শুক্রবারের মেহমানদের খাবারের ব্যবস্থা করুন

লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ ফিরোজ ২৮ জুন, ২০১৫, ০৪:০১:১৭ বিকাল



শুক্রবার আসলেই প্রায়ই আমাদের মেসে একজন দুজন মেহমান থাকবেই!!

ওনারা মিষ্টি আপেল নিয়ে বেড়াতে আসা কোনো দামি মেহমান নন। ওনারা ‘উইদাউট পরমালিটিজ’ মেহমান। তাহাদের কাছ থেকে মিষ্টি আপেল আশা করাটাও অমানবিক! তাদের সবসময়ের সঙ্গী একটা ব্যাগ, আর তাতে মূল্যবান(?) কিছু কাগজ পত্র এবং অবশ্যই একটি চাকরীর পত্রিকা।

দেশ জুড়িয়া প্রতিটি ঘরে ঘরেই তাহাদের বিচরণ!! সারা দেশে তাহাদের সংখ্যা কম করে হলেও প্রায় ৩০ লাখের(শিক্ষিত) মত!!

এতক্ষণে নিশ্চই আন্দাজ করে ফেলেছেন সেই মেহমানদের পরিচয়। হুম…. ওনাদের পরিচয় ‘শিক্ষিত বেকার’!!

ওনাদের নামে একটা পরিবহনের নামকরনও করতে দেখেছি। ‘বেকার’ পরিবহন। সায়দাবাদের ওদিকে গেলে এই পরিবহনের বাস চোখে পড়ে। কি জানি কয়েকজন বেকার হয়তো চাকরির পিছে দৌড়াইয়া চইদ্দ জোড়া জুতা ক্ষয় করিয়া অবশেষে পিতৃ সম্পত্তি বেচিয়া এই পরিবহন চালু করিয়াছে কিনা?

শুক্রবার হলেই কোথাও না কোথাও ওনাদের চাকরীর পরীক্ষা থাকে। সেই হিসেবে অবশ্য ওনাদেরকে মেহমান না বলে পরীক্ষার্থী বললেও খারাপ হয়না। পাশাপাশি শুক্রবারকে বেকার দিবসও ঘোষণা করা যায়!

পরীক্ষা দিতে প্রায় প্রতি শুক্রবারেই গ্রাম থেকে ঢাকায় আসতে হয়। হোটেলে থাকার পয়সা পাবে কোথায়? বাসের ভাড়াটাইতো বাপের কাছ থেকে আম্মুর মাধ্যমে চাহিয়া আনিয়াছে!! রাত্রিযাপনের জন্য আত্মীয়, দু:সম্পর্কের আত্মীয় কিংবা গ্রামের কোনো পরিচিতজনের বাসা বা মেসই খুঁজে বের করতে হয়।

ঢাকায় সাড়ে চার বছরের মেস জীবনে কত যে দেখিলাম তাহাদের করুন চেহারা আর করুন চাহনি!! পরীক্ষা দিতে দিতে আদু ভাই হয়ে গিয়েছেন। পরীক্ষা আর শেষ হয়না!! বেকার পরিচয়টাও গুছেনা!!

এমনিতেই এই অসহায় গোষ্ঠির সংখ্যাধিক্যের ঠেলা। তার উপর পরীক্ষার নামে তামাশা!! নির্মম তামাশা!! তাহারা যাবেটা কোথায়?

গত শুক্রবার সরকারি অডিট বিভাগে চাকুরীর পরীক্ষা ছিলো। প্রায় দেড় বছর আগের সার্কুলারের পরীক্ষা হলো গত পরশু!!

আমার পরিচিত এক ভাই পরীক্ষা দিয়েছেন। তিনি বললেন, পরীক্ষা হলে দেদারছে সবাই মোবাইলে কথা বলে এবং মেসেজের মাধ্যমে উত্তরের আদান প্রদান করে পরীক্ষা দিচ্ছেন। আরেক মেহমান(মেস মেম্বারের আত্মীয়) বললেন, তাকেও নাকি পরীক্ষার আগ মুহুর্তে অফার করা হয়েছে মোবাইলের মেসেজে উত্তর পাঠিযে দিবে। এক হাজার টাকা লাগবে। যদিও তিনি রাজি হননাই। পকেটে থাকলে তো??

এই হলো সরকারী চাকরীর পরীক্ষার নমুনা!! অথচ পরীক্ষার প্রবেশপত্রে লিখা রয়েছে, মোবাইল তো দূরের কথা হাতঘড়ি নিয়েও পরীক্ষার হলে ডুকা যাবে না!!

ভাইটি বললেন, এতদিন পর পরীক্ষা হয়েছে মানেই তো, এতদিনে কোন এমপির কোটা কত, মন্ত্রীর কোটা কত সব ঠিক করা হয়ে গেছে। পাঁচ ছয় লাখ টাকা করে নিয়ে চাকরীর লোকও ইতোমধ্যেই জোগাড় হয়ে গেছে!! পরীক্ষা তো একটা তামাশা মাত্র!!

এজন্যই তো উত্তরের জন্য মাত্র এক হাজার টাকার আবদার। লোকতো আগেই রেডি!! এখন যা কামাই করা যায় তাই তো লাভ। ১০০ ভাগ পাশ করুক সমস্যা কোথায়?

কিছুদিন আগে এক্সিম ব্যাংকের পরীক্ষা ছিলো। সেটাতেও দেখলাম আমার রুমমেটের ভাগনি একটি চক্রের সাথে যোগাযোগ করে ত্রিশ হাজার টাকার বিনিময়ে হেডফোনের মত একটি ক্ষুদ্র ডিভাইস কানে লাগিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে। যেটাতে বাইরে থেকে সব উত্তর বলে দেয়া হয়েছে!!

শুধুমাত্র পরীক্ষায় পাশের জন্য ত্রিশ হাজার টাকা দিয়েছে। পাশের পর চাকরী নিশ্চিতের জন্য লাগবে পাঁচ লাখ!!

এই হলো বাংলাদেশের চাকরীর বাজারের মঘের মুল্লুক অবস্থা। টাকা আছে যার চাকরী আছে তার। মামু খালু আছে যার চাকরী তার। টাকা নাই, মামু খালু নাই চাকরীও নাই!!

পরীক্ষা দিতে দিতে পরীক্ষার উপর পিএইচডি করলেও কোনো লাভ নাই, চাকরি হবেনা গ্যারান্টেড!!

এটা এখন ওপেন সিক্রেট ব্যপার। এরপরও অভাগারা পরীক্ষা দিয়েই যায়... যদিনা ব্যতিক্রম কিছু ঘটে..!!!

কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন, চাকুরির পরীক্ষার নামে এসব তামাশা বন্ধ করুন, প্লীজ।

কারন এটা পরীক্ষা নয়, পরীক্ষার নামে গরিব মধ্যবিত্ত মামু খালু বিহীন সিংহভাগ অসহায় শিক্ষিত বেকারের সাথে এ এক নির্মম তামাশা!!

বিষয়: বিবিধ

৮৮৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

327863
২৮ জুন ২০১৫ রাত ১১:২৬
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ফিরোজ ভাই, পরীক্ষার নামে গরিব মধ্যবিত্ত মামু খালু বিহীন সিংহভাগ অসহায় শিক্ষিত বেকারের সাথে এ এক নির্মম তামাশা
একদম সত্যি বলেছেন। শুকরিয়া
২৯ জুন ২০১৫ রাত ০৪:৫৩
270224
আহমেদ ফিরোজ লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আস্সালাম। জাজাকাল্লাহ ভাই।
327875
২৮ জুন ২০১৫ রাত ১১:৫১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : যেখানে ক্লাস ৫ এ্র পরিক্ষায় নকল হয় সেখানে এমন ঘটনা আর অবাক করার কি। কিন্তু শিক্ষিত(!) হলেই চাকরি করতে হবে এই মানসিকতা বন্ধ হওয়া উচিত।
২৯ জুন ২০১৫ রাত ০৪:৫৪
270225
আহমেদ ফিরোজ লিখেছেন : মানসিকতা বন্ধ করলে কি আর পেট চলবে ভাই?
327885
২৯ জুন ২০১৫ রাত ১২:১১
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : এ পরীক্ষাটাও এ ধরনের ব্যবসাতে রূপ নিয়েছে
২৯ জুন ২০১৫ রাত ০৪:৫৬
270226
আহমেদ ফিরোজ লিখেছেন : অবশেষে সমস্যা সলভ হলো..। শুকরিয়া

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File