লগি-বৈঠা থেকে চাপাতি, দায়ী বিচারহীনতার সংস্কৃতি

লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ ফিরোজ ২৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:৩২:০৮ রাত



‘২৮ অক্টোবর’ কেবলই একটি তারিখ নয়, মানবতার পরাজয়ের নির্মম এক ইতিহাস। সেদিন হায়েনারা মানুষ রুপ ধারন করে নেমেছিলো পল্টনের রাস্তায়। তাদের হিংস্রতা সেদিন হার মানিয়েছিলো ইতিহাসের সমস্ত হিংস্রতাকে। মৃত লাশের উপর উন্মত্ত নৃত্য দেখে সেদিন বাকরুদ্ধ হয়েছিলো পুরো বিশ্ববাসী।

২০০৬ সালের পল্টন ম্যাচাকারের আজ ১০ বছর পূর্ণ হলো। এই নির্মম ইতিহাসকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করছে চাটুকার মিডিয়া। কোনো মিডিয়াতেই এ নিয়ে কোনো প্রতিবেদন চোখে পড়েনি। বিগত দিনগুলোতে লগি বৈঠাধারী সন্ত্রাসীদের পক্ষে দু একটি প্রতিবেদন করলেও, হালে পানি না পেয়ে এখন পুরোপুরিই চেপে যাওয়ার নীতি অবলম্বন করছে তারা। কিন্তু এই ইতিহাসতো হলোকষ্ট বা ১৯৭১ নয়, এটা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যুগের নৃশংসতার ইতিহাস। যার ভুরি ভুরি জ্বলন্ত ফুটেজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সর্বত্র। এমন জ্বলন্ত ইতিহাস চেপে যাওয়া তো এত সহজ নয়।

এই দিনের নৃশংসতার বর্ণনা দিয়ে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। ভিডিও ফুটেজগুলোই প্রমান করে সেদিনকার নৃসংশতার মাত্রা কেমন ছিলো। শেখ হাসিনার নির্দেশ ছিলো সবাই যেনো লগি বৈঠা সাথে করে নিয়ে আসে। লগি বৈঠা দিয়ে নিশ্চই সমাবেশে হাততালি কিংবা ঢোল পিটানো হবে না। লগি বৈঠা দিয়ে কি হয় সেটা নেতা কর্মীরা নেত্রীর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে দেখিয়ে দিয়েছে। নেত্রীকে উপহার দিলো জামাত শিবিরের ১৪ জনের রক্তাক্ত তাজা লাশ।

সেদিন বিরোধী পক্ষ যে কিছুই করেনি তা কিন্তু নয়। তাদের ইট পাটকেলের আঘাতে ছাত্রমৈত্রীর একজনকেও সেদিন জীবন দিতে হয়েছিলো। এই নৃসংশ ঘটনার বিচার আজ পর্যন্ত হয়নি। এই ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছিলো ৫টি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের লগি বৈঠাধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রত্যেকটি মামলা ক্ষমতার দাপটে প্রত্যাহার করা হয়। জামাত নেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলাটিও উচ্চ আদালতের মাধ্যমে স্থগিত করে রাখা হয়েছে।

মামলা প্রত্যাহারের মাধ্যমে লগি বৈঠাধারী ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও বাম দলের সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়া হলো। জানিয়ে দেয়া হলো লগি বৈঠা দিয়ে সাপের পিটিয়ে মানুষ মেরে, তার উপর উন্মত্ত নৃত্য করে তোমরা কোনো অন্যায় করোনি। এভাবেই যাদের হাতে মানবতার নির্মম পরাজয় ঘটলো, সেই তারাই আবার ৪০ বছর আগের মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার করে!! এর চেয়ে তামাশা আর কি হতে পারে?



লগি বৈঠার নৃশংসতা পরবর্তীতে বিবর্তন হলো চাপাতির নৃশংসতায়। বিশ্বজিৎকে কোপানো হলো প্রকাশ্যে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বদৌলতে এই নির্মম দৃশ্যও অবলোকন করলো সবাই। জাতি হলো বাকরুদ্ধ। লগি বৈঠার নৃশংসতার বিচার হলে নিশ্চই একই গ্রুপ কর্তৃক পুনরায় এমন নির্মম দৃশ্য অবলোকন করতে হতো না।

লোক দেখানো বিচার ও পার পাওয়ার ফাঁকফোকর এসব সন্ত্রাসীদেরকে সন্ত্রাসের প্রতি আরো উৎসাহিত করে। এজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে টেন্ডারবাজী চাঁদাবাজি সবখানে সরকার দলীয়দের চাপাতি আর অস্ত্রের ঝনঝনানি এখন নিত্যদিনের দৃশ্য। মায়ের পেটের শিশু পর্যন্ত তাদের সন্ত্রাসের হাত থেকে রেহাই পায়নি। যেই দলের নেত্রী নেতাকর্মীদের অস্ত্রসহ সমাবেশে আসার নির্দেশ দেয়, সেই দলের কর্মীরা সসস্ত্র হবে অস্ত্রবাজি করবে এটাই স্বাভাবিক।

যোগ্য নেত্রীর যোগ্য কর্মীবাহিনীর সর্বশেষ চাপাতি সন্ত্রাস প্রদর্শিত হলো সিলেটে। কলেজ ছাত্রী খাদিজাকে প্রকাশ্যে কোপালো এমসি কলেজের ছাত্রলীগ নেতা বদরুল। পত্রিকায় শিরোনাম হলো বদরুলরা ক্ষমতার চাপাতি



বদরুলদের চাপাতি বদরুল হতে ক্ষমতা যতটা সহায়তা করে ততটাই সহায়তা করে পাচাটা মিডিয়া। এর জ্বলন্ত প্রমান বদরুল নিজেই। প্রথম আলোর প্রতিবেদন মতে, “২০১২ সালের ১৭ জানুয়ারিতেও উত্ত্যক্ত করার সময় স্থানীয় ব্যক্তিরা বদরুলকে ধরে পিটুনি দেন। পরদিন বদরুল তাঁকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন জালালাবাদ থানায়। মারধরকারীদের জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই মামলার এক আসামি প্রথম আলোকে বলেন, উত্ত্যক্ত করার জন্যই যে তাঁকে মারধর করা হয়েছিল, তা সবাই জানত, পুলিশও। তারপরও ২০১২ সালের ৩১ মে ১৪ জনের নামে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ”

২০১২ সালে মিডিয়াগুলোও কিন্তু বদরুলের ইভটিজিংকে গোপন করে জামাত শিবিরের উপর মিথ্যা দোষারোপকেই ফলাও করে প্রচার করে। একজন পাতি সন্ত্রাসী বদরুলকে এভাবেই মিডিয়া ও ন্যায়ভ্রষ্ট বিচার প্রক্রিয়া ভয়ংকর ‘চাপাতি বদরুলে’ পরিণত করে।

২৮ অক্টোবরের লগি বৈঠা ছিলো ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। ক্ষমতায় যাওয়ার পর সেই লগি বৈঠার বিবর্তণ ঘটলো। ক্ষমতার দাপটে এনালগ লগি বৈঠা রুপ নিলো ডিজিটাল চাপাতিতে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি যতদিন চলতে থাকবে ততদিন বদরুলদের সংখ্যা যেমন বাড়বে, তেমনি বাড়বে নৃশংসতার পরিমান ও ধরন, বাড়বে বিশ্বজিৎ, খাদিজাদের করুন উপাখ্যান।

তবে আমরা বিশ্বাস করি, ৪০ বছর আগের অস্পষ্ট ও কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এই দেশে হতে পারলে, জ্বলন্ত প্রমান সম্বলিত লগি বৈঠার নৃশংসতার বিচারও একদিন হবে। মুজাহিদ, শিপন, জসিম, ফয়সালদের মায়েদের অস্রু বিষর্জনের সমাপ্তিও ঘটবেই।

বিষয়: বিবিধ

৪৫৩৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

379210
২৯ অক্টোবর ২০১৬ রাত ০১:০৯
স্বপন২ লিখেছেন : ভালো লাগলো / অনেক ধন্যবাদ /
379215
২৯ অক্টোবর ২০১৬ সকাল ০৭:১৫
আরাফাত হোসাইন লিখেছেন : বিচারপতির বিচার হবে একদিন,ইনশাঅাল্লাহ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File