কামরুজ্জামানের ফাঁসিঃ নীল নদের তীরদেশে যেন ফিরআউনের হুংকার

লিখেছেন লিখেছেন যুথী ০৯ এপ্রিল, ২০১৫, ০৩:৪৮:৫১ দুপুর



“কামরুজ্জামান চাচা খুব ধীর মেজাজের মানুষ ছিলেন। শুরার বৈঠকে হোক, কিংবা নির্বাহি সদস্যদের বৈঠকে হোক, সংগ্রামের বিশেষ মিটিং এ অথবা সোনার বাংলার সাপ্তাহিক সভায়, হোক তা রাজনৈতিক মঞ্চে অথবা ভোটের ক্যাম্পেইনে, উনার বড় বৈশিষ্ট্য ছিল নির্মোহ এবং আবেগহীন কথাবার্তা বলে সিদ্ধান্তের পাল্লা নিজের দিকে নিয়ে আসা”।

কথা গুলো বলে গেলেন আমার বাচ্চার বাবা, যিনি নাকি দীর্ঘদিন তার সাথে আন্দোলন করার অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ী প্রাক্তন শিবির নেতা। এখন কপাল গুণে বিএনপির সাথে থেকে দেশের স্বার্থে জীবন জনাঞ্জলি দিচ্ছেন।

“সব তো ভালো কথাই বললে। এতে কি এক জনের ফাঁসি হয়? ১৯৭১ এ তার ভূমিকা নিয়ে তো কিছুই বললেনা। যার জন্যে এত দেশ একট্টা তা নিয়ে কিছু বলো”। চেচিয়ে উঠলাম। মনটা আমার ভীষণ খারাপ। ঘুমাতে পারছিনা মোটেই, উনার স্মৃতি নিয়ে কষ্ট পাচ্ছি কেবল।

“শোন যুথি”, রাগতঃ স্বর তার, “ও নিয়ে আমি কিছুই বলবো না। তাকে ফাঁসি দিতে হবে এটা একটা সিদ্ধান্ত। এবং এই সিদ্ধান্তটা আসতে হবে কোর্ট থেকে। কোর্ট তার আইনের মধ্য থেকে যতটুকু ন্যায় বিচার করতে পারে করেছে। তার ফাঁসি হচ্ছে। এর চেয়ে আর কি বলব। স্বাধীনতার সময় আমার বয়স ছিলো চার বছর। এই সময় আমার পাশের বাসার এক রাজাকার একবার আমাদের বাসায় আসে। তার রাইফেল নিয়ে আমি অনেক ক্ষন খেলেছিলাম। এই দৃশ্য দেখেছে আমার ৯ জন কাজিন, ২১ জন প্রতিবেশি এবং শত শত বাংলাদেশি নাগরিক। তাদের চাক্ষুস সাক্ষীতেই আজকের কোর্ট আমার মত এক জন মানুষ কে ফাঁসি দিতে পারে”।

মাঝে মাঝে আমার এইটার কথা শুনে রেগে মাথা জ্বালা করে ওঠে। জামায়াতের ঘরে বেড়ে ওঠা এই আমি, ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললামঃ “বন্দুক হাতে করলেই ফাঁসি? মানুষ খুন করা লাগবে না”?

উনি নিরাসক্ত ও বিএনপীয় অপুরুষীয় ঢঙ্গে বললেনঃ “একাত্তরের ত্রিশ লক্ষের বানানো সংখ্যায় আমার মত ক্ষুদে রাজাকারের হাতে রাইফেল থাকায় কয়েক শত বাংগালি শহীদ কে দেখানো কি কঠিন কাজ? আমার বিরুদ্ধে সাক্ষীদিতে হবে এই ঘোষণা দিয়ে টাকা হাতে নিয়ে দাঁড়ালে আমার মা বাবা ছাড়া আর সবাই হয়ত সাক্ষী দিতে ধিন ধিন করে নেচে আসবে”।

“আচ্ছা, কামরুজ্জামান চাচা তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা ছাত্র ছিলেন। তাকে মেরে ফেলছে কেন। মোল্লা চাচা কেও মেরে ফেললো? বুড়া দের তো বেশি মারার কথা ছিলো”। বললাম আমার আঁতেল স্বামী কে। তিনি বিড় বিড় করে কিছু বল্লেন। কপালে বলির রেখা তার সুস্পষ্ট। যার সারসংক্ষেপ হলোঃ এরা জামায়াতে ইসলামির বুদ্ধিজীবি। এদের শেষ করা হলে যারা থাকবে তাদের দিয়ে দল চালানো যাবেনা। এইটেই তাদের ধারণা।

“ভুল ওরা ভুল। কামরুজ্জামান চাচা শহীদ হোন আর না হোন, তাতে কি, ইসলামি আন্দোলন চলবে কিয়ামত পর্যন্ত। হয়ত উনাদের রক্তে এই কাফিলার অগ্রযাত্রা কিছু বাড়বে”। আমি থেমে গেলাম। চোখে পানির নহর।

আমাদের দিকে অপলক তাকিয়ে আমার স্বামী। নির্বাক, নিশ্চুপ, নিশ্চল আর সম্পূর্ণ নিরুত্তাপ। দীর্ঘশ্বাসের সাথে বেরিয়ে এলোঃ “আইন মন্ত্রী বলেছেন কামরুজ্জামানের সময় ৩-৪ ঘন্টা। Click this linkএরা আজ আল্লাহর ভাষায় কথা বলছে। মনে হয় নীলনদের তীরদেশে ফিরআউনের হুংকার”।

বিষয়: বিবিধ

১৫০১ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

313918
০৯ এপ্রিল ২০১৫ বিকাল ০৪:৫৭
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : কি বলব, আমার অসংখ্য সহপাঠী উনার কথা মনে ঘুমাতে পারছে না রাতে!!!!! আমার বন্ধু বলে, "কামরুজ্জামান জানে কিছু পর তার গায়ের পোশাক আর থাকবে না, গায়ে লাগানো ফাঁসির পোশাক, হঠাত আঘাত পেয়ে মরে যাওয়া, আর জেনে শুনে মৃত্যুর প্রহর গুনা আর ভাবতে পারছি না!"

আমি সান্ত্বনা দেই, "স্বজনদের চিন্তার শেষ নেই, এই ধর আমরা যারা আন্দোলনে শামিল, যে কোন সময় মারা যাবো, এই চিন্তা মাথায় রেখেই নিজেদের চলা ফেরা করি, অথচ আমাদের স্বজনদের চোখে ঘুম নেই, ঠিক তেমনি, আজ সারা বাংলাদেশে কোটি কোটি মানুষ কামরুজ্জামানের ফাঁসির ব্যাপারে চিন্তায় ভেঙ্গে পড়ছে অথচ তিনি হয়তো নির্বার হয়ে আছেন!

যাক, কথা একটাই, এমন অবিচার নতুন কিছু নয়! ইতিহাস ঘাটলে যার অজস্র প্রমাণ পাওয়া যায়।
313933
০৯ এপ্রিল ২০১৫ বিকাল ০৫:৪১
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : এই বিচা শেষ নয় বিচার হাসরে হবে ।সত্যের বিজয় একদিন হবেই ইনশা আল্লাহ
313974
০৯ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৯:১৫
আবু জান্নাত লিখেছেন : ১৮ বছরের এক কিশোর এত হত্যা ও ধর্ষণ করতে পারে? অবিস্বাশ্য একটি নযীর পৃথিবীর ইতিহাসে তৈরী হচ্ছে উনার ফাসির মাধ্যমে। শেষ বিচারের অপেক্ষায় রইলাম।
314003
০৯ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:৫৯
মৃনাল হাসান লিখেছেন : আল্লাহর পথে যারা জীবন দিল তাদেরকে মৃত বলনা। কামারুজ্জামান মরবেনা, সে বেচে থাকবে মজলুমের প্রতিনিধি হয়ে।
314015
১০ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১২:৪৪
সজল আহমেদ লিখেছেন : আল্লাহ্'র ভাষায় কথা বলছেন মানে কি ?
বুঝিয়ে বলুন লাইনটা ।
314131
১০ এপ্রিল ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩৫
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : আপু,আপনার লেখা থেকে
এদের শেষ করা হলে যারা থাকবে তাদের দিয়ে দল চালানো যাবেনা। এইটেই তাদের ধারণা।

“ভুল ওরা ভুল। কামরুজ্জামান চাচা শহীদ হোন আর না হোন, তাতে কি, ইসলামি আন্দোলন চলবে কিয়ামত পর্যন্ত। হয়ত উনাদের রক্তে এই কাফিলার অগ্রযাত্রা কিছু বাড়বে”। আমি থেমে গেলাম। চোখে পানির নহর। আমারও চোখ দিয়ে পানি এসে গেল।
মহিলা জামাত,জামাত, শিবির,ছাএীসংস্থা
হাজারো নেতা ও নেএী তৈরী করছে না।
314278
১১ এপ্রিল ২০১৫ বিকাল ০৫:৫০
সত্য নির্বাক কেন লিখেছেন : প্রিয় কামারুজ্জামান..।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File