চেতনা তুমি কার?
লিখেছেন লিখেছেন এন্টি পয়জন ২১ মার্চ, ২০১৬, ০৪:০০:৫৯ বিকাল
আমরা কেমন আজব প্রকৃতির মানুষ ! প্রায় সবাই কোন না কোন ক্ষেত্রে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড ধারণ করি। যেমন তাসকিন নিষিদ্ধ হল বলে কত বেশী কষ্ট পাচ্ছি। এটা শ্রেফ দেশপ্রেমের জন্যই । দেশপ্রেম একটি মহৎ গুণ। এটা ভাল মানুষের লক্ষন। ভাল মানুষ নিজের দেশকে ভালবাসবে, নিজের ভাষাকে ভালবাসবে, নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে ভালবাসবে, নিজের বংশ জাতিকে ভালবাসবে, নিজের ধর্মকে ভালবাসবে। ধর্ম পালন না করলেও অন্তত নিজের বাপ দাদার ধর্ম হিসেবে এর সুরক্ষায় সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে।
কিন্তু কি আশ্চর্য । মতিঝিল মডেল হাই স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধ করল এতে আপনি কতটুকু কষ্ট পেয়েছেন? কিভাবে প্রতিবাদ করেছেন?
জুনায়েদ সাদিয়ার সাধারণ ঘটনাটিকে আমরা আমাদের তারণ্যের শক্তি দিয়ে কোন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছি। এমন জুনায়েদের ঘটনা প্রতিদিন পাড়া মহল্লায় অলিতে গলিতে অহরহ ঘটছে।
ঐ হিজাব নিষিদ্ধকারী আওলাদের বিচার দাবীতে কয়টা ইভেন্ট খুলেছি আমরা?
.
অনেকে হয়তো ভাবে খেলার সাথে রাজনীতি, রাজনীতির সাথে ধর্ম, ধর্মের সাথে খেলা ইত্যাদি মেলানো ঠিকনা । কিন্তু এগুলো প্রত্যেকটির সাথে প্রত্যেকটি যে জড়িত তা জ্ঞানীরা ঠিকই জানেন আর বোকারা সময় হলে ঠিকই টের পাবেন এবং পাচ্ছেন।
এইতো সেদিন ফ্রান্সে জঙ্গী হামলায় কিছু মানুষ নিহত হওয়ার পর কতইনা কষ্ট পেয়েছি। সমবেদনা জানিয়ে প্রোফাইল পিকচারে ফ্রান্সের পতাকা লাগিয়েছি। ধর্ম বর্ণ অঞ্চল ভেদাভেদ ভুলে স্রেফ মানবতার চেতনায় জেগে উঠেছি। কিন্তু গত ১৩ তারিখে তুরস্কে জঙ্গীদেরই বোমা হামলায় ৩২ জন নিহত হলেও প্রোফাইল পিকচার তো দূরের কথা তেমন একটা নিউজও পেলাম না। কারণ কি? ফ্রান্সের অমুসলিমদের জীবনের মূল্য তুরস্কের মুসলমানদের তুলনায় বেশী সম্ভবত!
বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার, ব্যাক্তিস্বাধীনতা, নারীস্বাধীনতা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ কতৃক কত বিশাল উদ্যোগ ও কর্মসূচী পালিত হয়। আমরাও তাদের শেখানো বুলিতে কত কত সভা সেমিনার করি। কোন নারী যখন হিজাব পরিধানে বাধাগ্রস্থ হয় তখন কি নারী অধিকার ক্ষুন্ন হয়না? এ ব্যাপারে জাতিসংঘের কর্মসূচী কি? এদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ভূমিকা কি? নাকি শুধু নারীদের খোলামেলা করাটাই নারী অধিকারের মধ্যে পড়ে।
.
এ জাতি একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে (অন্য কোন জাতি ভাষা নিয়ে এতো সিরিয়াস হয় নাই)। আবার এরাই ইংরেজীকে উন্নতির সোপান মনে করে। ইংরেজীতে কথা বলতে পারলে প্রচুর সম্মান ও মূল্যায়ন করে। সন্তানকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ানো সৌভাগ্য মনে করে। হিন্দির অবাধ আগ্রাসনকে হুমকি মনে করে না। ( আসলে সকল ভাষা আল্লাহর সৃষ্টি। কোন ভাষার প্রতি বিরুপ মনোভাব থাকা ঠিকনা।)
.
আসলে আমরা নিজেরাই জানিনা নিজেদের চেতনার স্ট্যান্ডার্ড কি। কখন চেতনা জাগবে আর কখন ঘুমিয়ে থাকবে তা আমাদের কন্ট্রোলে নেই। যখন যে যেদিকে হুযুগ তুলে দিতে পারবেন সেদিকেই চেতনা দৌড়াবে।
মূল সমস্যাটা হচ্ছে আমাদের কোন মৌলিক শিক্ষা নেই। স্বকীয়তা নেই। নিজস্ব স্বত্বা নেই, নির্দিষ্ট কোন স্ট্যান্ডার্ড নেই। বৃটিশদের রেখে যাওয়া কারিকুলামে পড়ি, ভারতীয় টিভি চ্যানেল থেকে সংস্কৃতি শিখি, পাশ্চাত্যের আইনে সংবিধান আইন পরিচালনা করি। ভিক্ষুক যেমন দশ বাড়ির দশ জাতের চাল এক পাতিলে রান্না করে খায়।
এতে অপমান অপদস্ত ছাড়া মর্যাদা লাভের কোন সম্ভাবনা নেই।
.
এ থেকে উত্তরনের পথ হচ্ছে ইসলামী শিক্ষা। এটাই আমাদের মৌলিক শিক্ষা। এটা অর্জন করলে অন্তত সাদা কালোর পার্থক্য করার জ্ঞানটা থাকবে। রক্ষক ভক্ষক চেনার সামর্থ হবে। বন্ধু শত্রু চেনা যাবে।
নিজের শেকড়কে ভুলে গেলে আত্মপরিচয়হীন উদ্ভ্রান্ত ভিক্ষুকের ন্যায় অবস্থা হওয়াটাই স্বাভাবিক।
বিষয়: বিবিধ
১১৬৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সহমত।
এখন এই হাই (স্বামী) ভালো তো, তখন এই হাই খারাপ, ভালো লেগে যায় নতুন কোন হাইকে। বার বণিতা এবং তাদের খদ্দরের মত হইলে কেমতে!
মন্তব্য করতে লগইন করুন