‘পথের সাথী, চির বিপ্লবী’
লিখেছেন লিখেছেন ম রণতরী খান ৩১ মে, ২০১৫, ০৬:২২:৪৮ সন্ধ্যা
…আমার তৃষ্ণা বেড়ে গেছে।আমি আসলে জীবনের অর্থটা কখনো খুঁজে পাই না।তবে স্বল্প পরিচিত এ মানুষটি থেকে আনন্দ কিংবা মনের খোরাক সবটাই পাচ্ছি।ঐতিহ্য আর আভিজাত্যে ভরা একটি বংশেই আমার জন্ম।ছোটবেলা থেকেই দেখেছি পরিবারে ব্যাপক ধর্ম চর্চা হয়।তবে সে চর্চা যারা ধর্মের মিশেলে সমাজ ব্যবস্থা চায় তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে।পদে পদে তাদের রুখে দিতে বদ্ধপরিকর।মুক্তিযোদ্ধা পিতা আটরশ্মি দরবার শরীফের খাদেম।সুতরাং আমরা ভাইবোনেরাও এমন শিক্ষা নিয়েই বড় হচ্ছিলাম
ক্লাসে প্রথম ছিলাম বলে বা বিতর্কে ভালো ছিলাম বলেই হয়তো এলাকার কিছু ছেলে আমার পিছু লাগে।দীর্ঘ সময় পর তাদের ভালোলাগে আমার। এক পর্যায়ে ওদের সাথে মিশতে শুরু করি।মা বাবা বিষয়টা বুঝতে পেরে ছেলেগুলোকে আমাদের ঘরে আসতে নিষেধ করে।আমার চলাফেলা নিয়ন্ত্রণ করে।তবু আমি মিশে যাই তাদের সাথে।একসময় ওদেরই একজন হয়ে যাই।স্কুল জীবনটা এভাবেই কাটে।স্কুল জীবন শেষে শুরু হয় রঙিন কলেজ জীবন।সে জীবনে স্থান পায় না ছেলেগুলোর ‘সেকেল’ শিক্ষা।
আমি এবার ভিন্ন স্বপ্নে, অন্য পথে চলতে শুরু করি।প্রিয় হুমায়ূন আহমেদকে আগাগোড়া পড়তে শুরু করি।আজকের ঘৃণিত ও বিতর্কিত জাফর ইকবাল পড়ে গভীর রাতে আঁতকে উঠি।ধর্ম নিয়ে আমার মধ্যে প্রশ্ন দেখা দেয়।বহু কিছুকেই অর্থহীণ ভাবতে শুরু করি।
আমি যেন আধুনিক কোনো কিছুকে ছোয়ার জন্য ব্যাকুল।আমি যেন আমার মুসলিম পরিচয়টি মুছে ফেলার জন্য ছুটে চলছি কোনো অজানা, অচেনা গন্তব্যে।ঠিক এমন একটি উদভ্রান্ত জীবনে এ কেমন এক মানুষের আগমন ঘটল।তিনি ক’ঘন্টায় পাল্টে দিলেন আমার সব চিন্তা ভাবনা।
তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন নতুন এক নজরুলের কাছে।আমি পেলাম স্বম্পূর্ণ ভিন্ন রঙের এক আল মাহমুদ।রবীন্দ্রনাথকে আগেও পড়তাম।এখনও তাকে পড়ি।তবে তিনি আমাকে শেখালেন রবীন্দ্রনাথকেও খণ্ডন করা যায়!
তিনি আমাকে সাহিত্যই শেখালেন।তবে এ শেখানো অন্য আর দশজন থেকে ভিন্ন।গান লেখা, গান গাওয়া এ মানুষটি এত ভালো কেন!কেনই বা আমি তার বাহু ডোরে বাঁধা পরলাম!কতটা সংগ্রামী ছিলেন পাঞ্জেরীর রচয়িতা ফররুখ।‘ফররুখ পাঠ’ কি দিয়ে নেব আমি।রুমান্টিক ফররুখকে কখনো কি বিবেচনা করেছি আমরা?
তার স্পর্শে আমার চিন্তা জগত উলট পালট হয়ে গেল।সব থেকে বড় যে কাজটা করলেন তিনি তা হলো ‘একজন তরুণ তার আত্মপরিচয় পেল’।একজন মুসলিম তরুণেরও যে গর্ব করার মতো অনেক কিছু আছে, একজন মুসলিমও যে স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যে নিজের মতো করে বাঁচতে পারে এসব নিয়ে এই প্রথম নিজের মতো করে ভাবতে শিখালেন লোকটি।
তাই আমার কাছে একাধারে তিনি একজন ইসলামিস্ট, ভালো পিতা, সেরা বন্ধু।তিনি লেখক, কবি, গীতিকার।তিনি হচ্ছেন সেই মানুষ, যাদের আবাস পথে।তাদের আরও একটি পরিচয় আছে।কেউ স্বীকার করুক বা না করুক অবশেষে সবাইকে মেনে নিতে হয় ‘তারা আসলে আজন্ম বিপ্লবী’।ক্ষণজন্মা আলোর পথের দিশারী।
অক্টোবরের কোনো এক সকালের কথা মনে আছে আপনাদের?আমিও সেই সকালে স্বল্পসংখ্যক মানুষদের একজন হয়ে হাজির হয়েছিলাম পল্টনের চার রাস্তার মোড়ে।চারপাশে আহত মানুষের সারি, লাশগুলো এবরো থেবরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এদিক সেদিক।কান্নার রোল পড়ে গেছে চারদিকে।রক্তে লাল হয়ে আছে পুরো এলাকা।তবু থামছে না হায়েনাদের মুহুর্মূহু গুলি আর বোমা।
সেই সময়টাতে মানুষ যখন ভয়ে এদিক সেদিক ছুটছে তখন আত্মবিশ্বাসী একটি কণ্ঠ ভেসে আসছিল আমার কানে।আমি বুঝতে পারি এ কণ্ঠ কখনো ভয়ের হয় না, এ কণ্ঠ চিরকালই জয়ের হয়।এ কণ্ঠ শান্ত, স্থির ও লক্ষ্যে পৌঁছাতে অবিচল।
তার সাথে পরিচয়ের পর আমার আর বুঝতে বাকি থাকে না সেই কণ্ঠ ছিল এখন আমার সাথে নিচু স্বরে হাসা এই কণ্ঠ।অনেকটা উত্তেজনায় আমি কাঁপছি।আমার মধ্যে এক অন্যরকম আবেগ খেলা করে।আমি নিজের অজান্তেই ‘বিপ্লব বিপ্লব’ বলে চিৎকার করে উঠি!
আবার ভয়ও হয়।এ পথ যে বড় কঠিন।কবি আমাকে যে পথে থাকার আহ্বান জানালেন আমি কী পারব সে পথে থাকতে?আমি কী পারব তার মতো বিপ্লবী হতে?এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর খুঁজে পাই না।তবে এতটুকু বুঝি তার দেখানো পথেই চির মঙল।
কবি আজ আমাকে যে বিশ্বাসের কথা বলছেন, তা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে যারা মাঠে থাকবে তাদের একজন আমাকেও হতে হবে…
(প্রিয় ব্যক্তিত্ব-২: চলবে)
প্রিয় ফুল, অকৃত্তিম ঘ্রাণ
বিষয়: Contest_priyo
১৩৫০ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন