সন্দেহাতীত প্রমানিত অভিযোগ থেকে কি করে খালাশ পেলেন মুজাহিদ?
লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ ফিরোজ ১৬ জুন, ২০১৫, ১১:০৮:৫৪ রাত
‘সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত’ কথাটার মানে কি?
মানে তো এটাই যে, কাজটি যে তিনিই করেছেন সেটা এমনভাবে প্রমানিত যে এ ব্যপারে আর বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। একেবারে চাক্ষুশ।
জনাব মুজাহিদ সাহেবের সাতটি অভিযোগের মধ্যে ১ ও ৬নং অভিযোগ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় দুটি অভিযোগেই ফাঁসির রায় হয়েছিলো!!
অথচ আপিল বিভাগ এখন সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত সেই ১নং অভিযোগে ফাঁসি তো দূরের কথা, তাকে সেই অভিযোগ থেকেই সম্পূর্ন খালাশ দিয়ে দিয়েছেন!!
তাইলে এবার বলুন, ট্রাইব্যুনাল তখন সন্দেহাতীতভাবে কি প্রমান করেছিলো? কিংবা তাদের ‘সন্দেহাতীত প্রমানের’ সংজ্ঞা বা মিনিংটাই বা কি??
যেই অভিযোগের সাথে ব্যাক্তির বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা নেই, সেই অভিযোগও আমাদের ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ(?) বিচারকগন সন্দেহাতীতভাবে প্রমান করে ফেলেন!!
এই একটিমাত্র দৃষ্টান্ত থেকেই কি বুঝা যায়না যে, ট্রাইব্যুনালে আসলে বিচারের নামে হচ্ছেটা কি??
ওনাদের নিয়ে নাটক বা সিরিয়াল বানালে নিশ্চিত কেডি পাঠকের ‘আদালত’ও ফেল মারবে!!
এবার আসি ফাঁসির দন্ড বহাল রাখা ৬নং অভিযোগে। এই অভিযোগ আপিল বিভাগের কাছেও নাকি সন্দেহাতীত(?) প্রমানিত!!
মোহাম্মদপুর শারিরীক শিক্ষা কলেজ যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি আর্মিদের টর্চার ক্যাম্প ছিলো। মুজাহিদ সাহেব নিয়মিত সেখানে যেতেন এবং পাকিস্তানিদের সাথে সলাপরামর্শ করতেন। ঐ পরামর্শের ভিত্তিতেই অসংখ্য বুদ্ধিজীবি নিধন ও হত্যাজজ্ঞ চলে। এমনটাই বলা আছে ৬নং অভিযোগে।
কথা হলো মুজাহিদ সাহেব তখন কি ছিলেন বা কি হিসেবে সেই টর্চার ক্যাম্পে যেতেন?
- তিনি বদর প্রধান হিসেবে সেখানে যেতেন!!
- তিনি তখন বদর প্রধান ছিলেন এটা কোথায় পেলেন? বা এটার প্রমান কি??
- ‘যেহেতু’ তিনি ছাত্র সংঘের ঊর্ধ্বতন নেতা ছিলেন, ‘সেহেতু’ আলবদর ও ছাত্রসংঘ দুটি সংগঠনের ওপরই তাঁর কর্তৃত্ব ছিল। রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে তখন তিনি আলবদর বাহিনীকে দিক-নির্দেশনা দিতে পারতেন। তবে তিনিই এ বাহিনীর একমাত্র নেতা ছিলেন না।(ট্রাইব্যুনালের ভাষ্য)
- এসব যেহেতু সেহেতু দিয়ে কি আর বিচার চলে? আল বদরের কোনো নথিপত্রে তো মুজাহিদের নাম নেই!!
- এ জন্য আলবদরের কোনো আনুষ্ঠানিক নথিতে মুজাহিদের নাম থাকা জরুরি নয়। সব কিছু মূল্যায়ন করে বুঝা যায়, মুজাহিদ আলবদর বাহিনীর সব ধরনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখতেন।(ট্রাইব্যুনালের ভাষ্য)
আমার প্রশ্ন, এসব ‘যেহেতু’ ‘সেহেতু’ ‘সুতরাং’ ‘পারতেন’ ‘রাখতেন’ জাতীয় শব্দের উপর ভিত্তি করে কি কাউকে সন্দেহাতীতভাবে দোষী সাভ্যস্ত করা যায়? ফাঁসি দেয়া যায়? এটা কি কস্ষিনকালেও সম্ভব??
১৯৪৬ সালের ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের কথা উল্লেখ করে বলা হলো, নাৎসীদের কুখ্যাত গেষ্টাপো বাহিনী অপরাধী সংগঠন প্রমানিত হওয়ায় বাহিনী প্রধান আইকম্যানকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিলো!!
ভালো কথা, কিন্তু এক্ষেত্রে মুজাহিদ সাহেব বদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন সেটা প্রমান হলো কোথায়? তিনি তো আদৌ এই বাহিনীর প্রধানই ছিলেন না!! প্রমান না থাকায় প্রথম আলোতে পর্যন্ত তাকে সরাসরি বদর প্রধান না বলে আল-বদর বাহিনীর প্রধান বলে ট্রাইব্যুনালে ‘দাবী করা’ হয় বলা হয়েছে।
মোহাম্মদপুর শারিরীক শিক্ষা কলেজের তখনকার সিকিউরিটি গার্ড রহম আলী মোল্লা এবং প্রিন্সিপাল এখনো বেঁচে আছেন।
অথচ তাদের কাউকে সাক্ষী না করে করা হলো রহম আলীর ছেলে তখনকার ১৪ বছরের নাবালক রুস্তম আলী মোল্লাকে!! যে কিনা নিজেই আদালতে বলেছে, সে নাকি তার বাপের চাইতেও বেশি জানে!!
সে এমনই চতুর ও বেশি জান্তা যে, তার বাবা তখন কোন পোষ্টে চাকরী করতো সেটাও জানেনা। তখনকার নির্যাতিত কোনো বুদ্ধিজীবির নামও তিনি বলতে পারেননা!!
মুজাহিদ সাহেব এত বুদ্ধিজিবীকে মারলো, অথচ সে একজন বুদ্ধিজীবির নামও বলতে পারলোনা!! এ কেমন চাক্ষুস সাক্ষী??
বাদিপক্ষ(সরকার) কোনো সাক্ষী না পেয়ে টাকার বিনিময়ে যে এমন চতুর আর ধুরন্ধর(লেখাপড়া না করলেও চাকরীর জন্য পঞ্চম শ্রেনীর সার্টিফিকেট ঠিকই জোগাড় করে ফেলেছে!) সাক্ষীকে হাজির করেছে, সেটা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে?
এটা বিচার নয়, এটা স্পষ্ট রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ড।
আমিও ভয়ে আছি, এই লেখার উপর ভিত্তি করে না আমাকেও ফাঁসি দিয়ে দেয়!!
কারন ‘যেহেতু’ ‘সেহেতু’ তত্তের মাধ্যমে অসম্ভবকে সম্ভব করাই যে ট্রাইব্যুনালের কাজ!!!
