শহীদ আব্দুল মালেকের অসাধারণ কথামালা
লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ ফিরোজ ১১ আগস্ট, ২০১৫, ০১:০৮:১৭ দুপুর
শহীদ আব্দুল মালেকের শাহাদাতের সংবাদ শুনে সেদিন বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম নেতা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রহ.) বলেছিলেন-
‘‘আব্দুল মালেক বাংলাদেশে(তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান) ইসলামী আন্দোলনের প্রথম শহীদ তবে শেষ নয়।’’
ইসলামী শিক্ষার পক্ষে কথা বলতে গিয়ে ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদী ও সমাজতন্ত্রীদের হাতে গুরুতর আহত হওয়ার ৩ দিন পর ১৯৬৯ সালের ১৫ আগষ্ট আব্দুল মালেক শহীদী মৃত্যুর অমিয়সুধা পান করেন।
শহীদ আব্দুল মালেকের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের জমিনে শহীদের মিছিলের সারি দিন দিন কেবল দীর্ঘই হচ্ছে.....
অসম্ভব মেধামী ছাত্র ছিলেন আব্দুল মালেক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগের সেরা ছাত্রটিই ছিলেন তিনি। তার অসাধারণ কিছু কথামালা নিয়েই এই লেখা.....
আমার প্রিয় ক্যাম্পাসের ছাত্রদেরকে ইসলামের দিকে আমার ডান হাত দিয়ে ডাকবো, ইসলামের শত্রুরা যদি আমার ডান হাতটি কেটে ফেলে তাহলে বাম হাত দিয়ে ডাকবো। ওরা যদি আমার বাম হাতটিও কেটে ফেলে তাহলে দুটো পা দিয়ে হলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ইসলামের সুমহান আদর্শের দিকে ডাকবো। ওরা যদি আমার দুটো পাও কেটে ফেলে তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এই ক্যাম্পাসের প্রতিটি ছেলেকে ইসলামের দিকে ডাকবো। ওরা যদি আমার চলার গতি স্তব্ধ করে দেয় তাহলে আমার যে দুটো চোখ বেঁচে থাকবে সে চোখ দুটো দিয়ে হলেও ছাত্রদেরকে ইসলামের প্রতি ডাকবো। আমার চোখ দুটিকেও যদি ওরা উপড়ে ফেলে তাহলে হৃদয়ের যে চোখ রয়েছে তা দিয়ে হলেও আমি আমার জীবনের শেষ গন্তব্য জান্নাতের দিকে তাকিয়ে থাকবো।
বেঁচে থাকার জন্য ডিগ্রি নিতে হবে যাতে আয়-রোজগারের একটা পথ হয়। কিন্তু ওটাকে জীবনের চরম লক্ষ্য বানিয়ে নিতে চাই না। খুব ভালো রেজাল্টের ধান্দা করলে ক্যারিয়ার গড়ার নেশায় পেয়ে বসার আশঙ্কা আছে।
মজার বিষয় হলো, উপরিউক্ত মন্তব্য করার পরেও কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্রটি আব্দুল মালেকই ছিলেন।
সৎগুণ ও সৎবৃত্তির বিকাশে মানুষের জীবন মনুষ্যত্বে ও মহত্বে পূর্ণ করে জীবন ও জগতের কল্যাণ সাধনই আদর্শ জীবনের চরম লক্ষ্য, পরম উদ্দেশ্য।
জানি আমার কোন দুঃসংবাদ শুনলে মা কাঁদবেন, কিন্তু উপায় কি বলুন? বিশ্বের সমস্ত শক্তি আল্লাহর দেয়া জীবন বিধানকে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। আমরা মুসলমান যুককরা বেঁচে থাকতে তা হতে পারেনা।
মায়ের বন্ধন ছাড়া আমার আর কিছুই নেই। বৃহত্তর কল্যাণের পথে সে বন্ধনকে ছিঁড়তে হবে। কঠিন শপথ নিয়ে আমার পথে আমি চলতে চাই। আশির্বাদ করবেন, সত্য প্রতিষ্ঠার এই সংগ্রামে যেন আমার জীবনকে আমি শহীদ করে দিতে পারি।
আমার মা এবং ভাইরা আশা করে আছেন, আমি একটা বড় কিছু হতে যাচ্ছি। কিন্তু মিথ্যা সে সব আশা। আমি চাইনে বড় হতে, আমি ছোট থেকেই স্বার্থকতা পেতে চাই।
হয় বাতিলের উৎখাত করে সত্যের প্রতিষ্ঠা করবো, নচেৎ সে চেষ্টায় আমাদের জীবন শেষ হয়ে যাবে।
আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন, যাতে কারাগারের নীরন্ধ্র অন্ধকার, সরকারি যাঁতাকলের নিষ্পেষন আর ফাঁসীর মঞ্চও যেন আমাকে ভড়কে দিতে না পারে।
ইনশাআল্লাহ তার যোগ্য উত্তরসূরী কাদের মোল্লা আর কামারুজ্জামানদেরও ফাঁসির মঞ্চ ভড়কে দিতে পারেনি। হাসিমুখেই তারা জান্নাতের এই সিঁড়ি অতিক্রম করেছেন।
সংগ্রামের জিন্দেগী, মঞ্জিল তো অনেক দূরে। কুরআনের ডাকে, সেই পথে তীব্র গতিতে ছুটে চল।
কেবল নফল ইবাদত আর তাসবীহ পড়ে ঐ তাসবীহর দানার উপর ইসলাম কায়েম হবেনা।
ইসলামী আন্দোলনের এক কর্মীকে উদ্দেশ্য করে আব্দুল মালেকের চিঠি-
প্রিয় বেলাল,
মুসলমানদের জিন্দেগী খুবই কঠিন। জাহানে নও এ হয়তো পড়ে থাকবে। গত ২৯ আগস্ট মিসরে যারা ইসলামী আন্দোলন করতেন সেই ইখওয়ানুল মুসলিমীনের ৩ জন নেতাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছেন প্রখ্যাত চিন্তাবিদ সাইয়েদ কুতুব শহীদ। ১৯৫৪ সালেও এ দলের ৬ জন নেতাকে ফাঁসি দেয়া হয়। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মিসরের সর্বোচ্চ বিচারপতি ড. আব্দুল কাদের আওদাহ। এ সময় সাইয়েদ কুতুবের দশ বছরের কারাদণ্ড হয়। ইসলামী আন্দোলনে মিসরের মেয়েরাও পিছিয়ে নেই। জয়নব আল গাজালী নামে এক মহিলাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। সাইয়েদ কুতুবের বোন হামিদা কুতুবকে দেয়া হয়েছে ১০ বছরের কারাদণ্ড। বেলাল চিন্তা করতে পারকি এদের কথা। এদের জীবন শহীদের, মুজাহিদের জীবন। মৃত্যুও শহীদের মৃত্যু। এদের অপরাধ ছিল এই যে, এরা মিসরের প্রেসিডেন্ট নাসেরের অনৈসলামী কাজের সমালোচনা করেছিলো। আমাদেরকেও ওদের মতো হতে হবে। রাসূলের (সা.) পথ শাহাদাতের পথ। তোমরা তাই জেগে ওঠো, তৈরি হও সেই চূড়ান্ত সংগ্রামের জন্য। এই শপথ নাও।
তোমাদের মালেক ভাই,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৩ মার্চ, ১৯৬৭।
বিষয়: বিবিধ
২১০৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ
ধন্যবাদ আপনাকে
মন্তব্য করতে লগইন করুন