরকেও তিনি ছেড়ে দিয়েছেন কোন দৃশ্যমান শাস্তির মুখোমুখি করা ছাড়াই।
মূলত ড. আতিউর রহমান ছিলেন কঠিনভাবে দলীয় একজন গভর্নর, দলের বাইরে তিনি কোন সিন্ধান্ত নিতে চান নি অথবা নেন নি কিংবা তাকে নিতে দেওয়া হয় নি।
আসুন আমরা দেখি পরাজিত ড. আতিউর রহমানের কিছু কর্মকান্ড
১। তিনি স্ব-ইচ্ছায় পদত্যাগ করেন নাই। তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। এখানে খুব একটা সততা আমরা দেখি নাই।
২। তার আমলে সরকারী ব্যাংগুলিতে যে টাকা লুটপাট হয়েছে তা বিরল, এর দায় ভার একজন গভর্নর এড়িয়ে যেতে পারেন না।
৩। গতবছর বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা চুরি করে ধরা পরেছিল স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার কর্মকর্তা দীপক চন্দ্র দাশ। অবাক ব্যাপার হলো দীপক সাহেবকে কোন শাস্তি দেয়া হই নি। কেন? গর্ভনর কি দায় এড়াতে পারেন?
৪। বাংলাদেশে ব্যাংকের টাকা জনগনের টাকা, তিনি কোন যুক্তিবলে এই ঘটনা চেপে থাকলেন? কেন এই তথ্য আগে বিদেশী পত্রিকা থেকে পেতে হবে?
৫) তিনি বলেছেন “ ‘আমি টাকা উদ্ধারের আশায় বিষয়টি গোপন রেখেছিলাম, প্রকাশিত হলে এই কিছু টাকাও উদ্ধার করা যেত যেত না।” অথচ সারাদুনিয়া জানে ১০০ মিলিয়ন ডলারের ১৯ মিলিয়ন ডলার রক্ষা পেয়েছে হ্যাকারদের বানান ভুলের কারণে। আর তিনি তখনও কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করছেন! এটা কোন ধরণের সততার মধ্যে পড়ে?
৬) তার আমলে সরকারী বাংগুলিতে হাজার হাজার কোটি টাকার গল্প বহুল প্রচারিত দৈনিকগুলিতে আলোচিত হয়েছে কিন্তু আমাদের গভর্নর কার্যকর কোন ভূমিকা নেন নি।
৭) বাংলাদেশ ব্যাংকে যে রিজার্ভ তার কৃতিত্ব নিতে তিনি চেষ্টা করছেন অথচ এর 90 ভাগ কৃত্বিত্ব শ্রমিকদের এবং সরকারি পলেসির। তো তার কৃতিত্ব নেয়ার চেষ্টা কোন সততার মধ্যে পড়ে?
আছেন কোন উত্তর প্রদানকারী, যিনি আমাদের প্রশ্নগুলির উত্তর দিবেন?
কঠিন বাস্তব হলো ড. আতিউর রহমান ভীরু ব্যক্তিত্বের অধিকারী। পদমর্যাদা অথবা খ্যাতির আকাঙ্খাকা তাকে ভীরু ব্যক্তিতে পরিণত করেছিলো।
আমার কাছে সততার মাফ কাঠি মাত্র দুটি
ক) মুসলিম হিসেবে আল্লাহর কাছে দায়বব্ধতা
খ) দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে ব্যক্তির আমানতদারিতা
আপাতত দুটি ক্ষেত্রেই ড. আতিউর রহমান ব্যর্থ।
এবার আরো একটু গভীরে-
ড. আতিউর রহমান কে এবং কী তার আদর্শিক পরিচয়? এই প্রশ্নগুলি মুসলিম তরুনদের মনে আসা খুবই জরুরী ছিলো। কিন্তু না- তারা ব্যস্ত হয়ে পড়লো তার বাল্যকাল নিয়ে। তাকে বানিয়ে নিলো হিরো হিসেবে, আদর্শ হিসেবে!!
মুসলিম তরুণদের আদর্শিক সংকট প্রকটভাবে দৃশ্যমান। আবেগপূর্ণ চিন্তা এবং ঘৃণা থেকে উৎসারিত প্রতিশোধ পরায়ণ চিন্তা মুসলিম তরুণদের চরমভাবে বিভ্রান্তিতে নিক্ষেপ করেছে। যখন যেটা পড়ে, যেটা শুনে এবং দেখে এটাকেই তারা সত্যের উৎস মনে করে অর্থাৎ তাদের কাছে প্রত্যক্ষ চিন্তাই সবকিছু যেখান থেকে আসে চরম আবেগ অথবা ঘৃণা।
সেকুলারিজম এবং ক্যাপিটলিজমের কট্টর অনুসারী ড. আতিউর রহমানের আবেগপূর্ণ বক্তব্য দেখে উদার মুসলিমরা তাঁর প্রতি সহানূভূতি অনুভব করেছে। অন্যদিকে তাঁর বিপরীত পক্ষরা সবকিছুকে মেকি মনে করে তাঁকে ‘রাখাল বালক’ হিসেবে কটাক্ষ করেছে। কিন্তু এই দুইপক্ষের কেউই তার আদর্শিক ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেয় নি।
মুসলিম তরুণরা তার আদর্শিক ব্যাপারটাকে গরুত্ব না দেয়াতে আমরা যারপরনাই বিস্মিত! প্রত্যক্ষ চিন্তা এবং পূর্ণ ধারণাগত চিন্তা কতটা ক্ষতিকর; ড. আতিউর রহমান আমাদেরকে নতুন করে জানিয়ে দিয়ে গেলেন।
বিষয়: বিবিধ
১৩৮১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ক) মুসলিম হিসেবে আল্লাহর কাছে দায়বব্ধতা
খ) দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে ব্যক্তির আমানতদারিতা
আপাতত দুটি ক্ষেত্রেই ড. আতিউর রহমান ব্যর্থ।
যাদের শেকড় চেতনার খুঁটিতে আঁটকে গেছে তাদের কাছে ইসলামী মূল্যবোধ আশাকরাই হাস্যকর৷ বতমান অবস্থায় যা হবার তাই হয়েছে৷ সঠিক তথ্য একমাত্র আল্লাহই জানেন৷ ধন্যবাদ৷
একটা বিষয়ে আপনার সাথে শতভাগ একমত। আতাউর ভালো ছিলো এটা যেমন সত্য তার চেয়ে বড় সত্য সে ছিলো প্রচণ্ড ভীরু। আর ভীরুরা সবসময় তাদের সততা ধরে রাখতে পারেনা
মন্তব্য করতে লগইন করুন