শিক্ষককে কান ধরে উঠবস: সহমর্মিতার নামে মিথ্যাচার কেনো?
লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ ফিরোজ ১৮ মে, ২০১৬, ১২:৫৯:২৬ দুপুর
শিক্ষকরা জাতি গড়ার কারিগর। সেই শিক্ষকদেরকে যখন অপমানিত অপদস্ত করা হয়, তখন অপমান বোধ করে পুরো জাতি। একজন শিক্ষক যত অন্যায়ই করুক, তাকে জনসম্মুখে এমনকি তার ছাত্রদের সামনে কান ধরে উঠবস করানো খুবই ন্যক্কারজনক কাজ।
ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে কটূক্তি করার অভিযোগে গত শুক্রবার (১৩ মে ২০১৬) নারায়নগঞ্জের পিয়ার সাত্তার লতিফ জামান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শত শত মানুষের সামনে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে উঠবস করতে বাধ্য করেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) এ কে এম সেলিম ওসমান। জনতার উদ্দেশে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইতেও নির্দেশ দেন তিনি। এই ঘনটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যপক আলোচিত হয়ে উঠে।
এখন কথা হলো, ঐ শিক্ষক আসলেই ইসলাম সম্পর্কে তথা আল্লাহ সম্পর্কে কটুক্তি করেছিলেন কিনা? যদিও ইসলাম সম্পর্কে কটুক্তি করলেও এভাবে শাস্তি দেয়ার কোনো মানে হয় না। কারন দেশে আইন আছে, বিচার আছে। তবে এমপি সেলিম ওসমান বলেছেন, জনতার আক্রোশ থেকে শিক্ষককে বাঁচাতেই তিনি এমনটা করেছেন, এছাড়া অলটারনেট কিছু ছিলো না । এমনকি ঐ শিক্ষকও নাকি স্বীকার করেছেন, এমপি সাব তাকে আক্রোশ থেকে বাঁচিয়েছেন।
কথা হলো, ঐ শিক্ষক রিপাত নামে এক ছাত্রকে ব্যপক মারধর করে তাকে ব্যপক আহত করে অজ্ঞান করে পেলেছেন এটা সত্য, কিন্তু যেই ইসলাম কটুক্তির জন্য জনতা ক্ষেপেছিলো, সেটা সত্য কিনা?? এ সম্পর্কে সর্বপ্রথম ৭১ টিভি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে দেখানো হচ্ছে সেই ভুক্তভোগী ছাত্র ও তার মা বলছে শিক্ষক নাকি ইসলাম নিয়ে কটুক্তি করেননি এবং এটা নাকি স্কুল কমিটির চক্রান্ত ছিলো।
( ভিডিও লিংক )
মূলত এই রিপোর্টের পরই দেশব্যাপী সমালোচনা শুরু হয় এবং ঐ শিক্ষকের পক্ষে বিভিন্ন ইভেন্ট, কান ধরা ছবি দিয়ে প্রোফাইল পিক করা, মানবন্ধনসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ শুরু করে একটি পক্ষ। আরেকটি পক্ষ চুপচাপ থাকে , কারন তারা জানে ৭১ টিভি সত্য সংবাদ প্রচার করে না। আরো সত্য জানার প্রয়োজন রয়েছে। (তবে এই পক্ষটি কান ধরে উঠবস করানোর মত শাস্তিরও পক্ষপাতি না) ।
দ্বিতীয় পক্ষের এই আশঙ্কাই সত্য প্রমান হয় ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিও ও বিবিসি বাংলার অনুসন্ধানী নিউজের মাধ্যমে। বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে ঐ স্কুলের দশম শ্রেণীর(এই ক্লাসেই ঘটনাটি ঘটে) এক ছাত্রের বরাত দিয়ে জানায় ঐ শিক্ষক সেদিন আল্লাহকে নিয়ে কটুক্তি করেছেন।
অন্যদিকে একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ভুক্তভোগী ছাত্র রিফাত ও তার মা বলছে ৭১ টিভির সাংবাদিকরা তাদেরকে হুমকী দিয়ে বক্তব্য সংগ্রহ করেছে। এবং তারা বলছে, ঐ শিক্ষক ইসলাম নিয়ে কটুক্তি করেছে। তারা এটাও বলেছে যে, ৭১ টিভি সত্য প্রকাশ করেনি, তাদের কথার পুরো উল্টোটা প্রকাশ করেছে। নিচের ভিডিওতে দেখুন-
( ভিডিও লিংক )
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ঐ ক্লাসের ক্যাপ্টেনসহ অন্যান্য ছাত্ররাও সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত ইসলাম কটুক্তি করেছে। ঐ শিক্ষক বলেছে “তোদের আল্লাহ নাপাক, তোরাও নাপাক” (নাউজুবিল্লাহ) । নিচের ভিডিওতে দেখুন-
( ভিডিও লিংক )
তৃতীয় আরেকটি ভিডিওতেও দেখা যাচ্ছে ভুক্তভোগী ছাত্র রিপাত বলছে, ঐ শিক্ষক আল্লাহকে নিয়ে খুবই খারাপ মন্তব্য করেছেন। নিচের ভিডিওতে দেখুন-
( ভিডিও লিংক )
এখন কথা হলো, ইসলাম নিয়ে কটুক্তি করলেও একজন প্রধান শিক্ষককে এভাবে কান ধরে উঠবস করানোটা ঠিক হয়নি। উচিত ছিলো তাকে আইনের হাতে তুলে দেয়া। এর জন্য প্রতিবাদ করা যেতে পারে। কিন্তু ঐ শিক্ষক ইসলাম নিয়ে কটুক্তি করেননি বলে এমন মিথ্যাচার প্রচারণা কেনো?? এমন মিথ্যাচার প্রচার করে ঐ শিক্ষকের পক্ষে সহমর্মিতা আদায়ের চেষ্টা কেনো?? সে ইসলাম নিয়ে, আল্লাহকে নিয়ে খুব ঘৃণ্য কটুক্তি করেছে, এটা এখন প্রমানিত। সুতরাং এমন একজন অপরাধী এখন আর শিক্ষকের মর্জাদা পাবার যোগ্য নয়। অন্য ধর্ম সম্পর্কে কটুক্তি করে শিক্ষকের মর্জাদাকে সে ভুলুন্ঠিত করেছে। সুতরাং আমরা এমপি কর্তৃক এমন সাজার বিরোধীতা করতে পারি, কিন্তু মিথ্যাচারা করে ঐ শিক্ষকের প্রতি কোনো সহমর্মিতা দেখাতে পারি না।
তবে এমন প্রচারণার জন্য মিথ্যাবাদী ৭১ টিভিই দায়ী। তাদের মিথ্যাচারের কারনেই পাবলিক বিভ্রান্ত হয়েছে। তাদেরকে এমন মিথ্যাচারের জন্য অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা উচিত। এবাং তাদের এমন মিথ্যাচার আজকে নতুন নয়। তারা অহরহই মিথ্যাচার করে ইসলাম ও দেশের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে সবসময়। অবিলম্বে তাদের লাইসেন্স বাতিলের আহ্বান জানাই।
এই ঘটনার মাধ্যমে সুশীলকুলের আরেকটি ডাবলস্ট্যান্ডার্ড নীতি পর্যবেক্ষণ করলাম। তা হলো, কিছুদিন আগেও ঢাবি শিক্ষক ড. মাহবুব উল্লাহর উপর আওয়ামী লীগাররা হামলা চালিয়ে তাকে চরমভাবে লাঞ্চিত করলো, বুয়েটের জনৈক অধ্যাপককে ফেসবুকে সরকারের সমালোচনা করে স্ট্যাটাস দেয়ায় জুতাপেটা করেছিল ছাত্রলীগ, কই তখন তো আজকের প্রতিবাদীরা একটুও লজ্জিত হননি!! অপমান বোধ করেননি!! তাহলে আজকে কেনো? আর ৫ মে শাপলা চত্তরে পুলিশ-বিজিবির গুলির মুখে শত শত আলেমকে সারবিদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে কান ধনে উঠ-বস করানোর ছবি নিয়ে হাসাহাসির কথা না হয় বাদই দিলাম!! কারন আলেম সমাজের বেলায় যেকোনো অন্যায়কে এইসব সুশীল সমাজ বৈধ বানিয়ে নিয়েছে!!!
ইসলাম কটুক্তির পক্ষে কথিত সুশীলদের এরুপ অবস্থানের কারনেই ৯০ শতাংশ মুসলমানের এই দেশে বিশেষ করে হিন্দু কর্তৃক ইসলামকে নিয়ে কটুক্তির পরিমান বেড়েই চলেছে। এসবের উপযুক্ত বিচারও হচ্ছে না। বাংলাদেশের মুসলমানরা অনেক সহিষ্ণু। যেখানে ভারতে হিন্দু ধর্ম নিয়ে কটুক্তি নয়, কেবল গরুর গোশত ভক্ষনের দায়েই পিটিয়ে হত্যা করা হয় মুসলমানদের, সেখানে বাংলাদেশে কি এরকম ঘটনা ঘঠেছে কখনো?? কিন্তু ধর্মকে কটুক্তি কারীদের প্রশ্রয়দান যদি এভাবে অব্যাহত থাকে, তবে এদেশেও এমনটা ঘটলেও আশ্চর্য হবার কিছুই থাকবে না। একজন সাবেক মেজর জেনারেলের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখুন-
সুতরাং- মিথ্যাচার বন্ধ করুন। অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই বিবেচনা করুণ। মানুষ সবকিছু সহ্য করতে পারলেও তার ধর্ম কিংবা সৃষ্টিকর্তাকে নিয়ে অবমাননা সহ্য করতে পারে না। মিথ্যাচার করে এই সহ্যতার সীমাকে অতিক্রম করার সুযোগ তৈরি করে দিবেন না। ৭১ টিভির মত ঘৃণ্য মিথ্যাবাদী মিডিয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
বিষয়: বিবিধ
২৩৪৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যাদের কাছে বিচার দাবি করব, ৭১ তো তাদেরই
মন্তব্য করতে লগইন করুন