কামরুজ্জামান সাহেবের ফাঁসির রায় আর জঙ্গলের চারটি গরুর গল্প

লিখেছেন লিখেছেন শাহাদ ০১ মার্চ, ২০১৫, ১২:১৪:২১ রাত

গল্পটি আগে-ও বলেছি, কিন্তু কামরুজ্জামান সাহেবের ফাঁসির রায় গল্পটার প্রাসঙ্গিকতা অনেক বাড়িয়ে দিলো, তাই আবারো বলছি। মূল গল্পটি বলেছেন মূলত আমেরিকার বিখ্যাত মুজাহিদ শহীদ ঈমাম আনওয়ার আওলাকী। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতের সর্বোচ্চ সোপান দান করুন। বাংলাতে অনুবাদ করার চেষ্টা করলাম, আশা করি গল্পটার স্বারকথা পেয়ে যাবেন।

এক জঙ্গলে চারটি গরু আর একটি সিংহ বাস করতো। মোটামুটি ভালোভাবেই দিন যাচ্ছিল গরুগুলোর, কিন্তু প্রতিদিনের একটা-ই চ্যালেঞ্জ পার করে দিন কাটাতে হয় তাদের। চ্যালেঞ্জটি হলো একতাবদ্ধ হয়ে সিংহের আক্রমন থেকে নিজেদের রক্ষা করা। সিংহটি নানান ভাবে আক্রমন করে কিন্তু একজনকে আক্রমন করলে অন্য গরুগুলো শিং বাড়িয়ে ছুটে আসে; সিংহ তাই তিক্ত অভিজ্ঞতার ফলে আক্রমনের সাহস পায়না। এবার সিংহ একটা ফন্দি আটলো, যে করেই হোক, ওদের দোষ গুলো খুঁজে বের করে এক একজনের কাছ থেকে আলাদা করতে হবে। পরিকল্পনা মোতাবেক, পরের দিন গরু গুলোর কাছে যেয়ে বললো "তোমরা প্রতিদিন রাতে যখন গভীর জঙ্গলে লুকাও তখনও আমি তোমাদেরকে খুঁজে বের করতে পারি শুধু একটা কারনে। আর সেটা হলো তোমাদের মধ্যে ওই যে সাদা রঙের গরুটা রয়েছে, ও'র গায়ের রং সাদা হওয়ার কারণে আমি রাতের বেলায়-ও তোমাদের পুরো দলের সন্ধান পেয়ে যায়"। পরের দিন তিনটি কালো গরু এক সাথে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিলো এই আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়ার একটা-ই উপায়, আর তা হচ্ছে ওই সাদা গরুকে তাদের দল থেকে আলাদা করে দেয়া। পরের দিন সাদা গরুটাকে দল থেকে বের করে হলো, আর সিংহ গরুটাকে একা পেয়ে খেয়ে ফেললো। কালো গরুগুলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো, আর মনে মনে একটু খুশিই হলো আর ভাবতে লাগলো সমস্যা সৃষ্টিকারকটা শেষ হয়ে ভালোই হয়েছে। কিছু দিন পর, সিংহ আবার আক্রমন শুরু করলো, তার পরের টার্গেট কালো তিনটা গরুর মধ্যে ঘাড় লম্বা গরুটা। ফন্দি মোতাবেক আক্রমন করলো, আগে চারটা গুরু থাকার কারনে চারদিক থেকে আক্রমন প্রতিহত করা যেতো এখন বাকি গরু দুইটাকে অনেক রিস্ক নিয়েই আক্রমন প্রতিহত করতে হয়। এভাবে সিংহ প্রতিদিনই একমাত্র ঘাড় লম্বা গরুকেই আক্রমন করলো। ১০ দিন পর সিংহ ফন্দি মোতাবেক গরু গুলোর কাছে যেয়ে বললো, দেখো আমি অনেক দিন জেব্রা খায়নি, আমার জেবরা খাওয়ার নেশা ওঠে। এই বনে তো আর জেবরা নেই, তাই তোমাদের মধ্যে ওই যে ঘাড় লম্বা গরুটা রয়েছে, ও-কে দেখলেই আমার জেবরার কথা মনে পড়ে যায়। ও-কে আমার কাছে সমর্পণ করে দাও, তাহলে আমার নেশাটা কেটে গেলো আর তোমরা ঘাড় ছোট দুজন আমার বন্ধু হয়ে গেলে। শক্তিশালী গরু দুইটা মিটিং করে চিন্তা করলো, সিংহতো ঠিক-ই বলেছে, শুধু ওই ঘাড় লম্বা গরুকেই তো সিংহ আক্রমন করে প্রতিদিন, ওই শালার জন্য আমাদেরকে এতো কষ্ট পোহাতে হয় প্রতিদিন। ও'কে-ও একঘরে করে আলাদা করে দিলো। সিংহ দেখলো, তার ফন্দিতে কাজ হয়েছে। সুযোগ পেয়ে খেয়ে ফেললো ঘাড় লম্বা গরুটাকে। বাকি রইলো দুইটা গরু। খাবার যখন শেষ হয়ে গেলো তখন সিংহ আক্রমন শুরু করলো ওই দুইটা গরুর উপর। একজনকে আক্রমন করলে প্রতিহত করার মাত্র একজন। তাই পরের দিন সিংহ যখন আক্রমন করলো, বাকি গরুটা এতো সাহস পেলোনা বরং অন্য গরুকে একা ফেলে দৌড় দিলো। ৩ নং গরুকে-ও সিংহ খেয়ে ফেললো। বাকি রইলো মাত্র একটা "বেশী চালাক" গরু। সপ্তাহ খানেক পর সিংহের যখন ক্ষুধা লাগলো, শুরু করলো তার মিশন। আক্রমন করলো, গরুটা অনেক দৌড়াচ্ছে, অবশেষে হাপাতে হাপাতে আর পারেনা, দুর্বল হয়ে পড়ে গেল একটি খাদে। সিংহ যখন কাছে অগ্রসর হলো, মৃত্যুর ঠিক পূর্ব মুহুর্তে গরুটার দু-চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো আর গরুটা বলতে লাগলো, "আমার মৃত্যু আজকে হচ্ছে না, আমার মৃত্যু সেই দিন-ই হয়ে গেছে যেদিন সাদা গরুটাকে আমার সমানে খাওয়া হয়েছিলো আর আমি প্রতিরোধ না করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম।" সিংহটি ঠাট্টা করে বলতে লাগলো, বুঝেছো কিন্তু একটু দেরী করে বুঝেছো, আজকে শুধু আফসোস করা ছাড়া আর কোনো ক্ষমতা তোমার নেই। নিমিষেই সিংহটি শেষ করে দিলো তার শিকারকে।

গল্পটি থেকে শুধু একটা কথা-ই বলবো, আজকে কামরুজ্জামান সাহেবকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল-ফাঁসি দেয়া হচ্ছে, কারন তাঁর অপরাধ তিনি ইসলামপন্থী। কালো রঙের গরুটার প্রতি সিংহের নজর ছিলো কারণ সে ছিলো গরু, কালো সাদা বিষয় ছিলো না। শিকার করার পূর্বে সিংহ ফাঁদ পেতে তাকে আলাদা করার জন্য, কালো রঙের দোহায় দিয়ে অন্যদের কাছ থেকে আলাদা করেছিলো। আজকে তেমনি রাজাকারের দোহায় দিয়ে অন্য ইসলামপন্থীদের কাছ থেকে কাদের মোল্লাকে, সাইদীকে, কামরুজ্জামানকে, জামায়াত ইসলামীকে আলাদা করা হচ্ছে। ঘাড় লম্বা গরুর অপরাধ ছিলো সে ছিলো গরু, ঘাড় লম্বা কি ছোট তা সিংহের কাছে মুখ্য বিষয় ছিলো না। ঠিক তেমনি হেফাজতে ইসলামকে যখন শিকার করা হচ্ছে তখন দোহায় দেয়া হচ্ছে তাঁরা মধ্যযুগীয়। অন্য ইসলামপন্থীরা ভাবছেন এই ঘাড় লম্বাই সমস্যার মূল কারন, ও-কে মরতে দাও। ঘাড় লম্বা, রং কালো যেমনটা সিংহের শিকারের কোনো আসল কারন ছিলো না, তেমনি আজ কাফেরদের শিকারের টার্গেট-ও রাজাকার, মধ্যযুগীয় আসল কারন নয়। ঐগুলো বিভক্তি করার দোহায় মাত্র। আসল কারণ হচ্ছে তোমরা ইসলামপন্থী, আল্লাহ ও রাছুলের প্রতি তোমাদের ঈমান ও আস্থা রয়েছে, তোমরা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চাও, ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাও। এখানে সিংহের প্রতিক হচ্ছে শয়তান ও তার বাহিনী কাফের, মুশরিক, নাস্তিক, বাম, রাম, নাসরা, ইহুদি। আর গরুর গুলোর প্রতিক হচ্ছে ধার্মিক, মুমিন মানুষগুলো। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে, কারণ তাদের তাদের সংবিধানে আল্লাহর প্রতি ঈমান ও আস্থা রয়েছে যেটা নাকি কাফেরদের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। আজকে কের মোল্লার, কামরুজ্জামান সাহেবের, আল্লামা সাইদীর প্রতি যুলুমের দিনে, যারা তোমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছো, আল্লাহর কসম, সেই একই কারণে (ইসলামপন্থী হওয়ার কারনে) তোমাদেরকে একদিন নির্মূল করা হবে। হইতোবা ভিন্ন সময়ে ভিন্ন কারণ দেখানো হবে, কিন্তু মূল কারণ একটা-ই সেটা তোমাদের আল্লাহর প্রতি ঈমান ও আস্থা, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে প্রতিষ্ঠা। ভেবে নিওনা জামায়াত বা হেফাজত শেষ হলেই তোমরা বেঁচে গেলে। সাগরের ঢেউ যখন আসে, তখন কিনারার বড় দেয়ালে আগে বাধা পায়, কিনার থেকে দুরের ছোট ছোট দেয়ালগুলো কিনারার দেয়ালগুলোর অবদান বুঝতে পারে না। যখন ওই বড় দেয়াল ধ্বসে পড়ে, তখন-ই ছোট দেয়ালগুলো বুঝতে পারে, কিন্তু তখন ভেসে যাওয়া ছাড়া আর কিচ্ছু করার থাকে না। ঠিক তেমনি, বাম, রাম, নাস্তিক আওয়ামীদের ঢেউ লাগছে জামায়াতের গায়ে, অন্য ছোট ছোট ইসলামী দলগুলো কিছুই উপলব্ধি করতে পারছে না। যখন জামায়াত ভেঙ্গে পড়বে, তখন ভেসে যাওয়া ছাড়া আর তোমাদের কোনো উপায় থাকবে না। কেবলতো সংবিধানে আল্লাহর উপর আস্থা তুলে দেয়া হয়েছে, এই দেশে কোরআন সুন্নাহর আলোর পরিবর্তে হিন্দুস্থানী মুশরিকদের শয়তানের আলো জালাতে নেমেছে ওরা। এখন-ও সময় আছে, আল্লাহর রাশিকে আকড়ে ধরে এই ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করো। আমার কথাটাকে লিখে রেখো ডায়রিতে, সময় বলে দিবে আজকে যারা নীরব ভুমিকা পালন করছো, তারা কত বড় ভুল করছো।

