অভিজিতকে হত্যা এবং ইসলামের তার অবস্থান।
লিখেছেন লিখেছেন শাহাদ ০১ মার্চ, ২০১৫, ১০:৪০:০১ সকাল
অভিজিতকে কে বা কারা হত্যা করেছে একমাত্র আল্লাহ মাবুদ জানেন। খুব সম্ভবত রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার জন্য বিশেষ করে হিন্দু হত্যার মাধ্যমে ভারতের বিজিপির শক্ত সমর্থন পাওয়ার জন্য আওয়ামীলীগ এই চাল চলতে পারে বা আর কিছু রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে, যেমন এক ইস্যু থেকে অন্য ইস্যুতে দৃষ্টি ফেরানো ইত্যাদি। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ এই লেখার মূল বিষয় নয়। তবে ঘটনা যাইহোক, তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, আইনের মাধ্যমে অভিজিতকে সরকার বা রাষ্ট্রকর্তৃপক্ষ ইসলাম বিদ্বেষীর বিচার করেনি, তাই কোনো ইসলামিক দল তাকে গুপ্তহত্যা করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাকে হত্যা করা কি ইসলাম সম্মত হয়েছে নাকি ইসলাম সম্মত নয়? উত্তরের পূর্বে এটা আপনাকে স্বীকার করে নিতে হবে অভিজিত শুধু নাস্তিক নয়, বরং আল্লাহ ও রাছুলকে নিয়ে মারাত্মক অবমাননামূলক লেখা লিখেছে, একটি নয় অনেকগুলো, অনেক বছর ধরে। এমনকি তার লেখা বই আকারে প্রকাশ করেছে। আমি নিজে সেই লেখা পড়েছি, যেখানে আল্লাহ ও রাছুলকে ডাইরেক্ট উন্মাদ, পাগল, যৌন ব্যভিচারী ইত্যাদি ভাবে গালিগালাজ করা হয়েছে। পৃথিবীর যে কোনো দেশের সভ্য আইনে মানুষের ধর্ম বিশ্বাসে আঘাত হানা বা কোনো ধর্মকে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করার অপরাধে তার ফাঁসি হওয়া উচিত। এখন প্রশ্ন হলো ইসলামের আলোকে তার হত্যা করা কি জায়েজ? ইসলামে এই অপরাধকে নাস্তিকতা বলে না, এর নাম হচ্ছে রিদ্দা। আপনি মুসলিম হবেন নাকি হিন্দু হবেন নাকি অবিশ্বাস করবেন সেটা অন্য কথা, সেই বিষয়ে জোরপূর্বক আপনার উপরে বিশ্বাস চাপিয়ে দেয়ায় ইসলাম বিশ্বাস করে না। বরং সেক্ষেত্রে বলা হয়েছে দ্বীনের ব্যাপারে জবর দোস্তি নেই। কিন্তু আপনি ইসলামকে উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ করবেন, ইসলামকে সমূলে উত্পাটন করার আন্দোলন করবেন, আল্লাহকে নিয়ে, রাছুলকে নিয়ে কটাক্ষ করবেন, কোটি কোটি মুসলিমের বিশ্বাসকে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করবেন সেই অপরাধের নাম হচ্ছে রিদ্দা, নাস্তিকতা নয়। ইসলামে রিদ্দার একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। এখানে ইসলামী রাষ্ট্রের খলিফাকে-ও ক্ষমতা দেয়া হয়নি তাকে ক্ষমা করার বা অন্য হুকুম দেয়ার। ইসলামে কিছু হক রয়েছে যা সরাসরি আল্লাহর হক ও রাছুলের হকের সাথে জড়িত, সেখানে হুকুম দিয়েছেন সরাসরি আল্লাহ ও আল্লাহর রাছুল। এর মধ্যে রিদ্দা হচ্ছে এমন একটি হুকুম। বিষয়টা একটু ক্লিয়ার করার জন্য উদাহরণ দিলাম। ধরুন কাফের বাহিনী আর মুসলিম বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ শেষে কাফের বাহিনী মুসলিমদের হাতে বন্দী হলো, যেমনটা হয়েছিলো বদরের যুদ্ধে। এই ক্ষেত্রে আল্লাহ ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানকে কয়েকটি অপশান দিয়েছেন। যেমন এই কাফেরদেরকে হত্যা করা বা বন্দী বিনিময় করা বা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়া, বা ক্ষমা করে দেয়া বা ওই সময়ে ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধানের প্রয়োজন বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। কিন্তু রিদ্দার ক্ষেত্রে আল্লাহ কোনো ছাড় দেননি। রাষ্ট্রপ্রধানের-ও ক্ষমতা দেয়া হয়নি মৃত্যুদন্ড ছাড়া অন্য কোনো হুকুম দেয়ার। এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এক নাম্বার কারণ হচ্ছে এটি আল্লাহর হক। আর দুই নাম্বার কারণ হচ্ছে, আপনি একটি রাষ্ট্রে থেকে সেই রাষ্ট্রের মূলবাণীকে উত্পাটন করার চেষ্টা করলে আপনাকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলা হয়, আর তার শাস্তি পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রে মৃত্যুদন্ড। তেমনি মুসলিম প্রধান দেশে থেকে আপনি ইসলামের মূলবাণীকে উত্পাটন করার চেষ্টা করছেন, কোটি কোটি মুসলিমের হৃদয়ে আঘাত হানছেন, যাকে ইসলামের ভাষায় বলা হয় রিদ্দা।
দলিল দেয়ার পূর্বে বলে দিই, তথাকথিত শান্তিবাদী নামক মডারেট মুসলিমরা যারা ইসলামের নীতিকে না মেনে নিজেদের বিবেকের কাছে (নাফসের কাছে) যা ভালো বা শান্তিপূর্ণ মনে করে বা পশ্চিমা বিশ্বের দৃষ্টিতে শান্তিময় প্রমান করতে চায়, তাদের কিছু যুক্তি তুলে ধরলাম। এক. রাছুল (স তায়েফে কাফেররা মেরেছে, কিন্তু রাছুল (স তাদের প্রতি প্রতিশোধ নেননি। দুই. তারপর রাছুল (স কে নিয়ে কাফেররা ঠাট্টা মশকরা করেছেন, কেউ বলেছেন কবি, কেউ বলেছেন জ্বিনে ধরা রোগী আবার কেউ বলেছে জাদুকর, কিন্তু রাছুল (স তাদের কারোর প্রতি প্রতিশোধ নেননি। উপসংহার: তাই অভিজিতকে হত্যা ইসলাম সম্মত নয়। ইসামের অপব্যাখ্যা কাকে বলে তার জলজ্যান্ত দৃষ্ঠান্ত। যে উদাহরণগুলো দিয়ে এখানে উপসংহার টানা হয়েছে সেইগুলো সব মক্কার জীবনের, যখন কাফেররা মুসলিমদেরকে হত্যা করেছে কিন্তু মুসলিমরা মুখ বুঝে সহ্য করেছে, এমনকি জিহাদের অনুমতি-ও দেয়া হয়নি। তখন আল্লাহ ও রাছুলকে অবমাননা করলে রাছুল (স সাহাবাদেরকে দেশ ত্যাগ করে হিজরতের অনুমোদন দিয়েছেন। কিন্তু, যখন মুসলিমরা জনশক্তিতে বলবদ হয়েছে, সংখ্যায় বৃদ্ধি পেয়েছে, তখনকার কিছু উদাহরণ নিন। এক. মদিনায় ইহুদি কবি কাআব ইবনে আশরাফকে রাছুল (স কে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক কবিতা লিখেছেন। রাছুল (স আদেশ দিয়েছেন কাআবকে গুপ্ত হত্যার জন্য। রাছুল (স নিজে তার সাহাবী মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা (রাকে টিম লিডার করে কাআবকে হত্যা করেছেন। দুই: আরেকজন প্রভাবশালী ইহুদি টাকা দিতেন কবিদেরকে রাছুল (স এর বিরুদ্ধে কবিতা লেখার জন্য, তার না আবু