ইয়াকুব মেমন আর কাদের মোল্লা: অপরাধ কি তাদের?
লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ ফিরোজ ৩০ জুলাই, ২০১৫, ০৩:২২:১৮ দুপুর
বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল আর ভারতের আদালতের মধ্যে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছিনা। বাংলাদেশে শুধুমাত্র ইসলামপন্থি বলেই ৪০ বছরের পুরনো মিথ্যা, সাজানো এবং হাস্যকর সব অভিযোগে ইসলামী নেতৃবৃন্দকে ফাসি দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ভারতেও শুধুমাত্র মুসলিম বলেই ২০ বছরের পুরনো মিথ্যা অভিযোগে অন্যায়ভাবে একজন নিরপরাধ ইয়াকুব মেমনের ফাঁসি কার্যকর করা হলো!!
ইয়াকুব মেমন একজন চার্টার্ড একাউন্টেন্ট। সে মুম্বাই বোমা হামলায় অভিযুক্ত টাইগার মেমনের ভাই। খুবই সাধারণ একজন মানুষ ইয়াকুব মেমন। আজ ছিল ইয়াকুব মেমনের জন্মদিন। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস এই জন্মদিনেই তাকে ভাইয়ের অপরাধের দায় চাপিয়ে অন্যায়ভাবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হলো!!
বাংলাদেশে যেমন অন্য এক কশাই কাদেরের অপরাধের দায় নিরপরাধ কাদের মোল্লার উপর চাপিয়ে ফাঁসির মাধ্যমে হত্যা করা হলো, তেমনি ভারতেও ভাইয়ের কথিত অভিযোগের দায় চাপিয়ে অন্যায়ভাবে আরেক ভাই ইয়াকুব মেমনকে ফাঁসির মাধ্যমে হত্যা করা হলো!!!
ভাইয়ের অপরাধের দায়ে অপর ভাইয়ের উপর চাপিয়ে কিংবা একজনের অপরাধ অন্যজনের উপর চাপিয়ে ফাঁসি দেয়ার বিধি বিশ্বের কোন দেশের আইনে আছে?
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইয়াকুব মেমনের ফাঁসিকে ঠাণ্ডা মাথার হত্যাকাণ্ড বলে অভিহিত করেছে এবং একে নিষ্ঠুর ও অমানবিক বলে মন্তব্য করেছে।
ইন্ডিয়ার মজলিশ-ই ইত্তেহাদুল মুসলেমিন বা ‘মিম’ নেতা ও সংসদ সদস্য আসাদউদ্দিন ওয়াইসি ও কাশ্মীরের নেতা সঈদ আলি শাহ গিলানির মতে, কেবল মুসলিম বলেই ইয়াকুব মেমনকে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দিয়েছে ইন্ডিয়ান সরকার।
সংসদ সদস্য আসাদউদ্দিন ওয়াইসি ফাঁসি কার্যকরের আগে অভিযোগ করে বলেছেন, ‘সরকার ধর্মের ভিত্তিতে তাকে ফাঁসি দিতে চাচ্ছে। ইয়াকুব মেমন মুসলিম হওয়ার জন্যই তাকে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে। যদি ফাঁসি দিতে হয় তাহলে সমস্ত অপরাধীদের দেয়া উচিত, শুধু এক জনকেই কেন?’ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘মুম্বাই দাঙ্গার ঘটনায় যুক্ত অপরাধী, রাজীব গান্ধী হত্যাকারী এবং বিয়ন্ত সিংয়ের হত্যাকারীকে ফাঁসি দেয়া হয়নি কেন?’
বক্তব্যের ভিডিও লিংক
ইয়াকুব মেননের এই অন্যায় মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদ করে টুইট করেছিলেন বলিউড অভিনেতা সালমান খান। সালমান আদালতের উদ্দেশে প্রশ্ন রাখেন, টাইগারের পরিবর্তে কেন তার ভাইকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হল। এটা কোন ধরণের বিচার? একজনের অপরাধে অন্যজন কেন সাজা ভোগ করবে? এমন প্রশ্নও ছুড়ে দেন সালমান। সালমান তার টুইটারে লিখেন, টাইগারকে ধরে শাস্তি দাও, ইয়াকুবকে নয়। অন্য একটি টুইটে সালমান বলেন, একজন নিরীহ মানুষকে মেরে ফেলা মানে মানবতাকেই কুলুষিত করা।
কিন্তু তার এই প্রতিবাদি টুইটারের স্থায়িত্ব বেশিক্ষণ হতে পারেনি ভারতের উগ্র হিন্দুদের চেঁচামেচি আর বিক্ষোভে!
বেচারা সালমান খান পরে বাধ্য হন টুইট ডিলিট দিতে!!
ভারতের উগ্র হিন্দু গোষ্ঠী যেনো বাংলাদেশের আরেক শাহাবাগ(বর্তমানে অস্তিত্বহীন)!! সরকারের উপর আরেক সরকার!!
হিন্দু জঙ্গি সংগঠন আরএসএস এর একজন সক্রিয় সদস্য স্বামী অসীমানন্দ। ২০০৭ সালের ১৮ মে জুমার নামাজের সময় হায়দ্রাবাদের মক্কা মসজিদে বিস্ফোরণে ৯ মুসল্লী হত্যা, একই বছর ১১ অক্টোবর আজমীর শরীফে বোমা বিস্ফোরণে তিনজনকে হত্যা, ২৯ শে সেপ্টেম্বর ২০০৮ এবং ৮ই সেপ্টেম্বর ২০০৬ এ মালেগাঁও মসজিদে সিরিজ বোমা হামলায় প্রায় ৫০ জন মুসল্লি হত্যা, ২০০৭ সালে সমঝোতা এক্সপ্রেসে বোমা হামলা করে প্রায় ৬০ জনকে হত্যাসহ অসংখ্য হত্যাকান্ডে সে জড়িত এবং স্বীকারও করেছে।
মজার বিষয় হল এতগুলি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় স্বামী অসীমানন্দ দায় স্বীকার করলেও সে এখনও বহাল তবিয়তেই আছে আর নিরপরাধ ইয়াকুব মেননকে বিনা কারণে ঝুলতে হল ফাঁসির দড়িতে! কিন্তু কেন! ইয়াকুব মেমন মুসলিম বলে? স্বামী অসীমানন্দ হিন্দু এবং উগ্র আরএসএস সদস্য বলেই কি সে বিচারের আওতামুক্ত?? বাংলাদেশে যেমন আওয়ামী আর শাহাবাগীরা বিচারের আওতামুক্ত??
বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাক্তিত্ব কাদের মোল্লা-কামারুজ্জামান, ভারতের কাশ্মীরের প্রখ্যাত আলেম ও ইসলামী ব্যক্তিত্ব আফজাল গুরু-মকবুল বাট, অবশেষে ইয়াকুব মেমন..... এদের অপরাধ কি?
প্রেক্ষাপট তুলনা করলে মনে হয় যেনো একই থিংক ট্যাংকে চলছে দুই দেশ!!!
বিষয়: বিবিধ
১১১৫ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এতে হিন্দুদের পুণ্য হয়..
যবন হত্যা কর পূণ্য অর্জন কর....
এখানে ন্যায়-অন্যায় কিছু নেই......
কাজেই হিন্দুদের ধর্ম পালনেরই একটা পুণ্যবান কাজ করেছে ফাসী দিয়ে....
যতদিন ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবেনা এ ধরায়,
ততদিন মানুষ বলবে মানবতা তুমি কোথায়?
প্রেক্ষাপট তুলনা করলে মনে হয় যেনো একই থিংক ট্যাংকে চলছে দুই দেশ!! ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ পিলাচ পিলাচ পিলাচ
লেখাটা খুব ভালো লেগেছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন