ফরিদ রেজাদের মৃত্যুর মিছিল
লিখেছেন লিখেছেন যুথী ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০১:৪৮:১৭ রাত
অফিস থেকে এসেই গতর টা সোফায় এলিয়ে দিলেন রাইয়ানের বাপ। স্মার্ট ফোন আনলকড হলো। চিৎকারিয়ে বললেন, যুথী, মাই লাভ, এক কাপ চা। প্লীজ দুই চামচ চিনি।
আমি মুচকি হাসি দিয়ে কিচেনে ঢুকলাম, এবং 'যা কিছু করতে চাও করতে পারো......... অনুরোধ শুধু এই ঘর ভেংগোনা......... মল্লিক চাচার দুর্দান্ত এক গানের কলি আওড়াতে লাগলাম এবং চা বানানো শেষ করলাম।
দেখলাম উনি মিট মিট করে হাসেন, আর কী যেন পড়ে যাচ্ছেন। বল্লাম, হেই চা টা খাও, তার পর পড় তোমার প্রেমের মেসেজ.........
উনি স্ক্রীনে চোখ রেখেই চায়ের কাপ নিলেন, বললেন, প্রেমের না, রেজা ভাইসাবের লেখা। দেখো দেখো, তোমাকে যে সব গল্প বলে বিশ্বাস করাতে পারতাম না, আমাদের এক সময়ের প্রাণ-পুরুষ সেই কথা গুলোই কিন্তু লিখেছেন...............
আমি পাশে বসলাম, ও স্বামীর কোল ঘেঁষে সরে এসে একসাথে পড়া শুরু করলাম। কথকতা ১,২,৩,৪,৫,৬,৭, হেই যা......... ফুরিয়ে গেলো। শেষ হলো, গম্ভির হলাম। চাচাদের প্রতি ভালোবাসা কমলো না, বাড়লো বরং। শহীদ কামারুজ্জামানের জন্য চোখ ছলকে উঠলো, প্রফেসার গোলাম আযমের জন্য হৃদয় ডুকরে উঠলো, আর আমার স্বামি অসম্ভব রকমের গম্ভির হলেন। কালচে চেহারায় বলিরেখা স্পষ্ট হলো।
চায়ের পেয়ালা কাবার হলো, লুংগি পরে ধাতস্ত হলেন, রাইয়ান রা পড়ার টেবিলে যায়গা নিলো, আমি একের পর এক মন্তব্য পড়ে যাচ্ছি আর ব্যথায় কাতরাচ্ছি। ফরিদ রেজাদের একটু যায়গা দিতে পারি না আমরা, এতই সংকুচিত বুক আমাদের............
স্বামি বললেনঃ শিবির থেকে বের করে দেয়ার অপরাধ ছিলো তিনটে, ফরিদ রেজারা শিবির কে জামাতের লেজুড় সংগঠনে রাখতে চান নি; পাকিস্থান, মিশর, মালয়েশিয়া ও তুরকির মত ছাত্রদের একটা আলাদা প্লাট ফরম বানাতে চেয়েছিলেন; যেখানে জাতীয় রাজনীতির দূর্বলতা জেনে ভবিষ্যত চলার পথ আবিস্কারে ইসলাম পন্থী হবে এরা। এরা সেনা বাহিনিতে যাবে, সেক্রেটারিয়েটে যাবে, ব্যবসায় বানিজ্যে যাবে, এদের গ্রহন করতে দেশের জনগণ আনন্দ পাবেন।
ফরিদ আহমাদ রেজা সাহেবরা চেয়েছিলেন ১৯৭১ সালের জামায়াতের ভুল সিদ্ধান্তকে শিবির ভুল হিসেবেই জানুক, হাজার মিথ্যার মীথ পরিয়ে সেই ভুল কে সঠিক বলার হারামিতে এই কোমলমতি ছাত্ররা না জড়াক।
তারা চেয়েছিলো শিবির ছাত্রদের মত করে গড়ে উঠূক, কতিপয় ভাইদের ক্রিড়ানক না হোক।
সেই অপরাধে এদের উপর যে জুলুম হয়েছে তা ইতিহাস জানবেও না কোন দিন। রেজা সাহেব কিছু দুঃখ শেয়ার করে আমার দুঃখটাকে উপলব্ধি করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
আমি বললামঃ রেজা সাহেব খুব খারাপ সময় বাছাই করেছেন। এখন ঐ সব নেতারা কেও নিহত, কেও ফাঁসির রশি পরার অপেক্ষায়। এখন না বলে পরে বললে ভালো হত।
উনি আগের মতই গম্ভির স্বরে বললেনঃ ১৯৮২ এ তাদের কথা বলতে দেয়া হত না। পরে তাদের কাছে ঘেষতে দেয়া হতনা। জামাআতের রাজত্বকালে এই কথা বললে বলা হত 'এখন যখন জামাআত স্বনৈ স্বনৈ এগিয়ে যাচ্ছে, তখন জামাআত কে ক্ষমতা থেকে নামানোর ষড়যন্ত্র চলছে।
এখন বললেও সময়ের দোষ দেয়া হচ্ছে। মানে রেজাসাহেব দের কথা বলতে গেলেই জ্বালা। এরা ইসলামি আন্দোলন করে যেন বিরাট ভুল করেছে।
আমি চুপ করে থাকলাম, উনার মেজাজ এর এই সময়ে তর্ক করলে তিনি ভীষন চটে যান। আমি আস্তে আস্তে বললাম, শুরার ডিসেশন মানা ইসলামে ফরজ।
স্বামি উঠে দাঁড়ালেন, বললেনঃ শুরার মেম্বরদের সামনে কিছু ভাই তাদের সিদ্ধান্ত কে এমন ভাবে পেশ করেন, যাতে প্রায় হাঁ সুচক ভোট ই দিতে হয়। ওটা শুরা হয়না, হয় কোন সিদ্ধান্ত কে এন্ড্রোস করার প্রোসেস।
তিনি বললেনঃ এই রেজা সাহেব বা বাচ্চু সাহেবরা, মাওলানা আব্দুর রহীম মাওলানা আব্দুস সোবহান, মাওলানা ব্যারিস্টার কোরবান আলি, মাওলানা আব্দুল জাব্বার, মাওলানা সাইয়েদ মাসুম ও মোহাম্মাদ আলী গণ, এডভোকেট সা'দ উদ্দিনরা সেই সময় যা যা বলতেন, তা ই এখন ফলে যাচ্ছে। জামাআতের এই ইলমহীন আবেগী ভাইয়েরা সে সময় যদি একটু ভালো কথা শোনার জন্য তৈরি থাকত আজ আন্দোলনের এই অবস্থা হত না।
বাদ দাও, আমি বললাম। এসো খেয়ে নাও............ আমি চাচাদের অনেক কাছ থেকে দেখেছি, নিজ হাতে খাইয়েছি, উনাদের কে আল্লাহর অলি মনে করি। তোমরা যারা সেই সময় সংগঠন থেকে বের হয়েছো, শেষ হয়েছো, কিছুই করতে পারোনি।
এবার আমার স্বামী ব্যাথায় কুঁকড়ে গেলেন যেন। বললেন কিছুই করতে দেয়নি। সেই সময়ের সূর্যসন্তান আমাদের ভাইগুলোর দিকে তাকায়ে দেখ, জামাআত কি ঐসব নেতাদের হারায়ে ভালো করেছে?
আমি আর্শি খুলে দিলাম। দিগন্তের অপারে একটা সাদা মিছিলে দেখলাম এগিয়ে যাচ্ছে কিছু মেধাবি মুখ। একদম শেষে একটা ফেস্টুন নিয়ে শিশির মনির ভাই............ ওতে লেখা 'দুই একজন ভায়ের ভুলে কিছু মেধাবি মুখের অপমৃত্য............... '
বিষয়: বিবিধ
২৪১৫ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি সেই সংগঠনের স্বপ্ন দেখি, যেই সংগঠনের কর্মী বাহিনীর মাঝে ইসলামী আন্দোলন এবং তথা কথিত রাজনীতির মাঝে পার্থক্য করার সম্যক ধারনা থাকবে। যারা কেবল মাএ আল্লাহর সন্তোস্টি অর্জনের জন্য সংগঠন করবে, সংগঠনের বিজয়টা যেখানে মূখ্য নয়। আল্লাহ আমাদের প্রকৃত ব্যাপারটা বুঝার তৌফিক দান করুক, আমীন।
:\
আমি জামায়াতে ইসলামীকে আর দোষ দেই না।জামায়াত ৪২ বছর আগে যা বুঝেছিল আমরা ৪২ বছর পর তা বুঝেছি।দেশের অবস্থা এমন হবে জানলে মুক্তিযুদ্ধ করতাম না --- বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম।
আপনি যে 'ক্রীত' নন তার প্রমান?
১৯৭১ সালের ভূল সিদ্ধান্ত জামাতের বলা মানে তাগুতিদের তৈলমর্দন করা।
Jamaat deserves the benefit of doubt.
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কোনো পরিকল্পিত বিষয় ছিলনা। যারা শুরু করেছে তারা অভিজ্ঞ ছিলনা।
মুজিব কোনো রোডম্যাপ দিয়ে যায়নি।
ইতিহাস পড়ুন আর জানার চেষ্টা করুন ইন্দিরার কুটনৈতিক এক্টিভিটিস কি ছিল তখন।
কে ছিল নিয়ন্ত্রণে। ঐ সময়ে ভারত ছিল নিয়ন্ত্রণে। ভারত এমন কোনো কেউ ছিলনা যাদের কাছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ তাদের নিয়ন্ত্রনে দিয়ে আস্থা রাখা যাবে।
যারা না বুঝে জামাতের নেতৃত্বকে তাগুতি শক্তির সামনে ভিলেন বানানোর চেষ্টা চালায় তারা সুবুদ্ধি সম্পন্ন নয়।
Communist ar er moddhe parthokko ki
আমিত গোপনীয় বলিনি। একান্ত আলাপ বলেছি।
রেজা সাহেবের সাথে এমন কোনো গোপনীয় কিছু মনে হয়না হয়েছে যা শিবিরের লোকেরা জানে বা বুঝেনা।
৭১ এর ভূমিকা জেনেই লোকেরা জামাত শিবির করে।
রেজা সাহেবের নিজের কথাতেই শুধু ব্যাক্তিগত ক্ষোভের কথা প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষ ৭১ এ কার ভূমিকা এটা কেয়ার করলে জামাতের সাথের কোনো রাজনৈতিক সহযোগী দল ক্ষমতায় আসত না। তা সে বি.এন.পি. বা আওয়ামীলীগ।
৭১ হল বলির পাঠা। নিজেদের দোষ অন্যের ওপর চাপানোর মোক্ষম জিনিষ হল ৭১।
ফালতু ব্যাক্তিগত জঞ্জাল আর ছোটলোকি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন