ইয়াকা না’বুদু, ওয়া ইয়াকা নাস্তাঈন!
লিখেছেন লিখেছেন মহুয়া ০৩ এপ্রিল, ২০১৬, ০৭:২২:৩২ সন্ধ্যা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
ইয়াকা না’বুদু, ওয়া ইয়াকা নাস্তাঈন!
ইয়াকা না’বুদু, ওয়া ইয়াকা নাস্তাঈন!
এই “ না’বুদু” র- মধ্যে আবাদা শব্দটি লুকিয়ে। আমরা জানি ‘আবদ’ শব্দের অর্থ দাস, আর ‘আবাদা হচ্ছে, দাসের করনীয় সমস্ত কাজ ! আবাদাকে - ইবাদাত বললে আরও স্পষ্ট হয়!
ইবাদাত শব্দটির সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে কয়েকটি বিষয়ঃ ১) প্রশংসা আর আরাধনা ২) আনুগত্য আর আত্মসমর্পণ ৩) সমীহ আর অনুগ্রহ কামনা
একজন দাস তার প্রভুর প্রশংসা আর আরাধনা করবে, তার প্রভুর আনুগত্য করবে, প্রভুর ইচ্ছার কাছে সমর্পিত থাকবে, প্রভুর ইচ্ছায় বা আইনে বা হুকুমে চলবে, তাঁকে সমীহ করবে আরে প্রভুর অনুগ্রহ কামনা করবে!
আমরা যখন বলছি – ইয়াকা না’বুদু, ওয়া ইয়াকা নাস্তাঈন – তখন আসলে কি বুঝাতে চাইছি?
“আমরা শুধু তোমারই এবাদত করি, শুধু তোমারই কাছে সাহায্য চাই” । এ বাক্যটি উচ্চারণ করে একজন মুসলিম আল্লাহর প্রতি তার প্রতিনিয়ত আস্থা ও ভরসার কথা পুনঃব্যাক্ত করছে। একজন স্বাধীন মানুষ যখন আল্লাহ পাককে প্রভু হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে, আল্লাহর ইচ্ছা আর আইন কানুনের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, সে তো শুধু আল্লাহর কাছেই সে অনুগ্রহ কামনা করবে, সাহায্য চাইবে!
আর কারো কাছে নয়!
ভিক্ষাবৃত্তিকে খুব ঘৃণার চোখে দেখেছে ইসলাম। কেয়ামতের দিন ভিক্ষুকের মুখে চামড়ার আচ্ছাদন থাকবে না। ইসলামের নবী ভিক্ষুককে কুঠার ধরিয়ে দিয়েছেন, কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি কর, মানুষের কাছে হাত পাত পাতবে না! ‘উপরের হাত নীচের হাত থেকে উত্তম, নিচের হাত সেই হাত- যে হাত পেতে সাহায্য ভিক্ষা করে। সেটা উত্তম হতে পারে না।
একজন সুস্থ স্বাভাবিক, স্বাধীন, মানুষ কারো যখন কাছে হাত পাতে, সে তার আত্মমর্যাদাকে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়। আরেকজন মানুষকেও তো দুই হাত পা দিয়েই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন; বেশি নয়! একজন আত্মমর্যাদা সম্পন্ন, স্বাধীন মানুষ মাথা উঁচু করে চলবে, কেবল আল্লাহর কাছেই সে মাথা নোয়াবে, কোন সৃষ্টির কাছে নয়, নয় কোন মানুষের কাছে।
একটা স্বাধীন স্বত্বার মত – একটা স্বাধীন জাতিও তেমনি। সে জাতি যখন ভিক্ষার ঝুলি নিয়েই ঘুরতে থাকে - তার মর্যাদা সে নিজেই তো ধূলায় মিশিয়ে দেয়, সে জাতিকে কেউ কোন দিন সম্মান করবে ?
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৫ বছর পূর্তিতে কত গর্ব – কত উচ্ছ্বাস – কত ভাবে এটাকে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে রূপ দেয়ার চেষ্টা! এর অর্জনে সাধারন মানুষের কোন ভূমিকা নেই, যেন ছিলও না। কেবল জাতির পিতা জাতির কইণ্যা, জাতির নাতি পুতিদের গর্ব গাথায় জনজীবন অতীষ্ট ! আহারে! একটা গর্বিত জাতি! অনেকেই সে তালে তা ধীণা ধীণ নেচে চলেছেন, কেউ বুঝে, কেউ কিছু না বুঝেই।
গত ৪৫ বছরে, ভিক্ষার অর্থ দিয়ে জাতির অভাবী মানুষদের কোন মঙ্গল হয় নি, হয়েছে নেতৃস্থানীয় মানুষদের এবং এখনো হচ্ছে! একজন মন্ত্রী – বা এম পি কিম্বা তার ক্ষুদ্র এক চামচার ১০ বছর আগের অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে ১০ বছর পরের অবস্থা তুলনা করলে একজন মূর্খও বুঝবে বিষয়টা! গত ৪৫ বছরে কোটি কোটি ‘ভিক্ষার টাকা – লোপাট হয়েছে, এগূলো সবাই ক্ষমতাসীনদের ‘পেয়ারা বা খাস লোকদের পকেটে ! রক্ষকই ভক্ষক হয়েছে, হচ্ছে। ভিক্ষার অন্নে এরা কোটিপতি হয়ে গেছে। একটা জাতিকে চিরস্থায়ী ভিক্ষার তকমা লাগিয়ে দিয়েছে যে ‘ভিক্ষুকের দল, এই ভিক্ষুকদের কোন বিচার দূরের কথা- স্বাধীনতার ‘পদক ও পেয়েছে অনেকে! এখন তো ব্যাংক থেকেই টাকা গায়েব হয়ে যাচ্ছে- যেন টাকার পাখা গজিয়েছে – । বলা হচ্ছে হ্যাকিং হয়েছে- সে বিভাগ -আই টি সেক্টর আবার জাতির নাতির দখলে। এই ভিখারিনী দেশের মন্ত্রী পূত্তুর এর বেতন নাকি আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামার চাইতেও – বেশী! উপদেষ্টা হওয়ার জন্য, উপদেশ দেয়ার জন্য কোন জ্ঞাণ গরিমা বা অভিজ্ঞতার দরকার পড়ে না আজকাল বাংলাদেশে ! জাতির নাতি – কাজেই তার আর কোন যোগ্যতার দরকার কী! ভিক্ষার ঝুলি গলায় না ঝূলালেও –সে ভিক্ষার পয়সা আত্মসাৎ করার আরো অনেক রাস্তা বাঙ্গালী জানে!
এ অবস্থার পরিবর্তন করতে এ জাতির সাধারণ মানুষদের কি ইচ্ছা করে না! ইচ্ছা না থাকলে আর উপায় কী!
ইচ্ছে থাকলেই কেবল উপায় হতে পারে! এর জন্য প্রথমে চাই ইচ্ছা, আগ্রহ, এরপর প্রচেষ্টা! চাই চরম প্রচেষ্টা । কারন, যতক্ষণ একটা জাতি নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করছে, আল্লাহ তাদের সাহায্য করবেন না!
এই প্রচেষ্টার প্রথমে আসবে সুবিচার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি! দেশে যতদিন সুবিচার প্রতিষ্ঠা না হচ্ছে, এ সব ভিখারি বা তাদের সহচরগুলো, যারা একটা জাতিকে ভিখারির চিরস্থায়ী পোষাক পড়িয়ে দিয়েছে, এদের দৌরাত্ম কক্ষনো কমবে না! একটা সমাজ ব্যবস্থা ভাল হওয়ার প্রথম শর্ত সেখানে ইনসাফ থাকতেই হবে! দুঃখের বিষয়, শুধু বাংলাদেশ কেন, ‘ইনসাফ জিনিসটা প্রায় সমস্ত মুসলিম সংখ্যাগরীষ্ট দেশগূলো থেকেই নির্বাসণে গেছে! অথচ সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠায় ইসলামের ভূমিকা পরিষ্কার! সমাজের নেতৃস্থানীয়দের অন্যায় অবিচার আর ভোগ বিলাস আর সাধারণ মানুষদের দুর্ভোগ এর কারণেই, রোমান আর পারস্য দুই পরাশক্তির পতন হয়েছিল, ইসলামের পতাকা তলে এসে, সুবিচার আর সাম্যের স্বাদ পেয়েছিল এ জাতির আম জনতা ! তারা দলে দলে ইসলামে অনুপ্রবেশ করেছিল- তরবারির ভয়ে নয়, ইসলামের ইনসাফ আর সাম্যনীতিতে মুগ্ধ হয়ে, যদিও ইসলামের শত্রুরা উল্টোটা বলতে চায়! আজো অনেক উন্নত সমাজ ব্যবস্থার মানুষ কোন ভয়ে বা চাপে নয়, ইসলামের নৈতিকতার- বিধানের শ্রেষ্ঠত্বে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করছে!
প্রশ্ন হতে পারে, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি কী করতে পারি! আমার নিজেকে আমি ইনসাফের আলোকে তৈরি করতে পারি। আমি নিজে যদি কোন অন্যায়- না করি, কাউকে অন্যায় করতে সুযোগ না দেই, অন্যায়ের প্রতিবাদ করি, আমার মত যারা অন্যায় অত্যাচারের শিকার – তাদের পাশে দাঁড়াই, আমার মত আরও হাজারো মানুষ নিয়েই তো একটা জাতি গড়ে উঠে । নয় কী? সমস্যা হল, ব্যাধি সংক্রামক, স্বাস্থ্য নয়। তাই এই ভিক্ষাবৃত্তির ব্যাধি গোটা জাতিকে যেন গ্রাস করে ফেলেছে, কে কার চয়ে বেশী ভিক্ষা জুটাতে পারবে- তার এক উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা চলছে যেন চারপাশে! হারাম হালালের পরোয়া নেই! কারো মনেই হচ্ছে না- দুদিনের দুনিয়া! আমাকে জিজ্ঞেস করা হবে এ বিষয়ে, আমাকে আমার কর্মের “কর্মফল দেয়া হবে!
প্রসঙ্গ ছিল, আল্লাহর দাসত্ব- আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাওয়া! আমরা এখন হয়ে গেছি, আমাদের ইচ্ছার দাস । এ জন্য আমরা আল্লাহর কাছে নয়, সাহায্য চাইছি অন্যদের কাছে! ইচ্ছার দাসত্ব করে – অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে- মানুষের দাসত্ব করে যতবারই ‘প্রতিদিন ইয়াকা না’বুদু, ওয়া ইয়াকা নাস্তাঈন" বলি না কেন, তা এক ধরনের মিথ্যাচার নয়!
বিষয়: বিবিধ
১৯৬৮ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শিরোনামে বানানটি দৃষ্টিকটু দেখাচ্ছে অযথা 'ক্ক' ব্যাবহার করার ফলে। বাংলায় এটা যৌক্তিক হতো বেশী যদি লেখা হতো, 'ইয়্যাকা না'বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাঈন' লিখলে। (এখান ক্বফ নয়, বরং কাফ রয়েছে)
ধন্যবাদ, যদি সংশোধন করে নেন।
কিছু কিছু বাংলা উচ্চারন লেখার ব্যাপারে দ্বিমত থাকলেও, জনমত উপেক্ষা করার বিষয় নয়! আপনাদের মত ‘বিজ্ঞ জনের পরামর্শ মেনে নিলাম। আরবী অক্ষর- জিম হা বাংলায় উচ্চারন সঠিক ভাবে লিখা গেলেও ‘খা’ এর ব্যাপারে কি বলবেন? যাহোক, বানান এর শুদ্ধতা দেখতে গিয়ে আশা করি বিষয় বস্তু আপনাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় নি!
উচ্চারণের শুদ্ধতা দেখতে গিয়ে আশা করি বিষয় বস্তু আপনাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় নি!
উপরের মন্তব্য ১ ও ৩ এর পরামর্শ কার্যকর করা উচিত!
পড়লাম, দোয়া করি, জাযাকুমুল্লাহ..
আলহামদুলিল্লাহ!
কেউ দেখি বিষয় বস্তু নিয়ে কথা বলেন না! সবাই দেখি বানান আর উচ্চারণে সর্বশক্তি বিনিয়োগ করে ফেলেছেন!
সেদিন একটা ‘লেকচার শুনছিলাম, উপমহাদেশে হাফেজ আর ক্বারীর সংখ্যা মাশাল্লাহ বেড়ে যাচ্ছে, কিন্তু কুরআনের জ্ঞাণ ও গবেষণা নিয়ে মাথা ঘামানোর পরিমাণ নিতান্তই কম! সঠিক উচ্চারণে কুরআন পড়া ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ – কোন সন্দেহ নেই; কিন্তু যারা জণ্মগত ভাবে আরব নয়, তাদের জন্য, কুরআনএর মেসেজ অনুধাবন করাটা কি আরও অধিক গুরুত্বপূর্ণ নয়!
বিষয়বস্তু প্রসংগে আলোচনায় যেতে চাইনি! কারণ শুরু করলে চালিয়ে যেতে হবে, অথচ হাতে সময় ছিলনা!
অজ্ঞতা, অক্ষমতা ও মিথ্যাচার এক জিনিস নয়! আপনার আলোচনায় প্রান্তিকতা রয়ে গেছে, শব্দপ্রয়োগে আরো নমনীয়তা থাকা উত্তম হতো!
আপনার লেখাটির উপর আমার আরো পর্যবেক্ষণ আছে, ভবিষ্যতের জন্য তুলে রাখলাম, যখন বলার মত হবে- বলবো!
জাযাকিল্লাহ..
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
আরম্ভ করছি আল্লার নামে, যিনি পরম করুনাময় ও অতিশয় দয়ালু।
# আয়াতে বিসমিল্লায় ১৯ টি অক্ষর আছে। কোরানের প্রতিটি সুরার প্রথমে (সুরা তওবা বাদে) আয়াতে বিসমিল্লাহ আছে। পবিত্র কোরানে ১১৪ টি সুরা আছে। ১১৩টি সুরার সূচনায় আয়াতে বিসমিল্লাহ আছে। ১৯ সংখ্যাটি কোরানের অলৌকিকত্বের একটি বিশেষ ভুমিকায় অবস্থান করে। কোরানের সূচনাতেই ১৯ সংখ্যা বিশিষ্ট আয়াতটি স্থাপিত হল। এই প্রসঙ্গে স্মরণযোগ্য যে, সুরা নমলের ৩০ আয়াতে আল্লাহ আয়াতে বিসমিল্লাহ স্থাপন করে তার সংখ্যা ১১৩+১=১১৪ পুরা করলেন, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ফাতেহা শব্দের অর্থ উন্মুক্ত করা বা খোলা। মিফতাহ শব্দ যা একই শব্দাগত, অর্থ চাবি। সুরা ফাতেহা কোরানের সূচনা সুরা তাই এর নাম সুরা ফাতেহা। এসুরার আরও কয়েকটি নাম রয়েছে;-যেমন, শাফীয়া, কাফিয়া, উম্মুল কোরআন, কাসাসুল কোরআন, এ সুরার আর এক নাম সালাত। এতে সাতটি আয়াত রয়েছে। আয়াতের ব্যাপারে ইমামগনের মাঝে মতভেদ আছে, কেউ কেউ বিসমিল্লাকে সুরার অংশ করে,শেষের দু আয়াতকে এক করে সাত আয়াত বলেন। আবার কেউ বিসমিল্লাহকে বাইরে রেখেই সাত আয়াত গোনেন।মূলত সাত আয়াতে মতভেদ নেই। যারা বিসমিল্লাকে সুরার অংশ বলেন, তারা শব্দযোগে পড়া নামাজে বিসমিল্লাহ শব্দ করে পড়েন। আবার যারা বিসমিল্লাহকে বাইরে রাখেন, তারা শব্দযোগে পড়া নামাজে তা চুপি চুপি পড়েন।
(১)
الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
আর্থাৎ; সমস্ত প্রশংসা ও যাবতীয় কৃতজ্ঞতা সেই মহান আল্লার, যিনি বিশ্ব ব্রম্ভান্ডের অধিপতি।
# আলম শব্দের অর্থ দুনিয়া বা বিশ্ব । আলামীন বহুবচনে, অর্থাৎ বিশ্ব ব্রম্ভাণ্ডের, চন্দ্র, সূর্য্য , গ্রহ, নক্ষত্র,গ্যলাক্সী, ছায়াপথ, ইত্যাদী দৃশ্য-অদৃশ্য যাবতীয়ের। (হামদ শব্দটি তারিফ ও শোকর এর যৌগিক শব্দ)
(২)
الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِ
অর্থাৎ;-পরম করুনাময় ও অতিশয় দয়ালু।
# প্রথম আয়াতে যে রবের (প্রতিপালক)কথা বলা হয়েছে,পরের আয়াত গুলোতে সেই রবের বৈশিষ্টগুলো বর্ননা করা হচ্ছে।
(৩)
مَـالِكِ يَوْمِ الدِّينِ
অর্থাৎ;-প্রতিদান দিবসের মালিক।
# কেমন রব? যিনি কর্মফল প্রদানের দিনের একছত্র মালিক। দীন শব্দটির অর্থ-বদলা বা প্রতিদান।(কামা তাদীনো, তুদানো, যেমন করবে তেমন পাবে)। প্রশ্ন হতে পারে-আল্লাহতো সর্বাবস্থায় সব কিছুরই মালিক, তবে কেন বিশেষ ভাবে ঐ দিনের কথা বলাহল? বাহ্যিক জীবনে আল্লাহ মানুষ কে ব্যবহারিক দ্রব্যাদি,ধন-সম্পদের আংশিক মালিকানা, এই দুনিয়ায় দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু শেষ বিচারের দিন সমস্ত আংশিক মালিকানা বিলুপ্ত করা হবে। এমনকি যে হাত, যে পা আমার ছিল সেও আমার আজ্ঞা বহ অধীন থাকবেনা। হুংকার শোনা যাবে;-‘ লে মানিল ইয়াওম?’– আজকের দিনটি কার? উত্তর শোনা যাবে-‘ লিল্লাহীল ওয়াহিদীল কাহহহার।‘-- এক মাত্র সেই আল্লার যিনি সর্বত্র ব্যাপি। প্রথম তিনটি আয়াতে যা বলা হয়েছে তা আল্লাহকে উদ্দেশ্য করেই বলা হয়েছে, কিন্তু তা গায়েবানা আন্দাজে, আয়াতে কোন শাব্দীক বিধেয় নাই। চতুর্থ আয়াতে তা বিদ্যমান।
(৪)
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
অর্থাৎ;-আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি ও একমাত্র্র তোমারই ইবাদত করব।
# নায়বুদু শব্দটি আরবী ব্যাকারণে ‘ফেলে মোজারেয়’ ,বর্তমান ও ভবিষ্যত দুটা কালকেই কভার করে। অতএব যদি বর্তমান কালে অর্থ করা হয় তবে মানে হবে,-আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি।স্বীকারোক্তী করা বোঝায়। আবার যদি ভবিষ্যত কালে অর্থ করাহয় তবে মানে হবে,-আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করব, অঙ্গিকার করা বোঝায়। হজরত আবু হোরায়রা রাঃ বর্নীত হাদিশে জানা যায়, আল্লাহ বলেন;- ক্বাসামতুস সালাতা বাইনী ,অবাইনা আবদী নেস ফাইনে। নেসফোহা লী, অনেসফোহা লে আবদী, অ লেআবদী মা সাআল। অর্থাৎ আল্লাহ বলেন, আমি সুরা ফাতেহাকে আমার ও বান্দার মাঝে দুই ভাগে ভাগ করেছি। এর অর্ধেক আমার জন্য, বাকি অর্ধেক আমার বান্দার। বান্দা যা চায় আমি তা দিয়ে থাকি। অ ইইয়াকা নাসতাঈন। নায়বুদু এর মত নাসতাঈনু শব্দটিও ‘ফেলে মোজারেয়’, যদি বর্তমান কালের অর্থ করলে মানে হবে,-আমরা একমাত্র তোমার কাছেই সাহায্য চাই, আবার ভবিষ্যত কলে অর্থ করলে মানে হবে,- আমরা এক মাত্র তোমার কাছেই সাহায্য চাইব। বান্দা যখন বলে, আল্হামদু লিল্লাহে রব্বিল আলামীন। আল্লাহ তখন বলেন,-আমার বান্দা আমার প্রশংসা করছে। আবার বান্দা যখন বলে, আররহমানির রাহীম, আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা আমার মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ননা করছে।বান্দা যখন বলে, মালিকে ইয়াওমিদ্দীন, আল্লাহ বলেন, বান্দা আমার শেষদিনের সর্বময় কর্তৃত্বের সস্বীকারোক্তি করছে। বান্দা যখন বলে,- ইইয়াকা নায়বুদু অ ইইয়াকা নাসতাঈনন। আল্লাহ তখন বলেন, এখানেই আমার আর আমার বান্দার মাঝে বিভক্তি ও সন্ধি। চতুর্থ আয়াতের মাঝে একটি ওয়াও অক্ষর দ্বারা দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। এই আয়াতের প্রথমাংশ সহ প্রথমের তিন আয়াতে আল্লার প্রশস্তি ও স্বীকারোক্তি, যা আল্লার জন্য। পরের অর্ধাংশ সহ সামনের তিন আয়াত বান্দার জন্য যাতে রয়েছে প্রার্থনা ও আর্জি। বলা যেতে পারে এই সুরার মাধ্যমে আমরা প্রতি নিয়ত আল্লাহর প্রশংসার স্বীকরোক্তির পাশাপাশি ওয়াদাবদ্ধ হচ্ছি ও অজান্তে আবার তা ভঙ্গ করছি। এই প্রসঙ্গে সুরা নিসার ৪৩ নং আয়াতের প্রতি দৃষ্টি পাত করা যায়,-যেখানে মদ নিষিদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায়ের হুকুমে আল্লা বলেন;-তোমরা নেশা অবস্থায় নামাজের কাছেও যেওনা যতক্ষন না তোমরা যা বলছ তা বুঝতে পার। অতএব বলাযেতে পারে নামাজে যাবলি তা বুঝে বলার আবশ্যিকতা রয়েছে।
(৫) اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ
অর্থাৎ; আমাদের সঠিক পথে হেদায়েত দান কর।
(৬)
صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ
অর্থাৎ;- সেই সঠিক পথ যা নেয়ামত স্বরূপ তাদের দান করেছ।
# পঞ্চম আয়াতের ব্যাখ্যা ষষ্ঠ আয়াতে দেওয়া হয়েছে।’ইহদে’শব্দ দ্বারা হেদায়েতের দিক নির্দেশনা চাওয়া হচ্ছে। হেদায়েত বলতে সাধারণতঃ বোঝায় কাউকে তার গন্তব্যের দিকে অনুগ্রহের সাথে পথ প্রদর্শন করা। এর দুটি স্তর রয়েছে, সঠিক নির্দেশনার দ্বারা কাউকে তার গন্তব্যে পৌঁছতে সাহায্য করা, দ্বিতীয়টি;- সহযাত্রী হলে সংগে নিয়ে কাউকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়া। দ্বিতীয়টিই উত্তম হেদায়েত, এটাই আল্লার কাছে আমাদের কাম্য। এর জন্য আল্লার রসুল আমাদের সহযাত্রীও দেখিয়ে দিয়েছেন। আল্লার রসুল বলেছেন, পূর্ববর্ত্তী উম্মত গনের মত আমার উম্মতগনও ৭০ দলে ভবিভক্ত হবে। মাত্র একটি দলই সঠিক পথে থাকবে। তারা কারা এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানালেন;- মা-আনা আলাইহে অ আসহাবী। অর্থাৎ যার উপর আমি ও আমার সাহাবীগন আছেন। বলাযেতে পারে, যেমন বড় বড় বই পুস্তক পড়েই ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়র হওয়া যায়না, সাথে প্রয়োজন প্রাকটিক্যাল বা হাতে কলমে শিক্ষা ও অনুশিলন। তেমনই কোরআন হাদীশ পড়েই হেদায়েতের নির্দিষ্ট লক্ষে পৌঁছানো সম্ভব নাও হতে পারে, সাথে চাই রসুল সঃ ও তাঁর সাহাবীদের জীবন চরিত অনুস্মরণ। হেদায়েতের ও চারটি স্তর রয়েছে যথা, সালেহীন, শুহাদা, সিদ্দিক্বীন,ও আম্বিয়া। সালেহীন, যারা ঈমান সহকারে ইসলামের যাবতীয় আদেশ নিষেধ গুলি নিষ্ঠার সাথে মেনে চলেন, সৎ কর্ম করেন। শুহাদা, যারা আল্লাহ ও তার দ্বীনের জন্য নিজের জীবন তুচ্ছ করেছেন। সিদ্দিক্বীন, যাদের ঈমানে কোন অবস্থায়ই কোন সন্দেহ স্থান পায়নি। বলা বাহুল্য তারা সাফল্যের সাথে নিচের স্তর গুলি পার হয়েছেন। এব্যপারে হজরত আবু বকর রাঃ এর কথা উল্লেখ যোগ্য। এক ইহুদী খবর শোনাল, ‘ওহে আবুবকর শুনেছো, তোমাদের নবী বলছেন, গত রাতে তিনি নাকি আসমানে গিয়ে আল্লার সাথে কথা বলেছেন, বিশ্বাস না হয় নিজে কানে শুনে এস’। আবুবকর রাঃ শুধু জানতে চাইলেন, একথা কে বলেছে, ইহুদী উত্তরে নবীর কথা বলায় তিনি বললেন, নবী যখন বলেছেন,তখন অবশ্যই সত্য। এ দিন হতেই তিনি হলেন সিদ্দীক। পরের স্তর আম্বিয়া কেরাম। এই সমস্ত পথের পথিক গনের পথকেই নেয়ামত বলা হচ্ছে। এ পথই আল্লার কাছে কামনা করা হয়েছে।
(৭) غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ
অর্থাৎ;- অভিশপ্ত ও ভ্রষ্ট পথ আমাদের দিওনা।
# আল্লাহর কাছে যেমন সৎ পথের দীশা চাওয়া হচ্ছে, তেমনই আবার যারা আল্লাহ ও তার রসুল গনের দেখানো পথ পরিহার করে বিপথে বা ভ্রান্ত পথে গিয়ে আল্লাহর রোষানলে পড়ে ধ্বংস হয়েছে, যেমন কওমে নূহ, কওমে লূত, আদ ও সামুদ জাতি৷ এদের অনুসৃত জীবন ধারাকেই অভিশপ্ত পথ বলা হয়েছে৷ আবার ইহুদী নাসারাদের পথকে ভ্রান্ত পথ বলা হয়েছে৷ কেননা তারা প্রদর্শীত সৎ পথ ত্যাগ করে ভিন্ন পথ অবলম্বন করেছে৷ আতিশয্যের বশে হজরত ইসা আঃ কে আল্লাহর পর্যায়ে উন্নিত করেছে৷ তাকে আল্লাহর ঔরষজাত পুত্র বলে প্রতিষ্ঠিত করেছে৷ এবং এটাই সীমা লঙ্ঘন৷ এ সমস্ত পথ হতেই দূরে রাখার জন্যই মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে৷
সুরা ফাতেহা পড়ার শেষে আমিন বলতে হয়৷ নামাজে মোক্তাদী হিসেবে ইমামের পিছনে নিজে সুরা ফাতেহা পড়া ও শেষে আমিন বলা নিয়ে ইমাম গনের মাঝে মতানৈক্য আছে৷ বলা হয়েছে; ‘লা সালাতা লেমান লা ইয়াক্বরায়ু বে ফাতিহাতিল কিতাবে’৷ অর্থাৎ;-ঐ নামাজ নামাজই নয়, যাতে সুরা ফাতেহা পড়া হয়নি৷ প্রশ্ন হচ্ছে, ইমামের পিছনে মোক্তাদীকেও সুরা ফাতেহা পড়তে হবে কি না? কোন ইমাম বলেন, পড়তে হবে না আবার কোন ইমাম বলেন, পড়তে হবে৷ এ ব্যাপারে ইমাম মালেক রঃ এর মতটিই অধিকাংশের কাছে গ্রহন যোগ্য হয়েছে৷ তিনি বলেন, যখন ইমাম চুপে চুপে সুরা কেরাত পড়েন, তখন মোক্তদীকেও সুরা ফাতেহা পড়তে হবে, আর যখন ইমাম উচ্চস্বরে সুরা কেরাত পড়ে তখন মোক্তাদীকে আর পড়তে হবে না, তবে শুনতে হবে৷ কেননা বলা হয়ছে, ‘অ ইজা ক্বুরেয়াল ক্বুরআনো ফাসতামেয়ু লাহু অ আনসেতু লায়াল্লাকুম তুরহামুন’। অর্থাৎ;-যখন কোরআন পড়াহয় তখন শুনতে থাকো ও চুপ থাকো হয়তো রহমত পেতে পার৷ মোক্তাদী এ আদেশ পালন করবে৷ জোরে বা আস্তে যে ভাবেই হোক, শেষে আমিন বলায় সব ইমাম একমত৷ আমিন৷
আশা করি খারাপ সেন্সে নেবেন না৷
আপনি যা বলেছেন তা যথার্থ, আমি বলতে চাইনি! আশা করি তিনি বুঝবেন!
"আলম শব্দের অর্থ দুনিয়া বা বিশ্ব । আলামীন বহুবচনে, অর্থাৎ বিশ্ব ব্রম্ভাণ্ডের,..."
ব্রাহ্মান্ড শব্দটির ব্যাবহার সম্পর্কে আমাদের একটু জানা দারকার যে এই শব্দটি এসেছে হিন্দুইজম থেকে। এটা সম্পর্কে Wikipedi-তে বলা হয়েছে "Brahma is the creator god in the Trimurti of Hinduism. He has four faces, looking in the four directions Click this link" ব্রাহ্মা হলো ত্রিমূর্তী হিন্দুশাস্ত্রে বর্ণিত চার মাথা বা চেহারা বিশিষ্ট সৃষ্টিকর্তা বিধাতা যিনি চারদিক থেকে দেখতে পান।
কাজেই বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড বললে এমন একজনকে সামনে আনা হয়, যা আমাদের ঈমানের এবং ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই বিশ্বের সাথে ব্রহ্মান্ড শব্দটি ব্যাবহার না করাটাই উত্তম বলে মনে করি।
"আলম শব্দের অর্থ দুনিয়া বা বিশ্ব । আলামীন বহুবচনে, অর্থাৎ বিশ্ব ব্রম্ভাণ্ডের,..."
ব্রাহ্মান্ড শব্দটির ব্যাবহার সম্পর্কে আমাদের একটু জানা দারকার যে এই শব্দটি এসেছে হিন্দুইজম থেকে। এটা সম্পর্কে Wikipedi-তে বলা হয়েছে "Brahma is the creator god in the Trimurti of Hinduism. He has four faces, looking in the four directions Click this link" ব্রাহ্মা হলো ত্রিমূর্তী হিন্দুশাস্ত্রে বর্ণিত চার মাথা বা চেহারা বিশিষ্ট সৃষ্টিকর্তা বিধাতা যিনি চারদিক থেকে দেখতে পান।
কাজেই বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড বললে এমন একজনকে সামনে আনা হয়, যা আমাদের ঈমানের এবং ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই বিশ্বের সাথে ব্রহ্মান্ড শব্দটি ব্যাবহার না করাটাই উত্তম বলে মনে করি।
ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন