জল্লাদের দরকার কি? এসব সম্পাদকদের ডেকে নিলেইতো হয়!!
লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ ফিরোজ ০৯ এপ্রিল, ২০১৫, ০৩:৫০:২০ দুপুর
যেকোনো কারনেই হোক গুগলে ‘কামারুজ্জামানের কবর’ লিখে সার্চ দিলাম। গুগলের সার্চ রেজাল্ট আমাকে পুরাই অবাক করে দিলো।
কবর নিয়ে শুধু নিউজই নয়, সাথে কামারুজ্জামানের অনেকগুলো কবরের ছবিও চলে এসেছে!! অথচ কামারুজ্জামান এখনো মারাই যাননাই, দিব্বি বেঁচে আছেন!!
এসব রেজাল্ট নিশ্চই গুগলের নিজস্ব তৈরি করা নয়। এগুলো নিউজে এসেছে বলেই গুগল সার্চে এসেছে।
আরো একমাস আগেই বাংলানিউজ কামারুজ্জামানের কবরের নিউজ করে ফেলেছে। কিছু কিছু নিউজ সাইট আরো আগেই করে ফেলেছে।
আপিলে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকবে কিনা তা জানার আগেই যেনো তারা কবর দেয়ায় ব্যস্ত হয়ে গেছে।
কামারুজ্জামানের বাড়িতে গিয়ে তার বড় ভাইকে ডেকে এনে কবর কোন যায়গায় হবে সেটা জিজ্ঞেস করছেন। আর দেখানো অবস্থায় সেই ছবি পত্রিকায় দিচ্ছেন। গতবছরের এমনি একটি ছবি নিচে দেখুন।
সাংবাদিকদের এমন অমানবিক বাড়াবাড়িতে কামারুজ্জামানের স্বজনরাও বিরক্ত। তারা এখন সাংবাদিকদের সাথে কথাও বলতে চাচ্ছেন না।
বাংলানিউজ-বিডিনিউজদের ভাবভঙ্গি দেখলে মনে হয়, পারে আর না পারে তাদের নিউজরুমটাকেই ফাঁসির মঞ্চ বানিয়ে কামারুজ্জামানকে এনে ফাঁসি কার্যকর করে এখনই কবর দিয়ে দেয়!!
কার আগে কে আপডেট দিবে, নিউজ হিট করাবে, সাইটের অ্যালেক্সা র্যাংকিং বাড়াবে, এসব ধান্ধাতো আছেই, তারচেয়ে বেশি উঠেপড়ে লেগেছে আদর্শিক দ্বন্দ্বের কারনে। এসব করতে গিয়ে তারা বিবেককে দিচ্ছে বিসর্জন!! সাংবাদিকতাকে করছে কলুষিত!!
অনলাইন পত্রিকার একজন সাংবাদিকের পোষ্ট সেদিন চোখে পড়লো। তিনি লিখেছেন-
“কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর এখন সময়ের ব্যপার মাত্র সরকারের কাছে। তবে রায় কার্যকর হওয়ার পূর্বেই ‘কামারুজ্জামানের রায় কার্যকর’ নিউজ লিখতে বসেছি। এটাই সাংবাদিকতা .. . feeling….পেশায় আমি হারিয়েছি বাক শক্তি”
এই সাংবাদিক অবশ্য বাকশক্তি হারানোর অনুভুতি ব্যাক্ত করে নিজের অক্ষমতাকে প্রকাশ করেছেন। আই মিন তিনি বাধ্য হয়েই এমনটা করছেন। সম্পাদকরাই তাদের বাধ্য করছেন এমনটা করতে।
রিভিউ খারিজের দিন থেকে প্রতিদিনই রাতেরদিকে ব্রেকিং শিরোনাম হচ্ছে “আজ ফাঁসি হচ্ছে না”। মনে হয় যেনো সরকারের দায়িত্বশীল কেউ বলেছিলো যে আজকে ফাঁসি হবে?
অর্থাৎ ফাঁসি না হলে আর ওনাদের শান্তি হচ্ছে না।
কালকে একটা শিরোনাম দেখলাম ‘৫ জল্লাদ প্রস্তুত’। নিউজটা পড়ে ভাবলাম জল্লাদের দরকার কি? এসব অতিউৎসাহী সম্পাদকদের ডেকে নিলেই তো হয়। তারা উৎসাহের সাথেই ফাঁসি কার্যকর করে দিবে!! সাথে মনের খায়েশটাও মিটাতে পারবে!!
নেপোলিয়ন আজ বেঁচে থাকলে হয়তো বলতেন, আমাকে কয়েকটি মিডিয়া দাও আমি তোমাকে একটি বিবেকহীন জাতি দিবো!!
অনেকে আরেকটু রসাত্বকভাবে বলেন, আমাকে কয়েকটি মিডিয়া দাও আমি শেখ মুজিবকেও রাজাকার বানিয়ে দেবো।
শুনেছি কিংবা কোথাও পড়েছি সাংবাদিকরাই জাতির বিবেক। জাতির সেই বিবেকের এ অবস্থা হলে জাতির কি অবস্থা হবে সেটা সহজেই অনুমেয়।
একজন ব্যাক্তিকে হত্যা করতে এভাবে উঠে পড়ে লাগতে হবে? আদর্শ দিয়ে মোকাবেলা করতে না পেরে এমন ঘৃণ্য পন্থা?
বিষয়: বিবিধ
১০৫৭৩ বার পঠিত, ৩৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এসবের পর আমি কিভাবে বিশ্বাস করবো যে তারা ৭১ আসলেই কোনো অপরাধ করেছে??
অনেক ধন্যবাদ
আর এখনতো হাতে এক খান ক্যামেরা ধরায়ে দিলেই সাংবাদিক হয়ে যায়!
সালাউদ্দিন কাদের বলেছিল, "বাংলাদেশে আজব এক মেশিন আছে, যার একদিক দিয়ে রাজাকার ঢুকালে মুক্তিযোদ্ধা বের হয়ে আসে"! মুজিব বেঁচে থাকলে হয়তো এই মেশিনের কল্যাণে হয়ে যেতেন রাজাকার!!!!
এই দেশে সব অসম্ভবগুলোই একটা একটা সম্ভাবনা এবং বাস্তবতা।
এজন্য আপিল করার আগেই তারা জানে ফাঁসি হবেই। তাই তখন থেকেই কবরের খোঁজও নেয়া শুরু করেছে।
অবশ্যই সব সাংবাদিক এক নয়। আমার বাবাও সাংবাদিক ছিলেন। আমি হাম্বাদিক বলতে সেই বিশেষ কালারের সাংবাদিকদের বুঝিয়েছি।
একটা পটকার আওয়াজ শুনলে উনারা টেবিলের তলে লুকান!
চরম অন্যায়ের বিরুদ্ধে শাণিত লিখনির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
শুধু সম্পাদকেরা না ভাই কিছুই উঠতি সাংবাদিক আছে যারা অভাবে এইসব নিউজ করে জনপ্রিয় হওয়ার জন্য।
সর্বোপরি লেখাটা ভালো লাগলো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন