"শৈশবের পাঠশালা" ----------------
লিখেছেন লিখেছেন অভিমানী বালক ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:১৭:২৬ দুপুর
ক্লাস ফোর এর ছাত্রী, ছাত্রটি ক্লাস এইটে। দুজনের বাবা একই প্রতিষ্টানে চাকুরী করেন,সেই সুবাদে একই স্কুলে পড়াশোনা করে দুজনে। কিন্তু একজন আরেক জনকে চিনেনা।
ছেলেটি একদিন টিফিন পিরিয়ডে মেয়েটির কাছে এসে বলল ওইখানে তোমার বড় বোন ডাকতেছে। মেয়েটি সরল বিশ্বাসে স্কুলের এক কোনায় চলে যায়, তার বড় বোনকে খুঁজছে। আচমকা ছেলেটি সামনে এসে দাঁড়ালো এবং একটি কাগজ ধরিয়ে দিলো। মেয়ের বড় বোন ও একই স্কুলের উপরের ক্লাসে পড়তো। কাঁকতলিয় ভাবে বড় বোন সেখানে এসে উপস্থিত হয়। ঐ ছেলেটি যে তার বোনকে কিছু একটা দিয়েছে বড় বোন বুঝতে পেরেছে।
স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন জাগার কথা মনে, তাই বড় বোন ছোট বোনকে প্রশ্ন করে বসলো এখানে তুই একা একা কি করছিস? আর ঐ ছেলে তোর কাছে কি দিয়েছে?
ছোট বোন জোছনা সব কিছু বড় বোনের কাছে গড় গড় করে বলতে শুরু করে দিলো, যে তুমি নাকি আমাকে এখানে আসতে বলেছো, কিন্তু আমি এসে দেখি তুমি এখানে নেই। আমি তাহাকে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় আমার আপা, সে বলে আপা নয় আমি তোমাকে এখানে ডেকেছি। এই বলে কাগজটা আমার হাতে দিয়ে চলে গেলো। এবং ঠিক তখনই তুমি এসে উপস্থিত হলে।
তুই কি ছেলেটিকে চিনিস?
না আমি ছেলেটিকে চিনিনা, এবং আগে কখনও তার সাথে আমার কথা হয় নাই।
বড় বোন জোছনার হাত থেকে কাগজটা নিয়ে স্থান পরিবর্তন করে এবং জোছনাকে বলে ক্লাসে চলে যেতে। আড়ালে গিয়ে কাগজ খুলে দেখে এটি একটি প্রেম পত্র, যাতে লেখা আছে “আমি তোমাকে ভালবাসি”। মধ্যখানে একটি হার্টের ছবি আঁকা, এবং নিচে লেখা ভুলনা আমায় – পারভেজ।
দুই পরিবার একই সরকারি কলোনিতে থাকেন, পাশাপাশি না হলে ও একই এলাকা।
জোছনার বড় বোন ঐ দিন বাসায় গিয়ে বাবার কাছে ঘটনার সব কিছু খুলে বলে, এবং পারভেজের চিঠিটা ও বাবার কাছে হস্তান্তর করে। বাবা এসব শুনে এবং চিঠি দেখে অগ্নিশর্মা হয়ে খোঁজ নিতে শুরু করেন কার ছেলে হতে পারে। পরের দিন জানতে পারেন তার এক কর্মচারীর ছেলে এই ঘটনার নায়ক।
জোছনার বাবা তৎক্ষণাৎ পারভেজের বাবাকে ডেকে চিঠি দেখিয়ে যতটুকু অপমান করার তার চেয়ে বেশি অপমান করে দিলেন, এবং শাসিয়ে বললেন আজকের পর থেকে তোমার ছেলেকে আমার মেয়ের আশে পাশে যেন না দেখি। আর যদি এই ঘটনার পুনারভৃত্তি পরবর্তীতে হয় তাহলে পরিণতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
পারভেজের বাবা নীরবে অপমান সহ্য করে বাসায় চলে আসেন, এবং আদরের ছেলেকে হাতের কাছে পেয়ে ও যান। শুরু হয় শব্দ ছাড়া প্রহার, বসের অপমান ছেলের উপর থেকে প্রতিশোধ নেয়া হচ্ছে রীতিমত। পারভেজ জানতে চাচ্ছিলো কি তার অপরাধ, কিন্তু কোন কথা বলতে রাজি নয় তার বাবা।
এক পর্যায়ে পারভেজের মা এসে ছেলেকে রক্ষা করেন তার বাবার হাত থেকে। রাতে খাবার টেবিলে বসে পারভেজকে সতর্ক করে দেন তার বাবা। তখন পারভেজ বুঝতে পারে তার অপরাধ কি ছিল। কিন্তু সে চিন্তা করেনি ঘটনা এতটুকু গড়াবে।
পারভেজ প্রচণ্ড জেদি ছেলে, তাই সে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা শুরু করলো। নিজে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো হয় মরবো না হয় জোছনার সাথে প্রেম করবো। যেমন প্রতিজ্ঞা তেমন কাজ, তাই তার প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী কাজ শুরু করে দিলো।
পারভেজের ছোট একটা বোন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে, সেই সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা শুরু করলো পারভেজ। বোনের হাতে চকলেট, চানাচুর, বরই, আমড়া এগুলো কিনে দিয়ে বলতো শুধু তুমি খেওনা তোমার জোছনা আপুকে দিও। যদি তোমার জোছনা আপুকে না দাও তাহলে কাল থেকে আর এগুলো কিনে দিব না। বাচ্চা মানুষ তাই জোছনাকে ও দিতে বাধ্য হতো, না হয় পরের দিন এগুলো পাবেনা।
এভাবেই দিন গড়াতে থাকে আর পারভেজের প্রতি জোছনা আস্তে আস্তে দুর্বল হতে থাকে। পরের বৎসর জোছনার বড় বোন এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে মাধ্যমিক স্কুল ছেড়ে কলেজে চলে যায়। পারভেজ এবং জোছনার খেলের মাঠটি একেবারে ফাকা হয়ে যায়। কারণ বাধা দেয়ার মত এখন আর কেউ নেই।
দুজনের প্রেম চলতে থাকে দুর্দান্ত, যদি ও পারভেজ জোছনার কাছে খুব একটা আসতো না কিন্তু প্রেম পত্র লেনদেন হতো হর-হামেশা। তত দিনে জোছনা ও পেকে গেছে পুরোদমে। স্কুলের গণ্ডি পর্যন্ত তাদের প্রেম গোপনই ছিল, তবে মাঝে মধ্যে পাড়া প্রতিবেশীর সমালোচনার স্বীকার হতে হয়েছে। হয়তো কিছুটা সামলে নিয়েছিলো নিজেদের বুদ্ধির কারণে। কিন্তু কতদিন এভাবে সামলে নিবে, কথায় আছে না – খুন, প্রেম, সিগারেটের গন্ধ চাপিয়ে রাখা যায় না। তাই জোছনা ও পারভেজের প্রেম আর চাপা থাকলো না, এক কান দুই কান করে রটনা হতে থাকলো তাদের প্রেম কাহিনী। যতই তারা অগ্রসর হচ্ছে ততই বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হচ্ছে। এরই মাঝে ঘঠে যায় জোছনার জীবনের চরম এক দুর্ঘটনা………………
চলবে..............
বিষয়: বিবিধ
১৪৪০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন