জমে উঠেছে খেলা, ১৫ আগস্টের উল্লাসকারী জাসদ আর ইনু বুঝি এবার খেলেন ধরা!
লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ ফিরোজ ২৬ আগস্ট, ২০১৫, ০৬:২৮:০৫ সন্ধ্যা
খেলা জমে উঠেছে। জানিনা কোথায় গিয়ে গড়াবে। তবে জাতি কিছু অজানা তথ্য জানতে পারছে। যেই তথ্যগুলো ইচ্ছে করেই জানানো হয়নি একাত্তর পরবর্তী প্রজন্মকে।
গ্রাম্য লোকে বলে ঝগড়া লাগলেই নাকি সবাই সবার গোপন তথ্য ফাঁস করে দেয়। কথাটা আসলেই সত্য।
তবে এই ঝগড়ার আসল কারন জাতি এখনো জানতে পারেনি। হয়তো অচিরেই জেনেও যাবে।
আওয়ামী লীগ অভিযোগ করছে “জাসদ বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে”। বিএনপিরও একই সুর।
জাসদ বলছে- হঠাৎ করেই এমন ইস্যূ কেন সামনে আসছে? জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু তো বলেই ফেললেন ‘১৪ দল ভাঙ্গার চক্রান্ত চলছে’।
আজ আবার বললেন, মোশতাকের চারপাশে ছিল আ. লীগের বহুজনের ভিড়
আগেরদিন দলের পক্ষ থেকে প্রশ্ন রেখেছিলেন- সেলিম-রিপনের ‘অভিন্ন ভাষার’ যোগসূত্র কী?
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে ট্যাংকের উপর উঠে নাচা ইনু সাহেব পড়ছেন চিপাকলে!! এটা কিন্তু সেই আগষ্ট মাসই!!
হঠাৎ করে এমন জাসদ বিদ্ধেষের কারন হঠাৎ করে জানা না গেলেও অচিরেই হয়তো জানা যাবে। সেই পর্যন্ত না হয় উপভোগই করলাম খেলাটা!!
অনেকের মনেই প্রশ্ন- আসলেই কী তাই? ‘কী ঘটনা ঘটেছিল সে সময়? জাসদের ভূমিকা কী ছিল?’ তরুন প্রজন্ম হিসেবে আমরা এমন প্রশ্ন তো করতেই পারি, তাইনা?
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত নতুন দল হিসেবে জাসদের হঠকারি সিদ্ধান্ত এবং কীর্তিকলাপ নিয়ে যত আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, অন্য কোন দলের ব্যাপারে সম্ভবত তা হয়নি। জাসদ সম্পর্কে এখন কিছু জানতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই ওই সময়ের কোন অভিজ্ঞ পর্যবেক্ষের উপরই নির্ভর করতে হবে। এটাই সত্য।
আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন বাংলাদেশের বিখ্যাত দার্শনিক, লেখক, সমালোচক আহমদ ছফা এক সময় জাসদের রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তার লেখা ‘জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল: একটি সেন্টিমেন্টাল মূল্যায়ন’ প্রবন্ধটিতে তিনি এ সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন।
সেখানে আহমদ ছফা উল্লেখ করেছেন-“জাসদ তো প্রতিষ্ঠিত হলো। বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েম করার গালভরা ঘোষণা দেয়া হলো। মার্ক্সবাদ-লেলিনবাদ অনুসরণ করে সমাজ বিপ্লব ঘটিয়ে তোলার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে মাঠে নামলো। লক্ষ-লক্ষ তরুণ আগুনে পতঙ্গের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল। ঝড়ের মতো তাদের উচ্ছ্বাস-আবেগে উচ্চারিত কণ্ঠস্বর দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ধ্বনিত হতে থাকল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসবের পরিনতি কী দাঁড়াল!