বিষয়: বিবিধ

১৭৬৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

306617
০১ মার্চ ২০১৫ সকাল ০৮:৩৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই সত্য সবার বুঝা উচিত।
306635
০১ মার্চ ২০১৫ সকাল ১০:৩৪
হতভাগা লিখেছেন : বাংলাদেশের মুসলমানেরা শুধু নামেই মুসলমান , কাজে ও কর্মে না ।

তাই এদেশের মুসলমানেরা হিন্দুদের পূঁজায় যায় , আনন্দ করে , প্রসাদ খায় । খৃষ্টানদের বড়দিনেও শুভেচ্ছা জানায় আর বৌদ্ধদের বিভিন্ন পূর্ণিমায় তাদের নাচ দেখতে পছন্দ করে ।

তারা এটা মনে করে যে , ধর্ম যার যার উতসব সবার ।

একজন মুসলমান হিসেবে অন্য ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হবার সুযোগ নেই ।

আপনি কখনও কি দেখেছেন যে, আপনি যে হিন্দুদের পূঁজোয় নাচছেন ও প্রসাদ খাচ্ছেন সেই হিন্দু বন্ধুটি কি কোরবানীর দিন আপনার বাসায় গোশতের দাওয়াতে আসতে?

এরা এদের ধর্মের ব্যাপারে খুব সেনসিটিভ যদিও এদের ধর্ম আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য হবে না ।

আর আমাদের ধর্ম ইসলাম আল্লাহর মনোনিত ও পছন্দের - সেই আমরাই হর হামেশা শরিয়ত তথা ধর্মের বরখেলাফ করি !

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File