তবে এসব বিচারকদের উদ্দেশ্যে বলে রাখি-
“বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা, শীগ্রই জাগবে সেই জনতা”
বিষয়: বিবিধ
১২৯১ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এভাবেই বিচার চলতে থাকুক যেন বিপরীতমুখীদের বিচার ও যেন হয়, এবং হবেই।
শুধু ধারনা করা যাচ্ছে বলে ফাঁসি! এই বিচারকদের মাথা বিষয়ে কয়েকদিন আগে একজন ডাক্তার সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
যাদের শুনার শক্তি হারিয়ে গেছে তাদের সাথে কথা বলা আর গাধাকে গল্প শুনানো একই কথা।
এর জন্য আমি ব্যাক্তিগতভাবে প্রথমতঃ আমি আমাকে দায়ী করি - এ জন্য যে আমি নিজেকে মুসলমান মনে করেও এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই নি। নিজের ক্যারিয়ার, নিজের জান ও মালকে কোরবানী করিনি এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য। দূর্বল ঈমানদারের মত কিছু করা ব্যাতিত।
তারপর আমার দায়ী করতে ইচ্ছা হয় জামায়াতে ইসলামীর থিন্কট্যান্ক কে। যাদের অদূরদর্শীতা, শত্রুকে চিনতে ভুল করা ও যথাযথ অগ্রীম ক্যালকুলেশানের অভাব দিবালোকের মত পরিষ্কার হয়ে আছে বিচার প্রথম হতে অদ্যাবধী পয্যন্ত পরতে পরতে।
আর ব্যাক্তিগতভাবে আমি ক্ষুদ্ধতা অনুভব করি, ঐ সব মুসলিম নামধারী আলেম ওলামা ও বিভিন্ন সংগঠনের দলীয় প্রধানদের প্রতি কিংবা নেতা দের প্রতি - যারা এ বিচারে শতভাগ অন্যায়, শতভাগ শঠতা, শতভাগ অবিচার, জুলুম ও নির্যাতন চাক্ষুষ করেও শুধু মাত্র নিজের পদ, পদবী, মান ও মর্যাদা ও নিজের সংগঠনের প্রতি লয়ালিটির কারনে, জামায়াত শিবিরকে অপছন্দ করার কারনে - মুসলমান এ সব মানুষের প্রতি রাষ্ট্রের এ নগ্ন বেহায়া টাইপ অবিচার, অত্যাচার ও খুন করার পরও আজ অবধি কোন কার্যকর ভূমিকা নেয়নি, ভূমিকা রাখতে চায় নি, মন্তব্য করেনি, স্টেইটমেন্ট দেয়নি এবং নিশ্চুপ থেকেছে এবং প্রাকারান্তরে এ জাতীয় নিষ্পাপ মানুষগুলোকে হত্যা করতে খুনীদের অনুপ্রানিত করেছে, করছে এবং মনে হচ্ছে আগামীতেও করে যাবে।
এত দিন শুনে এসেছি- আল্লা কুল বল্লে সব হয়ে যায়, ফেরেস্তারা ভীতির সঞ্চার করে দেয় সুতরাং গর্দনের উপর আঘাত হানো, লুত জামানার কথা, নমুরুদ, ফেরাউনের কথা। কিন্তু এখন দেখছি সব বাকোয়াজ কথাবার্তা। বোকোহারাম, আইসিস, আলকায়দা এরা না হয় আমেরিকার এজেন্ট। কিন্তু খোদ আল্লার বান্দা ব্রাদার হুড, জামাতের..... সব ধরে ধরে ফাঁসিতে লটকে দিচ্ছে আর আল্লার হিন্দু ধর্মের মূ্ত্তির মত চুপ মেরে আছে। তো, এই অক্ষম আল্লার কপালে লাথি মেরে বরংচ নতুন কিছু ভাবতে হবে। কি বলেন??
এত দিন শুনে এসেছি- আল্লা কুল বল্লে সব হয়ে যায়, ফেরেস্তারা ভীতির সঞ্চার করে দেয় সুতরাং গর্দনের উপর আঘাত হানো, লুত জামানার কথা, নূহের বন্যার কথা, নমুরুদ-ফেরাউন শায়েস্তা করার কথা। কিন্তু এখন দেখছি সব বাকোয়াজ কথাবার্তা। বোকোহারাম, আইসিস, আলকায়দা এরা না হয় আমেরিকান এজেন্ট। কিন্তু খোদ আল্লার বান্দা হামাস, ব্রাদার হুড, জামাতের..... সব ধরে ধরে ফাঁসিতে লটকে দিচ্ছে আর আমাদের এর বড় আল্লা হিন্দু ধর্মের নিরেট মূ্ত্তির মত চুপ মেরে আছেন। অস্বীকার করার উপায় আছে?
'আল্লা এভাবেই বান্দার ঈমান টেস্ট করেন, দেখা হবে জান্নতের সিরিতে, ওনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন.......' এসব বাকি বকেয়া কথায় এখন চিড়ে ভিজে না। আমরা চাই ডাইরেক্ট এ্যাকশন। এই অক্ষম আল্লার কপালে লাথি মেরে বরংচ নতুন কিছু ভাবতে হবে। কি বলেন??
হাসিনা কথা রাখছেন । তাকে স্যালুট জানাই ।
জামায়াতের পশ্চাত দেশে আগুন ধরে গেছে
মন্তব্য করতে লগইন করুন