রফা। রাছুল (স তাকে গুপ্ত হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আতিক ওই টিমের প্রধান হয়ে তাকে হত্যা করে এসেছেন। তিন: সেই বুড়ি যে রাছুল (স কে গালিগালাজ করতেন,অবশেষে তার স্বামী সেটা সহ্য করতে না পেরে তাকে হত্যা করেন এবং রাছুল (স যখন শুনেছেন সেই কাজকে অনুমোদন করেছেন এবং বলেছেন এটি ইসলামে উত্সাহিত। চার: মক্কা বিজয়ের পর রাছুল (স সবাইকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন, তবে ছয় জন ছাড়া। তাদের অপরাধ ছিলো তারা রাছুল (স কে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক কবিতা লিখতো। এখন আমাকে বলেন, আপনি শুধু মক্কার জীবনের দুইটা উদাহরণ দিয়ে উপসংহার টানা কি থক হয়েছে? বাংলাদেশ যেটা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ, যার ৯০% মুসলিম, যেখানে কি কাফের আল্লাহ ও রাছুলকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করবে, সরাসরি ইসলামকে নিয়ে তামাশা করবে, কোটি কোটি মুসলিমের বিশ্বাসের মূলে আঘাত হানবে, তাদের ধর্ম নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করবে, আর আপনারা কি তাহলে বলবেন চলুন এই দেশ ছেড়ে অন্য দেশে হিজরত করি? এই ইসলাম বিদ্বেষীর বিচারও মৃত্যুদন্ড দেয়া উচিত ছিলো সরকারের। কিন্তু সরকার তা করেনি, কারণ সরকার হচ্ছে নাস্তিকদের মদদদাতা। যেখানে মুসলিমরা আইন সম্মতভাবে বিচারের আহ্বান করেছে, এমনকি লক্ষ মুসলিম তাদের বিচারের দাবিতে ঢাকায় সমাবেশ করেছে, শত আলেমকে রাতের আধারে প্রাণ দিতে হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে যেখানে যথেষ্ট সময় দেয়া হয়েছে সরকারকে আইন দিয়ে বিচার করার এবং এটা পরিষ্কার সরকার সেই বিচার করছে না, সেখানে ইসলামের আইন দিয়ে এই ইসলামের শত্রুকে, আল্লাহর শত্রুকে গুপ্ত হত্যা করা কিভাবে ইসলাম সম্মত নয় আমাকে বুঝিয়ে দিন। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার ঘ্যান-ঘ্যানানী খুব শুনছি। এখন আপনাকে একজন পাঠক প্রশ্ন করলো উত্তর দেন, সরকারের কাছে এত বার বিচার চাওয়ার পর, এতগুলো জীবন বিসর্জন দেয়ার পর, যখন আপনি নিশ্চিত সরকার বিচার করছে না বরং তাদেরকে আরো বেকসুর খালাস দিচ্ছে, তারা তাদের ইসলাম বিদ্বেষী কার্যক্রম আরো বাড়িয়ে যাচ্ছে, এই অবস্থায় অন্য কি উপায় আছে? তাছাড়া আপনি আমি নিজেই বলছি সরকার অবৈধ্য, সেখানে অবৈধ্য সরকারের নীতিকে বর্জন করা কিভাবে অপরাধ আমাকে বুঝিয়ে দিন। এটা যদি আইন হাতে তুলে নেয়া হয়, তাহলে সরাসরি সরকারকে অবৈধ্য বলা তো তার চেয়ে হাজার গুন বড় রাষ্ট্রদ্রোহিতা। যদি কোনো ইসলামী দল এটা করে থাকে, তারা-ও তো যুক্তি দিতে পারে যে এই সরকারকে আমরা অবৈধ্য কর্তিপক্ষ মনে করি। নিজের মতামত নয়, ইসলামের দলিল দিয়ে বলুন। আমি অলরেডি দলিল দিয়েছি, এমন দলিল আরও ১০টা দিতে পারি যেখানে রাছুল (স অনুমোদন দিয়েছেন এবং অনেকক্ষেত্রে ইসলামের এমন শত্রুদেরকে হত্যা করা ফরয ঘোষণা করেছেন। সুতরাং আল্লাহ মাবুদ জানেন আসলে আল্লাহর এই শত্রুর হত্যাকারী কে। সুতরাং তবে যদি কোনো ইসলামী দল সেটা করে থাকে তবে তা আল্লাহর রাছুলের কর্মের সংঙ্গে সম্মত, এবং তা অনেক আগেই করা উচিত ছিলো। রাছুল (স কোনো নিদৃষ্ট দলের রাছুল নন, তিনি সকল মুসলিমের রাছুল, সুতরাং আল্লাহর এই শত্রুকে, রাছুলের এই শত্রুকে হত্যা করা প্রত্যেক মুসলিমের ঈমানী কর্তব্য ছিলো যে কর্তব্য পালন করেছেন রাছুল (স এর সাহাবীরা।
বিষয়: বিবিধ
২১১৮ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মারিয়া
পরীবানু
মরুর মুসাফির
পরীবানু ,সততার আলো
অশ্বথমা
অপ্রতিরোধ্য স্বাধীন সমালোচক
পরমা ,নীলমণীলতা
বিলকিস লায়লা
দস্তার
রুপবান
মুক্তিযুদ্ধ ৭১
দ্রাবীড় বাঙাল
লেয়লা ইসলাম
বিলকিস
বাংলা ৭১
ভিক্টোরিয়া
হেলেনা
পল্লব প্রভাতে
খালেদ
রুশো তামজিদ
বারাংগনা
মধুবালা
সখি
ফয়সাল১
মাঝি-মাল্লা, ,
লায়লার
লায়লা০০৭
রাতুল দাস
চকো চকো
সায়েদ-রিয়াদ
বিভ্রান্ত নাবিক
ফাজিল
অপ্রতিরোধ্য স্বাধীন সমালোচক
মুক্তিযুদ্ধ ৭২
দ্রাবীড় বাঙাল
পিচ্চি পোলা
কাওসাইন হক
চাষা
jahed_ullah
নীরু
সাদা মন
সাদা মন
চোথাবাজ
আমি বিপ্লবী
সততার আলো সকাল সন্ধ্যা
এই নেরিকুত্তাকে বেন করা হোক। যার এত নিক
আর কোন হাদীর দ্বারা কি হুকুম সাবেত হয় তা নির্নয় করতে পারেন শুধুমাত্র মুজতাহিদ গণ্। কারন তাদের সকল হাদীসের প্রেক্ষাপট জানা আছে। তাই হুট করেই আপনি হাদীস দ্বারা কোন দলীল দিতে পারবেন না। সে হাদীসের ব্যাপারে ইমামগণ কি অভিমত পেশ করেছেন তা আপনাকে আগে জানতে হবে।
রিদ্দা মানে হচ্ছে ফিরে যাওয়া। যে সকল মুসলিম ইসলাম ত্যাগ করে মুরতাদ হয় তাদেরকে হত্যা করার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু যদি কোন অমুসলিম রাসূল (স.) কে ব্যাঙ্গ করে তবে কি সে মুরতাদ হবে ? সে তো প্রথম থেকেই অমুসলিম ছিল।
হাহা, মুরতাদ খুঁন করার শক্তি সাহস আপনার আল্লার এখনও আছে কি?
যাই হোক, আমাদের প্রচলিত শাশন ব্যাবস্থায়, ইসলাম অবমাননার জন্য অভিজিৎ রায়ের বিরুদ্ধে বিচার, জরিমানা, জেল ইত্যাদি ব্যাবস্থা সরকার নিতে পারতো। সরকার এটা করেনি তাই "অভিজিতের বিচার চাই" এই ব্যাপারে মিছিল, আন্দোলন ইত্যাদি করে যেত। তা না হলে তার বিরুদ্ধে মামলা করে তাকে আদালতের বারান্দায় হাটিয়ে জুতা ক্ষয় করানো যেত। এগুলো গণতান্ত্রিক পদ্ধতি।
হত্যা বা গুপ্ত হত্যা যাই বলেন না কেন। আমাদের দেশের শাশন ব্যাবস্থা বা আইনে, এই সুযোগ নেই। আপনার এই লেখার মাধ্যমে আপনি খুনিদেরকে সমর্থন করছেন। এর চেয়েও বড় সমস্যা হল, রাজনৈতিক বা সন্ত্রাসী চক্রের একটি খুনকে আপনি এভাবে দেখাচ্ছেন যাতে মনে হচ্ছে - এই খুন ইসলামিক লোকজন, ইসলাম মেনেই করেছে।
করবপূজা, মাজারপূজা, তাবিজপূজা, পানিপড়া পুজা, জ্বিনপূজা আল্লাপূজা....... এসবের মাঝে কোন ফারাক আছে? সব একই তো। অবৈজ্ঞানিক, আবাস্তব, অক্ষমের পূজা। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন