প্রবাসীরা কি খুব সুখে আছে?
লিখেছেন লিখেছেন অভিমানী বালক ১৬ নভেম্বর, ২০১৫, ০৯:২৯:০৬ সকাল
প্রবাসীরা কেন এত দেরীতে বিয়ে করে?
প্রশ্নটা খুব সহজ, কিন্তু উত্তর দিতে দাঁত ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভবনা আছে।
আমি নিজে ও এমন বিভ্রান্তিকর প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি, উত্তর খুজতে বেশী বয়সে বিয়ে করা কাউকে প্রশ্ন ও করেছি।
উত্তরটা বিভ্রান্তিকর-
বিশেষ করে আমাদের সিলেটের একটা ঐতিহ্য আছে, পরিবারের একজন সদস্য যদি বিদেশ চলে যায় তাহলে দেশে থাকা বাকি সদস্যরা এমন ভাব নিয়ে চলাফেরা করে যেন মনে হয় বারাক ওবামার ছেলে সন্তান উনারা।
যে পরিবার ছিলো কৃষির উপর নির্ভরশীল, সেই পরিবার হয়ে যায় বিদেশে থাকা ব্যাক্তির উপর নির্ভরশীল।
যে পরিবার ছিলো দেশে চাকুরিজিবী কারো উপর নির্ভরশীল, সেই পরিবার হয়ে যায় বিদেশে থাকা ব্যাক্তির উপর নির্ভরশীল।
যে পরিবারে এক বেলা লাল চা খেতে প্রয়োজনবোধ মনে করতো না, সেই পরিবারে তিন বেলা দুধ চা না খেলে সমাজে নাকি ইজ্জত থাকবে না।
যে ভাইটা এক কিলোমিটার হেটে হেটে স্কুলে যেতো, তার নাকি বাই সাইকেল না হলে চলে না।
যে বোনটার তিব্বত পাউডার হলেই চলতো, তার নাকি এখন বিদেশী প্রসাধনী না হলে বান্ধবীদের সাথে তাল মিলাতে পারে না।
এক সময় বাবার নাসির বিড়ি হলে চলতো, কিন্তু এখন স্টার ফিল্টার না হলে ত্যাজ্যপুত্র করে দিবে বলে হুমকি দেয়।
পরিবারের একজন সদস্য বিদেশে থাকাতে সবার এত এত বিলাসিতার চাহিদা বেড়ে যায়।
আর পরিবারের এত বিলাসিতার চাহিদা মেটাতে প্রবাসে থাকা ব্যাক্তিটি নিজের কথা ভুলে যায়। শুধু একটাই ভাবনা মনে থাকে মাস শেষে ৪০/৫০ হাজার টাকা বাড়িতে দিতে হবে। না হয় বাড়ির সবাই অভাব করবে।
অন্যের অভাব মেটাতে এক সময় নিজেই অভাবি হয়ে যায় বেচারা। বিলাসিতার চাহিদা আর অভাব মেটাতে প্রবাসী শুধু প্রস্তুতি নিতে থাকে এই বছর না আগামী বছর গিয়ে বিয়ে করবো,কিন্তু প্রবাসীর আগামী বছর যেন আর শেষ হয় না।
অবশেষে যখন বিয়ের পিড়ীতে বসে তখন তার বয়স ৪০ কিংবা ৪৫। মানুষের গড় আয়ু ৬০/৬৫, এই বয়সে জীবনটাকে কি উপভোগ করবে?
৪৫ বছর বয়সে বিয়ে করে আবার চলে আসে নিজ গন্তব্য স্থলে, কিন্তু মন শরীর যে আর মানেনা, তবু ও ভাবে দেশে থাকা ভাইগুলোকে যদি ইনকামের একটা পথ খুলে দিতে পারে তাহলে হয়তো নিজে বাকি জীবনটুকু একটু আয়েশে কাটাতে পারবে।
ধার কর্য করে যদি দেশে থাকা ভাইকে কোন একটা ব্যাবসা প্রতিষ্টান করে দেয়, এক সময় এই প্রতিষ্টানের বারিন্দায় যাওয়া তার জন্য নিষেধ হয়ে দাড়ায়।
যেখানে ভেবেছিলো প্রবাসের সমাপ্তি করবে সেখানেই আবার বাধ্য হয়ে প্রবাস জীবন শুরু করতে হয়। এতদিনের অর্জিত যা ছিলো সব তো পরিবারের সবার জন্য বিলীন করে দিয়েছে, এখনতো নিজের বউ বাচ্ছার জন্য কিছু করতে হবে।
শুরু হয় মানসিক যন্ত্রনা আর শারিরীক অপারগতার বৈরী বর্বরতা। আফসোসের দলের অন্তর্ভুক্ত করে নেয় বৈরী মানুষটি।
কিছুই করার নেই, কারন পরিস্থিতি প্রতিকুল পরিবেশে।
নিঃস্বঙ্গ মানুষটি মৃত্যু পুর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত প্রবাসী থেকে যায়, আর যাদের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলো তারাই প্রকৃত সুখী মানুষ হয়ে সমাজে বিচরন করে।
হায়রে প্রবাস!!!!
নিঃস্বঙ্গতার সুন্দর এক নাম প্রবাস।
কষ্টের দৃশ্য দু নয়নে দেখার এক নাম প্রবাস।
অনাকাংখিত কিছু অনুভব করার এক নাম প্রবাস।
লালিত স্বপ্নকে কবরে দাপন করার এক নাম প্রবাস।
অনিদ্রায় জেগে জেগে মৃত্যুপুরীতে গমন করার এক নাম প্রবাস।
অবাঞ্চিত অবহেলিতদের তালিকায় নাম লেখানোর এক নাম প্রবাস।
জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়ে কফিনের ভিতর লাশ হয়ে মাতৃভুমিতে ফিরে যাওয়ার এক নাম প্রবাস।
সব কিছুই আছে কিন্তু কি যেন নেই, তার এক নাম প্রবাস।
প্রবাসীরা খুব সুখেই আছে,
তাইতো প্রবাসীরা দেরীতে বিয়ে করে।
কেউ একজন বলেছিলো, যদি আমি পুনঃজনম ফিরে পাই তাহলে দেশে ডাল ভাত খেয়ে থাকবো কিন্তু প্রবাসীর তালিকায় নাম লিখাবো না।
বিতাড়িত মন ডুকরে কেঁদে বলে-
ভালো থাকুক দেশের সবাই, আমরা কষ্টে আছি আমাদেরকে কষ্টে থাকতে দেন, কারন কষ্ট গুলা এখন আর কষ্ট মনে হয়না।
বিষয়: বিবিধ
১৩০৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন