জলপথে লাশের মিছিল
লিখেছেন লিখেছেন রাসেল রুদ্র ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১২:০০:৩৭ রাত
লঞ্চ দূর্ঘটনায় আবারো নিভে গেছে ৭০টা জীবন প্রদীপ। মৃত্যু হয়েছে ৭০টা স্বপ্নের। আমরা স্থলে চলাচল করতে পারছি না পেট্রোল বোমায় ঝলসে যাচ্ছি। তাই বর্তমান হরতাল অবরোধে জলপথ অনেকের কাছেই প্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু সেখানেই কী নিরাপত্তা পেলাম ? অনেকটা, বোমার ভয়ে উঠলাম লঞ্চে পানি বলল পাইছি কাছে! সাধারণের মৃত্যু বাংলাদেশে কোন অসাধারণ কিছু নয়। সড়ক দূর্ঘটনায় যেখানে আমরা বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে আছি, ভবন ধসে মৃত্যুতে প্রথম স্থানে সেখানে মাঝে মাঝে নৌদূর্ঘটনায় ৭০টা লাশ নেহায়েত কমই বলা চলে ! এধরণের বিশ্লেষণ যদি করা হয় তাহলে বলতেই হয় আমরা রাবণের লঙ্কাসিটিতেআছি। যেখানে লাশ কোন ব্যাপারইনা। একটা লাশ যে একটা পরিবারের কাধে কতবড় বোঝা তা বোঝার সক্ষমতা আমরা অনেক আগেই হারিয়েছি। কবির ভাষাই,“বিংশ শতাব্দীতে মানুষের শোকের আয়ু বড়জোড় একবছর।”তারপরও একটি কথা ঘুরেফিরে সামনে চলে আসে যে, আমরা কি স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি কোনদিনই পাবো না ? সমাজে যদি সবাই এক একটা নন্দলাল হয়ে বসে থাকি তাহলে বোধহয় স্বাভাবিক মৃত্যু ভাগ্য জুটবে।
১৯৭৭ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ৩৭ বছরে ৪১৬টি নৌদুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দূর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজারেরও বেশী। প্রতিটির ক্ষেত্রেই দায়সারা তদন্ত কমিটি হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত কোন কার্যকারী পদক্ষেপ ন্ওেয়া হয়নি। আর অনেক তদন্ত কমিটির রিপোর্টও পাওয়া যায়নি। পদ্মা নদীতে এমভি মোস্তফা ডুবে যাওয়ার প্রাথমিক কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, দুই চালকের প্রতিযোগীতা। কিছু দিন আগেই শ্যালা নদীতে একই কারণে তৈলবাহী কার্গো ডুবে যাওয়ায় পুরো সুন্দরবন হুমকির মুখে পড়েছিল। কিন্তু, আবার কেন একই ধরনের একটি ঘটনায় ৭০টি লাশ? কর্তৃপক্ষ কোন ভাবেই এর দায় এড়াতে পারেন না। একই ঘটনা বারবার ঘটলে তাকে আর দূর্ঘটনা বলা যায় না। এটা নৌপথের হত্যাকান্ড! আমরা নৌপথে আর একটা খুনও দেখতে চাই না।
পরিশেষে দুঃখভরে বলতে হয়,আমাদের নিয়তিই বোধহয় এই যে, আগুন পানির মায়াবী খেলায় আচ্ছাদিত আমাদের বাঙালি জীবন!
…………………………………….
রাসেল আহমদ
প্রাবন্ধিক ও কথাসাহিত্যিক
কুষ্টিয়া।
ইমেইল-
………….. দৈনিক সকালের খবরের পাঠকরে মতামত পাতায় ২৫.০২.২০১৫ তে প্রকাশিত।………….
বিষয়: বিবিধ
৮২০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন