"প্রবাসীরা খাঁচায় বন্দী একটা পাখি"

লিখেছেন লিখেছেন অভিমানী বালক ১৮ এপ্রিল, ২০১৬, ০২:১২:৫২ দুপুর

খাঁচার পাখি যখন খাঁচায় বন্দী থাকে তখন পাখিটি মনিবের খুব আদরে থাকে, নিয়মিত খাওয়া নিয়মিত যত্ন নেওয়া মনিবের যেন একটা রুটিনের অন্তর্ভুক্ত।

কিন্তু পাখিটি কতটুকু তৃপ্তিবোধ করে খাঁচার ভিতরে থেকে?

নিয়মিত খাবার দাবার আদর যত্ন সবই পাচ্ছে, কিন্তু কি যেন একটা বাকি থেকে যায়।

সব পেয়ে যেন কিসের অভাব বোধ করে।

সব পাখিদের মত থাকে রোদ বৃষ্টি ঝড়ে আহারের সন্ধান করতে হয় না, ঝড়ে বাসাটি লন্ডভন্ড করে দিয়েছে তাই নতুন বাসা করার জন্য চিন্তা করতে হয় না।

খড় কুটো দিয়ে দিনের পর দিন বাসা মেরামত করতে হয় না।

কিন্তু তবু ও পাখিটি খাঁচায় থাকতে চায় না।

ভালো খাবার পেয়ে তার পেট তৃপ্ত থাকে কিন্তু তার মন তৃপ্ত থাকেনা।

তার একটাই অভাব স্বাধীনতার।

সব পাখিদের মত নিজের স্বাধীন মতো ঘুরতে পারে না। ইচ্ছে হলে ও এ ডাল ও ডাল ঘুরতে পারে না।

তার মনে শুধু এটাই থাকে- পেট ভরে বন্দী থাকার চেয়ে নিজের স্বাধীন ভাবে কম খেয়ে থাকা ও অনেক ভালো।

রিযিকের মালিক তো ওই মনিব নয়, রিযিকের মালিক একমাত্র মহান আল্লাহ। তিনিই প্রত্যেকটি জীবের রিযিক তৈরি করে রেখেছেন।

খাঁচায় বন্দী থাকা একটি পাখি আর একজন প্রবাসীর মানসিক অবস্থার তেমন কোন তফাৎ নেই।

শুধু একটি তফাৎ আছে সেটা হলো নিজে নিঃস্ব হয়ে পরিবার পরিজনকে সুখে রাখা।

প্রবাস নামের খাঁচায় বন্দী থাকা একজন প্রবাসীর মনে অনেক স্বপ্ন থাকে, তার ও ইচ্ছে করে একদিন এই বন্দী খাঁচা থেকে বের হয়ে নিজের জন্মভুমিতে গিয়ে নিজের মত করে স্বাধীন হয়ে সমাজে চলাফেরা করা।

কিন্তু প্রবাসীদের দুর্ভাগ্য এই খাঁচা থেকে সহজে কেউ মুক্তি পেতে পারে না।

কারন যুগ দেড় যুগের ও বেশী সময় লেগে যায় পরিবার পরিজনকে খুশি করতে, যখন পরিবার পরিজনকে খুশি করার মোহ মাথায় ঢুকে যায় তখন নিজের কথা ভুলেই যায়।

কিন্তু যখন নিজের সুখের কথা মাথায় আসে তখন তার দেহটা আস্তে আস্তে নিথর হয়ে আসে। তখন এই নিথর দেহটা পরিবার পরিজনের কাছে অপছন্দনীয় হয়ে যায়।

কেউ আর পাশে থাকতে চায় না, ভাবতে চায় না এই নিথর দেহটাই তো এক সময় পরিবারের চাকাটা ঘুরিয়েছিলো। সবাই থাকে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, আর নিথর দেহের মানুষটা অতীতকে স্মরন করে নিজের ভবিষ্যত গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

কিন্তু শুধু মনে বল থাকলে হয় না, দেহের বলের অবশ্যই প্রয়োজন। ঘরে বাহিরে লাঞ্চনা গঞ্জনার মুখোমুখি হতে হয়।

ভেংচি কেটে কেউ বলে এত বছর বিদেশ থেকে কি করেছো?

যেই লাউ সেই কদু, তাহলে শুধু শুধু জীবনের এতটা সময় নষ্ট করেছো কেন?

জীবনের ভালো সময়টুকু প্রবাসে কাটিয়ে দেয়া প্রবাসী হয়তো বাহিরের লোকের তিরষ্কার মেনে নিতে পারে, কিন্তু খুব আপনজনেরা যখন তিরষ্কার করে তখন হয়তো বাহিরের চোখে অশ্রুক্ষরন হয় না ঠিকই, কিন্তু ভিতরের চোখে রক্তক্ষরন হয় নিশ্চয়।

আজ অবধি আমি শুনি নাই কোন প্রবাসীকে তার পরিবারের সদস্যরা বলেছে - অনেক হয়েছে এবার চলে আয়।

কারন কি?

কারন একটাই একটা ATM বুথ বন্ধ হয়ে যাবে।

কে চায় একটা ATM বুথ বন্ধ হয়ে যাক, সবাই চায় এই বুথকে সচল করে রাখতে।

কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো এই ATM নামক সাদা চুলের কুজো হয়ে যাওয়া মানুষটিকে কেউ সচল করে রাখতে চায় না।

গোটা ২/১ টা আছে হয়তো কিন্তু আমার নজরে এখনো ও পড়ে নাই।

সবকিছুর মুলে রয়েছে টাকা,

ATM বুথ থেকে যতক্ষন টাকা বের হয় ততক্ষন আমরা তার আশে পাশে ঘুরঘুর করি।

টিক একজন প্রবাসী ও তেমন।

ভবিষ্যত প্রবাসীদের জন্য একটাই পরামর্শ-

নিজেকে মোমবাতি বানাবেন না, পরিবার পরিজনের পাশাপাশি নিজের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রাখা উচিত।

কারন প্রবাসে সারা জীবন থাকা সম্ভব হবে না, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা।

বিষয়: বিবিধ

১৬৮০ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

366085
১৮ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ০২:১৮
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : ধন্যবাদ জানাই সুন্দর লিখা এবং পরামর্শের জন্য।
১৮ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ০২:৫৬
303726
অভিমানী বালক লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ।
366097
১৮ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ০৩:৩২
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : আসলেই হৃদয়স্পর্শী লেখা। মানুষ শুধু মানুষের কর্মটা নিংড়ে নিতে চায়, মানুষটাকে না। সোনার তরী কবিতার মতই আপনাদের জীবন আল্লাহ স্বার্থপর মানুষগুলোকে একটু দয়া মায়া দিক
১৮ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৮:০৬
303743
অভিমানী বালক লিখেছেন : অনেক সুন্দর মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
366101
১৮ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ০৩:৪৯
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : ততদিন পর্যন্ত ভালবাসা পায়, ATM বুথ থেকে যতদিন বের হবে।ATM বুথ নষ্ট হলে কেউ আর ধারে কাছেও আসবেনা ।
প্রবাসীদের মনের কথাগুলি লেখার জন্য ধন্যবাদ জানবেন।
১৮ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৮:০৮
303744
অভিমানী বালক লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ।
366109
১৮ এপ্রিল ২০১৬ বিকাল ০৫:০১
আফরা লিখেছেন : জী ভাল লাগল ধন্যবাদ ।
১৮ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৮:০৮
303745
অভিমানী বালক লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ।
366425
২০ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ০১:৪৯
হতভাগা লিখেছেন : দেশে কি ATM বুথ বানানোর জন্য পরিশ্রম করা যেত না ?

ঐ দেশে কি জিনিসপত্রের দাম কম ?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File