তাবীয-কবচ এবং ঝাড়-ফুঁকের শারঈ বিধান (শিরক থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে জানতেই হবে) প্রথম পর্ব

লিখেছেন লিখেছেন ইসলামিক রেডিও ২২ এপ্রিল, ২০১৫, ০৯:১৩:৩৬ সকাল



সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্‌র জন্য। ছালাত এবং সালাম বর্ষিত হোক আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম–এর উপর।

যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র উপর তাওয়াক্কুল ও ভরসা করে না, তার ঈমান নেই। মহান আল্লাহ বলেন,

﴿وَعَلَى ٱللَّهِ فَتَوَكَّلُوٓاْ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ٢٣ ﴾ [المائ‍دة: ٢٣]

‘আর তোমরা আল্লাহর উপরই ভরসা কর- যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক’ (আল-মায়েদাহ, ২৩)।

তিনি অন্যত্র বলেন,

﴿ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ ٱللَّهُ وَجِلَتۡ قُلُوبُهُمۡ وَإِذَا تُلِيَتۡ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتُهُۥ زَادَتۡهُمۡ إِيمَٰنٗا وَعَلَىٰ رَبِّهِمۡ يَتَوَكَّلُونَ ٢ ﴾ [الانفال: ٢]

‘যারা মুমিন, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেওয়া হয়, তখন তাদের অন্তরসমূহ ভীত হয়ে পড়ে। আর যখন তাদের সামনে তার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন সেই আয়াতসমূহ তাদের ঈমানকে আরও বাড়িয়ে দেয় এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে’ (আল-আনফাল ৩)।

বুঝা গেল, আল্লাহ্‌র উপর ভরসা ঈমানের অন্যতম একটি শর্ত। আর আল্লাহ্‌র উপর ভরসার অর্থ হচ্ছে, বান্দা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করবে যে, সবকিছুই আল্লাহ্‌র হাতে। তিনি যা চান, তা হয়। পক্ষান্তরে যা তিনি চান না, তা হয় না। উপকার ও ক্ষতি সাধন সবকিছুই তাঁর হাতে। তিনি যাকে যা খুশী দেন আর যাকে যা খুশী দেন না। নেই কোনো ক্ষমতা এবং নেই কোনো শক্তি তিনি ব্যতীত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেন, ‘হে বৎস! আমি তোমাকে কয়েকটি বাণী শিক্ষা দেব: (সেগুলি হচ্ছে) আল্লাহ্‌র আদেশ-নিষেধের হেফাযত করবে, তাহলে তিনি তোমাকে হেফাযত করবেন। আল্লাহ্‌র আদেশ-নিষেধের হেফাযত করবে, তাহলে তুমি তাঁকে তোমার সামনে পাবে। আর যখন কিছু চাইবে, তখন আল্লাহ্‌র কাছেই চাও এবং যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে, তখন আল্লাহ্‌র কাছেই সাহায্য প্রার্থনা কর। জেনে রেখো, দুনিয়ার সবাই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যদি তোমার কোনো উপকার করতে চায়, তাহলে আল্লাহ তোমার জন্য যতটুকু লিখে রেখেছেন, তার বাইরে কিঞ্চিৎ পরিমাণ উপকারও তারা করতে পারবে না। পক্ষান্তরে তারা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যদি তোমার ক্ষতি করতে চায়, তাহলে আল্লাহ যতটুকু তোমার তাকদীরে লিখে রেখেছেন, তার বাইরে কিঞ্চিৎ পরিমাণ ক্ষতিও তারা করতে পারবে না। কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং কালি শুকিয়ে গেছে (অর্থাৎ তাক্বদীর লেখা শেষ হয়ে গেছে)’ (মুসনাদে আহমাদ, ১/২৯৩)।

অতএব, আল্লাহ্‌র উপর ভরসা বান্দার কাঙ্খিত বস্তু হাছিলের এবং অনাকাঙ্খিত বস্তু প্রতিহতের অন্যতম কারণ ও মাধ্যম। সেজন্য যে ব্যক্তি এসব কারণকে অস্বীকার করবে, তার আল্লাহ্‌র উপর ভরসার বিষয়টি সঠিক প্রমাণিত হবে না। এসব কারণকে স্বীকার করার অর্থ এগুলির উপর ভরসা করা নয়। বরং এসব কারণের উপর নির্ভর না করা আল্লাহ্‌র উপর পূর্ণ ভরসার অন্তর্ভুক্ত। মূলকথা, বান্দার পূর্ণ ভরসা ও নির্ভরতা হতে হবে একমাত্র আল্লাহর উপর, অন্য কিছুর উপর নয়।

কিন্তু আল্লাহ্‌র উপর বান্দার ভরসা যখন দুর্বল হয়ে যায়, তখন তার অন্তর বিভিন্ন কারণ ও মাধ্যমের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং ঐ কারণসমূহের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ থেকে সে গাফেল হয়ে যায়। কখনও কখনও আল্লাহ সম্পর্কে তার গাফলতি বৃদ্ধি পেয়ে শরী‘আত অনোনুমোদিত কারণের উপর সে নির্ভর করতে শুরু করে। যুগে যুগে তাবীয ব্যবহারকারীদের অবস্থা এটাই। অত্র সংকলনে শারঈ মানদণ্ডে তাবীয-কবচ ও ঝাড়-ফুঁকের বিভিন্ন দিকের উপর নাতিদীর্ঘ একটি বিশ্লেষণের প্রয়াস করা হয়েছে। মহান আল্লাহ ক্ষুদ্র এই প্রয়াসটুকু কবূল করুন। আমীন!

‘তাবীয’-এর পরিচয়

অসুখ-বিসুখ, চোখ লাগা বা বদনযর, জাদু, জিন-শয়তানের আছর ইত্যাদি কোনো সম্ভাব্য বা ঘটিত অকল্যাণ দূর করতে অথবা কোনো কল্যাণ লাভের উদ্দেশ্যে পূতিঁ, কাঠ, হাড়, সূতা, কাগজ ইত্যাদি দেহে, গৃহে, গাড়ীতে বা অন্য কিছুতে ঝুলানোকে ‘তাবীয’ বলে। এই অর্থে যিক্‌র-আযকার ও দু‘আ চামড়া, কাগজ বা অন্য কিছুতে লিখে ঝুলালে তাও তাবীযের আওতায় পড়বে। বাসা-বাড়ীর ফটকে বা কোনো স্থানের সম্মুখভাগে ঘোড়ার পায়ের নাল ঝুলানোও তাবীযের অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপভাবে গাড়ীর পেছনে বা সামনে জুতা-সেন্ডেল ঝুলানো বা গাড়ীর ভেতরের আয়নায় নীল পূঁতি, তাসবীহ ইত্যাদি ঝুলানোও তাবীযের অন্তর্ভুক্ত। এসব জিনিস রোগীর বা সাধারণ কোনো ব্যক্তির বালিশ বা বিছানার নীচে অথবা অন্য কোথাও বিশেষ নিয়্যতে রাখলে তাও তাবীয বলে গণ্য হবে।



জাহেলী যুগে ‘তাবীয


‘তাবীয’ ছিল জাহেলী যুগের বহুলপ্রচলিত একটি বিষয়। সম্ভাব্য অসুখ-বিসুখ, চোখ লাগা, নানা বিপদাপদ, বালা-মুছীবত ইত্যাদি থেকে নিজেদেরকে এবং গৃহপালিত পশুকে বাঁচানোর জন্য জাহেলী যুগের লোকেরা ‘তাবীয’ ঝুলাতো। ক্ষতিকর আত্মার -তাদের বিশ্বাস মতে- উপর বিজয় লাভও তাদের তাবীয ঝুলানোর আরেকটি অন্যতম কারণ ছিল।

জাহেলী যুগের আরবরা যখন নির্জন কোনো প্রান্তে যেত, তখন তারা জিন, শয়তান ইত্যাদির ক্ষতির আশঙ্কা করত। ফলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে উচ্চ স্বরে বলত, আমরা এই উপত্যকার ছোট ছোট জীনগুলো থেকে বাঁচার জন্য বড় সরদারের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তাদের বিশ্বাস মতে, এই আশ্রয় প্রার্থনার কারণে কেউ তাদের ক্ষতি করত না।

এই শির্কী আশ্রয় প্রার্থনার পাশাপাশি জাহেলী যুগের লোকেরা জিনের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য পশু কুরবানীর মাধ্যমে তাদের সান্নিধ্য লাভের প্রয়াস চালাত। কেউ বাড়ী বানালে বা কূপ খনন করলে সে জিনের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য পশু যবেহ করত।

তারা বিশ্বাস করত, কিছু কিছু পাথর, গাছ, প্রাণী এবং খণিজ পদার্থে এমন বৈশিষ্ট্য আছে, যা তাদেরকে জিনের ক্ষতি এবং মানুষের বদনযর থেকে বাঁচাতে পারে। সেজন্য তারা সেগুলিকে তাবীয হিসাবে ঝুলাত এবং সেগুলির উপর তাদের অন্তঃকরণসমূহকে নির্ভরশীল করে ফেলত। এ সবকিছুর মূলে ছিল মহান প্রভূ সম্পর্কে তাদের চরম মূর্খতা ও অজ্ঞতা এবং তাঁর প্রতি তাদের অনাস্থা। সেকারণে তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের তাবীযের সমারোহ দেখা যেত। যেমন:

১. ‘নুফরা’ নামক এক প্রকার তাবীয, যা তারা চোখ লাগার ভয়ে বাচ্চাদের দেহে ঝুলাত। কখনও কখনও তারা এই নুফরাকে অপবিত্র জিনিস দিয়ে তৈরী করত। যেমন: হায়েযের নেকড়া। আবার কখনও তা তৈরী করত নিকৃষ্ট নাম দিয়ে।

২. শিয়াল বা বিড়ালের দাঁত।

৩. ‘আক্বরা’ নামের এক প্রকার তাবীয, যা মহিলারা গর্ভধারণ না করার অভিপ্রায়ে কোমরে বাঁধত।

৪. ‘ইয়ানজালিব’ নামক এক প্রকার তাবীয, যা রাগান্বিত স্বামীকে ফিরিয়ে আনার জন্য এবং তার সহানুভূতি লাভের জন্য ব্যবহার করা হত।

৫. ‘তিওয়ালা’ নামের এক প্রকার তাবীয, যা স্বামীর ভালবাসা অর্জনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হত।

৬. ‘ক্বুবলা’ নামের এক প্রকার সাদা পুঁতি, যা চোখ লাগা থেকে রক্ষার জন্য ঘোড়ার গলায় ঝুলানো হত।

৭. ‘তাহ্‌বীতা’ নামক লাল এবং কালো রংয়ের পাকানো সূতা, যা মহিলারা চোখ লাগা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মাজায় বেঁধে রাখত

আরো পড়ুন এখানে

বিষয়: বিবিধ

১৭০৮ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

316240
২২ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ০৯:৪৮
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : আমি কখনও এসব ব্যবহার করিনি
০৪ মে ২০১৫ সকাল ০৬:৩১
259256
ইসলামিক রেডিও লিখেছেন : খুব ভাল। শুধু নিজে নয় অন্যকেও নিষেধ করুন।
316264
২২ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০১:১১
egypt12 লিখেছেন : প্রিয়তে রইল
০৪ মে ২০১৫ সকাল ০৬:৩১
259257
ইসলামিক রেডিও লিখেছেন : জাঝাকাল্লাহ
316270
২২ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০১:৪০
আবু জান্নাত লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খাইর
২২ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:২৩
257486

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 7228

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 917

"> ফুয়াদ পাশা লিখেছেন : তাবিজ, কবজ, পানিপড়া, আল্লার কাছে মোনাজাত করে চাওয়া সবই কুসংস্কার। অর্থহীন পন্ডশ্রম।
২২ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১১:৫১
257508

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 7228

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 917

"> ফুয়াদ পাশা লিখেছেন : কার লাশ কোন কুকুরে খায়? নবী বংশের ইমাম হোসেনের লাশও মরুভুমির শাপ, বিচ্ছু,শিয়াল, কাকড়া খেয়েছে।


316287
২২ এপ্রিল ২০১৫ দুপুর ০৩:৪০
খান জুলহাস লিখেছেন : ধন্যবাদ
০৪ মে ২০১৫ সকাল ০৬:৩১
259258
ইসলামিক রেডিও লিখেছেন : আপনাকেও...
316294
২২ এপ্রিল ২০১৫ বিকাল ০৪:০৫
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : আল্লাহ আমাদের এসব কুসংষ্কার থেকে মুক্ত রাখুন।
২২ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:২২
257485

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 7228

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 917

"> ফুয়াদ পাশা লিখেছেন : তাবিজ, কবজ, পানিপড়া, আল্লার কাছে মোনাজাত করে চাওয়া সবই কুসংস্কার। অর্থহীন পন্ডশ্রম।
২২ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:৫২
257492
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : তুমি আগে লাল পানি, গো মুত্র খাওয়া ছাড় তারপর না হয় জ্ঞান দিতে আইসো।
২৩ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১২:০৪
257514

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 7228

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 917

"> ফুয়াদ পাশা লিখেছেন :


Click this link
০৪ মে ২০১৫ সকাল ০৬:৩২
259259
ইসলামিক রেডিও লিখেছেন : আমীন
316370
২২ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:২২

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 7228

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 764

"> ফুয়াদ পাশা লিখেছেন : তাবিজ, কবজ, পানিপড়া, আল্লার কাছে মোনাজাত করে চাওয়া সবই কুসংস্কার। অর্থহীন পন্ডশ্রম।
২২ এপ্রিল ২০১৫ রাত ১০:৩৫
257490
আবু জান্নাত লিখেছেন : নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার অপেক্ষায় থাকেন, লাশ কুকুরেও খাবে না। কারণ কুকুরের ও একটা মান সম্মান আছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File