জাসদের নেতারা সদর্পে মার্সবাদ-লেলিনবাদ প্রতিষ্ঠা করার কথা বলতে থাকলেন, শ্লোগানে মিছিলে রাজপথ মূখর হয়ে উঠল, দেয়াল অজস্র চিকায় ভরে গেল। কিন্তু তাদের স্বভাবে থেকে গেল আওয়ামী লীগের অপকৃষ্ট অংশ। জাসদ শ্রেনী সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যাক্ত করল, কিন্তু দেশে অবস্থান নিশ্চিত করতে পারল না।
তাদের স্বভাবে, আচরণে এতো অধিক ক্ষমতামনষ্কতা প্রকাশ পেতে থাকল, জাসদের তৎকালীন কর্মকাণ্ডকে পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী পুত্রের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করলে ভালো মানায়। জাসদ নেতৃবৃন্দ কর্মীদের বিশ্বাস করিয়ে ছেড়েছিল আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার তাদের সঙ্গত অধিকার আছে। জাসদের নেতা এবং কর্মীদের অনেকেই সচেতনভাবে মনে করতেন এবং প্রকাশ্য উচ্চারণ করতেও কুন্ঠিত হতেন না, তারাই শেখ মুজিবকে ক্ষমতার আসনে বসিয়েছেন। তাকে ঠেলে ফেলে দিয়ে এমন কি খুন করেও সে ক্ষমতা দখল করার যুক্তিসঙ্গত অধিকার তাদের আছে।
তাদের বিপ্লবের ঘোষণা, মার্কসবাদের দীক্ষা, সামাজিক বিপ্লব ঘটানো এসব তো কথার কথা। আসল কথাটি তাদের ক্ষমতার অংশ চাই ই চাই। ক্ষমতায় যাওয়ার পথটি যতই সুদূরপরাহত হয়ে উঠলো, ততই তাদের লোভ এবং আশাভঙ্গের বেদনা বৃদ্ধি পেতে থাকল।
শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর সিংহাসনের অধিকারের দাবীনামা অক্ষরগুলো রক্তের প্লাবনে মুছে গেল। বাপকে সিংহাসন চ্যুত করে ভিন্ন লোক যখন সিংহাসনে আসীন হয় পুত্র তাতে চড়ে বসার তাকত পাবে কোথায়? তবু জাসদের একাংশের মনে যে করেই হোক, যার সঙ্গেই হোক, ক্ষমতা দখলের কথাটি বিদ্যুতের অক্ষরে লিখিত হয়ে আছে। সিরাজুল আলম খান এবং রব সাহেবদের কর্মকান্ড কি তার প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত নয়?”
একই প্রবন্ধের একেবারে শুরুর দিকে ছফা বলেছেন- “সকলেই জানেন জাসদের যৌবন-জলতরঙ্গ থেমে গেছে। এ কথাটা শত মূখে প্রচার করার জন্য পন্ডিত হওয়ার প্রয়োজন হয় না। দলটি যে মরে যাচ্ছে, দেশের জনগনই তার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। ডেথ সার্টিফিকেট দেয়ার জন্য বিজ্ঞ ব্যক্তিরা ছুটে আসছে।”
ডেথ সার্টিপিকেট অনেক আগেই পেয়ে গেছে। ঐ সার্টিপিকেট আবার নাড়াচাড়া কেনো করা হচ্ছে সেটা বোধগম্য নয়।
তবে কারন এটাও হতে পারে যে, আওয়ামী লীগের মাথায় বসে কাঁঠাল ভেঙ্গে খাওয়া ছারপোকা ইনুর হম্বিতম্বি আর সহ্য করতে পারছেন না আওয়ামী লীগ নেতারা। বিএনপিও সেই সুযোগটাকে কাজে লাগাচ্ছে হয়তো।
তবে যাই হোক, এই ঝড় থেকে ইনু সাহেব তার নতুন করে গজানো এবং বেশ বড় হয়ে যাওয়া পাখাকে রক্ষা করতে পারবেন কিনা সেটাই দেখার বিষয়।
শেষাংসের সূত্র: আহমদ ছফার মূল্যায়নে জাসদ
বিষয়: বিবিধ
১২১২ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাটোয়ারা মামলা। মা জননী দু/একদিনেই রায় দিয়ে দিবেন। তখন হয়তো দেখবেন সব ঠিক গেছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন